Originally posted in বণিক বার্তা on 19 April 2023
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও চেয়ারম্যান ড. রওনক জাহান। প্রখ্যাত এ রাষ্ট্রবিজ্ঞানী শিক্ষকতা করেছেন হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে। বর্তমানে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো হিসেবে নিয়োজিত রয়েছেন তিনি। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাস ও এর সঙ্গে চলমান রাজনীতির মেলবন্ধন নিয়ে কথা বলেছেন বণিক বার্তার সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আনিকা মাহজাবিন
পশ্চিমারা যেভাবে উন্নয়ন ও গণতন্ত্র বাস্তবায়নের কথা বলে, সেটি আমাদের দেশে কতটুকু সম্ভব?
গণতন্ত্র শুধু যে পশ্চিমাদের ধারণা, আমাদের নয়; সেটি মানতে আমি নারাজ। একটি দেশে গণতন্ত্র কতটুকু প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পাবে, তা অনেকটাই নির্ভর করে কারা ক্ষমতায় আছে এবং গণতন্ত্রের প্রতি তাদের অঙ্গীকার কেমন তার ওপর। যারা ক্ষমতায় আছে তারা যদি অঙ্গীকারবদ্ধ থাকে, তাহলে এটি বাস্তবায়ন সম্ভব। অতএব এটা এমনভাবে বলা যাবে না—গণতন্ত্রটা শুধু পশ্চিমাদের সংস্কৃতিতে মানায়, আমাদের মানায় না। এজন্য দরকার রাজনীতিবিদদের গণতান্ত্রিক পরিবেশ তৈরি করার জন্য অঙ্গীকার। দেশের মানুষ গণতন্ত্র চায় না, তাও বলা যাবে না। কেননা গণতন্ত্রের জন্য নানা সময় এ দেশের মানুষ আন্দোলন করেছে।
১৯৭০ সালের নির্বাচন বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে জনমত তৈরিতে ভূমিকা রেখেছে। স্বাধীনতার ৫০ বছর পর এসে এখনকার নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে আপনার মূল্যায়ন শুনতে চাই।
১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে জেতার পর পাকিস্তানি শাসকরা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর না করে আমাদের ওপর গণহত্যা শুরু করল। তখন সারা পৃথিবীতে আমরা প্রচার করতে পেরেছিলাম, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে বাঙালি জাতীয়তাবাদী আন্দোলন এবং আমাদের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে গণতান্ত্রিক জনসমর্থন আছে। এ গণতান্ত্রিক বৈধতা বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রাম এবং মুক্তিযুদ্ধের সময়ের সরকারকে আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিতি ও বৈধতা দিতে সাহায্য করে। স্বাধীনতার আগে আমরা দেখেছি পাকিস্তানি শাসকরা বারবার নির্বাচন পিছিয়ে দিয়েছে কিংবা নির্বাচনের ফলাফল মেনে নেয়নি। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের বক্তৃতায় এর একটা সংক্ষিপ্ত বিবরণ আছে। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট জয়লাভের ৯০ দিনের মধ্যে সেই সরকারকে পাকিস্তানি শাসকরা ক্ষমতাচ্যুত করে। ১৯৫৬ সালের নির্বাচনের আগে সামরিক শাসন জারি করে আইয়ুব খান ক্ষমতা নিয়ে নেন।
সে সময় আমরা ভেবেছিলাম, বাংলাদেশ স্বাধীন হলে অবশ্যই একটি গণতান্ত্রিক পরিবেশ গড়ে তোলা হবে, যেখানে সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা বজায় থাকবে। কিন্তু আজ অবধি তেমন নির্বাচন ব্যবস্থা বাস্তবায়ন হতে না পারাটা অত্যন্ত দুঃখজনক। বিগত ৫২ বছরে আমরা তা করতে পারিনি। সুষ্ঠু নির্বাচন ব্যবস্থা বাস্তবায়ন সম্ভব না হওয়ার পেছনে কারণ হলো যারা ক্ষমতায় যায় তারা আর ক্ষমতা ছাড়তে চায় না। সেজন্য তারা নির্বাচনকে ‘ইঞ্জিনিয়ারিং’ করতে চায়। নির্বাচনে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের কাজ শুরু করেন প্রথম সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান। তার পরের সামরিক শাসক এরশাদও তা করেছিলেন। আমরা ভেবেছিলাম ১৯৯১-এর পর রাজনৈতিক সরকার নির্বাচন ইঞ্জিনিয়ারিং থেকে বেরিয়ে আসবে। কিন্তু তারা সেটি করেনি। প্রথম বিএনপি শাসিত সরকারের সময় আমরা মাগুরার ও পরে মিরপুরের বাই-ইলেকশনের নির্বাচনে অনিয়ম দেখলাম।
