গণতন্ত্রের পথে যাত্রা কখনোই মসৃণ হয় না – ড. রওনক জাহান

Originally posted in বণিকবার্তা on 5 December 2024

ড. রওনক জাহান

রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো ড. রওনক জাহান সমকাল-এর সঙ্গে কথা বলেছেন জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপট ও গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী রাজনৈতিক বাস্তবতা নিয়ে। সেখানে উঠে এসেছে রাজনীতিতে বিভাজন, নির্বাচন ও রাষ্ট্রীয় সংস্কারের বিভিন্ন দিক। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মাহবুব আজীজ

৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়। একজন সমাজবিজ্ঞানী হিসেবে গণতন্ত্রের পথে এই যাত্রাকে কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন?

গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে স্বৈরাচারী শাসনের পতন হওয়ার পর জনমানসের মধ্যে অনেক আকাঙ্ক্ষা জন্ম নেয়। কিন্তু গণতন্ত্রের পথে যাত্রা কখনোই মসৃণ হয় না। কারণ, পুরোনো অনেক অগণতান্ত্রিক চর্চা রয়ে যায়। যারাই ক্ষমতায় যান, তাদের পক্ষে পুরোনো পথে হাঁটা সহজ। নতুন পথে হাঁটতে গেলে অনেক ধৈর্য ও বিচক্ষণতার প্রয়োজন। বৃহৎ সব রাজনৈতিক শক্তির মধ্যে গণতান্ত্রিক চর্চার ব্যাপারে ঐকমত্যের প্রয়োজন। অনেক সময় সেই নতুন পথে হাঁটতে গেলেও যে সাফল্য আসবে, তাও নয়। মাঝে মাঝেই হোঁচট খেতে হবে। এজন্য অনেক সময় মানুষ পুরোনো পথেই হাঁটে।

আমরা এর আগে ১৯৯০ সালে একবার সামরিক শাসনের পতন ঘটিয়েছিলাম এক গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে। তারপর আমাদের যে নতুন যাত্রা শুরু হয়, সেই যাত্রা প্রথমদিকে কিছুটা হলেও সামনে এগিয়েছিল। চারটা জাতীয় নির্বাচন হয়েছিল নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে; যার মধ্য দিয়ে ক্ষমতার পালা-বদল হয়েছিল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে। কিন্তু ২০০৬-০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারই অকার্যকর হয়ে গেল! আমরা দুই বছরের মতো সেনা-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার দ্বারা শাসিত হলাম। এরপর ২০০৯ সালে মনে হয়েছিল, আমরা গণতন্ত্রের পথে আবার নতুনভাবে যাত্রা আরম্ভ করতে পারব; যে দুই দলের মধ্যে পালা-বদল হয়েছে, তারা একে-অপরের প্রতি আরেকটু সহনশীল হবেন। আমরা দেখলাম, তা আর হলো না।

ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগ সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিকভাবে পরপর তিনটি একপক্ষীয় নির্বাচন করেছে। এরপর আমরা আবার গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ২০২৪ সালে আরেকবার গণতন্ত্রের পথে হাঁটার সুযোগ পেয়েছি।

প্রতিবারই আমরা রাজনীতিতে গণতান্ত্রিক চর্চার সংকটে পড়ছি। রাজনৈতিক দল ও রাজনীতিবিদরা, যারা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখেন; তারা যদি গণতন্ত্রের প্রতি দায়বদ্ধ না হন, তাহলে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা প্রায় অসম্ভব। এখন আমাদের প্রধান চ্যালেঞ্জ হলো– আমরা কীভাবে রাজনৈতিক দল ও রাজনীতিবিদদের গণতান্ত্রিক আচরণ, গণতান্ত্রিক চর্চার প্রতি সত্যিকারভাবে দায়বদ্ধ রাখতে পারব। নির্বাচনের আগে ও পরে সরকারি ও বিরোধী দলগুলোকে যদি আমরা সার্বক্ষণিক দায়বদ্ধতার মধ্যে না আনতে পারি, তাহলে আমরা আবার পথভ্রষ্ট হতে পারি। এর জন্য দরকার মিডিয়া ও নাগরিক সমাজের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা।

এর আগে যতবার সরকারবিরোধী আন্দোলন হয়েছে, বা গণঅভ্যুত্থান হয়েছে, তাতে নেতৃত্ব দিয়েছে রাজনৈতিক দলগুলো। এবার নেতৃত্বে কোনো রাজনৈতিক দল ছিল না। এ আন্দোলনের ভিন্নতা কোথায়?

