Published in বাংলা ট্রিবিউন on Friday 17 July 2020
‘করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত ৯৮ শতাংশ মানুষ’
করোনাকালে দেশের ৮৭ শতাংশ দরিদ্র জনগোষ্ঠী খাদ্য ও পুষ্টির সংকটে পড়েছেন। ৯৮.৩ শতাংশ মানুষের জীবনযাত্রা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে খাদ্য অধিকার বাংলাদেশ। সংগঠনটির পরিচালিত এক জরিপে এমন তথ্য উঠে এসেছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. নাজনীন আহমেদ।
বৃহস্পতিবার (১৬ জুলাই) অন্তর্জালে ‘খাদ্য অধিকার বাংলাদেশ’ আয়োজিত ‘দরিদ্র মানুষের খাদ্য ও পুষ্টির উপর কোভিড ১৯-এর প্রভাব’ শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় তিনি এ তথ্য উপস্থাপন করেন।
জরিপের ফলাফল উপস্থাপনকালে ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, দেশের ৮টি বিভাগের ৩৭টি জেলায় দৈবচয়ন পদ্ধতিতে, নির্দিষ্ট প্রশ্নমালার ভিত্তিতে অর্থনৈতিকভাবে ঝুঁকিপূর্ণ ৮৩৪ জন উত্তরদাতার কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। নগর ও গ্রামীণ দরিদ্র মানুষের পাশাপাশি আদিবাসী জনগোষ্ঠীও এতে অন্তর্ভুক্ত ছিল। এদের মধ্যে ৪৩ শতাংশ ছিলেন নারী।
মতবিনিময় সভায় খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুম বলেন, করোনার আগে আমরা দেশের সার্বিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে যে অগ্রগতির কথা বলতাম, তা তো অবশ্যই কিছুটা ব্যাহত হয়েছে। করোনার শুরুতে কোনও গবেষণা ছাড়াই কিন্তু প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, বহু মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়বে। তার নির্দেশে সরকার ইতিমধ্যে ৫ কোটি পরিবারকে খাদ্য সহায়তা দিয়েছে। একই সঙ্গে অর্থ সহায়তাও প্রদান করেছে।
তিনি আরও বলেন, সকল মানুষের খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা করোনাকালে সংকটের মধ্যে পড়েছে। যদিও শুধু চাল দিয়েই খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায় না। করোনা একটি নতুন পরিস্থিতি তৈরি করেছে, তাতে আরও মানুষ দারিদ্র্যে পতিত হতে পারে বলে আমরাও মনে করি।
খাদ্য অধিকার বাংলাদেশ ও পিকেএসএফের চেয়ারম্যান ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, সরকারের উচিত বর্তমান পরিস্থিতিতে দরিদ্রদের সহায়তা বাড়ানো এবং এক্ষেত্রে বেসরকারি খাত ও এনজিওগুলোকেও যুক্ত করা। এ মহামারিকালে আমরা লক্ষ্য করেছি যে, খাদ্যের অধিকার নিশ্চিত করার জন্য আইন থাকা কতটা জরুরি। খাদ্য অধিকার বাংলাদেশের চলমান আন্দোলনের যৌক্তিকতা এখানেই। সংবিধানে ‘অধিকার’ আকারে উল্লেখ না থাকায় মানুষ খাদ্যের জন্য আইনগত দাবি তুলতে পারে না।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, খাদ্য নিরাপত্তার ক্ষেত্রে দেশ এখন একটি জটিল অবস্থার মধ্যে রয়েছে। এখন অর্থনৈতিক কার্যক্রম শুরু হলেও অবস্থার উন্নতি যে খুব হয়েছে তা মনে হয় না। সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রম দিয়ে আমরা সকল দরিদ্র মানুষ তথা তাদের চাহিদাকে পূরণ করতে পারছি না। এজন্য দরিদ্র মানুষের একটি চলমান হালনাগাদ ডাটাবেজ থাকা দরকার। তাহলে খুব সহজেই অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে সহায়তাগুলো পৌঁছানো যাবে।
মতবিনিময় সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন বিআইডিএসের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. এস এম জুলফিকার আলী, আইসিসিও কোঅপারেশন বাংলাদেশের কর্মসূচি প্রধান মো. আবুল কালাম আজাদ, খাদ্য অধিকার বাংলাদেশ শেরপুর জেলা কমিটির সভাপতি নীলিম ম্রং, জামালপুর জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হাই প্রমুখ।