চামড়া বিতর্ক: কাঁচা চামড়ার মান, মূল্য, রপ্তানি ও পরিসংখ্যানের গরমিল – খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম, তামিম আহমেদ ও আতিকুজ্জামান সাজিদ

Originally posted in প্রথম আলো on 15 July 2025

চামড়া নিয়ে বসে আছেন আড়তদারেরা।  ফাইল ছবি

প্রতিবছর কোরবানির ঈদ এলেই সবচেয়ে আলোচিত-সমালোচিত বিষয় থাকে কোরবানির চামড়া। এর সরকার নির্ধারিত মূল্যে বিক্রি হবে কি না, চামড়ার মান নষ্ট হওয়ার আগেই সংরক্ষণ হবে কি না, চামড়ার রপ্তানির সুযোগ থাকবে কি না ইত্যাদি। লক্ষ করা যায়, বেশ কিছু বছর ধরেই ঈদ মৌসুমে কাঁচা চামড়ার বাজারে ব্যাপক দরপতন হয়ে আসছে। এই প্রবণতা রোধে চলতি ২০২৫ সালে বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়। এরপরও এ বছর ঈদে চামড়ার দরপতন রোধ সম্ভব হয়নি।

বলা হয়ে থাকে, অতি অল্প সময়ে অধিক পরিমাণে চামড়ার সরবরাহ, আন্তর্জাতিক কমপ্লায়েন্স সনদের অভাব, মধ্যস্বত্বভোগীদের কারসাজির কারণেই মূলত এই দরপতন হয়ে থাকে। তবে এর বাইরের কোন কারণে, বিশেষ করে অব্যবস্থাপনা, অসচেতনতা, চামড়ার মান ইত্যাদি কারণেও চামড়ার দরপতন হয়েছে কি না, সে ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায় না। যদিও ট্যানারিমালিকদের চামড়ার মান নিয়ে নিয়মিত অভিযোগ শোনা যায়।

এমন প্রেক্ষাপটে ঈদুল আজহার সময় কাঁচা চামড়ার দামের এই তীব্র পতনে চালিকা শক্তি হিসেবে চামড়ার মানের দায় কতটুকু এবং অন্যান্য আনুষঙ্গিক বিষয় নিরূপণে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) একটি সাম্প্রতিক গবেষণা পরিচালনা করে। গবেষণাটিতে বাংলাদেশের গবাদিপশু ও কোরবানি–সংক্রান্ত পরিসংখ্যান, চামড়ার মান এবং মূল্য–সম্পর্কিত নানা অসংগতি উঠে আসে।

গবেষণাটি মূলত ঢাকা, বরিশাল, চট্টগ্রাম, নাটোর ও ময়মনসিংহ জেলার ৭৬৮ জন চামড়াবিষয়ক অংশীজনের (কোরবানিদাতা, মাদ্রাসা প্রতিনিধি, মৌসুমি ব্যবসায়ী, ব্যাপারী, আড়তদার ও ট্যানারির কর্মী) ওপরে করা জরিপের ভিত্তিতে পরিচালনা করা হয়।

গবাদিপশু ও কোরবানির পরিসংখ্যানে তথ্য বিভ্রান্তি

সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত এক দশকে দেশে গবাদিপশুর সংখ্যা কিছুটা বেড়েছে; যেমন গরুর সংখ্যা ২০১৩–১৪ সালে ছিল প্রায় ২৩৫ লাখ, যা ২০২৩–২৪ সালে দাঁড়ায় প্রায় ২৫০ লাখে। একই সময়ে মোট গবাদিপশুর সংখ্যা ৫৩৬ লাখ থেকে বেড়ে প্রায় ৫৭৬ লাখে পৌঁছায়। তবে এই সংখ্যা বাস্তবের চেয়ে অনেক বেশি।

আবার এ ধরনের গরমিল কোরবানির সময় পশুসংক্রান্ত তথ্যেও পরিলক্ষিত হয়।

যেমন ২০২৫ সালে কোরবানি করা পশুর সংখ্যা সরকারি হিসাবে ৯১ লাখের বেশি দেখানো হলেও বিসিক চামড়া শিল্পনগরে প্রাপ্ত চামড়ার সংখ্যা ছিল ৫ লাখ ১৮ হাজার (১৬ জুন ২০২৫ পর্যন্ত) এবং এর বাইরে আড়তদারেরা প্রায় দুই লাখ চামড়া সংগ্রহ করেছেন। এ ছাড়া এ ধরনের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, সারা দেশে এ সময় প্রায় ৫৭ লাখ কাঁচা চামড়া সংগ্রহ হয়েছে, যা কি না উল্লেখিত কোরবানির সংখ্যার থেকে বেশ কম।

