এসডিজি বাস্তবায়নে বড় বাধা ভুল তথ্য – ফাহমিদা খাতুন

Originally posted in বণিকবার্তা on 5 September 2025

২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) বাস্তবায়নে বড় বাধা হিসেবে দেখা দিয়েছে ভুল তথ্য।

২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) বাস্তবায়নে বড় বাধা হিসেবে দেখা দিয়েছে ভুল তথ্য। কারণ ভুল তথ্য ভুল নীতি নির্ধারণের কারণ হতে পারে। গতকাল ‘স্থানীয় শক্তির ক্ষমতা: টেকসই উন্নয়ন অর্জনে গ্রামীণ জনগণের ভূমিকা’ শীর্ষক এক সেমিনারে এসব কথা বলেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস) ও ইউনাইটেড নেশনস অফিস ফর প্রজেক্ট সার্ভিসেসের (ইউএনওপিএস) যৌথভাবে আয়োজিত ওই সেমিনারে আলোচকরা বলেন, বিচ্ছিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন, আর্থিক সীমাবদ্ধতা, রাজস্ব আদায়ের সক্ষমতা এবং রাজনৈতিক মেরুকরণও টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জনের পথে বাধা। এসডিজি অর্জনের জন্য বরাদ্দের তহবিল সঠিকভাবে ব্যবহার হচ্ছে কিনা তাও নিশ্চিত করতে হবে।

সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুনের সঞ্চালনায় বিআইআইএসএস মিলনায়তনে আয়োজিত সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত নরওয়ের রাষ্ট্রদূত হাকন আরাল্ড গুলব্রান্ডসেন। সেমিনারে আরো উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সচিব ইকবাল আবদুল্লাহ হারুন, ইউএনওপিএস বাংলাদেশ ও ভুটানের কান্ট্রি ম্যানেজার সুধীর মুরালিধরন, বিআইআইএসএসের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল ইফতেখার আনিস, ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাংলাদেশ মিশনের উন্নয়ন সহযোগিতা বিভাগের প্রধান ড. মাইকেল ক্রেজা, নিজেরা করির সমন্বয়কারী খুশী কবিরসহ অনেকে। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. কাজী মারুফুল ইসলাম।

অধ্যাপক মারুফুল ইসলাম বলেন, ‘স্থানীয় সরকারগুলোর কাছে প্রায়ই পর্যাপ্ত অর্থ এবং এসডিজি প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় সম্পদের অভাব দেখা যায়। এছাড়া তাদের রাজস্ব আদায়ের ক্ষমতাও সীমিত। অনেক স্থানীয় কর্মকর্তার এসডিজি সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা বা তাদের পরিকল্পনায় কীভাবে এগুলো অন্তর্ভুক্ত করতে হবে সে বিষয়েও জ্ঞান কম। এমনকি তথ্য সংগ্রহ ও জাতীয় ডাটা সিস্টেমে সুবিন্যস্তভাবে উপস্থাপনের দুর্বলতা একটি বড় বাধা, যা অগ্রগতি পরিমাপ ও ট্র‍্যাক করতে সমস্যা তৈরি করে। গত এক থেকে দুই দশকে রাজনৈতিক মেরুকরণ স্থানীয় সমাজের সংহতিকে দুর্বল করে দিয়েছে, যা স্থানীয় স্থিতিশীলতা এবং সম্মিলিত উদ্যোগের জন্য ক্ষতিকর।’

সেমিনারে ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘এসডিজি বাস্তবায়নে ডাটার সহজলভ্যতা, নির্ভুলতা এবং সবার জন্য অ্যাকসেস থাকা জরুরি। কারণ ভুল তথ্য ভুল নীতি নির্ধারণের কারণ হতে পারে। এ সমস্যা সমাধানে সরকার সম্প্রতি বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) এবং ডাটা সিস্টেমকে শক্তিশালী করতে একটি টাস্কফোর্স গঠন করেছে। এ টাস্কফোর্সের লক্ষ্য হলো বিবিএসের স্বাধীনতা রক্ষা, ডাটার মান উন্নত এবং ব্যবহারকারীদের জন্য ডাটা সহজলভ্য করা।’

