এসডিজি অর্জনে ব্যক্তি খাতকে সহায়তায় সরকারকে এগিয়ে আসতে হবেঃ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য

Published in সমকাল on Monday, 19 February 2018

শিল্প-বাণিজ্য

রাজনীতি ও ব্যবসার অটুট বন্ধন চান অর্থনীতিবিদরা

এসডিজি অর্জন

সমকাল প্রতিবেদক

রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টার ইনে বৃহস্পতিবার অর্থনীতিবিদ সম্মেলনের এক অধিবেশনে বক্তব্য দেন ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য

টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যগুলো (এসডিজি) অর্জনে রাজনীতি, ব্যবসা ও প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শক্তিশালী বন্ধন সৃষ্টি করতে হবে। যাতে সুশাসন নিশ্চিত হয় এবং বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নত হয়। এ জন্য সরকারি-বেসরকারি খাতের মধ্যে আলোচনার ক্ষেত্র তৈরি করতে প্রতিনিধিত্বশীল কাঠামো গড়ে তোলা দরকার।

রোববার বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সানেম আয়োজিত তৃতীয় বার্ষিক অর্থনীতিবিদ সম্মেলনের এক পর্বের আলোচকরা এসব কথা বলেন। ‘বাংলাদেশের এসডিজি অর্জনে বেসরকারি খাতের সম্পৃক্ততায় সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা’ শীর্ষক এ আলোচনা পর্বে সভাপতিত্ব করেন গবেষণা সংস্থা সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর।

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, উন্নয়ন পরিকল্পনায় সরকারের সঙ্গে বেসরকারি খাতের আলোচনার সুযোগ সীমিত। এ বিষয়ে কোনো কাঠামো নেই। কিন্তু এসডিজি অর্জন করতে হলে এ বিষয়ে প্রতিনিধিত্বশীল কাঠামো গড়ে তোলা দরকার। কারণ সমাজে আলাপ-আলোচনার জায়গা না থাকলে অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন দুরাশা মাত্র। তিনি আরও বলেন, এসডিজি অর্জনে বেসরকারি খাতকে প্রচলিত ধারার বাইরে জনকল্যাণমূলক নতুন অভিপ্রায় বাস্তবায়ন করতে হবে। সামাজিক ও মানব উন্নয়নকেন্দ্রিক কর্মকাণ্ড বাড়াতে হবে। বিশ্বের অনেক কোম্পানি তাদের মোট কর্মীর ৫ শতাংশ প্রতিবন্ধী জনগণকে নিয়োগ দিচ্ছে। এসজিডির মূল লক্ষ্য যেহেতু মানুষকে এগিয়ে নেওয়া সেজন্য বাংলাদেশের বেসরকারি খাতকেও এ ধরনের উদ্যোগ নিতে হবে। এজন্য বেসরকারি খাতের স্বপ্রণোদিত প্রতিশ্রুতি দরকার। আর এসব করতে ব্যক্তি খাতকে সহায়তায় সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে।

আহসান এইচ মনসুর বলেন, এসডিজি সরকারের নেতৃত্বে পরিচালিত হবে। তবে অর্জন কতটা হবে তা নির্ভর করছে বেসরকারি খাত কতটা সম্পৃক্ত হতে পারছে তার ওপর। মানব উন্নয়নকেন্দ্রিক কর্মকাণ্ড বাড়াতে না পারলে এসডিজি অর্জন হবে না। তিনি দক্ষ শিল্পায়ন ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার ওপর জোর দেন। এজন্য সরকার ও বেসরকারি খাতের সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা নেওয়ার পরামর্শ দেন।

ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি আসিফ ইব্রাহিম বলেন, বেসরকারি খাতকে নিয়ে জাতীয় কর্মপরিকল্পনা করতে হবে। এখনও অনেক ক্ষেত্রে নানা জটিলতার কারণে তহবিল থাকলেও তার সুযোগ বেসরকারি খাত নিতে পারছে না। তিনি বলেন, সবই সহজে হবে যদি সুশাসন নিশ্চিত করা যায়।

