Dr Debapriya Bhattacharya in conversation with Samakal on the state of Bangladesh economy in 2014, published on Wednesday, 31 December 2014.
নেতৃত্বের সৃজনশীলতা ও মধ্যবিত্তের উদ্যম সময়ের দাবি – ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য
সমকাল : কেমন কাটল বছরটি?
দেবপ্রিয় :সবাইকে নববর্ষের শুভেচ্ছা। বছরটি ভালো কাটুক, এটাই কামনা করি। বাংলাদেশ প্রায় দুই যুগ ধরে উন্নয়নের যে পথে চলেছে তার ধারাবাহিকতা বিদায়ী বছরটিতে অব্যাহত ছিল। বিশেষ করে ২০১৩ সালে রাজনৈতিক অঙ্গনে যে অস্থিরতা ছিল তা বিবেচনায় রেখে বলা যায় যে, ২০১৪ সালে আপাত শান্তি ও স্থিতি বজায় ছিল। সহিংস রাজনীতি বলতে গেলে ছিলই না। এ কারণে অর্থনৈতিক কার্যক্রম অনেকটা স্বাভাবিক ছিল এবং প্রবৃদ্ধির হার লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী না হলেও মোটামুটি সন্তোষজনক বলা চলে। ৫ জানুয়ারির নির্বাচন যেভাবে অনুষ্ঠিত হলো সেটা সবার জানা আছে। এর প্রেক্ষাপটও জানা। নতুন সরকার গঠিত হয়েছে। কিন্তু প্রলম্বিত অশান্তিও আছে। এ নির্বাচনকে বাংলাদেশের জন্য প্রতিবন্ধকতা হিসেবে চিহ্নিত না হোক, দেশ-বিদেশে নেতিবাচক প্রভাব তো রয়েছেই।
সমকাল :রাজনীতির প্রসঙ্গ কিন্তু বারবার এসেছে …।
দেবপ্রিয় : অর্থনীতির জন্য বছরটি মোটামুটি ভালোই ছিল। তবে এটা ঠিক যে, প্রলম্বিত অশান্তির ছায়ায় কেটেছে বছরটি। আমাদের উন্নয়ন হয়েছে, আবার রাজনীতির অঙ্গনে অস্থিরতার ছায়াও ছিল।
সমকাল : বিশ্বসমাজ না হোক, কিছু উন্নত দেশ এবং জাতিসংঘ ও বিশ্বব্যাংকসহ কয়েকটি সংস্থা বাংলাদেশের ওপর নজর রেখেছে। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বিশ্ব অর্থনীতির কী প্রভাব?
দেবপ্রিয় :বিশ্ব অর্থনীতি কিন্তু ২০০৮ সালের মন্দা পুরোপুরি কাটিয়ে উঠতে পারেনি। ফলে অনেক পণ্যের চাহিদা কম। তবে আমাদের জন্য সুবিধার দিক ছিল তেল ও তুলার মতো পণ্যের দাম কমে যাওয়া। আমাদের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের জন্য এ দুটি পণ্য অপরিহার্য। বাংলাদেশের প্রয়োজনীয় ভোজ্যতেলের বেশিরভাগ আমদানির মাধ্যমে পূরণ করা হয়। সম্প্রতি বিশ্ববাজারে সয়াবিন ও পাম অয়েলের দাম কমেছে। দেশের বাজারে এর প্রভাব পড়েছে।
সমকাল :আমাদের রফতানি বাজারের জন্য কিন্তু বছরটি উৎকণ্ঠায় কেটেছে।
দেবপ্রিয় :আমাদের প্রধান রফতানি পণ্য তৈরি পোশাক। সাভারের রানা প্লাজা বিপর্যয়ের পর রফতানি খাত হেঁচকি তুললেও এগিয়ে যেতে পারছে। তবে উদ্বেগ কাটছে না। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে কেবল তৈরি পোশাক খাতে নয়, অন্যান্য পণ্যেও সমস্যা রয়েছে। জিএসপি সুবিধা স্থগিত রাখা হয়েছে এবং পুনর্বহাল হওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা কাটছে না।
সমকাল : প্রবাসে বাংলাদেশি আগের তুলনায় কম যাচ্ছে, এমনটিই তথ্য। অর্থনীতিতে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে করেন কি?
