Originally posted in আজকের পত্রিকা on 24 October 2024
রাজস্ব আদায়ে বড় ঘাটতি, অর্থনীতিতে দুশ্চিন্তা বাড়াচ্ছে
সরকার ব্যয় করছে বেশি। সে তুলনায় আয় করছে অনেক কম। আয় বাড়াতে রাজস্ব সংগ্রহের লক্ষ্য বাড়ানো হচ্ছে প্রতিবছর। সে ক্ষেত্রে দেশের অর্থনীতির সামর্থ্য বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে না; যে কারণে রাজস্ব আদায়ও সেই হারে বাড়ছে না। পতিত সরকারের সমন্বয়হীন এমন বাজেট পরিকল্পনার চাপে পড়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। রাজকোষে এখন নগদ অর্থের বড় সংকট। চাহিদা অনুযায়ী রাজস্ব আদায় না হওয়ায় ঘাটতির ব্যবধান প্রতি মাসেই ফুলেফেঁপে উঠছে; যা এখন ভবিষ্যৎ ব্যয় চালিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে দুশ্চিন্তার বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে বা তিন মাসে রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ২৫ হাজার ৫৯৭ কোটি টাকা। এ পরিস্থিতিতে খরচের হিসাবে সরকারকে বেছে নিতে হয়েছে অগ্রাধিকার নির্ধারণের পথ। ছাঁট দিতে হচ্ছে অনেক প্রয়োজনীয় ব্যয়। এতেও কূল সামলাতে না পেরে ব্যাংক থেকে ধারকর্জ চালিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি আরও বেশি করে হাত পাততে হচ্ছে দাতাদের কাছে।
দেশীয় প্রেক্ষাপটে সরকারের আয় তুলনামূলক বাড়তে দেখা যায় যখন স্থিতিশীল রাজনীতি ও অর্থনীতি বজায় থাকে। দেশে বর্তমানে উভয়ই অনুপস্থিত।
এনবিআরের তথ্যমতে, গত জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ছিল ৯৬ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এর বিপরীতে আদায় হয়েছে ৭০ হাজার ৯০৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ ঘাটতি ২৬ দশমিক ৫২ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময় রাজস্ব আদায় হয়েছিল ৭৫ হাজার ৪৮৮ কোটি টাকা। এ হিসাবে আগের বছরের তুলনায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন আজকের পত্রিকাকে বলেন, এনবিআরের সক্ষমতার চেয়ে লক্ষ্যমাত্রা বেশি দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে গত জুলাই-আগস্টে আন্দোলনের ফলে অর্থনীতির ওপর একটা প্রভাব পড়েছে। এখনো ব্যবসাপাতি ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না। সব মিলিয়ে রাজস্ব আদায়ে একটা চাপ পড়েছে। করজাল বাড়িয়ে আদায় বাড়াতে পারলেই এই চাপ কমে আসবে বলে মনে করেন তিনি।
এর জন্য কর ফাঁকিবাজদের চিহ্নিত, টাকা পাচার রোধ, আদায়ের নতুন নতুন খাত অন্তর্ভুক্ত করাসহ এ প্রক্রিয়ায় অটোমেশন বাড়ানোয় গুরুত্ব দিতে হবে। এনবিআরেরও সংস্কারের পরামর্শ দেন ফাহমিদা খাতুন।
জুলাইয়ে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ছিল ২৫ হাজার ৫৬৯ কোটি টাকা। আদায় হয়েছে ২০ হাজার ২৬৯ কোটি টাকা। প্রথম মাসে ঘাটতি হয়েছে ৫ হাজার ২৯৯ কোটি টাকা। আগস্টে ৩১ হাজার ৬০৭ কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে রাজস্ব আদায় হয়েছে ২১ হাজার ৬২৯ কোটি টাকা। ঘাটতি পড়েছে প্রায় ৯ হাজার ৯৭৮ কোটি টাকা। সেপ্টেম্বর মাসে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ছিল ৩৯ হাজার ৩২৪ কোটি টাকা। আদায় হয়েছে ২৯ হাজার ২ কোটি টাকা। ঘাটতি হয়েছে ১০ হাজার ৩২১ কোটি টাকা।
সব খাতেই নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি : জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে আমদানি শুল্ক, মূল্য সংযোজন কর (মূসক বা ভ্যাট) ও আয়কর—এই তিন খাতের কোনোটিতেই লক্ষ্য পূরণ হয়নি। তিন খাতেই আগের বছরের চেয়ে রাজস্ব আদায় কমেছে। সবচেয়ে বেশি ঘাটতি হয়েছে আয়কর খাতে। তিন মাসে ঘাটতি হয় সাড়ে ১০ হাজার কোটি টাকার মতো। এই খাতে আদায়ের লক্ষ্য ছিল ৩৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা। আদায় হয়েছে ২৩ হাজার ১৬৪ কোটি টাকা, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৬ কোটি টাকা কম।
আমদানি খাতে তিন মাসে ২৮ হাজার ৬৩৭ কোটি টাকার লক্ষ্যের বিপরীতে আদায় হয়েছে ২২ হাজার ১৪৫ কোটি টাকা। ঘাটতি হয়েছে প্রায় সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকা। আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে দেড় হাজার কোটি টাকা কম আদায় হয়েছে।
আর ভ্যাট বা মূসক আদায়ে ঘাটতি হয়েছে ৮ হাজার ৫৮৮ কোটি টাকা। ভ্যাট আদায় হয়েছে ২৫ হাজার ৫৯৩ কোটি টাকা, যেখানে লক্ষ্য ছিল ৩৪ হাজার ১৮১ কোটি টাকা। আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে তিন হাজার কোটি টাকার মতো কম রাজস্ব আদায় হয়েছে।
চলতি অর্থবছরে এনবিআরের জন্য সব মিলিয়ে ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকার শুল্ক ও কর, অর্থাৎ রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। এনবিআর কর্মকর্তারা মনে করেন, বছরের শেষ দিকে কর আদায়ে গতি বাড়বে।