Published in প্রথম আলো on Wednesday 1 January 2020
অধ্যাপক রেহমান সোবহান। গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সিপিডির চেয়ারম্যান। বাংলাদেশের প্রথম পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা। খ্রিষ্টীয় নববর্ষ উপলক্ষে দেশের আর্থসামাজিক অবস্থা ও গণতান্ত্রিক পরিবেশ সম্পর্কে নিজের মত জানিয়েছেন এই অর্থনীতিবিদ। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সোহরাব হাসান।
প্রথম আলো: ২০১৯ সাল শেষ হলো। আজ আমরা খ্রিষ্টীয় নতুন বছরকে বরণ করে নেব। ইতিমধ্যে আমরা স্বাধীনতার ৪৮ বছর পেরিয়ে ৪৯ বছরে পদার্পণ করেছি। মুক্তিযুদ্ধের সক্রিয় অংশীজন হিসেবে আপনার অনুভূতি জানতে চাইছি।
রেহমান সোবহান: ৪৮ বছরে আমাদের অনেক অগ্রগতি আছে। একাত্তরে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা খুব নাজুক ছিল। এখন সেটি অনেকটাই কাটিয়ে উঠতে পেরেছি। কৃষি, শিল্পসহ অনেক ক্ষেত্রে আম
াদের সাফল্য বহির্বিশ্বে প্রশংসিত। সেদিক থেকে বলতে হবে অনুভূতি আনন্দদায়ক।
প্রথম আলো: নতুন বছরে আপনার প্রত্যাশা কী? আগামী ২০ বছরে বাংলাদেশকে কীভাবে দেখতে চান?
রেহমান সোবহান: বাংলাদেশের অনেক ইতিবাচক দিক আছে, যা ২০২০ সাল কিংবা পরবর্তী সময় আমাদের আরও সামনে নিয়ে যাবে। আমাদের শক্তিশালী ও ভবিষ্যৎমুখী নেতৃত্ব আছে। একটি গতিশীল ও বর্ধনশীল উদ্যোক্তা শ্রেণি আছে। পরিশ্রমী ও উদ্যোক্তা কর্মজীবী শ্রেণি আছে, যারা আমাদের প্রবৃদ্ধিকে অর্থবহ করেছে এবং শিল্পে বৈচিত্র্য এনেছে। বিপুল ও শক্তিশালী প্রবাসী শ্রমিক আছেন, যাঁরা বৈদেশিক মুদ্রার ভান্ডার স্ফীত করছেন। আমাদের কৃষকদের গতিশীলতা প্রবৃদ্ধিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছে এবং গ্রামীণ অর্থনীতিতে সমৃদ্ধি এনেছে। নারীরা উদ্যোগের সক্ষমতা দেখিয়েছে এবং আমাদের ক্ষুদ্রঋণ ও তৈরি পোশাকশিল্পে তাদের কর্মদক্ষতা অর্থনীতিতে গতি সঞ্চার করেছে। এ ছাড়া বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা এবং নাগরিক সমাজের উদ্যোগ ও নিষ্ঠা আছে। এসব সম্পদ আমাদের বাংলাদেশকে শুধু ২০২০ সাল নয়, পরবর্তী বছরগুলোতেও অসীম সমৃদ্ধি নিয়ে আসবে।
তবে আমাদের সম্পদের উৎপাদনশীলতা পুরোপুরি কাজে লাগাতে হলে প্রতিযোগিতামূলক, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের ভিত্তিতে একটি জবাবদিহিমূলক, স্বচ্ছ ও সৎ শাসনব্যবস্থা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। সেই সঙ্গে জরুরি হলো একটি শক্তিশালী, স্বাধীন গণমাধ্যম এবং অধিকতর সমতাভিত্তিক, ন্যায্য উন্নয়ননীতি।
বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ এই নতুন ধারাকে সঠিক পথে এগিয়ে নিতে চমৎকার সুযোগ এনে দিয়েছে। বাংলাদেশের বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তীতে আমরা যাতে উন্নয়নের সুফল পেতে পারি, তার একটি সুন্দর বছর হতে পারে ২০২১। আমাদের রাজনৈতিক ব্যবস্থা ও অর্থনৈতিক নির্দেশনায় এই কার্যক্রমকে যদি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়া যায়, তাহলে পরবর্তী দশকগুলোতে বাংলাদেশ অগ্রবর্তী গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের সারিতে নিজের স্থান করে নিতে পারবে, সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। আমি বাংলাদেশকে সত্যিকার গণতান্ত্রিক, ন্যায়ভিত্তিক ও ধর্মনিরেপক্ষ রাষ্ট্র হিসেবে দেখতে চাই।
প্রথম আলো: প্রথম আলোর জরিপ অনুযায়ী মোট জনসংখ্যার ৬৫ শতাংশ তরুণ এবং তাঁদের প্রতি পাঁচজনের মধ্যে চারজনই ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত। এর প্রতিকার কী?