দেবপ্রিয় :আপনি যদি টাকার অঙ্কে বা ডলারে দেখেন, তাহলে রেমিট্যান্স প্রবণতাটি ইতিবাচক। প্রবাসীরা প্রচুর অর্থ দেশে পাঠাচ্ছেন। এতে ওঠানামা রয়েছে; কিন্তু বছর শেষে ব্যাংকিং সূত্রে পাওয়া অর্থ আগের বছরের তুলনায় বেড়েছে। তবে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে কিন্তু আগের তুলনায় কম লোক যাচ্ছে। এতে দেশের শ্রমবাজারে চাপ বাড়ে।
সমকাল :বিনিয়োগ পরিস্থিতি নিয়ে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে উদ্বেগ প্রকাশ পেয়েছে। বিদায়ী বছরটি কেমন ছিল?
দেবপ্রিয় :প্রকৃতপক্ষে প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ চিত্র একেবারেই গতানুগতিক ছিল_ জিডিপির ১ শতাংশের মতো। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প বাদ দিলে বৈদেশিক সাহায্য বাড়েনি। একদিকে আমরা দেখছি যে, বিশ্ববাজারে জ্বালানি ও ভোজ্যতেল এবং তুলার মতো পণ্যের দাম কম বা স্থিতিশীল থাকার কারণে আমাদের জন্য অনুকূল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে; অন্যদিকে অর্থনীতির সব সূচক সমানভাবে ইতিবাচক নয়। প্রবাসে কর্মী প্রেরণ, রফতানি বাজার, বৈদেশিক সাহায্য এবং প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ_ এসব ক্ষেত্রে সমস্যা রয়েছে।
সমকাল :সামষ্টিক অর্থনীতি কেমন ছিল?
দেবপ্রিয় :বিদায়ী বছরটিতে সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতি ভালোই ছিল। এ বিষয়টি স্পষ্ট করতে আমি তিনটি সূচকের উল্লেখ করব। প্রথমটি মূল্যস্ফীতি। শহর ও গ্রাম সর্বত্র খাদ্য এবং খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি নিচের দিকে ছিল, যদিও কেন্দ্রীয় ব্যাংক নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা যায়নি। তবে প্রবণতাটি ইতিবাচক। দ্বিতীয় টাকার মূল্যমান স্থিতিশীল ছিল। এর সুফল পেয়েছে বিপুলসংখ্যক ভোক্তা। বিশেষ করে আমদানি পণ্যের দামে এর প্রভাব লক্ষ্য করা গেছে। মূল্যস্ফীতি কম থাকায় ব্যাংকিং খাতে সুদের হার কমানোর কিছু লক্ষণ দেখা যাচ্ছে।
সমকাল :কৃষি খাত কেমন ছিল?
দেবপ্রিয় :অর্থনৈতিক স্থিতি সংহত করার ক্ষেত্রে বোরো ও আমন ফসল ভালো হওয়ার অবদান রয়েছে। আমাদের খাদ্য নিশ্চয়তা বা নিরাপত্তা বেশ শক্তিশালী। এর প্রভাবে মজুরিও স্থিতিশীল রাখা সম্ভব হচ্ছে।
সমকাল :বিনিয়োগ কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় নেই। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে ক্যাপিটাল মেশিনারি আমদানি বেড়েছে বলে তথ্য রয়েছে…।
দেবপ্রিয় :বিষয়টি কিন্তু চিন্তার। আন্তর্জাতিক বাজারের কিছু বিষয় আমাদের জন্য আশার সঞ্চার করেছে। যেমন, জ্বালানি তেলের মূল্য কম থাকা। কিন্তু জিডিপির তুলনায় বিনিয়োগ হার ভালো নয়। মুদ্রানীতিতে ব্যক্তি খাতে যতটা ঋণ প্রদান করা হবে বলে প্রাক্কলন করা হয়েছিল, বাস্তবে তা অর্জন করা যায়নি। তেল-গ্যাসের বাণিজ্যিক ব্যবহারের তথ্য থেকেও বোঝা যায় যে, বিনিয়োগ কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় ছিল না। এর প্রভাবে কর্মসংস্থান বাজারে চাপ দেখা গেছে। তবে এ তথ্যও আমাদের সামনে রয়েছে যে, ক্যাপিটাল মেশিনারির আমদানি উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। এখানে শঙ্কার দিকটি হলো_ এভাবে কি প্রচুর মেশিনারিজ আমদানি হয়েছে, নাকি এ সুযোগে প্রচুর অর্থ পাচার হয়ে গেছে? ওভার ইনভয়েসিং কি ঘটেছে? এটা সত্য হলে আরও একটি শঙ্কা প্রকাশ পায়। একদিকে বিনিয়োগ পরিস্থিতি দুর্বল, অপরদিকে অর্থ পাচার। অর্থ পাচার হতে পারে আমদানি পণ্যের মূল্য বেশি দেখিয়ে অর্থাৎ ওভার ইনভয়েসিং। আরেকটি প্রবণতা সম্প্রতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে_ বাংলাদেশিদের পাচার করা অর্থ বিদেশি বিনিয়োগ হিসেবে দেশে নিয়ে আসা এবং এটা করা হয় ব্যাংকের মাধ্যমে। বেসরকারি খাতের কোনো কোনো উদ্যোক্তা এ অর্থের একটি অংশ বিদেশি ঋণ হিসেবে দেশে আনছেন বলেও জানা যায়। এটাও জানা যে, ২০১২ সালে যে পরিমাণ অর্থ পাচার হয়েছে বলে অনুমিত, তার তুলনায় নিট বৈদেশিক সাহায্য এসেছে কম। এ অর্থ দেশে বিনিয়োগ হলে সাহায্য-নির্ভরতা কম হতো। বিনিয়োগ কম মাত্রায় হচ্ছে, অথচ অর্থ পাচার হচ্ছে, এমনটি উদ্বেগ বাড়ায় বৈকি। রাজনৈতিক অস্থিরতার পুনরাবৃত্তি অর্থ পাচার বাড়াতে পারে। আরও একটি শঙ্কা কেউ কেউ প্রকাশ করছেন_ বিদেশে মূলধন বিনিয়োগের জন্য অর্থ বাইরে নেওয়ার সুযোগ প্রদানে চাপ বাড়তে পারে।
সমকাল :রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ কেমন ছিল?
দেবপ্রিয় :পদ্মা সেতু ও রূপপুর পারমাণিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে বিনিয়োগ হয়েছে। কিন্তু ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-ময়মনসিংহ রোড প্রশস্ত করার প্রকল্প নির্ধারিত সময় পার হয়ে গেলেও কিছুতেই যেন শেষ হতে চায় না। রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং গভীর সমুদ্রবন্দরের মতো মেগা প্রকল্পের জন্য বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে কোনো বরাদ্দ রাখা হয়নি। বৈদেশিক সহায়তা কম হলে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নে সমস্যা হবে। প্রাইভেট-পাবলিক পার্টনারশিপ বা পিপিপিও টেক অফ করল না। বিনিয়োগ না বাড়লে আমরা ৭-৮ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে পারব না। কেউ কেউ হয়তো বলবেন যে, আমরা ৬ শতাংশের আশপাশের প্রবৃদ্ধির হারে আটকা পড়ে গেছি। এ অবস্থায় আমরা নিম্নবিত্ত-মধ্যবিত্ত জীবনে থেমে থাকব। দারিদ্র্যের কারণে আমাদের লোক হয়তো মারা পড়বে না। কিন্তু আমরা তো সচ্ছল জীবন চাই আরও বেশি বেশি মানুষের জন্য।
সমকাল : রাজস্ব আদায় চিত্র কেমন ছিল?
দেবপ্রিয় :বছরের প্রথম দিকে কর আদায় দুর্বল ছিল। বিশেষ করে প্রত্যক্ষ করের ক্ষেত্রে এটা ঘটেছে। কেন এমনটি ঘটেছে? এর একটি কারণ হতে পারে যে, লক্ষ্যমাত্রা ছিল উচ্চাভিলাষী, অর্থ আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা বেশি ধরা হয়েছিল। দ্বিতীয় কারণ হতে পারে যে, কর ফাঁকির ঘটনা বেশি ঘটেছে। আরেকটি কারণ হতে পারে, উৎপাদনশীল অর্থনীতি ভালো চলছে না। বিশেষ করে ভ্যাট বা মূল্য সংযোজন কর কম হওয়ার এ ধরনের একটি ব্যাখ্যা দেওয়া যায়। কর আদায়ের সঙ্গে যুক্তদের দুর্বলতাও আমরা ধরে নিতে পারি।
সমকাল : সার্বিক বিবেচনায় কী করণীয়?