চামড়ার গুণগত মানের ক্রমাগত অবনতি

২০১৭ সালে প্রথম শনাক্ত হওয়ার পর বাংলাদেশে লাম্পি স্কিন ডিজিজের (এলএসডি) সংক্রমণ গরুর মধ্যে বাড়ছে, যা কাঁচা চামড়ার গুণগত মানের ওপর সরাসরি নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। যদিও প্রতিরোধে ভ্যাকসিন ও নির্দেশনা রয়েছে, কিন্তু যথাযথভাবে প্রয়োগ না হওয়ায় ২০২৫ সালের ঈদে এই রোগে আক্রান্ত গরুর প্রাদুর্ভাব লক্ষ করা গেছে। আবার সাম্প্রতিক সময়ে গরু পরিচর্যার ধরনেও পরিবর্তন এসেছে।

বিশেষত বদ্ধ খামারে গরু পালন এবং মোটাতাজাকরণ ওষুধের প্রয়োগ, গোখাদ্যের মানের অবনতি ইত্যাদি কারণে চামড়ার গুণগতমান ধারাবাহিকভাবে কমেছে।

এর বাইরে ঈদ মৌসুমে বিভিন্ন অব্যবস্থাপনার কারণেও চামড়ার মানের অবনতি লক্ষ করা যায়। সিপিডির সর্বশেষ গবেষণামতে, এবারের ঈদে মাত্র ৪ দশমিক ৮ শতাংশ গরু পেশাদার কসাই দ্বারা জবাই হয়। বাকি ক্ষেত্রে মূলত অপ্রশিক্ষিত মসজিদ-মাদ্রাসাকর্মী বা কোরবানিদাতা নিজে জবাই সম্পন্ন এবং চামড়া ছাড়ানোর কাজ করেছেন। ফলে এ বছর অন্তত ২১ শতাংশ চামড়ায় ফ্লে কাট বা কাটাছেঁড়ার ক্ষত তৈরি হয়েছে, যা চামড়ার মান ও দাম উভয়কেই প্রভাবিত করেছে।

এ ছাড়া অনুপযুক্ত স্থানে গরু কোরবানির ব্যাপক প্রবণতা লক্ষ করা যায়, যা চামড়ার মানে প্রভাব ফেলেছে। সিপিডির তথ্যমতে, এবারের ঈদে প্রধানত ৫২ দশমিক ১ শতাংশ কোরবানি রাস্তায়, ২৬ দশমিক ১ শতাংশ খোলা মাঠে এবং ৮ দশমিক ৫ শতাংশ পরিত্যক্ত জায়গায়, ৪ দশমিক ৮ শতাংশ বাগান ও ১ দশমিক ৬ শতাংশ খালপাড়ে হয়েছে। ফলে পরিবেশগত ও স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি বৃদ্ধির পাশাপাশি চামড়ারও ক্ষতি হয়েছে।

কাঁচা চামড়া সংরক্ষণের চিত্রও আশানুরূপ নয়। ঈদের দিন বৃষ্টিতে ৪৬ শতাংশ কোরবানিদাতা চামড়া খোলা জায়গায় ফেলে রেখেছেন, যা চামড়ার ব্যাকটেরিয়াসহ অন্যান্য সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়িয়েছে। অন্যদিকে এ বছর যদিও সরকার ২০ কোটি টাকার বিনা মূল্যে লবণ দেওয়ার ঘোষণা দেয়, বাস্তবে তা অনেকেই পাননি। অনেকে আবার লবণ চামড়ায় না দিয়ে বরঞ্চ লবণ আলাদাভাবে বিক্রি করেছেন। ফলে লবণ ছাড়াই চামড়া বিক্রির চর্চা বড় আকারে অব্যাহত ছিল। সিপিডির তথ্যমতে, ১০০ শতাংশ কোরবানিদাতা এবং ৮৩ শতাংশ মৌসুমি ব্যবসায়ী চামড়ায় লবণ প্রয়োগ না করেই তা বিক্রি করেন।