এর আগে অনেক রাজনৈতিক আন্দোলন হয়েছে; মাঝে মাঝে সরকারবিরোধী আন্দোলনও হয়েছে। সেগুলো বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ছাত্র-জনতা মিলেই করেছে। ছাত্ররা নেতৃত্বের ভূমিকায়ও ছিল। আমরা যদি ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের দিকে তাকাই, দেখা যাবে– সেটি ছাত্ররাই করেছে। পরে দেশের জনসাধারণ এতে সমর্থন দিয়েছিল। ১৯৫৪ সালে যে মুসলিম লীগ সরকারের পতন হলো, সেটি ভাষা আন্দোলনের প্রভাবেই হয়েছে। এরপর আমরা যদি ১৯৬৯ সালের আইয়ুববিরোধী আন্দোলন দেখি, সেখানেও ছাত্ররা নেতৃত্ব দিয়েছে। ছাত্রদের সঙ্গে শ্রমিক শ্রেণিও ওই আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে। বাংলাদেশ হওয়ার পর ১৯৯০-এর গণঅভ্যুত্থানেও ছাত্রদের অগ্রণী ভূমিকা ছিল। অবশ্যই ওই আন্দোলনে দেশের সব রাজনৈতিক দলের ঐক্যবদ্ধ অংশগ্রহণ সরকার পতনে কেন্দ্রীয় ভূমিকা রেখেছে।

যে কোনো সফল আন্দোলনের একটা পটভূমি থাকে। দেখা যাবে, সফল হওয়ার আগে একই বিষয়ে দুই-তিনটা আন্দোলন হয়েছে, সেগুলো হয়তো সরকার দমন করে দিতে পেরেছে। এরপর একটা আন্দোলন হয়তো সফল হয়। কারণ, ততদিনে হয়তো বা জনসাধারণের মধ্যে অনেক সমর্থন আদায় করা সম্ভব হয়। এরশাদবিরোধী আন্দোলনের ক্ষেত্রে আমরা দেখেছি, এরশাদ ক্ষমতায় আসার পরপরই ছাত্ররা বেশ কয়েকবার আন্দোলন করেছে; কিন্তু সেগুলো দমন করা সম্ভব হয়। এরপর বড় দুই দলসহ সব দলই এরশাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করে। শেষ পর্যন্ত ১৯৯০ সালে আন্দোলন সফল হয়।

এবার ২০২৪-এর জুলাই-আগস্টের আন্দোলন সফল হয়েছে। তার আগে ছাত্ররা কয়েকটি আন্দোলন করেছে। ২০১৮ সালে তারা কোটা সংস্কার ও নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলন করেছে। সেগুলো সরকার দমন করে দিতে পেরেছিল। রাজনৈতিক দলগুলো, বিশেষত বিএনপি সরকার পতনের একদফা আন্দোলন বেশ কয়েক বছর ধরেই করছিল। বিগত সরকার অগণতান্ত্রিকভাবে তিনটা জাতীয় নির্বাচন করেছে। বহু বছর ধরে মানুষের মধ্যে ক্ষোভ জমছিল। তারই পরিপ্রেক্ষিতে শেষ পর্যন্ত জুলাইয়ের ছাত্র আন্দোলন খুব দ্রুত জনগণের ব্যাপক সমর্থন পেয়েছিল। কোনো আন্দোলনই মাত্র একবার করেই তা সফল হয় না। তার পেছনে অনেক আন্দোলন-সংগ্রাম থাকে, যা হয়তো সফল হয়নি।

