Originally posted in The Business Standard on 12 February 2025
‘ভ্যাট-ট্যাক্সের জাঁতাকলে বিস্কুটের প্যাকেট আর কত ছোট করবো’: সরকারের কাছে প্রশ্ন ব্যবসায়ীদের
শফিকুর রহমান ভূঁইয়া বলেন, দেশের নিম্ন আয়ের পরিবারগুলোর জন্য বিস্কুট একটি পুষ্টিকর খাবার। ভ্যাট বাড়ার ফলে প্রস্তুতকারকরা আর কম দামে বিস্কুট উৎপাদন করতে পারবেন না। আর কত ছোট করতে হবে, বিস্কুটের পরিমাণ আর কত কমাতে হবে। এতে নিম্ন আয়ের অপরিহার্য উৎস বন্ধ হয়ে যাবে, ভ্যাট বাড়লে খালি প্যাকেট দিতে হবে।
‘ভ্যাট-ট্যাক্সের জাঁতাকলে বিস্কুটের প্যাকেট আর কত ছোট করবো আমরা? প্যাকেটে বিস্কুটের পরিমাণ আর কত কমাব? এভাবে ছোট আর কমাতে কমাতে খালি প্যাকেট দিতে হবে। নিম্ন আয়ের মানুষের প্রধান খাবারে আর ভ্যাট-ট্যাক্স বসাবেন না।’
আজ বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এমসিসিআই) কনফারেন্স হলে অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগো নিউজ আয়োজিত ‘ভোক্তার কাঁধে বাড়তি করের বোঝা: উত্তরণে করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় একথা বলেন বাংলাদেশ অটো বিস্কুট অ্যান্ড ব্রেড ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শফিকুর রহমান ভূঁইয়া।
শফিকুর রহমান ভূঁইয়া বলেন, দেশের নিম্ন আয়ের পরিবারগুলোর জন্য বিস্কুট একটি পুষ্টিকর খাবার। ভ্যাট বাড়ার ফলে প্রস্তুতকারকরা আর কম দামে বিস্কুট উৎপাদন করতে পারবেন না। আর কত ছোট করতে হবে, বিস্কুটের পরিমাণ আর কত কমাতে হবে। এতে নিম্ন আয়ের অপরিহার্য উৎস বন্ধ হয়ে যাবে, ভ্যাট বাড়লে খালি প্যাকেট দিতে হবে।
‘আমরা এক মাস ধরে আন্দোলন করছি ভ্যাট কমানোর জন্য। এখনো মাঠে আছি। আশা করেছিলাম ড. ইউনূস সরকার এসে আমাদের বিষয়টা দেখবেন, কিন্তু সে আশাও ফিকে হয়ে যাচ্ছে। খাদ্যপণ্য ভ্যাটমুক্ত থাকা দরকার। অথচ উন্নত দেশ ইংল্যান্ডে খাদ্যপণ্য ভ্যাটমুক্ত’ বলেন তিনি।
মূল্য সংযোজন কর এবং সম্পূরক শুল্ক (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫-এ বিস্কুটসহ কৃষি প্রক্রিয়াজাত খাদ্যসামগ্রীর ওপর মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এখন যে প্রতিষ্ঠান ১০ কোটি টাকা ভ্যাট দিচ্ছে, এর ফলে তাকে ৩০ কোটি টাকা দিতে হবে। তাহলে সে শিল্প কীভাবে টিকবে?