রেহমান সোবহান: প্রবৃদ্ধি বাড়ানো ও দারিদ্র্য কমানোর পাশাপাশি আমাদের উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় কর্মসংস্থান সৃষ্টিকে যুক্ত করা প্রয়োজন। স্কুল পর্যায় থেকেই তরুণদের কর্মসংস্থান যে একটি মৌলিক অধিকার, সেটা স্বীকার করতে হবে এবং চাকরির নিশ্চয়তা দিতে হবে। তরুণদের কর্মসংস্থানের জন্য নিম্নোক্ত বিষয় বিবেচনায় নেওয়া যেতে পারে।
১. সরকারি চাকরিতে পদায়ন ও পদোন্নতিতে তরুণদের নিয়োগ দিতে হবে সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে, যেখানে রাজনৈতিক বিবেচনা বা উৎকোচের কোনো বিষয় থাকবে না।
২. বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা পুনর্মূল্যায়ন করতে হবে, যাতে স্বল্প আয়ের তরুণেরা মানসম্পন্ন শিক্ষা পেতে পারে এবং নিজেদের দক্ষ কর্মী হিসেবে তৈরি করতে পারে। যুগের চাহিদা মেটাতে পারে, এমন শিক্ষা তাদের দিতে হবে।
প্রথম আলো: সম্প্রতি এক সেমিনারে আপনি পেশিশক্তি ও কালোটাকামুক্ত নির্বাচনের কথা বলেছেন। কিন্তু নির্বাচনী ব্যবস্থাটিও ধ্বংসের কিনারে চলে এসেছে।
রেহমান সোবহান: রাজনৈতিক দলগুলোকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে তারা যোগ্য ও সৎ প্রার্থীদের মনোনয়ন দেবে, যাদের জনগণের জন্য কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে। রাজনৈতিক দলগুলো গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে যোগ্য প্রার্থী বাছাই করলে তৃণমূল পর্যায়ের কর্মীরা নির্বাচনে প্রার্থীদের বাছাই করার সুযোগ পাবেন। কালোটাকার মালিকেরা টাকার বিনিময়ে যে মনোনয়ন কিনে নেন, সেটি নিরুৎসাহিত করতে হবে। এ পদ্ধতিতে বঙ্গবন্ধু কিংবা তাজউদ্দীন আহমদ কখনোই মনোনয়ন পেতেন না।
আর স্বচ্ছতার ভিত্তিতে রাষ্ট্রীয়ভাবে নির্বাচনী ব্যয় জোগান দিতে হবে, এ জন্য সত্যিকার স্বাধীন নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে, যার সদস্যরা রাজনৈতিক মতৈক্যের ভিত্তিতে মনোনীত হবেন এবং যাঁদের সততা সম্পর্কে জনগণের মধ্যে কোনো প্রশ্ন থাকবে না।
প্রথম আলো: অর্থনীতিবিদ হিসেবে আপনি বরাবর সমাজে সমতা প্রতিষ্ঠা ও শোষণমুক্তির পক্ষে লড়াই করে এসেছেন। পাকিস্তান আমলে বিখ্যাত দুই অর্থনীতির তত্ত্ব সামনে নিয়ে এসেছিলেন। কিন্তু স্বাধীনতার ৪৮ বছর পর বাংলাদেশে ধনী ও দরিদ্রের ব্যবধান তো আরও বেড়েছে।