আওয়ামী লীগ আন্দোলন করে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করে। এরপর ১৯৯৬ ও ২০০১—দুবার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মাধ্যমে দুটো নির্বাচন হয়। পর্যবেক্ষক ও জনসাধারণের কাছে নির্বাচনের ফলাফল সঠিক মনে হয়েছিল। কিন্তু যে দল হেরেছে, তারা বলেছে কারচুপি হয়েছে। নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হওয়া নির্বাচনে প্রত্যেকবারই ক্ষমতার পালাবদল হয়েছে। এরপর আমরা দেখলাম ২০০৬ সালে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারকেও দলীয়করণ করার চেষ্টা। তারপর আমরা দুই বছর সেনা সমর্থিত এক সরকারের দ্বারা শাসিত হলাম। ২০০৮ সালে তারা একটি নির্বাচন করল, যা জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য ছিল। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এল। কিন্তু ২০১১ সালে পঞ্চদশ সংশোধনী করে সরকার তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বাতিল করে দিল। তার পর থেকে দুটো নির্বাচন ২০১৪ ও ২০১৮ প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। সামনের নির্বাচন কেমন হবে তা নিয়ে সংশয় আছে।
আমি অনেকবার বলেছি যে সুষুম নির্বাচন করার জন্য সবার আগে দরকার একটি রাজনৈতিক সমঝোতা। সব দলের মধ্যে একে অন্যের ওপর বিশ্বাস ফেরাতে হবে যে যে-ই জিতুক না কেন, তারা সব সুযোগ-সুবিধা কুক্ষিগত করবে না এবং বিরোধী দলগুলোকে নিপীড়ন করবে না। আমাদের এখানে যে রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে; তাকে বলা যায় ‘উইনার টেকস ইট অল’ মানে বিজয়ী সব নিয়ে নেবে। এ সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। এখন যে অবস্থা তাতে নির্বাচনে যারা জিতছেন, তারা নানা উপায়ে প্রভাব খাটিয়ে বিপুল সম্পদের মালিক হতে পারছেন। অন্যদিকে যারা হারছেন, তারা অনেক সময় তাদের জানমালের নিরাপত্তা হারাচ্ছেন। এমন অবস্থায় একবার ক্ষমতায় গেলে কেন কেউ ক্ষমতা ছাড়তে চাইবেন? তারা তো ভাববেন তারা আর ক্ষমতায় ফিরে আসতে পারবেন না।
স্বাধীনতার আগে পাকিস্তান আমলে সম্পদ পুঞ্জীভূত ছিল ২২ পরিবারের হাতে। এখনো দেখা যাচ্ছে দেশের অধিকাংশ সম্পদ মুষ্টিমেয় কিছু লোকের হাতে পুঞ্জীভূত। এ নিয়ে আপনার বিশ্লেষণ বলুন।
আইয়ুব খানের সময় ২২ পরিবারের হাতে অর্থনৈতিক ক্ষমতা ছিল। সেখানে আরেকটা বিষয় লক্ষণীয় যে ওই ২২ পরিবারের মধ্যে একমাত্র বাঙালি পরিবার ছিল চট্টগ্রামের এ কে খান পরিবার। স্বাধীনতার আগে-পরে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, এ দেশে অর্থনৈতিক অসমতা থাকবে না। কিন্তু তখনো এ দেশে অনেক মানুষ ছিল; যারা মনে করত পাকিস্তানিরা চলে গেলে তারা সে জায়গাটি নিয়ে নেবে। আমরাও ২২ পরিবার বা আরো বেশি হয়ে যাব। দেশের সামাজিক পরিবর্তনের কথা তারা ভাবেনি।
