Dr Khondaker Golam Moazzem, Additional Research Director, CPD was interviewed as regards the impact of political unrest on the RMG sector and its future, published in Kaler Kantho on Sunday, 12 January 2014.
রাজনৈতিক অস্থিরতা কাটলে পোশাকশিল্প এগিয়ে যাবে
এম সায়েম টিপু
দেশের রপ্তানি আয়ের সবচেয়ে বড় খাত পোশাকশিল্প। ৪০ লাখ শ্রমিকের কর্মসংস্থানের মধ্য দিয়ে হয়ে উঠেছে বৃহৎ কর্মসংস্থান উৎসও। তবে সাম্প্রতিক কিছু দুর্ঘটনা ও চলমান রাজনৈতিক সংকটে বেকায়দায় থাকা এ খাতে বাজার হারানোর আশঙ্কা করছেন অনেকে। এর মধ্যেও আশার কথা শোনালেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। কালের কণ্ঠের নিজস্ব প্রতিবেদক এম সায়েম টিপুর সঙ্গে আলোচনাকালে তিনি তাঁর আশার কথা জানান
২০১৩ সালের শুরু থেকেই তৈরি পোশাক শিল্প বেশ ঘটনাপ্রবাহের মধ্য দিয়ে এগিয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত করেছে রানা প্লাজা দুর্ঘটনা আর অন্যটি হলো অভ্যন্তরীণ এবং বৈদেশিক বিভিন্ন সূচকের পরিবর্তন। সব ছাড়িয়ে সাম্প্রতিককালে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে রাজনৈতিক অস্থিরতা। এ প্রসঙ্গে ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, তাজরীন ও রানা প্লাজার ঘটনা প্রমাণ করে তৈরি পোশাক খাতে ঘাটতি ও দুর্বলতা রয়েছে এবং সেই দুর্বলতা থেকেই সারা বছর ধরে নানা ঘটনার উত্তাপ ছড়ায়।
খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, আশার বিষয়, এসব ঘটনার পর এর থেকে বের হয়ে আসার জন্যও বিভিন্ন সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ফলে অগ্রগতি হয়েছে অনেক। এসবের মধ্যে নিহত শ্রমিকদের প্রধানমন্ত্রীর অনুদান, আহত শ্রমিকদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা, শ্রমিকদের জন্য নতুন মজুরি কাঠামো এবং সেটির ক্ষেত্রে বিদেশি ক্রেতাদের এগিয়ে আসা। এ ছাড়া পরে ক্রেতারা দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য এগিয়ে আসেন। তিনি বলেন, এগুলো এক ধরনের অগ্রগতি। তবে এসব ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থার নেওয়ার ব্যাপারে এক ধরনের শ্লথ গতিও লক্ষ করা গেছে।
খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, রানা প্লাজার দুর্ঘটনার পর দেশের তৈরি পোশাক খাতের ওপর বিশ্বব্যাপী এক ধরনের প্রভাব পড়ে। এর ভিত্তিতে এই খাতের সংস্কারের ব্যাপারে সব পক্ষ এগিয়ে আসে। আর সেই উদ্যোগের অংশ হিসেবে দেশের ভেতরে জাতীয় কর্ম পরিকল্পনা হয়েছে। একই সঙ্গে পোশাক খাতের সমস্যা চিহ্নিত করে ধারাবাহিকভাবে সমাধানের জন্য ইউরোপ ও যুক্তরাস্টের ক্রেতাদের দুটি সংস্থা হয়েছে। এগুলো হলো ইউরোপ অ্যাকড এবং যুক্তরাষ্ট্রের অ্যালায়েন্স। সংগঠন দুটি বিশেষত অগি্ন, বিদুৎ এবং অবকাঠামোগত সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে সমস্যা সমাধানে কাজ শুরু করেছে। এ ছাড়া তারা দীর্ঘমেয়াদি কাজ করবে।
তিনি বলেন, ‘এসব দুর্ঘটনার পর আশঙ্কা করা হচ্ছিল তৈরি পোশাক খাতের রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। কিন্তু সৌভাগ্যর বিষয় হলো, কোনো ধরনের নেতিবাচক প্রভাব দেখা যায়নি এ সময়। কারণ বিশ্বব্যাপী মৌলিক পণ্যের অন্যতম উৎস বাংলাদেশ। ফলে ক্রেতাদের জন্য নতুন করে অন্য দেশ থেকে পোশাক নেওয়া খুব সহজসাধ্য নয় এবং বাংলাদেশের প্রতিযোগিতায় ঠিকে থাকার সক্ষমতাও আছে। তাই আমি আশা করছি, ভবিষ্যতেও রপ্তানির একটি প্রবাহ অব্যাহত থাকবে, যা এখন পর্যন্ত বজায় রয়েছে।’
খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, বর্তমানে যে ধরনের কার্যক্রম চলছে, পোশাক কারখানাগুলো দীর্ঘমেয়াদি কমপ্লায়েন্স, শ্রমিকদের জন্য নিরাপদ কর্মপরিবেশ এগুলো যদি যথাসময়ে শেষ হয় এবং সেদিকে সব কর্তৃপক্ষ আন্তরিক হয়। তবে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের আরো মান উন্নয়ন ঘটবে এবং আন্তর্জাতিক বাজারে গর্বের সঙ্গে নেতৃত্ব দেবে পোশাক রপ্তানি খাতে।