রেহমান সোবহান: উন্নয়নশীল দেশের মানে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি আকর্ষণীয়। সুনির্দিষ্টভাবে গত দুই দশকের হিসাব ধরলে, একই সঙ্গে দারিদ্র্যও কমে এসেছে। এটি ইতিবাচক অর্জন। কিন্তু প্রাপ্ত তথ্যপ্রমাণে এটাই প্রতিভাত যে সামাজিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্য ক্রমশ বাড়ছে এবং সেই ধারা অব্যাহত আছে। আবারও বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষের কথা স্মরণ করব, কেননা তাঁর জীবনভর রাজনৈতিক সংগ্রাম শুধু গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও বাঙালির স্বশাসনের জন্য ছিল না; বরং একটি ন্যায় ও সমতাভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠাই ছিল তাঁর লক্ষ্য। বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিল শ্রমজীবী মানুষের শোষণ ও আয়বৈষম্য কমিয়ে আনা।
আমরা অতীতের বছরগুলোতে দেখে আসছি, পূর্বাপর সরকারগুলো মুষ্টিমেয় ধনিক শ্রেণিকে ব্যাপক আর্থিক সুবিধা দিয়ে এসেছে। তাঁদের বিশাল আকারে ও নিয়মবহির্ভূতভাবে ব্যাংকঋণ দেওয়া হয়েছে, যা পরিশোধ করতে তাঁরা ব্যর্থ হয়েছেন। এই বিশাল আকারের খেলাপি ঋণ ও পুনঃ তফসিলিকরণের মাধ্যমে লাখ লাখ সাধারণ মানুষের সঞ্চয় স্থানান্তর করা হয়েছে। এতে গুটিকয়েক ধনী লাভবান হয়েছে এবং দেশের অর্থনৈতিক বৈষম্য আরও প্রসারিত হয়েছে।
প্রথম আলো: আমাদের রাজনীতিকেরা বিরোধী দলে থাকলে স্বাধীন গণমাধ্যমের পক্ষে জোরালো বক্তব্য দেন। কিন্তু ক্ষমতায় গেলে তাঁরা কালো আইন ও ভয়ভীতি দেখিয়ে এই স্বাধীনতা খর্ব করতে সচেষ্ট থাকেন।
রেহমান সোবহান: একটি মুক্ত ও স্বাধীন গণমাধ্যমের দায়িত্ব হলো সব বিষয় খতিয়ে দেখা এবং জনগণের সামনে সত্য তুলে ধরা। গণতন্ত্রের স্তম্ভ হিসেবে এর গুরুত্ব কোনো অংশে সুষ্ঠু নির্বাচনের চেয়ে কম নয়। যে সরকার সত্যিকারভাবে সুশাসন ও টেকসই উন্নয়ন দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, তার জন্য স্বাধীন গণমাধ্যম শ্রেষ্ঠ সম্পদ হতে পারে। আমাদের দেশে ঐতিহ্যগতভাবে শাসনব্যবস্থা নিচ থেকে ওপর পর্যন্ত সরকারি কর্মকর্তারা পরিচালনা করেন। এ ক্ষেত্রে অপকর্ম ও উন্নয়নের ঘাটতির প্রবণতা থেকে যায়। যেসব নীতিনির্ধারকের সৎ উদ্দেশ্য আছে, তাঁরাও মন্ত্রণালয় ও প্রশাসনের ভেতরে কী হচ্ছে, তা কদাচিৎ জানতে পারেন।
সুষ্ঠু শাসন পরিচালনার জন্য অর্থমন্ত্রী ও অন্য সব মন্ত্রীর উচিত নিজ নিজ ক্ষেত্র ও দায়িত্বের বিষয়ে তাঁদের কর্মকর্তাদের কাছ থেকে পুরো স্বচ্ছতা দাবি করা এবং কোনো বিচ্যুতি ঘটলে তাঁদের কাছ থেকে জবাবদিহি আদায় করা।
প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীর উচিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া ও সরকারের ব্যয়সংক্রান্ত তথ্যাদি অনলাইনে পাওয়ার ব্যবস্থা করা এবং তাতে গণমাধ্যম ও জনগণের প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা।
প্রথম আলো: যেকোনো গণতান্ত্রিক দেশে নাগরিক সমাজ শক্তিশালী ভূমিকা রেখে থাকে। কিন্তু আমাদের নাগরিক সমাজ রাজনৈতিকভাবে বিভক্ত। কেন?
