দুর্নীতি, অর্থ পাচার রোধে পদক্ষেপ চাই – মোস্তাফিজুর রহমান

Originally posted in প্রথম আলো on 3 June 2024

৬ জুন ঘোষিত হতে যাচ্ছে নতুন বাজেট। নতুন বাজেটে কোন বিষয়গুলো গুরুত্ব দেওয়া উচিত এবং মূল্যস্ফীতির লাগাম টানতেই বা করণীয় কী—এ নিয়ে কথা বলেছেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা।

বিশেষ এক পরিস্থিতিতে এবারের বাজেট হতে যাচ্ছে। তাই এবারের বাজেটের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত অনিশ্চয়তা ও ঝুঁকি মোকাবিলা করা। উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জন করা এবারের মূল উদ্দেশ্য হওয়া উচিত নয়। শুধু বাজেট দিয়ে এসব অর্জন করা সম্ভব নয়। বাজেটের নীতি–পদক্ষেপের পাশাপাশি যথাযথ আর্থিক নীতি, সংস্কার ও সুশাসনে জোর দিতে হবে। তবে অর্থনীতির স্থিতিশীলতার লক্ষ্য অর্জনে বাজেট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

বাজেটের মূল বিষয় হলো সম্পদ আহরণ, ব্যয় ও উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন। কিন্তু বর্তমানে রাজস্ব আহরণ কম হওয়ায় সরকারের ঋণ বাড়ছে। রাজস্ব আহরণ যা হচ্ছে তার ৮০ শতাংশই বেতন, ভাতা, পেনশন ও ঋণের সুদ ব্যয়ে চলে যাচ্ছে। রাজস্ব উদ্বৃত্ত সৃষ্টি না হওয়ায় উন্নয়ন কর্মসূচি ঋণনির্ভর হয়ে যাচ্ছে। সে জন্য সরকার দেশি-বিদেশি বিভিন্ন উৎস থেকে ঋণ করছে।

বিদ্যমান পরিস্থিতিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের শক্তি বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। প্রযুক্তিগতভাবে যেমন সংস্থাটিকে শক্তিশালী করতে হবে, তেমনি তার জনবল কাঠামোও শক্তিশালী করতে হবে। সেই সঙ্গে বিনিয়োগের উপযোগী পরিবেশ তৈরি করতে হবে; তা না হলে দেশে প্রয়োজনীয় কর্মসংস্থান হবে না।

এখনকার বাস্তবতায় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, সরকারি খরচের ক্ষেত্রে সাবধান হওয়া। চলমান যেসব প্রকল্প আছে, সেগুলো বাস্তবায়নে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। নতুন প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে। সরকারি বিনিয়োগেরও প্রয়োজন আছে, তা না হলে বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়বে না।

ব্যয়ের ক্ষেত্রে আগামী দুই-তিন বছর আমাদের সংযত থাকতে হবে। সে জন্য আগামী বাজেটে এডিপি ছোট হলেও সমস্যা নেই। অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা চাইলে আমাদের নিম্ন প্রবৃদ্ধি মেনে নিতে হবে। সরকারের ব্যয় সংকোচনে সমাজে অর্থের প্রবাহ কমে যায়। কিন্তু আমাদের মতো দেশে ব্যয় সংকোচনের কারণে যেন সাধারণ মানুষের কষ্ট না বাড়ে, তা নিশ্চিত করতে সামাজিক সুরক্ষা জাল বিস্তৃত করতে হবে। এ খাতে অর্থ বরাদ্দ বাড়াতে হবে। শ্রমিকপ্রধান এলাকায় খাদ্য রেশনিং সুবিধা চালু করা যেতে পারে।

উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে নিম্ন আয়ের পরিবারে যে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা সৃষ্টি হয়, সে কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় শিশুরা। বিশ্বব্যাংক থেকে শুরু করে সবাই এ কথা বলছে। সরকার একসময় বিদ্যালয়ে মিড ডে মিল পাইলট ভিত্তিতে চালু করেছিল। এটা নিয়মিত প্রকল্প হিসেবে চালু করা যায়। বিশ্বের অনেক দেশেই মিড ডে মিল ভালো ফল দিয়েছে। এ ছাড়া অর্থ পাচার ও দুর্নীতি রোধে কঠোর বার্তা দিতে হবে বাজেটে। অতীতে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে; কিন্তু তাতে কাজ হয়নি। অর্থনীতিতে যে সমস্যা ও সংকট চলছে, তা নিরসনে সবাইকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। অর্থাৎ আমাদের সামগ্রিকভাবে এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের পথ খুঁজতে হবে।