Originally posted in কালের কন্ঠ on 12 May 2021
নারীর অমূল্যায়িত শ্রমের ধারণা ও পদ্ধতিগত পর্যালোচনার একটা বিরাট অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। কবির ভাষায়—তুমি যদি অন্ধ হও এবং আমার সৌন্দর্য দেখতে না পাও, তার মানে এটা নয় যে সেটা বিরাজমান না। আমরা যদি অন্ধ হই, নারীর শ্রমের প্রকৃত মূল্য দেখতে না পাই তার মানে এই নয় যে তার শ্রমের মূল্য নেই। সরকারের পক্ষ থেকে বিগত সময়ের চেয়ে অনেক বেশি পরিবর্তন এসেছে। এটা স্বীকার করতে হবে। পাসপোর্টে পিতার নামের সঙ্গে মাতার নাম যুক্ত করা হয়েছে। এটিও বড় পরিবর্তন। সরকার মাতৃত্বকালীন ছুটি ছয় মাস করেছে, এটাও বড় ধরনের স্বীকৃতি। যাঁরা মাতৃত্বকালীন ছুটি ভোগ করছেন ছুটি শেষে তাঁরা যেন পুরনো কর্মস্থলে ফিরে যেতে পারেন তা দেখতে হবে।
আমাদের শিক্ষা কার্যক্রমকে পুনর্বিবেচনা করতে হবে নারীবান্ধব দৃষ্টিভঙ্গি থেকে। ধর্মগুরুরা নারীবিদ্বেষী কথা বলেন। অথচ সেটার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক নেতাদের কোনো বক্তব্য নেই। অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের জন্য নারীর স্বাধীনতা ও কাজের মূল্যায়ন কতখানি গুরুত্বপূর্ণ তা রাজনৈতিক নেতাদের আলোচনায় কখনো দেখিনি। এটা বড় ধরনের ঘাটতি। এর সূত্রপাত হয় শিক্ষাব্যবস্থা থেকে। ছোটবেলা থেকেই পরিবারে শিক্ষা দিতে হবে। সংসদে ও বাইরে নারীর কাজের মূল্যায়ন নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্ক থাকতে হবে, নারীর জন্য ইতিবাচক পদক্ষেপ থাকতে হবে। পাশাপাশি নারীকে মূলধারার সঙ্গে রাখতে হবে। সংরক্ষিত আসনের একজন নারী এমপি কত ধরনের সীমাবদ্ধতার মধ্যে থাকেন। উপজেলার সংরক্ষিত আসনে নারী প্রতিনিধিরা প্রত্যক্ষ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আসেন, তাহলে জাতীয় সংসদ সদস্যরা কেন প্রত্যক্ষ নির্বাচনে আসবেন না?
নারী অধিকারের আইনি ভিত্তি শক্তিশালী করতে হবে। বিষয়টি আইনি স্বীকৃতির মধ্য নিয়ে আসতে হবে। অর্থাৎ নারী ও পুরুষকে আইনের সমান দৃষ্টিতে দেখতে হবে। তাঁকে সম্পত্তির অধিকারের মধ্যে রাখতে হবে, শিশুর ওপর কর্তৃত্বের অধিকার, বিয়েবিচ্ছেদের অধিকার থাকতে হবে। পরিবারে সন্তানকে এ বিষয়ের ওপর নৈতিক শিক্ষা দিতে হবে। আইনি ভিত্তি পরিষ্কার করতে হবে এবং অবমূল্যায়িত কাজকে আইনি স্বীকৃতির মধ্যে নিয়ে আসতে হবে। মূল্যবোধের ক্ষেত্রে নারীর অধিকারের ওপর বিতর্ক আরো জোরদার করতে হবে। ধর্মান্ধতার ভেতর যে বৈষম্য আছে সেটাকে দূর করতে হবে। ইউনিভার্সাল সিভিল কোর্টের মধ্য দিয়ে নারীর সামগ্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।