Published in বাংলাদেশ প্রতিদিন on Saturday, 17 March 2018
চ্যালেঞ্জের চেয়ে সম্ভাবনাই বেশি
বাড়বে বিনিয়োগ, বড় হবে শিল্প খাত
রুহুল আমিন রাসেল
বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ হওয়ায় ব্যাপক অর্থনৈতিক সম্ভাবনা দেখছে সরকার। আর স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে চূড়ান্তভাবে বেরিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে বেশ কিছু বাণিজ্যিক চ্যালেঞ্জ দেখছেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ী নেতারা। তারা আগামীতে দ্বিপক্ষীয় চুক্তির মাধ্যমে অর্থনৈতিক-কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়ানোর পরামর্শ দিয়ে বলেছেন, সাফল্যের একটি ভিত্তি রচিত হতে যাচ্ছে। এটা বিরাট অর্জন, বিশাল সাফল্য। বাজার সুবিধা ধরে রাখতে অর্থনৈতিক শক্তি বাড়ানো এখন বাংলাদেশের পরবর্তী চ্যালেঞ্জ। অবকাঠামো উন্নয়ন ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাও বাণিজ্যিক চ্যালেঞ্জ।
এ প্রসঙ্গে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ— সিপিডি’র বিশেষ ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আগামী ছয় বছর বাণিজ্যে চিন্তার কিছু নেই। এর সঙ্গে আরও তিন বছর শুল্কমুক্ত সুবিধা পাব। সব মিলিয়ে আগামী ১০ বছরের ভিতরে বাণিজ্যের বৈচিত্র্যকরণ, বহুধাকরণের জন্য কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে, সেটি হলো— বড় কথা। তিনি বলেন, নতুন পণ্য খুঁজে বের করা, নতুন বাজারের সন্ধান করা, একটা বড় বিষয়। তবে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে আরেকটু মনে রাখা দরকার, তা হলো— যে শুল্কসুবিধা ইউরোপীয় ইউনিয়নে, সেখানে আজকাল শ্রমের অধিকার, শ্রমিকের অধিকার, অন্যান্য সামাজিক দায়বদ্ধতার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে এসেছে। আর স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বের হলেই বাণিজ্য সুবিধা চলে যেতে পারে, শুধু তা নয়। ওই সব শর্ত প্রতিপালন না করলেও বাণিজ্য সুবিধার ওপর আঘাত আসতে পারে। বাংলাদেশ সেই সমস্যার ভিতর আছে।
ঢাকায় বিশ্বব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এখন বাজার সুবিধা ধরে রাখতে অর্থনৈতিক শক্তি বাড়ানো বাংলাদেশের জন্য পরবর্তী চ্যালেঞ্জ। দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তির মাধ্যমে অর্থনৈতিক কূটনীতি বাড়াতে হবে বাংলাদেশকে।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতসহ সরকারের শীর্ষপর্যায়ের আশা— এভাবে চললে ২০২৪ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণে কোনো সমস্যা হবে না। তবে বিশ্লেষকদের মতে, উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উঠলে নানা দরকষাকষিতে বাংলাদেশের অবস্থান মজবুত হলেও এখন বাণিজ্যিক নানা সুবিধা হারাতে হবে। এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য (সিনিয়র সচিব) অধ্যাপক ড. শামসুল আলম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, উন্নয়নশীল দেশের কাতারে যাওয়ার প্রক্রিয়াটি জটিল। বাংলাদেশ এখনো উন্নয়নশীল হয়নি, কিন্তু হওয়ার পথে আছে। মূলত জাতিসংঘের এই স্বীকৃতিপত্র পাওয়ার মধ্যদিয়ে উন্নয়ন রূপান্তরের প্রক্রিয়ায় যুক্ত হয়েছে বাংলাদেশ। সাফল্যের একটি ভিত্তি রচিত হতে যাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, এত দিন আমরা স্বল্প সুদে ঋণ পেতাম, সেটা হারানোর কিছু নেই। কারণ, আমরা এখন মাত্র ১ শতাংশ বিদেশি ঋণ নিয়ে থাকি। আর শুল্ক ও কোটামুক্ত সুবিধা আগামী ২০২৭ সালের পর থাকবে না। এখানে চ্যালেঞ্জের কিছু নেই। বরং নতুন একটি সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন হলো। তবে ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশন (এফবিসিসিআই)-এর সাবেক সভাপতি এ কে আজাদ গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এখন আমাদের সামনের দিনগুলোতে বাণিজ্যিক চ্যালেঞ্জ হলো— অবকাঠামো উন্নয়ন ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা। প্রতি বছর প্রবৃদ্ধি সাড়ে ৭ থেকে ৮ শতাংশের মধ্য রাখতে হবে। এ জন্য দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আরও বাড়াতে হবে। ব্যাংকিং খাতে স্থিতিশীলতা প্রয়োজন। এফবিসিসিআই সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, উন্নয়নশীল দেশ হওয়ার জন্য যোগ্যতা অর্জনের ভিতর সামনের দিনগুলোতে সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ দুটিই আছে বাংলাদেশের। স্বাধীনতার পর এদেশের বাজেট হতো, দাতারা কত দেবে, তার ওপর নির্ভর করে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতায় আসার পর এখন অর্থনৈতিক সূচকগুলোর একটি জায়গায় এসেছে। কিন্তু উন্নয়নশীল দেশ হওয়ায় আবার কিছু হারাতেও হবে। ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (ডিসিসিআই)-এর সভাপতি আবুল কাশেম খান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এটা বিরাট অর্জন, বিশাল সাফল্য। হেনরি কিসিঞ্জার যে দেশকে তলাবিহীন ঝুড়ি বলেছিলেন, সেই বাংলাদেশ আজ উন্নয়নশীলের কাতারে। তবে সামনে কিছু চ্যালেঞ্জও আছে। শুল্ক ও কোটা সুবিধা বন্ধ হবে। সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়বে তৈরি পোশাকশিল্পে। কিন্তু বিশ্বসভায় দেশের র্যাংকিং ভালো হওয়াতে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়বে। স্থানীয় শিল্প বড় হবে। সব মিলিয়ে চ্যালেঞ্জ থেকে সম্ভাবনাই বেশি।