অগ্রধিকার বাজার সুবিধা (জিএসপি) প্রসঙ্গে তিনি বলেন, রানা প্লাজার কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে জিএসপি স্থগিত হয়েছে। এই জিএসপি স্থগিত করার ব্যাপারে একটি নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। আর এগুলো বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ ফের এ সুবিধা ফিরে পেতে পারে। এ ছাড়া ইউরোপেও জিএসপি সুবিধা পুনর্বিবেচনার সময় এসেছে। এখানেও বর্তমানে নেওয়া উদ্যোগগুলো বিবেচনায় নেওয়া হবে বলে তিনি মনে করেন। তবে তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে জিএসপি সুবিধা প্রত্যাহারের ফলে কোনো নেতিবাচক প্রভাব না পড়লেও ইউরোপের বাজারে যদি কোনো কারণে জিএসপি সুবিধা স্থগিত করা হয়, তাহলে এর নেতিবাচক প্রভাব আমাদের পোশাক খাতে পড়বে।’
রাজনৈতিক অস্থিরতা নিয়ে তিনি বলেন, ২০১৩ সালে রানা প্লাজার বাইরে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি পোশাক খাতকে প্রভাবিত করেছে। হরতাল-অবরোধের কারণে এ খাতের উদ্যোক্তাদের পণ্য রপ্তানিতে বেশ হিমশিম খেতে হয়েছে। জাহাজের পরিবর্তে উড়োজাহাজ পণ্য পরিবহন করতে গিয়ে তাঁদের ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়েছে।
বৈদেশিক সূচকের প্রভাবেব প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাংলাদেশি টাকা ডলারের বিপরীতে শক্তিশালী হওয়া একই সঙ্গে পার্শ্ববর্তী অন্য রপ্তানিকারক দেশগুলো মুদ্রা ডলারের বিপরীতে দুর্বল হয়েছে বা অবমূল্যায়িত হয়েছে। এই বিপরীতমুখী পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশি রপ্তানিমুখী পণ্য কিছুটা চাপের মধ্যে পড়েছে।
পাকিস্তানকে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের (ইইউ) জিএসপি সুবিধা দেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ইইউ পাকিস্তানকে যে জিএসপি সুবিধা দিয়েছে, এটা জানুয়ারিতে কার্যকর হয়েছে। এই সুবিধার মাধ্যমে পাকিস্তান স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) মতো ৭৫টি পণ্যে শূন্য শুল্ক সুবিধা পাবে। তবে আশার কথা, এসবের মধ্যে তৈরি পোশাক খাত নেই। অন্য পণ্যগুলোর মধ্যে তৈরি পোশাক খাতের নিট ও ওভেন রয়েছে। ফলে সেখানে বিশেষ কিছু সুবিধা পেতে পারে পাকিস্তান।
শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে গোলাম মেয়াজ্জেম বলেন, নতুন মজুরি কাঠামো হয়েছে। সাম্প্রতিক রাজনীতির বাধা বিপত্তি না থাকলে মালিকদের মজুরি সমন্বয় নিয়ে মাথাব্যথা কেটে যাবে। কারণ ক্রেতারা পণ্যের মূল্য বাড়ানোর ব্যাপারে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। অনেক বায়ার তাদের পণ্যে দামও বাড়িয়েছে। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ চ্যালেঞ্জগুলো না থাকলে, বিশেষ করে রাজনৈতিক অস্থিরতা না থাকলে এই খাতকে তেমন একটা চাপে পড়তে হতো না। দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা আর রানা প্লাজা ধসের ঘটনা আমাদের রপ্তানি পণ্যের অনুকূল পরিবেশকে কিছুটা হলেও বিঘ্নিত করেছে।’
পোশাক খাতের ভবিষ্যৎ নিয়ে তিনি বলেন, ‘আগামী দিনে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। এটি হবে দীর্ঘমেয়াদি। এ খাতের উন্নয়নে ইতিমধ্যে নেওয়া উদ্যোগগুলো আমাদের পোশাক খাতকে সুবিধাজনক অবস্থায় নিয়ে যাবে। এটাকে ব্যবহার করে আমরা কম দামি পোশাক তৈরি থেকে মধ্য ও উচ্চ মূল্যের পোশাক রপ্তানির দিকে স্থানান্তরিত হতে পারব। আমাদের সুযোগের কোনো সমস্যা নেই। কারণ আমদের উদ্যোক্তারা পরিশ্রমী। তাদের রয়েছে দৃঢপ্রত্যয়।’ তিনি বলেন, দেশের বর্তমান রাজনৈতিক অস্থিরতা কেটে গেলেই আবার এগিয়ে যাবে সম্ভাবনাময় পোশাক শিল্প।