নতুন বছরে বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে বিশেষ উদ্যোগ প্রত্যাশা করি – মোস্তাফিজুর রহমান

Originally posted in প্রথম আলো on 1 January 2025

২০২৫ সাল সামগ্রিকভাবে চ্যালেঞ্জিং হবে—অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা ও রাজনৈতিক প্রস্তুতি উভয় দিক থেকেই। সেই সঙ্গে আমাদের এলডিসি উত্তরণের প্রস্তুতি চলছে; ২০২৬ সালে আমাদের এলডিসি উত্তরণ হওয়ার কথা। সবকিছুর পেছনে কাজ করবে ২০২৪ সালের আগস্ট মাসের পটভূমি। ফলে প্রত্যাশা কিছুটা বেশিই থাকবে।

২০২৪ সালে আগস্টের পর প্রাথমিক অনিশ্চয়তা কাটিয়ে আমাদের অর্থনীতি ইতিবাচক মোড় নেবে, সেই প্রত্যাশা থাকবে। অর্থনৈতিক বণ্টনে আগস্ট অভ্যুত্থানের চেতনার প্রতিফলন দেখতে চাইবে মানুষ, যাকে বলে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের চেতনা। আমাদের আশা, চলমান চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় অন্তর্বর্তী সরকার সামঞ্জস্যপূর্ণ কর্মসূচি হাতে নেবে।

অর্থনীতির বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ সঙ্গে নিয়ে আমরা ২০২৫ সালে পদার্পণ করতে যাচ্ছি। যেমন কয়েক বছর ধরে চলা উচ্চ মূল্যস্ফীতি, স্তিমিত বিনিয়োগ, কর্মসংস্থানের অপ্রতুলতা ইত্যাদি। সামনে বাজেট; এ ছাড়া মধ্যমেয়াদি পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হচ্ছে। তার আলোকে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে হবে। সব মিলিয়ে অর্থনীতিকে বেশ চ্যালেঞ্জিং সময় পার করতে হবে।

নতুন বছরে বিনিয়োগে গতি আনা সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হবে। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ না বাড়লে কর্মসংস্থান বাড়বে না। মনে রাখা দরকার, কোটা সংস্কার আন্দোলনের মূল কারণ ছিল বেসরকারি খাতের অপ্রতুল কর্মসংস্থান। কর্মসংস্থান না বাড়লে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়বে না। বৈষম্য নিরসনে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। ফলে বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে বিশেষ উদ্যোগ প্রত্যাশা করি।

আমরা আশা করব, উচ্চ মূল্যস্ফীতি মোকাবিলায় সরবরাহব্যবস্থা উন্নত করার পাশাপাশি উৎপাদন বৃদ্ধিতে ব্যবস্থা নেবে সরকার। সেই সঙ্গে চাহিদা ও সরবরাহের ব্যবধান কমানোর উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।

সেই সঙ্গে পিছিয়ে পড়া ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ দেওয়া হোক। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের চেতনার আলোকে এই শ্রেণির মানুষের সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করা দরকার।

কিছু ইতিবাচক বিষয়ও আছে অর্থনীতিতে, যেমন রপ্তানি ও প্রবাসী আয়ের প্রবৃদ্ধি ভালো। সেই সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকার রিজার্ভের পতন ঠেকাতে পেরেছে; বিনিময় মূল্য বেশ কয়েক মাস স্থিতিশীল থাকার পর সম্প্রতি আবার কিছুটা টাকার অবনমন হয়েছে। তা সত্ত্বেও বিনিময় মূল্য স্থিতিশীলতার দিকে যাচ্ছে। এসব প্রবণতা ২০২৫ সালে আরও শক্তিশালী হবে, সেই প্রত্যাশা করি।

যেসব সংস্কার কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে, সেগুলো চলমান থাকুক। ইতিমধ্যে শ্বেতপত্র কমিটি অর্থনীতির দুর্বলতা চিহ্নিত করে প্রতিবেদন দিয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন কমিশন গঠিত হয়েছে। তারাও কিছুদিনের মধ্যে প্রতিবেদন দেওয়া শুরু করবে। তাদের সুপারিশ বাস্তবায়নে সরকার সচেষ্ট থাকবে বলেই প্রত্যাশা করি, যদিও সব সুপারিশ বাস্তবায়িত হবে না, এটাই স্বাভাবিক।

আর্থসামাজিক উন্নয়ন, সেবামূলক ব্যবস্থা, প্রকল্প বাস্তবায়ন, সামগ্রিকভাবে সুশাসন নিশ্চিত করা—এসব ক্ষেত্রে সংস্কারের সুপারিশ বাস্তবায়িত হবে, সেই আশা করি। সেই সঙ্গে রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় আসার পরও এসব কর্মসূচি চলমান থাকুক।

সর্বোপরি সর্বক্ষেত্রে সুশাসন নিশ্চিত করার পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি ও দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করতে হবে।

মোস্তাফিজুর রহমান: সম্মাননীয় ফেলো, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)