দেবপ্রিয় : এ সরকার টানা ৬ বছর ক্ষমতায়। কিন্তু তারা কোনো বড় ধরনের সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়নে উদ্যোগী হয়নি। ব্যাংকিং খাত কিংবা পুঁজিবাজারে সংস্কার নেই। বেতন কমিশনের প্রতিবেদনে সরকারি কর্মীদের বেতন অনেক বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে। কিন্তু প্রশাসনে সংস্কার কোথায়? স্থানীয় সরকারের কাজও গতানুগতিক_ কোনো সংস্কার নেই। ২০১৫ সালে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে গতি বাড়াতে হলে বড় ধরনের সংস্কারে হাত দিতেই হবে। দুদক সম্ভাব্য দুর্নীতিবাজদের তলব করছে এবং স্বল্প সময়ের মধ্যেই দায়মুক্তি দিয়ে দিচ্ছে। সংস্কার না হলে কর আদায় কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় বাড়ানো সম্ভব হবে না। আমরা তো বাইপাস সার্জারি দেখি না, অন্য কোনো জটিল অপারেশন দেখি না। প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার, বিচার ব্যবস্থায় সংস্কার, প্রশাসনকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখা_ এসব ক্ষেত্রে সংস্কার না হলে উৎপাদন ব্যয় কমানো যাবে না। বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে এর বিকল্প নেই। রাষ্ট্র পরিচালনার প্রতিটি ক্ষেত্রে মেধার স্থান কেন থাকবে না? ২০১৫ সালে এসব বিষয় সামনে আসুক, সেটাই চাইব। দুর্নীতির ইস্যুতে দুদকের আরও সক্রিয় হওয়া আবশ্যকীয়।
সমকাল : অর্থনৈতিক কূটনীতিতে কিন্তু সরকার সফলতার দাবি করতে পারে…।
দেবপ্রিয় :২০১৪ সালে আমরা কূটনীতিতে বেশ কিছু পদক্ষেপ দেখেছি। চীনের সঙ্গে অর্থনৈতিক কৌশলগত সম্পর্ক জোরদার হয়েছে। ভারতকে কেন্দ্র করে আঞ্চলিক ও উপআঞ্চলিক উদ্যোগ রয়েছে। জাপানের সঙ্গেও সম্পর্ক জোরদার হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে স্ট্র্যাটেজিক ও বিনিয়োগ বিষয়ে সম্পর্ক উন্নত হলেও বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে শীতলতা বিরাজমান। আমাদের তৈরি পোশাকশিল্প খাত কিন্তু ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং যুক্তরাষ্ট্রে ও কানাডার নজরদারিতে রয়েছে।
সমকাল :এটা কি রাজনৈতিক কারণে, যেমনটি সরকারের কেউ কেউ দাবি করছেন?