রেহমান সোবহান: নাগরিক সমাজের মধ্যে বিভক্তি যে শুধু বাংলাদেশে আছে, তা নয়। প্রতিবেশী ভারতে, এমনকি যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপসহ উন্নত দেশের নাগরিক সমাজের মধ্যে রাজনৈতিক মেরুকরণ অধিক স্পষ্ট। জাতীয় রাজনীতির ক্রমবর্ধমান সংঘাতময় চরিত্রের সমান্তরালেই এটি ঘটেছে। যদিও আমাদের মনে রাখতে হবে, নাগরিক সমাজের সবাই রাজনৈতিকভাবে বিভক্ত নয়। নাগরিক সমাজের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ কোনো রাজনৈতিক দলের প্রতি অনুগত নয় এবং জনস্বার্থে স্বাধীন মতামত দিতে থাকে। এই স্বাধীন নাগরিক সমাজ শুধু জনগণের কাছে তাদের কথা বলে না, কথা বলে সরকারের কাছেও। কোথায় সরকারের ভুলভ্রান্তি আছে, কোথায় সুশাসনের ঘাটতি আছে, সেটাও জানিয়ে দেয়। অনেক ক্ষেত্রে সরকারের কার্যক্রম কীভাবে উন্নত করা যায়, তারও গঠনমূলক পরামর্শ দেয় তারা। দুঃখজনক যে এ ধরনের বন্ধুসুলভ সমালোচনাকেও ক্ষমতাসীনেরা কদাচিৎ অনুমোদন করেন; বরং তারা এই সমালোচনার ভুল ব্যাখ্যা করে এবং অন্যায্যভাবে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হিসেবে চিহ্নিত করে।
প্রথম আলো: গত দুটি জাতীয় নির্বাচন কীভাবে মূল্যায়ন করবেন? সম্প্রতি আপনি বলেছেন, আমাদের পরবর্তী অর্ধশতকে গণতন্ত্রকে অর্থবহ করে তুলতে হলে প্রকৃত জনপ্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে হবে।
রেহমান সোবহান: এটি স্বীকার করা কঠিন যে গত দুটি নির্বাচন প্রতিযোগিতামূলক হয়েছে, যেখানে বিরোধীরা সমতল মাঠ পেয়েছে। সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলোর অংশগ্রহণ ও জয়-পরাজয় নির্ধারিত হবে, এটাই নির্বাচনী বৈধতা দাবি করে। এটা আওয়ামী লীগের ঐতিহ্য ও তার নেতা বঙ্গবন্ধুর উত্তরাধিকার। আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠা ও গণতন্ত্রের জন্য তাদের দুই দশকব্যাপী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্রের এই ধারণাই প্রতিষ্ঠা করেছে। ১৯৮১ সালে নেতৃত্ব গ্রহণকারী নেত্রী শেখ হাসিনারও প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল এটি; যিনি ১৯৮৬ সালে প্রথম নির্বাচনে অংশ নেন। সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন ছাড়া অন্য কোনো পথে ক্ষমতায় আসা আওয়ামী লীগের ঐতিহ্য নয়।
এই দলের আজীবন সমর্থক হিসেবে আমার প্রত্যাশা থাকবে নেতৃত্ব অবাধ, সুষ্ঠু ও প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় বহাল থাকবে; যেখানে নির্বাচনী স্বচ্ছতা কেউ চ্যালেঞ্জ করতে পারবে না। আমরাকিছুদিনের মধ্যেই বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ উদ্যাপন করতে যাচ্ছি। ন্যায্য গণতন্ত্র বিনির্মাণে তাঁর জীবনব্যাপী সংগ্রামকে সম্মান জানাতে বিষয়টির প্রতি আমাদের বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া উচিত।
