Originally posted in বণিকবার্তা on 17 February 2021
সুষুম পরিবেশ পেলে নারীরা অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা রাখতে পারে
১৬ জানুয়ারি ২০২১ পিআরআই ও বণিক বার্তার যৌথ উদ্যোগে ‘আর্থিক লেনদেনে জেন্ডার অসমতা দূরীকরণে প্রযুক্তির ভূমিকা’ শীর্ষক একটি অনলাইন বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। আলোচকদের বক্তব্যের গুরুত্বপূর্ণ অংশ নিয়ে এ ক্রোড়পত্র
ফাহমিদা খাতুন
নির্বাহী পরিচালক
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)
এখানে একটি কথাই আলোচিত হচ্ছে যেটা সবসময়ই হয়ে থাকে ও মেয়েদের আর্থিক অগ্রগতির সুপারিশমালায় উল্লেখ আছে যে মেয়েদের অবশ্যই আর্থিক শিক্ষা দিতে হবে। তবে এটা ভুললেও চলবে না, বেশির ভাগ নারী কিন্তু তাদের পরিবারের চিফ ফাইন্যান্সিয়াল অফিসার। তারা কিন্তু আয়, ব্যয়, সঞ্চয় সবকিছুরই ব্যবস্থাপনা করে। সুতরাং ঘরের মধ্যে থেকে তারা শিক্ষিত বা অশিক্ষিত হয়েও আয় উপার্জনকারীদের মতো আর্থিক ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে বেশ পারদর্শী। তাই আমি স্বীকার করি না যে তারা অজ্ঞ। তবে এ কথা সত্য, তারা ক্ষমতায়নের স্বীকৃতি পাচ্ছে না। আর ঘরের বাইরেও নারীদের আর্থিক ব্যবস্থাপনা অনেক ভালো। পাঁচ দশক হতে ক্ষুদ্র ঋণের মাধ্যমে নারীরা যে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ব্যবসা করছেন, তার অধিকাংশই সফল। তারা স্বল্পশিক্ষিত বা অশিক্ষিত হতে পারে, তবে তারা সুন্দরভাবেই আর্থিক ব্যবস্থাপনা করে ব্যবসা বাড়িয়ে নিয়েছেন। তাদের পরিবারের হাল ধরেছেন। এখন কীভাবে আমরা তাদের দক্ষতা বাড়াব এবং সমতাভিত্তিক জনগোষ্ঠীতে অন্তর্ভুক্ত করব, তার জন্য দুটি বিষয় ভাবতে হবে। একটি হলো প্রযুক্তিগত শিক্ষা, আরেকটি হলো আর্থিক সেবা। এই দুটো ক্ষেত্রে নারীরা এখনো পিছিয়ে আছে। আরেকটি বিষয় হলো নারীর শিক্ষার বিস্তারও জরুরি। সাধারণ শিক্ষার সাথে প্রযুক্তিগত শিক্ষাটাও খুব প্রয়োজন। আমরা এখন কভিড সময়ে বিরাজ করছি; তাই কভিডের এই রিকভারি সময়ে অর্থনৈতিক রিবাউন্ডের কথা যখন বলছি তখন অর্থনৈতিক ডিস্ট্রেসড সৃষ্টি হয়েছে সারা পৃথিবীতে। নারীর ক্ষমতায়ন যতটা ছিল সেটাও অনেকখানি বাধাগ্রস্ত হয়েছে। পিছিয়ে পড়ার আশঙ্কাও করা হচ্ছে। বাংলাদেশের পরিসংখ্যান থেকে দেখা যাচ্ছে, শিক্ষাক্ষেত্র থেকে মেয়ে শিশুদের ঝরে পড়ার হার অনেক বেশি। অনেকের বাবা-মা তাদের বিয়ে দিয়ে দিচ্ছেন। আর্থিক সংকটে পড়ে মেয়েদের ঘরে বসিয়ে রাখতে চাইছেন না। আবার অনেকেই প্রযুক্তির অভাবে প্রযুক্তিগত শিক্ষাও গ্রহণ করতে না পেরে ঝরে যাচ্ছে। সুতরাং যখন রিকভার করব তখন এই নারীদের এমনভাবে শিক্ষিত করতে হবে যেন তারা প্রযুক্তিগত শিক্ষার অন্তর্ভুক্ত হতে পারে। পরবর্তী সময়ে আমাদের যখন নতুন কর্মজগত্ সৃষ্টি হবে তখন প্রযুক্তিভিত্তিক জগত্ তৈরি হবে, সেখানে নারীদের অন্তর্ভুক্তির জন্যই প্রযুক্তিগত শিক্ষার বিকল্প নেই। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম এরই মধ্যে দেখিয়েছে যে গ্লোবাল জেন্ডার গ্যাপ ইনডেক্সে ২০১৮ সালের তুলনায় ২০২০ সালে অনেক দেশ পিছিয়ে গেছে। সেখানে ২০১৮ সালে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ৪৮তম আর ২০২০-এ তা ৫০তম। অন্যান্য অনেক দেশও পিছিয়েছে। জেন্ডার গ্যাপ যেটাকে আমরা পূরণ করে ক্রমান্বয়ে এগোচ্ছিলাম কভিডের কারণে সেখানেও পিছিয়ে যাচ্ছি। এই বিষয়গুলো মাথায় রেখে আগামী পরিকল্পনাগুলো সাজাতে হবে। এখানে আর্থিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক নর্মসের কথা বলা হয়েছে, যা সবকিছুর বাইরে একটি সিস্টেমেটিক বর্ডার লাইন। ব্যাংকিং সেবাটা এখনো সাধারণ মানুষের জন্য উন্নত হয়নি, যাতায়াত ব্যবস্থা অনুন্নত। গ্রামের দিকে ব্যাংকে গিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়।
সমাজে পিছিয়ে পড়া মানুষের জন্য সেবা, প্রযুক্তি কিংবা প্রযুক্তির বাইরে তাদের অন্তর্ভুক্ত করতে পারেনি। যেসব নারী ব্যবসা বা ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা তারা কিন্তু ব্যাংকের সুযোগ-সুবিধা নিতে পারছে না, তারা তাদের ব্যবসার মধ্যে অনানুষ্ঠানিকভাবে জড়িত, তাদের অনেকের ট্রেড লাইসেন্স নেই, তাদের অনেকের ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নাম্বার নেই। সুতরাং তারা যখন ব্যাংকে যায়, তখন এসব কাগজপত্র দিতে পারে না। ফলে অনেক সুযোগ থাকার পরও নারীরা সেগুলো নিতে পারছে না। সবশেষে বলতে চাই কভিডের সময় যে আর্থিক ভাতাগুলো নারীদের দেয়া হচ্ছে বা হবে তা যদি ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে দেয়া হয়, তাহলে কিন্তু তার বিনষ্ট হওয়া বা দুর্নীতির সুযোগগুলো বন্ধ হয়ে যাবে। কারো হাতে যদি ৫০০ টাকা পৌঁছার কথা থাকে তাহলে সেটাই পৌঁছবে। ক্ষমতায়ন এবং প্রযুক্তি দুটিকে সমন্বয় করতে পারলে নারীরা এগিয়ে যেতে পারবে।