Originally posted in দেশ রূপান্তর on 25 September 2024
২ মাসে রাজস্ব ঘাটতি ১৫ হাজার কোটি টাকা
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ব্যাপক প্রভাব পড়েছে সরকারের রাজস্ব আয়ে। জুলাই ও আগস্টে সরকারবিরোধী আন্দোলনে দেশের অচলাবস্থায় রাজস্ব আদায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৫ হাজার কোটি টাকারও বেশি কমে গেছে। শুধু লক্ষ্যমাত্রা নয়, আগের বছরের একই সময়ের তুলনায়ও রাজস্ব আদায় কম হয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
এনবিআর জানিয়েছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই-আগস্ট) সরকারের রাজস্ব আদায় হয়েছে ৪২ হাজার ১০৬ কোটি টাকা, যা লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় প্রায় ১৫ হাজার ৬৯ কোটি টাকা কম। এর আগের বছর একই সময়ে রাজস্ব আদায় হয়েছিল ৪৭ হাজার ৫৬২ কোটি টাকা। অর্থাৎ, আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে রাজস্ব আদায় ১১ শতাংশ কম হয়েছে।
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য সরকার এনবিআরের কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা, যা আগের অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের চেয়ে ১৭ শতাংশ বেশি। তবে অর্থবছরের শুরুতেই সরকার পতনের আন্দোলনে দেশব্যাপী অচলাবস্থার কারণে প্রথম দুই মাসে রাজস্ব আহরণ কমে গেছে। আন্দোলনের পর নতুন অন্তর্বর্তী সরকার গঠন হলেও চলতি মাস সেপ্টেম্বরেও তৈরি পোশাক খাতে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে, যা তিন সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে চলছে। আমদানি-রপ্তানি আয়ের একটি বড় অংশই আসে এ খাত ঘিরে। এ ছাড়া জ্বালানি সংকটের কারণে দেশের অধিকাংশ শিল্প পুরোপুরি উৎপাদন করতে পারছে না। এটিও রাজস্ব আয় কমিয়ে দিতে পারে বলে শঙ্কা রয়েছে।
যদিও সম্প্রতি অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, বিগত সরকারের বেঁধে দেওয়া রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অন্তর্বর্তী সরকার কাটছাঁট করবে না।
অবশ্য এনবিআরের রাজস্ব আয়ের চিত্র নিয়ে সন্দেহ রয়েছে বিশেষজ্ঞদের। বিগত সরকারের সময়ে প্রকৃত তথ্য ‘ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে দেখানোর’ প্রবণতা ছিল বলে তারা মনে করেন, যা থেকে অন্তর্বর্তী সরকার বের হয়ে আসার উপর জোর দিচ্ছে। ফলে রাজস্ব আদায় কিছুটা কম হলেও এখন প্রকৃত চিত্র পাওয়া যাচ্ছে বলে মনে করেন তারা। এ ছাড়া রাজস্ব আদায় কম হওয়ার জন্য কর প্রশাসন রাজনৈতিক অস্থিরতাকে দায়ী করেছেন।
খাত সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, গত জুলাইয়ে শিক্ষার্থীদের কোটা আন্দোলনকে ঘিরে রাজনৈতিক অস্থিরতার সময়ে বন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানিসহ দেশের অর্থনৈতিক কর্মকান্ড বাধাগ্রস্ত হয়। পরে তা গণ-আন্দোলনের রূপ নিলে গত ৫ আগস্ট তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। সব মিলিয়ে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার জন্য রাজস্ব আহরণ কম হয়েছে।
চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে আমদানি-রপ্তানি থেকে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৭ হাজার ৩৯০ কোটি টাকা। আর এ সময়ে আয় হয়েছে ১৪ হাজার ৪৮৫ কোটি টাকা, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৬ দশমিক ৭ শতাংশ কম। আর ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ১০ শতাংশ কম।
স্থানীয় পর্যায়ে মূসক থেকে চলতি জুলাই ও আগস্ট মাসে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২১ হাজার ১৫০ কোটি ৮১ লাখ টাকা, যেখানে আহরণ হয়েছে ১৬ হাজার ২৮ কোটি টাকা। লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় এ খাতে আয় কমেছে ২৪ শতাংশের বেশি। আর গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১২ দশমিক ২৩ শতাংশ কম।
রাজস্ব আয়ের খাতগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বাজে অবস্থা দেখা গেছে আয়কর ও ভ্রমণ কর খাতে। চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে এ খাতে আয় কমেছে প্রায় ৩৮ শতাংশ। এ খাতে আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৮ হাজার ৬৩৪ কোটি ৭৫ লাখ টাকা, আর আয় হয়েছে ১১ হাজার ৫৯৩ কোটি টাকা। আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় আয়কর ও ভ্রমণ খাতে আয় কমেছে ১২ দশমিক ৩৩ শতাংশ।
এনবিআর সূত্র বলছে, হিসাব নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে রাজস্ব তথ্য তৈরি করছে এনবিআর। এটি সরকারের সমন্বিত আর্থিক ব্যবস্থাপনা আইবিএএস এর মাধ্যমে প্রকৃত তথ্য বিবেচনায় নেয়। এই ব্যবস্থার মাধ্যমে সরকারের আর্থিক সম্পদ ও দায়বদ্ধতার সম্পূর্ণ চিত্র পাওয়া যায়।
জনাতে চাইলে সিপিডির জ্যেষ্ঠ গবেষক তৌফিকুল ইসলাম খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, চলতি অর্থবছরের বাজেটের লক্ষমাত্রা বাস্তবসম্মত ছিলনা। ফলে এবারে রাজস্ব অর্জন করার অবস্থা আমরা দেখছি না। তবে এখন যেটি করতে হবে তা হচ্ছে, আগামীর কথা চিন্তা করে কর ফাঁকি রোধের উদ্যোগ নিতে হবে।
রাজস্ব আদায়ের সরকারের জন্য দুটো বিষয় গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, বাজেটের লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবসম্মত স্থানে নিয়ে আসতে হবে। যেন একই রকমভাবে ব্যয়টাও যেন বাস্তবসম্মত হয়। তাছাড়া, অর্থবিভাগের ও এনবিআরের তথ্যের যে ঘাটতি থাকে এই বিষয়ে আইবিএএসকে পদক্ষেপ নিতে হবে, যাতে সঠিত তথ্যের ভিত্তিতে পদক্ষেপ নিতে পারে।