আধুনিক হিমাগার, মানসম্পন্ন লবণ ও সংরক্ষণসামগ্রীর সহজপ্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে হবে। বিনিয়োগকারীকে উৎসাহ দিতে করছাড়, সহজ ঋণসুবিধা এবং সরকারি সহায়তায় চামড়া সংগ্রহের অবকাঠামো গড়ে তোলা প্রয়োজন।

চামড়ার মূল্যে অসমতা

২০২৫ সালে গরুর লবণযুক্ত চামড়ার নির্ধারিত দাম ছিল ঢাকায় ৬০–৬৫ টাকা, ঢাকার বাইরে ৫৫–৬০ টাকা, কিন্তু বাস্তবে তার প্রয়োগ ঘটেনি। বেশির ভাগ চামড়া লবণ ছাড়া বিক্রি হওয়ায় লবণসহ নির্ধারিত দাম বিক্রির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হয়নি। সিপিডির গবেষণা অনুযায়ী, জরিপে অংশগ্রহণকারী কোনো ট্যানারিই চামড়া সরকার নির্ধারিত দামে কেনেনি। ট্যানারিগুলো লবণ ছাড়া কাঁচা চামড়া সংগ্রহ করেছেন ২৩-৪৮ টাকার প্রতি বর্গফুট মূল্যে। ঢাকার বাজারে এবারের ঈদ মৌসুমে মাদ্রাসাগুলো কোরবানিদাতাদের কাছ থেকে বিনা মূল্যে পেলেও মৌসুমী ব্যবসায়ীদের কিনে নিতে প্রতি বর্গফুট সর্বোচ্চ ১৭ টাকা খরচ করতে হয়েছে। সরেজমিন দেখা যায়, বেশ কিছু মাদ্রাসা ব্যবসায়ী মূলত মৌসুমি ব্যবসায়ীদের কাছে তাদের চামড়া স্বল্প মূল্যে বিক্রি করেছেন। আবার এই চামড়াগুলোই মৌসুমি ব্যবসায়ীরা ব্যাপারী বা আড়তদারদের কাছে গড়ে সর্বোচ্চ ৩৫ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করেছেন।

তবে চামড়ার মানের সঙ্গে চামড়ার মূল্যবৃদ্ধি এবং হ্রাস বিশেষভাবে লক্ষ করা গেছে। ভালো মানের চামড়ার গড় দাম যেখানে ছিল ৩৯ টাকা প্রতি বর্গফুট, সেখানে নিচু মানের (কাটা বা দাগযুক্ত) চামড়ার দাম ছিল মাত্র ২৭ টাকা—প্রায় ৪৩ শতাংশ কম। এ ছাড়া জরিপে দেখা গেছে, ট্যানারিগুলোর এবারের ঈদে মোট সংগ্রহের প্রায় ১৮ শতাংশ চামড়া ছিল নিচু মানের।

চামড়াশিল্পে বৈচিত্র্যের অভাব

বাংলাদেশের চামড়াশিল্পের অন্যতম বড় দুর্বলতা হলো পণ্যের বৈচিত্র্যের অভাব। এই শিল্প এখনো প্রায় একমাত্র কাঁচা চামড়া বিক্রির ওপর নির্ভরশীল, যার ফলে প্রতিবছর কোরবানির মৌসুমে বিপুল পরিমাণ চামড়া সঠিকভাবে কাজে লাগানো যায় না। অথচ আন্তর্জাতিক বাজারে চামড়া থেকে উৎপন্ন বিভিন্ন পণ্যের রয়েছে বিপুল চাহিদা।

যেমন বন্ডেড লেদার দিয়ে তৈরি করা যায় ফার্নিচার, গাড়ির অভ্যন্তর, ব্যাগ, ঘড়ির বেল্ট ও বইয়ের বাঁধাই; জেলাটিন ব্যবহার হয় খাবার, কসমেটিকস, ওষুধ ও কনফেকশনারিতে; কোলাজেন ব্যবহৃত হয় চিকিৎসা ও স্কিন কেয়ারে; চামড়ার গুঁড়া দিয়ে বানানো যায় ইনসোল ও সস্তা চামড়াজাত পণ্য; চামড়ার বর্জ্য থেকে তৈরি সার ব্যবহৃত হয় জৈব কৃষিতে। এ অবস্থায় প্রয়োজন সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে গবেষণা, প্রযুক্তি এবং বিনিয়োগ যাতে কাঁচা চামড়াকে সম্পূর্ণভাবে কাজে লাগিয়ে বহুমুখী পণ্য তৈরি সম্ভব হয় এবং চামড়াশিল্প আরও টেকসই ও লাভজনক হয়ে ওঠে।