তিনি আরো বলেন, ‘এসডিজি অর্জনের জন্য যে বিপুল পরিমাণ অর্থ প্রয়োজন, তা মেটানো সরকারের একার পক্ষে সম্ভব নয়। এজন্য বেসরকারি খাতে বড় উদ্যোক্তাদের বড় অংশগ্রহণ জরুরি।’

ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘বরাদ্দের তহবিল সঠিক জায়গায় সঠিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার হচ্ছে কিনা, তা খতিয়ে দেখতে সুশাসন এবং জবাবদিহি নিশ্চিত করা প্রয়োজন। ফলে স্থানীয় জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণে তহবিল ব্যবস্থাপনার জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রেও সহায়ক হবে।’

প্রধান অতিথির বক্তব্যে নরওয়ের রাষ্ট্রদূত হাকন আরাল্ড গুলব্রান্ডসেন বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তন ও সম্পদের সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশ ২০৩০ সালের এ এজেন্ডা বাস্তবায়নে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। সরকার এসডিজি বাস্তবায়নে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি, ৩৯টি সূচক সংবলিত একটি ট্র্যাকার এবং প্রতিটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের জন্য সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রাসহ একটি জাতীয় কর্মপরিকল্পনা তৈরি করেছে।’

নরওয়ের রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘দীর্ঘমেয়াদি ও টেকসই প্রবৃদ্ধির জন্য স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিনিয়োগ অপরিহার্য। স্থানীয় পর্যায়ে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে, যেমন সমন্বয়, রাজনৈতিক সদিচ্ছা, অবকাঠামো উন্নয়ন ইত্যাদি। এসব চ্যালেঞ্জকে মোকাবেলা করতে হবে।

সামুদ্রিক সংস্থার সহযোগিতায় বাংলাদেশের জাহাজ ভাঙা শিল্পকে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড পূরণে নরওয়ে সহায়তা করেছে উল্লেখ করে হাকন আরাল্ড গুলব্রান্ডসেন আরো বলেন, ‘একই সঙ্গে শ্রমিকদের প্রশিক্ষণও দিয়েছে নরওয়ে। এর ফলে এ শিল্প আধুনিকীকরণ ও পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, যা নতুন সেবামূলক ব্যবসার সুযোগ তৈরি করছে।’

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সচিব ইকবাল আবদুল্লাহ হারুন বলেন, ‘এসডিজি বাস্তবায়নে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোকে নেতৃত্ব দেয়ার সুযোগ করে দেয়াই আমাদের অঙ্গীকার। তাদের সফলতাই বাংলাদেশের সফলতা।’

বিআইআইএসএস মহাপরিচালক মেজর জেনারেল ইফতেখার আনিস বলেন, ‘বাস্তব উন্নয়ন আমাদের স্থানীয় সম্প্রদায়ের হাতে। তাদের দৈনন্দিন অভিজ্ঞতা ও সমাধান আমাদের নীতিকে অন্তর্ভুক্তিমূলক করতে অপরিহার্য।’

ইউএনওপিএস বাংলাদেশ ও ভুটানের কান্ট্রি ম্যানেজার সুধীর মুরালিধরন বলেন, ‘বিআইআইএসএসের সঙ্গে একত্রে আমরা স্থানীয় কণ্ঠ ও উদ্যোগকে শক্তিশালী করছি। প্রকৃত পরিবর্তন তখনই সম্ভব, যখন তা হবে অংশগ্রহণমূলক পরিকল্পনা ও সম্প্রদায়-নেতৃত্বাধীন কর্মের মাধ্যমে।’

ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাংলাদেশ মিশনের উন্নয়ন সহযোগিতা বিভাগের প্রধান ড. মাইকেল ক্রেজা বলেন, ‘এসডিজি শুধু ওপর থেকে চাপিয়ে দেয়া নীতির মাধ্যমে সফল হতে পারে না। স্থানীয় জনগণের সম্পৃক্ততা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নারীকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে স্থানীয় পর্যায়ে এসডিজি বাস্তবায়নে ইউরোপীয় ইউনিয়ন সবসময় সহযোগিতা করেছে।’