বাংলাদেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য এখন বিলাসী দ্রব্যে পরিণত হয়েছে: সিপিডি

Originally posted in The Business Standard বাংলা on 2 June 2024

একইসঙ্গে, দরিদ্ররা আরও দরিদ্র হয়ে পড়ছেন বলেও উঠে আসে বেসরকারি গবেষণা সংস্থাটির আলোচনায়।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি) বলেছে, বাংলাদেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য এখন বিলাসীবহুল দ্রব্যে রূপান্তরিত হয়েছে। আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিহীনভাবে খাদ্য ব্যয় বাড়ছে। আর এর শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ।

একইসঙ্গে, দরিদ্ররা আরও দরিদ্র হয়ে পড়ছেন বলেও উঠে আসে বেসরকারি গবেষণা সংস্থাটির আলোচনায়।

আজ রোববার (২ জুন) ‘বাংলাদেশের অর্থনীতি ২০২৩-২৪: তৃতীয় অন্তর্বর্তীকালীন পর্যালোচনা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে মূল প্রতিবেদন উপস্থাপনের সময় সংস্থাটির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, তুলনামূলকভাবে কম আয়ের দেশ হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশে খাদ্য ব্যয় বেশি।

তিনি বলেন, “পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকারের উদ্যোগ অপর্যাপ্ত। সামাজিক নিরাপত্তাও কম। আমদানিতে শুল্ক কমানোর সুবিধা ভোক্তারা পাচ্ছেন না। সুবিধা চলে যাচ্ছে আমদানিকারকদের কাছে।”

তিনি বলেন, “বর্তমানে দেশের অর্থনীতি বড় রকমের ক্রান্তিকাল পার করছে। অর্থনৈতিক পরিস্থিতি চাপে রয়েছে।”

নীতি দুর্বলতা, সুশাসনের অভাব, প্রয়োজনীয় সংস্কারের অভাবে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

“দুর্বল রাজস্ব আদায়, রাজস্ব স্পেস কমে আসা, সরকারের ব্যাংক থেকে ঋণগ্রহণ বৃদ্ধি, ব্যাংকের তারল্য কমে যাওয়া, নিত্যপণ্যের উচ্চ মূল্য, রিজার্ভের ক্রম অবনতিশীল পরিস্থিতি চলতি অর্থবছরে নতুন নয়। এই পরিস্থিতি আগের অর্থবছরেও ছিল। যে কারণে সরকার বাজার-ভিত্তিক বিনিময় হার ও সুদহার-সহ আইএমএফের পরামর্শ মেনে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিয়েছে,” বলেন খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।

সিপিডির এই গবেষণা পরিচালক বলেন, বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতির হার এখন শ্রীলঙ্কার চেয়েও বেশি।

অনুষ্ঠানে তিনি ২০১৯ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত প্রধান প্রধান কিছু নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বৃদ্ধির চিত্র তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, “সামগ্রিকভাবে এই পাঁচ বছরে চালের দাম ১৭ শতাংশ বাড়লেও মোটাচালের দাম বেড়েছে ৩০ শতাংশ। পাইজামের বেড়েছে ১৫ শতাংশ। দরিদ্রদের চালের দাম বড়লোকদের চালের তুলনায় বেশি বেড়েছে। কারণ দরিদ্রদের চাল বেশি বিক্রি হয়।”

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, গত পাঁচ বছরে মসুর ডালের দাম ৯৫ শতাংশ, আটা ৪০ শতাংশ, খোলা আটা ৫৪ শতাংশ, ময়দা ৬০ শতাংশ, খোলা সয়াবিন তেল ৮৪ শতাংশ, বোতলজাত সয়াবিন ৫৪ শতাংশ এবং পামঅয়েল দাম ১০৫ শতাংশ বেড়েছে। এ থেকে বোঝা যায়, বাজারে দরিদ্রদের পণ্যের দাম বাড়ছে বেশি।

অন্যদিকে, আন্তর্জাতিক বাজারের তুলনায় বাংলাদেশে আমদানি করা পণ্যের দাম বেশি জানিয়ে গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, “আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিন তেলের দাম প্রতি লিটার ১০৫ টাকা। আর বাংলাদেশে সেই তেলের দাম প্রতি লিটার ১৬৩ টাকা।”

তবে দেশে উৎপাদিত মাছের দাম কম বেড়েছে বলে জানানো হয়। গরুর মাংসের দাম বেড়েছে ৫৭ শতাংশ। ব্রয়লার মুরগির দাম ৬০ শতাংশ এবং স্থানীয় মুরগির দাম ৫৫ শতাংশ বেড়েছে।

এছাড়া, চিনির দাম বেড়েছে ১৬০ শতাংশ। বাংলাদেশে প্রতিকেজি চিনি ১৩০ টাকা দামে বেচাকেনা হচ্ছে। আর ইউরোপের বাজারে প্রতিকেজি চিনি বিক্রি হচ্ছে ৩৯ টাকায়।

এছাড়া, গুড়ো দুধের দাম ৪৩-৮০ শতাংশ, রসুনের ২১০ শতাংশ, শুকনো মরিচের ১১০ শতাংশ এবং আদার দাম ২০৫ শতাংশ বেড়েছে।

অনুষ্ঠানে এসব তথ্য তুলে ধরে গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, এখন সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা হলো– আসন্ন বাজেট উপস্থাপনায় যেন সামষ্টিক অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা এবং সাধারণ মানুষের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় যেন সেখানে প্রয়োজনীয় সংস্কারের উদ্যোগ থাকে।

এর বাইরে তিনি অনুষ্ঠানে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, কর্মসংস্থান, রপ্তানি আয়, রেমিট্যান্স, বিনিয়োগ পরিস্থিতি, কৃষি এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানি নিয়ে সিপিডির পর্যালোচনা তুলে ধরেন।