Published in শেয়ার বিজ on Wednesday 18 September 2019
শিল্পে উৎপাদন প্রবৃদ্ধি ৯.৭৮% খেলাপি ঋণ ১৯.৩৭%
২০১৮ সালের এপ্রিল থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত হিসেবে দেশের শিল্প খাতে উৎপাদন প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৯ দশমিক ৭৮ শতাংশ। অপরদিকে গত মার্চ শেষে শিল্প খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় সাড়ে ৩৯ হাজার কোটি টাকা। খেলাপির হার ১৯ দশমিক ৩৭ শতাংশ। অর্থাৎ শিল্প খাতে উৎপাদন প্রবৃদ্ধির দ্বিগুণ হার ছিল খেলাপি ঋণে।
এদিকে চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে শিল্পে বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ কমেছে ১০ দশমিক ১৯ শতাংশ। শিল্পে ঋণ প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়া ও খেলাপি বৃদ্ধির বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ খাতের ঋণের অর্থের পুরোটা বিনিয়োগ হয়নি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য বলছে, ২০১৮ সালের এপ্রিল থেকে গত মার্চ পর্যন্ত এক বছরের হিসাবে দেশের সামগ্রিক শিল্প খাতে গড় উৎপাদন প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৯ দশমিক ৭৮ শতাংশ। কিন্তু ২০১৭-১৮ অর্থবছরের জুলাই-মার্চের তুলনায় গত অর্থবছরের (২০১৮-১৯) অর্থাৎ গত জুলাই-মার্চ পর্যন্ত সময় শেষে শিল্পে উৎপাদন প্রবৃদ্ধির হার ১৪ দশমিক ৬৪ শতাংশ।
এ সময়ে সবচেয়ে বেশি ৩৪ দশমিক ৫৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে ওষুধ খাতে। এর পরই ৩৪ দশমিক ৩৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে রাসায়নিক দ্রব্য ও সংশ্লিষ্ট খাতে। তৈরি পোশাক খাতে হয়েছে ১৬ দশমিক ৫৯ শতাংশ। মাসভিত্তিক হিসাবে ২০১৮ সালের মার্চ থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত এক বছরে তৈরি পোশাক খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১১ দশমিক ২১ শতাংশ।
এদিকে চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিক শেষে শিল্প খাতে খেলাপির পরিমাণ আরও বৃদ্ধি পাবে। তাদের মতে, শিল্প খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ হু-হু করে বাড়ছে। ফলে খাতে ঋণ বিতরণের প্রবৃদ্ধিও কমছে। গত এক বছরের তুলনায় কমেছে ১০ শতাংশের বেশি।
এ বিষয়ে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো ড. মুস্তাফিজুর রহমান শেয়ার বিজকে বলেন, আমাদের শিল্পে উৎপাদনের গড় প্রবৃদ্ধির চেয়ে খেলাপি ঋণের হার বেশি। কারণ হচ্ছে খেলাপি ঋণ আদায়ে শিথিলতা রয়েছে। কিছু ঋণ খেলাপি হচ্ছে ইচ্ছাকৃতভাবে। এসব ঋণ বিতরণেও রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহার হয়েছে। দুর্নীতির মাধ্যমে দেওয়া এসব ঋণগুলোও খেলাপি হয়েছে, এগুলো শনাক্ত করতে হবে। আর যথাসময়ে গ্যাস, বিদ্যুৎ ও আনুষঙ্গিক সেবার সংযোগ না পাওয়ার কারণে যেসব ঋণ খেলাপি হয়েছে, তাদের বিষয়ে নীতিগত সুবিধা দিতে হবে।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংককেও নিজের সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে। শিল্পে যাওয়া ঋণের অনেক অর্থই বিনিয়োগ হয়নি। সেগুলো শনাক্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার দায়িত্ব বাংলাদেশ ব্যাংকের ওপরই বর্তায়। এজন্য প্রয়োজনীয় আইনি প্রস্তুতি নিতে হবে।
জানা গেছে, চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে জানুয়ারি-মার্চ সময়ে শিল্প খাতে নতুন ঋণ বিতরণ করা হয়েছে ১৫ হাজার ২৪৯ কোটি টাকা, যা গত বছরের এ সময়ে ছিল ১৬ হাজার ৯৭৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ গত বছরের প্রথম প্রান্তিকের তুলনায় চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে ১০ দশমিক ১৯ শতাংশ ঋণ বিতরণ কম হয়েছে।
অবশ্য এ সময়ে আদায়ের হার বৃদ্ধি পেয়েছে। গত বছরের প্রথম প্রান্তিকে আদায় হয়েছিল ১৬ হাজার ৫১৯ কোটি টাকা। চলতি বছরের আলোচিত সময়ে হয়েছে ১৮ হাজার ৬৭০ কোটি টাকা।
মার্চ শেষে শিল্পে বিতরণকৃত ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে দুই লাখ তিন হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা। খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩৯ হাজার ৪৮১ কোটি টাকা। খেলাপির হার দাঁড়িয়েছে ১৯ দশমিক ৩৭ শতাংশ। মোট খেলাপির মধ্যে বৃহৎ বা বড় শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছেই বকেয়া ২৭ হাজার ৭৪৮ কোটি টাকা।
একসময় রাজনৈতিক গোলযোগের দোহাই দিয়ে ঋণ পরিশোধে গড়িমসি করেছেন একশ্রেণির ব্যবসায়ী। এখন রাজনৈতিক গোলযোগ না থাকলেও তারা ঋণ পরিশোধ করছেন না। ফলে এ খাতে পুঞ্জীভূত বকেয়ার পরিমাণ ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ পরিমাণ বকেয়া ব্যাংক খাতের মোট খেলাপি ঋণের প্রায় এক-চতুর্থাংশ, যা পূর্বে এক-তৃতীয়াংশ ছিল। এসব ঋণের বড় অংশই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের।
জানা গেছে, গত বছরের জুন শেষে দেশের শিল্প খাতে বকেয়া ব্যাংক ঋণের পরিমাণ ছিল ৩৩ হাজার ৪২৯ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। গত মার্চ শেষে তা ৩৯ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। গত ৯ মাসে এ খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে ছয় হাজার ৫১ কোটি টাকা। গত জুন শেষে ব্যাংক খাতে মোট খেলাপির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে এক লাখ ১৪ হাজার ৪২৫ কোটি টাকা।