প্রথম আলো: শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, নারীর ক্ষমতায়ন ও অবকাঠামোর সম্প্রসারণে আমাদের অনেক ইতিবাচক অর্জন আছে। কিন্তু একই সঙ্গে দুর্নীতির মাত্রাও বেড়েছে। সম্প্রতি সরকার দুর্নীতিবিরোধী অভিযান শুরু করেছে। অতীতেও সব সরকার দুর্নীতিবিরোধী অভিযান চালিয়েছে। কিন্তু সফলতা দেখাতে পারেনি।
রেহমান সোবহান: শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, নারীর ক্ষমতায়ন ও অবকাঠামোর সম্প্রসারণে আমাদের অনেক ইতিবাচক অর্জন আছে। যদিও উন্নত ও অধিক সৎ শাসনব্যবস্থার মাধ্যমে এসব ক্ষেত্রে আরও অনেক বেশি অর্জন করা যেত। শিক্ষাক্ষেত্রে সুশাসনের ঘাটতি আছে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, শিক্ষার নিম্নমানের কারণে উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষা নেওয়া এমনকি কলেজে স্নাতক ডিগ্রিধারীদেরও চাকরির বাজারে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে।
আমাদের অবকাঠামো খাতে বর্তমানে যে খরচ হয়ে থাকে, তার চেয়ে কম খরচে আরও মানসম্পন্ন উন্নয়নকাজ হতে পারত। বহু প্রকল্প দীর্ঘসূত্রতায় আটকে পড়ে, এতে সময় ও অর্থ—দুই-ই বেশি লাগে। আমাদের সরকারগুলো তাদের রাজনৈতিক দলঘেঁষা লোকজনকে যথেষ্ট যোগ্যতা না থাকার পরও দলীয় বিবেচনায় পৃষ্ঠপোষকতা দেয় এবং যোগ্যতা ছাড়াই তাঁদের এসব প্রকল্পের কাজ দিয়ে থাকে। এটি প্রকল্প বাস্তবায়নে অদক্ষতা ও প্রকল্পের খরচ বাড়ার মূল কারণ।
সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতিবিরোধী যে অভিযান শুরু করেছেন, তা প্রশংসনীয় এবং এটি বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ উদ্যাপনের প্রাক্কালে তাঁর স্বপ্নপূরণের অঙ্গীকারের প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন। এই মহান অঙ্গীকারকে আরও ফলপ্রসূ করতে যাবতীয় সরকারি ব্যয়ে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা দরকার। এর জন্য নিয়মিত প্রকল্প প্রতিবেদন এবং ব্যয়ের হিসাব দাখিল করা দরকার। বর্তমান সরকার মন্ত্রী, এমপি ও শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদের আয়-ব্যয়ের হিসাব নিয়মিত জনসমক্ষে প্রকাশের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। সেই প্রতিশ্রুতির প্রতি সম্মান জানিয়ে প্রতিবছর তাঁদের সম্পদের হিসাব অনলাইনে প্রকাশ করা উচিত। আরেকটি পরামর্শ হলো, সুশাসনের অন্যতম উপাদান হলো স্বার্থ-সংঘাত (কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট) এড়িয়ে চলা। সরকারকে এ বিষয়টি অবশ্যই আমলে নিতে হবে।