করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯)-এর কারণে সৃষ্ট সাম্প্রতিক বৈশ্বিক মহামারি বিশ্বের বিভিন্ন দেশের জন্য একটি উদ্বেগজনক স্বাস্থ্য ও অর্থনৈতিক ঝুঁকি তৈরি করেছে। বাংলাদেশও এখন এই ঝুঁকির সম্মুখীন হয়েছে। স্বাস্থ্যখাত, বাণিজ্য, সরবরাহ ব্যবস্থাপনা, সরকারি ব্যয় ও মুদ্রানীতি – এসকল খাত যেসব বিভিন্নমুখী ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে তার মোকাবেলায় সরকারকে লক্ষ্যনির্দিষ্ট সম্প্রসারণধর্মী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
https://www.facebook.com/cpd.org.bd/videos/1468753046652118/
সম্প্রসারণমূখী মুদ্রানীতি, অগ্রাধিকার পুনর্বিবেচনা স্বাপেক্ষে রাজস্ব ও সরকারি ব্যয় ও খাতভিত্তিক বরাদ্দের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। কোভিড-১৯ এর ফলে যে সকল খাত ক্ষতিগ্রস্থ হবে সেগুলোর জন্য সুনির্দিষ্ট বাজেট বরাদ্দ করতে হবে। একই সাথে চিকিৎসার জন্য বর্তমানে প্রয়োজনীয় ঔষধ, স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা ও চিকিৎসকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে, মেডিকাল যন্ত্রপাতি প্রয়োজনমাফিক দেশের বিভিন্ন জায়গায় পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। কোভিড-১৯-এর কারণে নগদ প্রণোদনার বাড়তি চাহিদা বাজেটের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে। এক্ষেত্রে, ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট বরাদ্দের অগ্রাধিকারসমূহ পুনর্বিন্যাস করে কোভিড-১৯-এর ঝুঁকি সামাল দেয়া যেতে পারে। নিম্ন আয়ের মানুষ এই বৈশ্বিক মহামারিতে সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্থ হবে। সরকারকে তাদের জন্য বিশেষ প্রণোদনার ব্যবস্থা নিতে হবে।
২১ মার্চ ২০২১ শনিবার সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি)-এর আয়োজনে ‘করোনা ভাইরাসের স্বাস্থ্য ও অর্থনৈতিক ঝুঁকি এবং করণীয়’ শীর্ষক একটি ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এই সকল পরামর্শ উঠে আসে। ঢাকায় সিপিডি’র কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এ মিডিয়া ব্রিফিং-এর শুরুতে সিপিডি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন মূল প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন।
ড. খাতুন তার উপস্থাপনায় উল্লেখ করেন, স্বাস্থ্যসেবা খাতে অপর্যাপ্ত বাজেট বরাদ্দ (জিডিপির ০.৯ শতাংশ) বাংলাদেশের জন্য দীর্ঘকালীন সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার লক্ষ্যমাত্রা (জিডিপির ১.১২ শতাংশ) এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লুএইচও) পরামর্শের (জিডিপির ৫ শতাংশ) তুলনায় বাংলাদেশের স্বাস্থ্য বাজেটের পরিমাণ অনেক কম।
ড. খাতুন বলেন, বাংলাদেশে স্বাস্থ্যসেবায় নিয়োজিত প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ৫ শতাংশের মতো প্রতিষ্ঠানের জরুরি পরিবহন সেবা রয়েছে এবং প্রায় ২২ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের অ্যালকোহলভিত্তিক জীবাণুনাশক ব্যবস্থা রয়েছে। কোভিড-১৯-এর মতো জাতীয় সংকট মোকাবেলা করার ক্ষেত্রে এসকল প্রয়োজনীয় সেবাসমূহের ক্ষেত্রে অর্থসংকুলান ও যন্ত্রপাতির ব্যাপক অপর্যাপ্ততা রয়েছে।
বর্তমান প্রবণতা যদি অব্যাহত থাকে তাহলে এমনিতেই, ২০১৯ অর্থবছরে মোট রাজস্ব ঘাটতি প্রায় ১০০,০০০ কোটি টাকা হবে বলে অনুমিত হয়, আর এর সাথে কোভিড-১৯ প্রাদুর্ভাবের কারণে অতিরিক্ত অর্থের যোগ করলে এই ঘাটতি আরও বেড়ে যাওয়ার আশংকা রয়েছে। এ মহামারির ফলে তৈরি পোশাক খাত, চামড়া শিল্প, পর্যটন খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়া শুরু হয়েছে। এসকল খাতের উদ্ভুত ঝুঁকি মোকাবেলার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে প্রণোদনা প্যাকেজ বিবেচনা করা উচিত বলে মনে করেন ড. খাতুন।
অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান, সম্মাননীয় ফেলো, ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম, গবেষণা পরিচালক, এবং জনাব তৌফিকুল ইসলাম খান, সিনিয়র রিসার্চ ফেলো, সিপিডি, সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন। তারা সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর প্রদান করেন ও তাদের মতামত তুলে ধরেন।