বিশ্বব্যাংক গ্রুপের ঢাকা কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ মাশরুর রিয়াজ বলেন, এমডিজি অর্জনে যে বিনিয়োগ দরকার হয়েছে তা সরকার করেছে। এখন এসডিজিতে সরকার একা বিনিয়োগ করবে না। বেসরকারি বিনিয়োগের সুযোগ তৈরি হয়েছে। স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগের সুযোগ বাড়বে। তবে এ ক্ষেত্রে সরকারকে বেসরকারি খাতের জন্য লাভজনক পরিবেশ তৈরি করতে হবে।

এমসিসিআইর পর্ষদ সদস্য হাবিবুল্লাহ এন করিম বলেন, এসডিজিকে সামাজিকভাবে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পরিণত করতে হবে। সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে হবে। এ জন্য রাজনীতি, ব্যবসা ও সুশাসনের মধ্যে দৃঢ় বন্ধন হওয়া দরকার।

পোশাক উৎপাদনে নেতৃত্বে নেই নারী :সম্মেলনের আরেক অধিবেশনের আলোচনায় বক্তারা বলেন পোশাক শিল্প বিকাশের শুরুর দিক থেকেই নারী শ্রমিকের সংখ্যাধিক্য রয়েছে। এ শিল্পের কমবেশি ৪০ লাখ শ্রমিকের মধ্যে ২৬ লাখই নারী। তবে বিশালসংখ্যক নারী শ্রমিকদের মধ্যে নেতৃত্বের বিকাশ হয়নি গত ৩০ বছরেও। সরাসরি উৎপাদনের বাইরে নেতৃত্বশীল পদে নারী শ্রমিক নেই বললেই চলে। মাত্র ৪ শতাংশ নারী কিছুটা বড় পদ সুপারভাইজার এবং সমসংখ্যক লাইনচিফ হিসেবে কাজ করেন। বাকিরা সাধারণ শ্রমিক পদেই কাজ করছেন।

‘নেতৃত্ব ও অংশগ্রহণমূলক প্রক্রিয়া’ শীর্ষক এ অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন আইজিসি বাংলাদেশের কান্ট্রিডিরেক্টর এবং ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির বিআইজিডির নির্বাহী পরিচালক ড. সুলতান হাফিজ। বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভিাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. সায়মা হক বিদিশা। ‘উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় নাগরিক অংশগ্রহণ’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন স্টকহোম ইউনিভার্সিটির সেরিনা কোক্কিলো।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. অতনু রাব্বানী ১০০ কারখানার তথ্য সংগ্রহের ভিত্তিতে ‘বাংলাদেশের পোশাক শিল্পে নারী নেতৃত্ব’ শীর্ষক গবেষণাপত্র উপস্থাপন করেন। গবেষণাপত্রে বলা হয়, আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি এবং পুরুষ শ্রমিকদের নিয়ন্ত্রণ করার কম সামর্থের কারণে নারী শ্রমিকরা দায়িত্বশীল পদে আসতে চায় না। এ ছাড়া কারখানার মালিক এবং ব্যবস্থাপনা পর্যায়েও নারী শ্রমিকের নেতৃত্ব উৎসাহিত করেন না। তবে যে ৪ শতাংশ নারী শ্রমিক নেতৃত্বশীল পদে কাজ করে তারা সবাই তুলনামূলক শিক্ষিত।

গবেষণা পত্রের সুপারিশ অংশে বলা হয়, শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হলে তারা নেতৃত্বশীল পদের জন্য প্রস্তুত হবে। শ্রমিকদের ঝরেপড়ার হার কমবে। প্রশিক্ষণে মালিক কর্তৃপক্ষের কিছু বেশি ব্যয় হলেও শেষ পর্যন্ত তারা লাভবানই হবেন। কারণ, এতে উৎপাদনশীলতা বাড়বে।