Originally posted in কালের কন্ঠ on 11 September 2023
খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১২ শতাংশ ছাড়িয়েছে, রসুইতে টান
দেশের বাজারে কখনো বাড়ছে ডিমের দাম, কখনো মাছের, তো কখনো আবার পেঁয়াজের। আর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে খাদ্যসামগ্রীর ওপর। এতে রসুই ঘরে টান পড়ে মানুষের ভোগান্তি বাড়ছে। গত আগস্ট মাসে খাদ্যসামগ্রীর মূল্যস্ফীতি বেড়ে হয়েছে ১২.৫৪ শতাংশ, জুলাই মাসে যা ছিল ৯.৭৬ শতাংশ।
এর আগের দুই মাসে কিছু পয়েন্টে সার্বিক মূল্যস্ফীতি কমে জুলাই থেকে আবার বেড়েছে। আগস্টে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ছিল ৯.৯২ শতাংশ। জুলাই মাসে এই মূল্যস্ফীতি ছিল ৯.৬৯ শতাংশ। গ্রাম ও শহরে বর্তমানে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১২ শতাংশের বেশি।
গতকাল রবিবার বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ওয়েবসাইটে প্রকাশিত মূল্যস্ফীতির হালনাগাদ তথ্যে এমন চিত্র দেখা গেছে।
দেশের বাজারে নিত্যপণ্যের দাম না কমাকে দুশ্চিন্তার কারণ মনে করছেন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান। কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, ‘যেখানে বিশ্ববাজারে নিত্যপণ্যের দাম কমছে, সেখানে দেশের বাজারে প্রতিনিয়ত বাড়ছে; এটি দুশ্চিন্তার। এর পেছনে অনেক কারণ রয়েছে।
এর অন্যতম হলো বাজার ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা। আর সরকারের কার্যকর পদক্ষেপের অভাব। এ ছাড়া অনেক পণ্য আছে, যেগুলো দেশেই উৎপাদন হয়। কিন্তু এসব পণ্যের দাম বাড়ার কারণ উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়া।’
মোস্তাফিজুর রহমান পরামর্শ দিয়ে বলেন, ‘সরকারকে প্রকৃত তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে আমদানি ও উৎপাদনের সঠিক হিসাব রাখতে হবে, যাতে পরিকল্পনা প্রণয়ন করা সহজ হয়।
পাশাপাশি ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরকে বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।’
সরকার আশা করেছিল আগস্টে মূল্যস্ফীতি কমবে। গত ২৯ আগস্ট জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভার (একনেক) পর পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘মূল্যস্ফীতি জোর করে কমানো যায় না। এর জন্য কার্যকর নীতি নিতে হবে। আমি ঝুঁকি নিয়ে বলতে পারি, আগস্টে মূল্যস্ফীতি ২ থেকে ৪ পয়েন্ট কমবে।’
তবে তা না হওয়ায় গতকাল পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আলু, ডিমসহ বিভিন্ন খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ায় এর প্রভাব পড়েছে মূল্যস্ফীতিতে। এ ছাড়া প্রাকৃতিক নানা কারণে আগস্ট মাসে পণ্য সরবরাহ চেইন ব্যাহত হয়েছে। ফলে সার্বিক মূল্যস্ফীতি বেড়েছে।’
আগস্টে মূল্যস্ফীতি ৯.৯২ শতাংশ হওয়ার মানে—২০২২ সালের আগস্টে একজন মানুষ যে পণ্য ও সেবা ১০০ টাকায় কিনেছিল, চলতি বছরের আগস্টে একই পণ্য কিনতে তার খরচ হয়েছে ১০৯ টাকা ৯২ পয়সা। এক বছরের ব্যবধানে খরচ বেড়েছে ৯ টাকা ৯২ পয়সা। মূল্যস্ফীতি এক ধরনের করের মতো, যা ধনী-গরিব সবার ওপর চাপ বাড়ায়। ২০২২ সালের আগস্টে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ছিল ৯.৫২।
চলতি বছরের এপ্রিল মাসে দেশে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ছিল ৯.২৪ শতাংশ, মে মাসে তা ছিল ৯.৯৪ শতাংশ, জুন মাসে ৯.৭৪ শতাংশ এবং জুলাই মাসে দেশের সার্বিক মূল্যস্ফীতি ছিল ৯.৬৯ শতাংশ। তবে গত মে মাসে দেশে মূল্যস্ফীতি হয়েছিল ৯.৯৪ শতাংশ। গত প্রায় এক যুগের মধ্যে এই হার সর্বোচ্চ। এ ছাড়া গত ২০২২-২৩ অর্থবছরের গড় মূল্যস্ফীতি ছিল ৯.০২ শতাংশ, যা বছরওয়ারি হিসাবে এক যুগের মধ্যে সর্বোচ্চ।
বিবিএসের হালনাগাদ তথ্যে দেখা গেছে, গত এপ্রিল মাসে খাদ্যে মূল্যস্ফীতি ছিল ৮.৮৪ শতাংশ, মে মাসে তা হয় ৯.৯৪ শতাংশ। এক মাসের ব্যবধানে খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেড়েছে ১.৭৮ শতাংশ। এর মধ্যে আগস্টে গ্রাম এলাকায় খাদ্য মূল্যস্ফীতি হয়েছে ১২.৭১ শতাংশ। আর শহর এলাকায় হয়েছে ১২.১১ শতাংশ। জুলাই মাসে উভয় ক্ষেত্রে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ১০ শতাংশের নিচে।
অন্যদিকে জুলাইয়ের খাদ্যবহির্ভূত সার্বিক মূল্যস্ফীতি ৯.৪৭ শতাংশ থেকে কমে আগস্টে হয়েছে ৭.৯৫ শতাংশ। এর মধ্যে আগস্টে গ্রাম এলাকায় খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি ৭.৩৮ শতাংশ এবং শহর এলাকায় ৮.৪৮ শতাংশে দাঁড়ায়। আর গ্রামে ওই একই সময়ে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ছিল ৯.৯৮ শতাংশ, জুলাইয়ে যা ছিল ৯.৭৫ শতাংশ। আগস্টে শহরে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ছিল ৯.৬৩ শতাংশ, জুলাইয়ে যা ছিল ৯.৪৩ শতাংশ।
আগস্ট মাসে গ্রামে সার্বিক মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯.৯৮ শতাংশে, জুলাই মাসে যা ছিল ৯.৭৫ শতাংশ। আগস্টে খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি কমে দাঁড়িয়েছে ৭.৩৮ শতাংশ, জুলাই মাসে যা ছিল ৯.৪৮ শতাংশ।
পাশাপাশি আগস্টে শহরে সার্বিক মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯.৬৩ শতাংশে, জুলাই মাসে যা ছিল ৯.৪৩ শতাংশ। আগস্ট মাসে খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি কমে দাঁড়িয়েছে ৮.৪৮ শতাংশে, জুলাই মাসে যা ছিল ৯.২০ শতাংশ।