এই ব্যবসায়ী নেতা আরও বলেন, দেশের মধ্যে যারা ভ্যাট দেন তাদের ওপরই এর বোঝা চাপানো হচ্ছে। অথচ একটা বড় অংশ ভ্যাট নেটের বাইরে। আমাদের নেট বাড়ানো উচিত। একই সঙ্গে অতি প্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যে ভ্যাট কমানো জরুরি।
প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের আহসান খান তার বক্তব্যে বলেন, ‘একজন ব্যবসায়ী হিসেবে আমরা সরকারের রাজস্ব বাড়াতে অবদান রাখতে চাই, কিন্তু তাই বলে নিত্যখাদ্য পণ্যের ওপর ভ্যাট বাড়ানোর মাধ্যমে নয়।’
সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, বছরে কোটি টাকার বেশি আয় করা ৬৭ শতাংশ ব্যক্তিই করজালের বাইরে রয়েছে। উচ্চ আয়ের এত মানুষ থাকার পরেও– কর ব্যবস্থা তাদেরকে ধরতে ব্যর্থ হয়েছে। এই ধরনের দুর্বল ও অকার্যকর ট্যাক্স-বেজ নিয়ে জিডিপিতে রাজস্বের অবদান (ট্যাক্স-টু-জিডিপি রেশিও) বাড়ানো সম্ভব নয়।
সাম্প্রতিক সময়ে শতাধিক পণ্য ও সেবার ওপর সরকারের কাস্টমস শুল্ক ও ভ্যাট বাড়ানোর সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে তিনি বলেন, এতে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়েছে।
মোয়াজ্জেম বলেন, ‘ আইএমএফ রাজস্ব আদায়ের যে লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দেয়— ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে এরমধ্যেই সেখানে ৮৫ হাজার কোটি টাকার ঘাটতি রয়েছে। রাজস্ব বাড়ানোর চাপের মুখে— সরকার করজাল বিস্তৃত না করে বরং পরোক্ষ করের ওপর নির্ভর করছে।’
এসময় তিনি কর প্রশাসনের দীর্ঘদিনের অদক্ষতার বিষয়ে আক্ষেপ করে বলেন, ‘২০-২৫ বছর ধরে এই ব্যবস্থাকে অটোমেশনের চেষ্টার পরেও— অগ্রগতি হয়েছে সামান্যই। এতে আরও বোঝা যায়, কর প্রশাসনের কর্মকর্তাদের মধ্যেও প্রকৃত সংস্কারের কোনো আগ্রহ নেই, কারণ তাতে ব্যক্তিগত স্বার্থ ক্ষুণ্ণ হবে। এই ধরনের অসংতিগুলো দূর করা না গেলে এবং যথাযথ বিধিমালা প্রয়োগ না করা গেলে— কর আদায়ে উন্নতি হবে না।’
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডসহ রাজস্ব খাতে সার্বিকভাবেই দীর্ঘমেয়াদি সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, আশা করি অন্তর্বর্তী সরকার অন্তত এসব পরিবর্তন শুরু করবে। সংস্কার বাস্তবায়ন করা গেলেই আগামীতে আসা নির্বাচিত রাজনৈতিক সরকার সেগুলো আরও সামনে এগিয়ে নিতে পারবে। এসময় সম্পদ কর চালুরও আহ্বান জানান তিনি।
জাগোনিউজের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক কে এম জিয়াউল হকের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন অর্থনীতিবিদ এবং সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম, পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ড. এম মাসরুর রিয়াজ, অর্থনীতিবিদ ড. এম এম আকাশ, প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান ও সিইও আহসান খান চৌধুরী, বিআইডিএসের সাবেক মহাপরিচালক ড. মুস্তফা কে মুজেরী, রাজস্ব বোর্ডের সাবেক সদস্য রেজাউল হাসান, বিকেএমই সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম, ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি আশরাফ আহমেদ, ক্যাবের সহ-সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন, এসিআই ফুডসের চিফ বিজনেস অফিসার ফারিয়া ইয়াসমিন, এসএমসি এন্টারপ্রাইজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইফ উদ্দিন নাসির, বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সাবেক পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল ও রাজীব চৌধুরী, বাংলাদেশ অটো বিস্কুট অ্যান্ড ব্রেড ম্যানুফ্যাকচার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শফিকুর রহমান ভূঁইয়া, বাপা সভাপতি এমএ হাশেম, ইআরএফ সভাপতি দৌলত আকতার মালা, সাবেক ব্যাংকার সাইফুল হোসেন ও সুপার মার্কেট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. জাকির হোসেন।