আমাদের সংবিধানে চারটি মূলনীতি যুক্ত করা হয়। এর একটি হলো সমাজতন্ত্র। তখন হয়তো আওয়ামী লীগের সব নেতা এটিতে বিশ্বাস করতেন না। কিন্তু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্বাস করতেন। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান সংবিধান থেকে সমাজতন্ত্র বিদায় দিলেন। আমরা বাজার অর্থনীতির দিকে ঝুঁকলাম, যা ক্রমেই ক্রোনি ক্যাপিটালিজমের পথে চলে গেল। এ অবস্থায় কিছু লোক ক্ষমতার চারপাশে থেকে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ঋণখেলাপি হয়ে নানাভাবে হঠাৎ করে বড়লোক হওয়া শুরু করল। ক্রমেই আমাদের একটি নব্য ব্যবসায়ী গ্রুপ তৈরি হলো। যদিও গার্মেন্টসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে তারা অবদান রেখেছে। কিন্তু তারা এতই ক্ষমতাবান হওয়া শুরু করল যে তারা রাজনীতিতেও প্রভাবশালী হয়ে উঠল। প্রথমে অর্থনৈতিক ও পরে সামাজিক অসমতা বেড়ে চলল। একদিকে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হচ্ছে দেখে আমরা গর্বিত। অন্যদিকে অসমতা বেড়ে যাওয়া নিয়ে আমরা চিন্তিত। যদিও দারিদ্র্যের হার কমেছে, কিন্তু ক্রমবর্ধমান অসমতা ভবিষ্যতে সমাজে একটা অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে।
সামাজিক বিজ্ঞানে আমরা একটি কথা বলে থাকি তা হচ্ছে ‘রাইজিং এক্সপেক্টেশন এবং রাইজিং ফ্রাস্ট্রেশন’। আমাদের দেশে কিছু লোক খুব দ্রুত ধনী হয়েছে। এতে অন্যরাও দ্রুত ধনী হয়ে উঠতে চায়। তা যেকোনো উপায়েই হোক না কেন। কিন্তু সবাই তো হতে পারবে না। তাই তাদের মধ্যে হতাশা বেড়ে যাচ্ছে। এ হতাশা সামলানো যারা সরকারে থাকেন তাদের জন্য একটা বিরাট চ্যালেঞ্জ। বর্তমানে আমরা দেখছি দেশের বিভিন্ন জায়গায় একই দলের প্রভাবশালীদের মধ্যে নানা কোন্দল হচ্ছে। ধনসম্পদ থেকে শুরু করে নানা সুবিধা নেয়ার জন্যই কোন্দল হয়ে থাকে। সবাই চাচ্ছে আরেকজনকে ঠেলে সামনে চলে যেতে। প্রভাবশালীরা কেউই আইন মানতে চান না। তারা বিশেষ সুবিধা চান। এ রকম আইনহীন অবস্থা বেশিদিন চলতে পারে না। শেষ পর্যন্ত এটি রাজনৈতিক ও সামাজিক ভারসাম্যহীনতার শক্তি (ডিস্ট্যাবিলাইজিং ফোর্স) হিসেবে দেখা দেবে।
অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে আমরা সবসময়ই গুরুত্ব দিচ্ছি। এর সঙ্গে অসমতা দূর করার নীতিকেও গুরুত্ব দিতে হবে। আমাদের সুশাসন প্রতিষ্ঠার দিকেও গুরুত্ব দিতে হবে। অনেকে বলতে পারে, সুশাসনের অভাবের মধ্যেও তো আমাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হয়েছে। কিন্তু আমাদের ব্যাংকিংসহ অনেকগুলো অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান দুর্বল হয়ে পড়েছে। এ পথে বেশিদিন চলা যাবে না। কাজেই এখন প্রয়োজন শৃঙ্খলা আনা।
আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা ও এর প্রভাবকে আপনি কীভাবে দেখেন?
আমি ব্যক্তিগতভাবে চাই না কোনো একটি দেশ আমাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেবে। অর্থাৎ বাইরের কোনো দেশ এসে গণতন্ত্রের কোনো একটি বিষয় না মানার জন্য আমাদের শাস্তি দেবে আমি সেটির বিরুদ্ধে। বিশেষ করে আমেরিকা দু মুখো নীতিতে চলে। তারা আমাদের ওপর স্যাংশন দিলেও ইসরায়েলের ওপর কোনো স্যাংশন দিচ্ছে না। তবে বাংলাদেশ মানবাধিকারবিষয়ক আন্তর্জাতিক অনেক চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে। সেসব চুক্তির বাস্তবায়ন করার জন্য আমাদের একটা দায়বদ্ধতা আছে।
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে আপনার থিসিসে বাংলাদেশের স্বাধীনতার অন্যতম কারণ হিসেবে পাকিস্তান আমলে আইয়ুব খানের জাতি ও রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের চেয়ে রাষ্ট্র ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে বেশি গুরুত্ব দেয়াকে চিহ্নিত করেছেন। স্বাধীন বাংলাদেশে রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান ও জাতীয়তার চিত্রটি কেমন দেখছেন?