এবারের আন্দোলন প্রধানত ছাত্ররাই করেছে। খুব অল্প সময়, মাত্র ৩৬ দিনের মধ্যে সরকারের পতন হয়েছে। এই আন্দোলনে কিছু ভিন্নতা দেখা গেছে। এবারের আন্দোলনে যত রক্তক্ষরণ হয়েছে, হতাহত হয়েছে; এর আগে এত বিশাল আকারে হতাহতের ঘটনা দেখা যায়নি। এর আগে যেসব আন্দোলন হয়েছে, সেখানে রাজনৈতিক দলগুলোর ভূমিকা বেশ দৃশ্যমান ছিল। সেটি এবার সেভাবে দৃশ্যমান ছিল না। রাজনৈতিক দলের কর্মীরা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছিলেন; কিন্তু আন্দোলনের সময় সেভাবে প্রকাশ করা হয়নি। এবারের আন্দোলনের আরেকটা ভিন্নতা হলো– ছাত্ররা প্রচলিত রাজনৈতিক দলগুলোর বাইরে নিজেদের একটা স্বতন্ত্র পরিচিতির প্রকাশ ঘটিয়েছে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ নামে। আন্দোলনের পরও তারা নিজেদের স্বাতন্ত্র্য বজায় রাখার চেষ্টা করে চলেছে। এসবের ফলে এবার আন্দোলন শেষ হওয়ার অল্প সময়ের মধ্যে আন্দোলনে কার কী ভূমিকা ছিল, কার জন্য এ আন্দোলন সফল হয়েছে, তা নিয়ে একটা বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। এর আগে আন্দোলন শেষ হওয়ার অল্প সময়ের পরই যারা মিলে একটা আন্দোলন করেছে, তাদের মধ্যে এমন বিভাজন দেখা যায়নি।

দেশের প্রচলিত রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি কি জনগণের অস্থার অভাব দেখা দিয়েছে?

রাজনৈতিক দলগুলো নিয়ে জনসাধারণের মধ্যে হয়তো এখন খুব ভালো ধারণা রয়েছে, এমন নয়। তারা দেশের দুই বড় দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে কয়েকবার ক্ষমতায় থাকতে দেখেছে। জনগণ জানে, কোনো দল যখন ক্ষমতায় আসে, তখন তারা সহজে ক্ষমতা ছাড়তে চায় না। তারা হয়তো নির্বাচন নিয়ে নানা কারচুপি করে। ক্ষমতাসীনদের সমর্থকরা বিভিন্ন এলাকায় অনেক বেশি প্রভাবশালী হয়ে যান। চাঁদাবাজিসহ তারা বিভিন্ন দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েন। রাজনীতির দুর্বৃত্তায়ন এবং অর্থনীতির লুটপাট যে হয়, সেটি জনগণ ভালোই জানে। তবে রাজনৈতিক দলগুলো সম্পর্কে খুব ভালো ধারণা না হলেও জনগণ এটাও জানে যে, শেষ পর্যন্ত নির্বাচিত রাজনৈতিক দল দিয়েই দেশ পরিচালনা করতে হবে। সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা হলেই আমি যে কথা শুনি, তা হলো– ‘আপা, আপনি অনেক লেখাপড়া জানেন। আপনি অনেক ভালো মানুষ। কিন্তু আপনাদের মতো ভালো মানুষ, বা এত লেখাপড়া জানা লোক এ দেশে রাজনীতি করতে পারবে না। রাজনীতি করতে হলে রাজনীতিবিদদেরই দরকার হবে।’ যেহেতু আমি এ বিষয়ে গবেষণা করিনি, তাই এ কথা বলতে পারব না যে, সব রাজনৈতিক দলের প্রতি জনগণের অনাস্থা তৈরি হয়েছে কিনা। আমার ধারণা, জনগণকে জিজ্ঞেস করলে তারা হয়তো এখনও একটা নির্বাচনের কথা বলবে; যেখানে রাজনৈতিক দলগুলোই অংশগ্রহণ করবে।

সংবিধান সংশোধন, পুনর্লিখন নিয়ে বিভিন্ন মহলে আলোচনা-বিতর্ক চলছে। এ বিষয়ে আপনার মতামত কী?