দেবপ্রিয় :আমি সেটা মনে করি না। এটা একেবারেই মানবাধিকার ও শিল্প সম্পর্কিত। গুরুত্বপূর্ণ দেশগুলো সম্পর্কে অযথা কটুকথা না বলাই ভালো।
সমকাল : গণতন্ত্র, সুশাসন এসব কিন্তু বছরজুড়েই আলোচনায় ছিল…।
দেবপ্রিয় : আমরা প্রলম্বিত ছায়ায় রয়েছি। সূর্যের আলো পর্যাপ্ত না হলে মূল পর্যন্ত তা পেঁৗছায় না। গাছ বড় হয় না। মানবাধিকার, ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের অধিকার, শ্রমিক স্বার্থ_ এসব কেবল দেশের জনগণের কাছে নয়, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছেও গুরুত্বপূর্ণ। ভোটাধিকারের বিষয়টিও সবার বিবেচনায় থাকে। আমরা বাজার অর্থনীতি পরিচালনা করব কিন্তু রাষ্ট্রীয়ভাবে বহুমতের ধারণক্ষমতা থাকবে না_ এটা সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। প্রতিযোগিতামূলক রাজনীতি বাজার অর্থনীতির পরিপূরক। এটাও মনে রাখতে হবে যে, বাংলাদেশ সর্বদা বৈশ্বিক বাজার থেকে উপকৃত হয়েছে। রেমিট্যান্স, রফতানি, বিদেশি সাহায্য_ এসব হচ্ছে জ্বলন্ত উদাহরণ। এ বছরে অনেক দেশ বাংলাদেশের সঙ্গে রুটিন কাজকর্ম চালিয়ে গেছে। কিন্তু তাদের মনের ভেতর যা সর্বদা রয়েছে সেটা সুযোগ পেলেই উচ্চ মহলে জানিয়ে দিচ্ছে। তারা মনে করে, নিয়মিত সহায়তা কর্মসূচিগুলো স্থগিত রাখা হলে সাধারণ মানুষের ক্ষতি হবে। কিন্তু নির্বাচন, সাধারণ মানুষের অধিকার_ এসব তারা সর্বদা বলে যাচ্ছে।
সমকাল :গণতন্ত্রের প্রশ্নে পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো এক সময়ে যে ধরনের মনোভাব দেখিয়েছে, বাংলাদেশে কি তেমনটি লক্ষ্য করা যাচ্ছে?
দেবপ্রিয় :নো ডেমোক্র্যাসি_ এটা কোনো মডেল হতে পারে না। গণতন্ত্রের বিকল্প নেই। কোনো দেশের ভৌগোলিক অবস্থান, সামাজিক অবস্থা, ইতিহাস, সংস্কৃতি, মনস্তত্ত্ব_ এসব মিলিয়ে নিজস্ব একটি ধারা তৈরি হয়। আমরা নব্বইয়ের দশকের অভিজ্ঞতায় দেখেছি যে, গণতন্ত্রের কারণে আগের দুই দশকের চেয়ে প্রবৃদ্ধির হার ভালো ছিল। এখন আমরা পরের উচ্চতর ধাপে যেতে চাই। এখন দেখতে হবে এজন্য যা করণীয় সেটা করা হচ্ছে কিনা। আমাদের এটাও মনে রাখতে হবে, বিশ্বব্যাপী জাতিসংঘ সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্য নির্ধারণের আগেই বাংলাদেশ সমপর্যায়ের অনেক দেশের চেয়ে এগিয়ে ছিল। আমরা সামাজিক উন্নয়নের সংস্কারে পদক্ষেপ নিতে পেরেছি। এখন আরও অনেক ক্ষেত্রে আমাদের উদ্যোগী হতে হবে এবং এটা কারও নির্দেশে নয়, স্বউদ্যোগেই করা চাই। যে কোনো ধরনের কর্তৃত্ববাদী মনোভাব পরিত্যাজ্য হওয়া চাই। অযথা নিয়ন্ত্রণ আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে বিকাশের লক্ষ্য অর্জনে সহায়ক হবে না।
সমকাল :আমাদের রাজনৈতিক পরিবর্তন এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে চেইন এজেন্ট কে হবে?
দেবপ্রিয় :এ ক্ষেত্রে অবশ্যই বলব নেতৃত্বের কথা। আমাদের নেতৃত্ব ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার প্রশ্নে সঠিক পথে চলেছিল। স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়েও তারা গুরুত্বপূর্ণ সময়ে দৃঢ়সংকল্প দেখাতে পেরেছে। বিকাশের ধারা অব্যাহত রাখতে এখনও নেতৃত্বকেই সৃজনশীল ভূমিকা নিতে হবে। মধ্যবিত্তদেরও এগিয়ে আসতে হবে। তারা যদি নিভৃতচারী ভূমিকা থেকে বের হয়ে আসতে পারে, তাহলে বিকাশের পথ প্রশস্ত হবেই। এটাও মনে রাখতে হবে যে, যা কিছু পরিবর্তন তা দেশের ভেতর থেকেই হতে হবে। বৈদেশিক ঘটনাবলি পরিপূরক হতে পারে, উদ্গাতা নয়। নতুন বাংলাদেশের পথে যাত্রা শুরু হোক, এটাই বছরের শেষ দিনের প্রত্যাশা।
সাক্ষাৎকার গ্রহণ : অজয় দাশগুপ্ত