কাঁচা চামড়ার রপ্তানির সীমিত সুযোগ

বিগত বছরগুলোতে কাঁচা চামড়া (প্রসেসড ছাড়া) রপ্তানির ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ থাকলেও এই বছর ঈদে শেষ মুহূর্তে এই নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছিল সরকার। শেষ মুহূর্তে সিদ্ধান্ত হওয়ায় তেমন কোনো প্রভাব দেখা না গেলেও এ ধরনের সিদ্ধান্ত কাঁচা চামড়ার চাহিদা বৃদ্ধি করে, মূল্যবৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

কাঁচা চামড়া (প্রসেসড ছাড়া) রপ্তানি, অন্তত লবণসহ চামড়ার রপ্তানির সুযোগ দেওয়া হলে একদিকে যেমন চামড়ার মূল্য বৃদ্ধি পাবে, অন্যদিকে বেশি দামের জন্য চামড়ার মান বজায় রাখতে সংশ্লিষ্টরা সচেতন হবেন। আবার এর ফলে কাঁচা চামড়াশিল্পে দেশি ও বৈদেশিক বিনিয়োগ বাড়বে। তবে এটি নিশ্চিত করা জরুরি যে কাঁচা চামড়া (প্রক্রিয়াজাতবিহীন) রপ্তানির সুযোগ দেওয়া হলে তা যেন যথেষ্ট আগে ঘোষণা করা হয়। একই সঙ্গে সব সম্ভাব্য কাঁচা চামড়া রপ্তানিকারক যেন এই সিদ্ধান্ত সম্পর্কে ভালোভাবে অবগত হতে পারেন, সেদিকেও লক্ষ রাখতে হবে।

চামড়াশিল্পের উন্নয়নে করণীয়

কোরবানির মৌসুমে কাঁচা চামড়া ব্যবস্থাপনায় বিদ্যমান সংকট মোকাবিলা ও চামড়ার মূল্য নিশ্চিত করতে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদে বাস্তবভিত্তিক ও সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। অতিসত্তর এলএসডি (Lumpy Skin Disease) সম্পর্কে খামারিদের, বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকার মানুষদের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে হবে। এ ছাড়া মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়কে ভ্যাকসিনে ভর্তুকি অথবা বিনা মূল্যে ভ্যাকসিন সরবরাহ করতে হবে।

ঈদ মৌসুমে কোরবানি হওয়া পশুর সংখ্যা নিরূপণে স্থানীয় সরকারকে বিশেষ করে ইউনিয়ন পরিষদকে অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। একই সঙ্গে বিসিককে ব্যবহার করে ব্যাপারী ও ট্যানারি অঞ্চলে চামড়া প্রবেশের ডিজিটাল রেজিস্ট্রেশন চালু করা যেতে পারে। এ ছাড়া গবাদিপশুর প্রকৃত সংখ্যা নিরূপণে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) অধীনে পাঁচ বছর পরপর স্বাধীনভাবে গবাদিপশুর সংখ্যা জন্য শুমারি (সেনসাস) পরিচালনা করা উচিত। যেহেতু কোরবানির সময় মূলত কাঁচা চামড়াই বেচাকেনা হয়, সেহেতু চামড়ার মূল্য নির্ধারণে লবণযুক্ত এবং লবণ ছাড়া উভয় ধরনের দাম রাখতে হবে।

সরকার বা স্থানীয় এনজিওগুলো ভ্রাম্যমাণ লবণ বিতরণ কেন্দ্র চালু করতে হবে, যাতে কোরবানিদাতারা সহজে চামড়ায় লবণ দিতে পারেন। এখানে উল্লেখ্য, শুধু লবণ বিতরণ করলেই হবে না, বরং লবণ কতটুকু ব্যবহার করা হলো এবং হলো না, সেটারও হিসাব রাখা ও তদারকি করা উচিত। কেননা অতিরিক্ত লবণের জন্য চামড়ার যেমন ক্ষতি হতে পারে, আবার লবণ বেশি ছড়িয়ে পড়লে পরিবেশেরও ক্ষতি হতে পারে।

