চীনা প্রকল্পে প্রযুক্তি স্থানান্তর বাধ্যতামূলক করতে হবে – ফাহমিদা খাতুন

Originally posted in কালেরকণ্ঠ on 29 October 2025

চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রযুক্তি সহযোগিতার ক্ষেত্রে এখনো প্রকৃত প্রযুক্তি হস্তান্তর ঘটেনি। ফলে প্রযুক্তি সহযোগিতা প্রাথমিক পর্যায়ে আটকে আছে। এখন সময় এসেছে সহযোগিতাকে উদ্ভাবন ও উৎপাদন সক্ষমতায় রূপান্তর করার। এর জন্য প্রতিটি চীনা প্রকল্পে প্রযুক্তি স্থানান্তরকে বাধ্যতামূলক করা জরুরি।

চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রযুক্তি সহযোগিতা

সবচেয়ে বেশি দৃশ্যমান হয়েছে অবকাঠামো ও শক্তি খাতে। হুয়াওয়ে ও জেডটিইর মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর অংশগ্রহণে বাংলাদেশ দ্রুত ফোরজি ও ফাইভজি যুগে প্রবেশ করেছে। এতে শুধু যোগাযোগব্যবস্থাই উন্নত হয়নি, স্থানীয় প্রকৌশলীদের দক্ষতাও বেড়েছে। তবে শিল্প খাতে প্রযুক্তি হস্তান্তরের গতি তুলনামূলকভাবে ধীর।

আনোয়ারা ইকোনমিক জোনের মতো প্রকল্প এখনো পূর্ণ উৎপাদন স্থানান্তরের সুবিধা দিতে পারেনি। স্থানীয় উপকরণ, পরীক্ষাগার ও মান নিয়ন্ত্রণ অবকাঠামোতে যথাযথ বিনিয়োগ না থাকায় প্রকৃত শিল্প সক্ষমতা গড়ে ওঠেনি।

আমাদের প্রযুক্তি স্থানান্তর এখনো মূলত ‘ইনস্টলেশন’ পর্যায়ে সীমাবদ্ধ, অর্থাৎ আমরা প্রযুক্তি ব্যবহার করছি, কিন্তু নিজেরা উদ্ভাবনে সক্ষম হচ্ছি না। এখন সময় এসেছে এটিকে ‘ইনোভেশন’-এর স্তরে নিয়ে যাওয়ার, যাতে দেশ নিজস্বভাবে উৎপাদন ও উদ্ভাবনে সক্ষম হয়।

প্রযুক্তি হস্তান্তরকে বাস্তবায়নযোগ্য করতে তিনটি নীতিগত পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রথমত, প্রতিটি বড় প্রকল্পে ‘নলেজ ট্রান্সফার ক্লজ’ বাধ্যতামূলক করতে হবে, যাতে স্থানীয় প্রকৌশলীরা নকশা, রক্ষণাবেক্ষণ ও অপারেশন পদ্ধতি গভীরভাবে শিখতে পারেন। দ্বিতীয়ত, চীনা অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলো দ্রুত কার্যকর করতে হবে, যাতে বাংলাদেশি উদ্যোক্তারা সরাসরি চীনা সাপ্লাই চেইনের অংশ হতে পারেন। তৃতীয়ত, বাংলাদেশ-চীন মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) আলোচনায় শুধু শুল্কছাড় নয়, বরং প্রযুক্তি স্থানান্তর, যৌথ গবেষণা, প্রশিক্ষণ ও উদ্ভাবনকেন্দ্র স্থাপনের বিষয়গুলোও অন্তর্ভুক্ত করা জরুরি।

এ ছাড়া স্মার্ট ম্যানুফ্যাকচারিং, এনার্জি ম্যানেজমেন্ট ও বন্দর অটোমেশন খাতে যৌথ উন্নয়ন প্রোগ্রাম গ্রহণ করতে হবে।

পাশাপাশি দুই দেশের মধ্যে একটি ‘স্কিলস কম্প্যাক্ট’ চুক্তি করা হলে বিশ্ববিদ্যালয় ও পলিটেকনিকে যৌথ প্রশিক্ষণ চালু করা যাবে, যা প্রযুক্তি হস্তান্তরকে আরো টেকসই করবে।

বাংলাদেশি দক্ষ জনশক্তির জন্য চীনের শ্রমবাজার উন্মুক্ত করা গেলে প্রযুক্তি বিনিময়ের পাশাপাশি মানবসম্পদ উন্নয়নও ত্বরান্বিত হবে। এতে শুধু শিল্প নয়, সামগ্রিক অর্থনীতিই লাভবান হবে।

লেখক : নির্বাহী পরিচালক, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)