Originally posted in সমকাল on 10 November 2023
ব্যবসা পরিচালনায় ব্যয় যে বেড়েছে, তা অস্বীকার করার উপায় নেই। তবে শ্রমিকদেরও তো বেঁচে-বর্তে কাজে যেতে হবে। সেই দায়িত্ববোধ থেকেই তৈরি পোশাক শিল্পের মালিকরা মজুরি বাড়িয়েছেন। কিন্তু ঘোষিত ন্যূনতম মজুরি ১২ হাজার ৫০০ টাকা শ্রমিকদের চাহিদা এবং প্রত্যাশার চেয়ে কম। তাই তারা মাঠে নেমে তাদের দাবি জানাচ্ছে।
উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে। বিশেষ করে নিম্ন ও স্থির আয়ের মানুষের ওপর বাড়তি চাপ তৈরি হয়েছে। এ প্রেক্ষাপটে শ্রমিকদের দাবিও অনেকাংশে যৌক্তিক। তাই ঘোষিত মজুরি পুনর্বিবেচনার দাবি রাখে। আমি মনে করি, শ্রমিকদের মজুরি বাড়ানোর বিষয়ে মালিকরা নিজেদের ওপর সব চাপ না নিয়ে ক্রেতাদের সম্পৃক্ত করতে পারেন।
সিপিডির হিসাবে দেখা গেছে, ক্রেতারা যদি প্রতিটি পোশাক পণ্যে ছয় থেকে সাত সেন্ট বাড়তি দাম দেয়, তাহলেই শ্রমিকদের দাবির কাছাকাছি মজুরি দেওয়া সম্ভব। বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের প্রধান প্রধান বিদেশি ক্রেতাকে শ্রমিকদের যৌক্তিক মজুরির বিষয়টি জানিয়ে পণ্যের দাম নির্ধারণে দর কষাকষি করতে হবে। আমার জানামতে, ইতোমধ্যে এ বিষয়ে উদ্যোগ নিয়েছে বিজিএমইএ। এ উদ্যোগ যাথাযথভাবে বাস্তবায়নের চেষ্টা করতে হবে।
বিভিন্ন দেশে শ্রমিকদের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন ধরনের রেশনিং এবং বাসস্থানের ব্যবস্থা করা হয়। বাংলাদেশে এখনও তা তেমনভাবে শুরু হয়নি। বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে শ্রমিকের জীবনযাত্রার ব্যয় অনেক বেড়ে গেছে। তাই মজুরির বাইরে সরকার এ ধরনের উদ্যোগ নিতে পারে। শ্রমিকের পক্ষে উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপ সামাল দেওয়ার ক্ষেত্রে তা সহায়ক হবে।
শ্রমিকরা মজুরি বিষয়ে তাদের দাবি আদায়ে আন্দোলন করছে। তবে তাদের আন্দোলনকে রাজনৈতিকভাবে দেখা ও মৃত্যুর ঘটনা অসন্তোষ বাড়াচ্ছে। আলোচনার মাধ্যমে পরিস্থিতি শান্ত করার পরিবর্তে আরও শক্তি প্রয়োগের কথা বলা হচ্ছে। এ অবস্থায় শ্রমিকদের মাঝে আস্থা ফিরিয়ে আনা সবচেয়ে জরুরি। সার্বিকভাবে যেন পরিস্থিতি ধ্বংসাত্মক না হয়, তা বিবেচনায় নিতে হবে। এ জন্য মালিক, শ্রমিক, ক্রেতা, সরকার– সব পক্ষকেই এগিয়ে আসতে হবে।
লেখক: অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান, সম্মাননীয় ফেলো, সিপিডি