আমার মতে, এখনই সংবিধান সংশোধন, পুনর্লিখন বা নতুন করে প্রণয়নের বিতর্ক আরম্ভ করার দরকার নেই। আমাদের আগে জানতে হবে, আলোচনা করতে হবে, আমরা সংবিধানের কী কী সংশোধন চাই এবং কেন চাই। এসব বিষয়ে প্রচুর আলোচনা করতে হবে। এরপর দেখতে হবে, কোন কোন পরিবর্তনের বিষয়ে ঐকমত্য আছে বা নেই। তারপরই হয়তো আমরা এ আলোচনায় যেতে পারি যে, সংবিধানের সংশোধন করলেই চলবে কিনা। সংবিধান রাষ্ট্রের একটি মৌলিক দলিল। জাতীয় ঐকমত্য ছাড়া এর পরিবর্তন করা যুক্তিসংগত নয়। বর্তমান পরিস্থিতিতে সত্যিকারের জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা করা দুরূহ। এ ছাড়াও সংবিধান সংশোধনের একটি সাংবিধানিক প্রক্রিয়া আছে; যা আমাদের মেনে চলতে হবে।

দ্যমান ব্যবস্থায় রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন ও অর্থনৈতিক লুটপাট থেকে মুক্তির উপায় কী?

রাজনীতিতে দুর্বৃত্তায়ন ও অর্থনীতিতে লুটপাট পরস্পর সম্পর্কযুক্ত। এর থেকে খুব সহজে বের হওয়ার তেমন কোনো উপায় নেই। আমাদের দেশে দলগুলো এবং নির্বাচনে অর্থায়ন অনেকটা শক্তিশালী গোষ্ঠী বা ব্যক্তির মাধ্যমে হয়ে থাকে, যারা রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত এবং রাজনীতির কাছাকাছি থাকাতেই হয়তো তারা অর্থনৈতিক লুটপাটের সঙ্গে যুক্ত। যদি আমরা রাজনৈতিক দলের অর্থায়নে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে পারি বা নির্বাচনে বিপুল অর্থের ব্যবহার কমিয়ে আনা যায়; তাহলে রাজনীতিতে দুর্বৃত্তায়ন ও অর্থনীতিতে লুটপাট অনেকটা নিয়ন্ত্রণে আনতে পারব। এজন্য দরকার হবে একসঙ্গে সব রাজনৈতিক দলের অঙ্গীকার। আমাদের দেশে রাজনীতি, অর্থনীতিসহ সব ব্যাপারে আমরা যে সংস্কার চাচ্ছি, তার কোনোটাই সম্ভব হবে না, যদি না আমরা এসব ব্যাপারে একটি রাজনৈতিক ঐকমত্য গড়ে তুলতে পারি।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম তিন মাসকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?

অন্তর্বর্তী সরকারের তিন মাস হয়েছে। তা খুব বড় সময় নয়। দায়িত্বে এসে এ সরকার একটা ভঙ্গুর অর্থনীতি পেয়েছে। রাষ্ট্র কাঠামো, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও একটা ভঙ্গুর অবস্থায় ছিল। অতএব তাদের একটা বিরাট চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। দেশ চালানো, সরকারের নিয়মিত কাজ চালিয়ে যেতে হয়েছে। সেই সঙ্গে দেশের মানুষের আকাঙ্ক্ষা সামনে রেখে তারা বেশ কিছু সংস্কারের কাজও হাতে নিয়েছে। তারা কোনো বৃহৎ দলের সমর্থন নিয়ে ক্ষমতায় আসেনি। সব মিলিয়ে বিরাট চ্যালেঞ্জ নিয়ে তাদের কাজ করতে হয়েছে। আমি বলব, তাদের প্রচেষ্টার কোনো ঘাটতি নেই।

অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে বিএনপি রোডম্যাপ (রূপরেখা) ও দ্রুত নির্বাচন দেওয়ার দাবি জানিয়েছে। বিষয়টি কীভাবে দেখছেন?