প্রশিক্ষিত কসাইয়ের সংখ্যা বাড়াতে প্রশিক্ষণের আওতা বাড়ানোর পাশাপাশি ঈদের সময় ভ্রাম্যমাণ বা অস্থায়ী কসাইখানা চালু করে বিভিন্ন এলাকায় স্বাস্থ্যসম্মতভাবে জবাইয়ের সুযোগ তৈরি করা যেতে পারে।

চামড়ার মান নিশ্চিত করতে প্রতিটি ইউনিয়নে নির্ধারিত চামড়া কালেকশন পয়েন্ট স্থাপন করা যেতে পারে, যেখানে প্রশিক্ষিত কর্মীরা চামড়া সংগ্রহ ও প্রাথমিক প্রক্রিয়াকরণ করবেন। পাশাপাশি ভালো মানের কাঁচা চামড়া সরবরাহকারী খামারি, আড়তদার বা সংশ্লিষ্ট সরবরাহকারীকে আর্থিক প্রণোদনা (যেমন বিনা মূল্যে লবণ, পরিবহনসেবা ইত্যাদি) দেওয়া যেতে পারে, যা তাদের চামড়ায় মান ধরে রাখার প্রতি উৎসাহী করবে।

চামড়ার মান ও নিরাপত্তা বজায় রাখতে সরল ও সাশ্রয়ী ডিজিটাল ট্র্যাকিং সিস্টেম চালু করা উচিত, যেখানে প্রত্যেক কোরবানির পশুর চামড়ার সঙ্গে একটি ইউনিক আইডি বা স্টিকার দেওয়া হবে। এটি চামড়ার উৎস থেকে শুরু করে ট্যানারি পর্যন্ত প্রতিটি ধাপের তথ্য সংগ্রহ ও যাচাইয়ের সুযোগ দেবে।

কাঁচা চামড়া খাতে দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও পরিবহনব্যবস্থার আধুনিকায়ন জরুরি। আধুনিক হিমাগার, মানসম্পন্ন লবণ ও সংরক্ষণসামগ্রীর সহজপ্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে হবে। বিনিয়োগকারীকে উৎসাহ দিতে করছাড়, সহজ ঋণসুবিধা এবং সরকারি সহায়তায় চামড়া সংগ্রহের অবকাঠামো গড়ে তোলা প্রয়োজন।

আধুনিক স্লটার হাউস তৈরি করা সম্ভব না হলে অন্তত মৌলিক সুবিধাসহ স্লটার হাউসের সংখ্যা বাড়াতে হবে। স্লটার হাউস ব্যবহারে নাগরিকদের আগ্রহী করতে সেখানে বিনা মূল্যে পরিবহনসেবা বা উপকরণ সরবরাহের ব্যবস্থা রাখা যেতে পারে।

দীর্ঘ মেয়াদে এলএসডিসহ অন্য পশুরোগ মোকাবিলায় প্রতিরোধী গরুর জাত উদ্ভাবন এবং সাশ্রয়ী ও কার্যকর চিকিৎসা উন্নয়ন জরুরি। এ লক্ষ্যে বিএলআরআই ও কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর গবেষণাকে উৎসাহিত করতে হবে, যেখানে বেসরকারি ওষুধ কোম্পানি ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর অংশগ্রহণ গুরুত্বপূর্ণ। পাশাপাশি কাঁচা চামড়ার একমুখী ব্যবহার থেকে বেরিয়ে এসে চামড়াভিত্তিক পণ্যের ঝুড়িকে বৈচিত্র্যময় করার উদ্যোগ নিতে হবে।

সর্বোপরি চামড়ার মান উন্নয়ন, আনুষ্ঠানিক সরবরাহ চেইন নিশ্চিতকরণ এবং ট্যানারিশিল্পকে প্রাণবন্ত করতে পারলে যেমন এই শিল্পের উন্নতি হবে, তেমনি চামড়ার মূল্য নিশ্চিত হবে।

  • ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম গবেষণা পরিচালক, সিপিডি
  • তামিম আহমেদ জ্যেষ্ঠ গবেষণা সহযোগী, সিপিডি
  • আতিকুজ্জামান সাজিদ প্রোগ্রাম অ্যাসোসিয়েট, সিপিডি