আমার থিসিস পরবর্তী সময়ে বই হিসেবে ‘পাকিস্তান: ফেইলিউর ইন ন্যাশনাল ইন্টিগ্রেশন’ নামে প্রকাশিত হয়েছে। এতে আমার মূল বক্তব্য ছিল যে একটি সরকারকে একই সঙ্গে রাষ্ট্র গঠন ও জাতি গঠন প্রক্রিয়ার দিকে নজর দিতে হবে। রাষ্ট্র গঠন করতে গেলে রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠান যেমন প্রশাসন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সামরিক বাহিনী, এগুলোকে সুসংহত করতে হবে। আর জাতি গঠন করতে হলে গণতান্ত্রিক সংগঠন যেমন রাজনৈতিক দল, মিডিয়া, নাগরিক সমাজ এসব প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালী করতে হবে। প্রশাসনিক প্রক্রিয়ায় সব সমস্যার সমাধান করা যায় না। রাজনৈতিক প্রক্রিয়ারও দরকার হয়।
তথ্য-উপাত্ত দিয়ে আমি দেখিয়েছিলাম যে আইয়ুবের শাসন আমলে অর্থনৈতিক অনেক উন্নতি হচ্ছিল। অনেক নব্য মধ্যবিত্ত শ্রেণী গড়ে উঠছিল। তাদের আশা-আকাঙ্ক্ষা বেড়ে উঠছিল। কিন্তু গণতন্ত্রের অভাবে রাজনীতির মাধ্যমে দেশ পরিচালনার কাজে তারা অংশ নিতে পারছিল না। তাতে তারা ক্রমেই পাকিস্তান রাষ্ট্র থেকে বিমুখ হয়ে পড়ছিল।
আসলে মানুষ একসঙ্গে অনেক কিছু চায়। তারা অর্থনৈতিক উন্নতি চায়। আবার একই সঙ্গে বৈষম্য দূরীকরণ চায়। তারা নাগরিক অধিকারের নিশ্চয়তা চায়। তারা রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করতে চায়। যারা ক্ষমতায় থাকেন, তাদের একই সঙ্গে নানা সমস্যা সমাধানের জন্য প্রস্তুত থাকতে হয়। কিছু কাজ প্রশাসন-আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কিংবা অন্য রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান দিয়ে করা সম্ভব। কিন্তু কিছু সমস্যার সমাধান রাজনৈতিকভাবে, গণতান্ত্রিকভাবে অংশীদারত্ব বাড়িয়ে করতে হয়। আইয়ুব খান সব সমস্যা রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বা অর্থনৈতিক উন্নয়ন দিয়ে সমাধান করতে চাচ্ছিলেন। কিন্তু তিনি বাঙালিদের যে গণতান্ত্রিক অধিকার, সেই অধিকার দিচ্ছিলেন না। তাই অর্থনৈতিক উন্নতি হলেও বাঙালিরা ভাবতে শুরু করল যে পাকিস্তান নামের এক দেশে তাদের কোনো ভবিষ্যৎ নেই।
বাংলাদেশেও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো ক্রমাগত শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। কিন্তু সে তুলনায় গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান যেমন রাজনৈতিক দল, মিডিয়া, সিভিল সোসাইটি অনেকটা দুর্বল। গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকেও শক্তিশালী করতে হবে। তাদের স্বাধীনভাবে গড়ে উঠতে সাহায্য করতে হবে।
স্বাধীনতার আগের ও পরের বিরোধী দলগুলোর বৈশিষ্ট্য নিয়ে আপনার মতামত বলুন।
এটি নিয়ে আমি একটি বই লিখেছি, যা ২০১৫ সালে প্রকাশিত হয় ‘পলিটিক্যাল পার্টিজ ইন বাংলাদেশ’ নামে। দুঃখের বিষয় রাজনৈতিক দলগুলোকে আমি ভালো কোনো নম্বর দিতে পারছি না। রাজনৈতিক দলগুলোই রাজনীতির প্রধান সংগঠন। রাজনৈতিক দলগুলোকে বলা যায় রাজনীতির পাঠশালা। কিন্তু সেখানে কর্মীরা কী শিখছে? আমি গবেষণা করে দেখেছি তৃণমূল পর্যায়ে দলের মধ্যে আদর্শ কিংবা নীতি নিয়ে তেমন কোনো আলোচনা বা বিতর্ক হয় না। দলগুলোর উদ্দেশ্যই হয়ে যাচ্ছে শুধু ক্ষমতায় যাওয়া। এখন তো অনেকে রাজনীতিতে আসছে টাকা-পয়সা বানানোর জন্য। এমনকি বালি উত্তোলন করে কিংবা আবর্জনা পরিষ্কারের টেন্ডারের মাধ্যমে অনেকে কয়েক বছরের মধ্যে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এসব সুবিধা পাওয়ার জন্য ক্ষমতাসীন দলের সমর্থক হতে হবে। বিরোধী দলে গেলে ধনসম্পদ বানানোর সুযোগ নেই।
সত্তরের দশকেও নির্বাচন নিয়ে জনসাধারণের মধ্যে যেমন আলোড়ন দেখা যেত, এখন আর তা দেখা যায় না। ভোটারদের এ আচরণ পরিবর্তনকে কীভাবে দেখছেন?
আগে মানুষকে যতটা সহজে একত্র করা যেত এখন সেটা যায় না। এখন রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি মানুষের আস্থা কমে গেছে। পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে মানুষের রাজনীতির ওপর যেমন বিশ্বাস ছিল এখন সেটা নেই। তাই তারা আন্দোলনের প্রতিও আগ্রহ হারাচ্ছে।