বিএনপি যে রোডম্যাপ (রূপরেখা) ও দ্রুত নির্বাচনের দাবি জানাবে, এটিই স্বাভাবিক। আওয়ামী লীগ যেহেতু মাঠে নেই; তারাই এখন দেশের সবচেয়ে বড় দল। তারা বহু বছর ধরে, ২০০৮ সালের নির্বাচনের পর কোনো সুষ্ঠু নির্বাচনে অংশ নিতে পারেনি। একটি প্রতিযোগিতামূলক, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য সংগ্রাম করে চলেছে। নির্বাচনের বাইরে থেকে দলকে সংগঠিত রাখা একটি দুরূহ কাজ, যা তারা এতদিন করেছে। অতএব তারা যে একটি রূপরেখা চাইবে এবং দ্রুত নির্বাচনের দাবি জানাবে, এমনটাই হওয়ার কথা।

নির্বাচনের আগে প্রয়োজনীয় সংস্কারের কথা জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। এ ক্ষেত্রে কোন বিষয়গুলো অগ্রাধিকার দেওয়া দরকার বলে মনে করেন?

একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য এবং যে দলই নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় আসুক না কেন, তারা যেন জবাবদিহির বাইরে না যেতে পারে; তার জন্য প্রশাসন, বিচার ব্যবস্থা ও পুলিশের কিছু সংস্কার আনতে হবে। ভবিষ্যতে কোনো সরকার যেন দলীয়করণ না করতে পারে সেই ধরনের সংস্কারগুলো অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত। সেই সঙ্গে অর্থনীতির ক্ষেত্রে যেসব সংস্কারের কথা বলা হচ্ছে ব্যাংকিং ও ফিন্যান্সিয়াল খাতে, যা আমাদের অর্থনীতিকে দুর্বল করে দিয়েছে; এগুলোকে অগ্রাধিকার দেওয়া দরকার।

আমাদের গণতান্ত্রিক চর্চার সংকটগুলো কী কী?

বিভিন্ন রাজনৈতিক দল বা নাগরিক সমাজেও আমি দেখেছি, গণতান্ত্রিক চর্চায় যে ধরনের সহিষ্ণুতার দরকার হয়, ভিন্নমত প্রকাশের স্বাধীনতার দরকার হয়, আমাদের মধ্যে তার অভাব রয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের জন্য এখন আরও বেশি প্রকট হচ্ছে। যে কেউ যা কারও সম্পর্কে একটা অভিমত প্রকাশ করে ফেলতে পারেন এবং যে কাউকে একটা তকমা লাগিয়ে দেওয়ার চর্চা দেখা যাচ্ছে। এগুলো বহুমত চর্চার ক্ষেত্রে একটা বড় সংকট সৃষ্টি করছে।

দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আপনার মতামত জানতে চাই।

আমরা বারবার গণতন্ত্রের যাত্রায় হোঁচট খাচ্ছি। ভবিষ্যতেও এ যাত্রা খুব মসৃণ হবে না। সবাইকে অনেক ধৈর্য দেখাতে হবে; ভিন্নমতের প্রতি শ্রদ্ধা দেখাতে হবে। গণতন্ত্র মানেই বহুমতের সমাবেশ। কোনো ভিন্নমতকে বের করে দেওয়া নয়। একদিক থেকে হয়তো বলি, আমরা ‘ইনক্লুসিভ’ বা অন্তর্ভুক্তিমূলক। কিন্তু আজকাল ‘ক্যানসেল কালচার’ও দেখা যাচ্ছে। আবার আমাদের দেশে রাজনৈতিক সহিংসতাও আছে বহু বছর ধরে। অথচ গণতন্ত্র মানেই শান্তিপূর্ণভাবে রাজনৈতিক এবং রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার হস্তান্তর ঘটানো। অতএব শান্তিপূর্ণভাবে এবং পরস্পরের ভিন্নমতের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ধৈর্যের সঙ্গে ভবিষ্যতের রূপরেখায় পথচলাই আমাদের জন্য এক বিরাট চ্যালেঞ্জ।

সমকালকে সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

আপনাকেও ধন্যবাদ।