Originally posted in দৈনিক জনকন্ঠ on 1 September 2025
রপ্তানি বৃদ্ধির হাতছানি
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পাল্টা শুল্কারোপের সুবিধা এখন দেশের রপ্তানি বাণিজ্যে নতুন সম্ভাবনা হিসেবে দেখা দিয়েছে। পোশাক রপ্তানির পাশাপাশি চামড়া, কৃষিজাতপণ্য, প্লাস্টিক, ওষুধ ও জাহাজসহ অন্তত অর্ধশতাধিক পণ্যের রপ্তানি বাড়বে বলে সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন। এজন্য রপ্তানি সক্ষমতা বাড়ানোর ওপর জোর দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, দেশের সামনে এখন রপ্তানি বৃদ্ধির হাতছানি-যা দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যকে বহির্বিশ্বে আরও বেশি বিস্তৃত করার সম্ভাবনা তৈরি করবে। পোশাকের বাইরে এবার অন্যান্য পণ্যের দিকে সমানভাবে গুরুত্বারোপ করা প্রয়োজন। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পাশাপাশি নতুন বাজার অনুসন্ধান করে পণ্য রপ্তানি বাড়াতে হবে। একক পণ্য থেকে বের হয়ে রপ্তানি হতে হবে বহুমুখীকরণ। তাহলে দেশের অর্থনীতি শক্তিশালী হবে ও প্রবৃদ্ধি বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে।
কিন্তু বছরের পর বছর ধরে নীতি নির্ধারক ও ব্যবসায়ীরা দেশের রপ্তানিপণ্যের বৈচিত্র্য ও গন্তব্য বহুমুখী করার কথা বলে আসছেন। কিন্তু দীর্ঘ সময়ে বাস্তবে খুব একটা পরিবর্তন আসেনি। এমনকি সরকারের উদার প্রণোদনা নীতি থাকা সত্ত্বেও রপ্তানি এখনো কয়েকটি নির্দিষ্ট পণ্য ও বাজারের ওপরই বেশি নির্ভরশীল। ফলে রপ্তানি সক্ষমতা বাড়ানো সম্ভব না হলে বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে যেকোনো মুহূর্তে নতুন চ্যালেঞ্জ ও সংকট সামনে চলে আসতে পারে। এসব দিক বিবেচনায় নিয়েই নতুন নতুন বাজার অনুসন্ধান, দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বাড়াতে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে আন্তর্জাতিক চুক্তি করার প্রয়োজন হতে পারে। এ লক্ষ্যে এবার বিশ্বের ২৩টি দেশে কর্মরত বাংলাদেশ দূতাবাসের ইকোনমিক মিনিস্টার এবং কমার্শিয়াল কাউন্সিলরদের এবার কাজে লাগানোর উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার।
বিশেষ করে রপ্তানিযোগ্য পণ্যের নতুন বাজার সন্ধান, যেসব দেশ থেকে নিত্যপণ্য আমদানি করা হয় সেই দেশগুলোর মূল্য পরিস্থিতি নিয়ে মনিটরিং প্রতিবেদন প্রেরণ এবং বাণিজ্য বাধা (ট্যারিফ-নন ট্যারিফ) দ্রুত সমাধানে উদ্যোগ নেওয়া হবে। এ ছাড়া যেসব দেশে রপ্তানির চেয়ে আমদানি বেশি হয় সেসব দেশে বিকল্প কী পণ্য রপ্তানি করে আমদানি-রপ্তানিতে ভারসাম্য আনা যায় তা নিয়ে কাজ করতে নির্দেশনা দেবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বছর শেষে কমার্সিয়াল কাউন্সিলরদের কাজের মূল্যায়ণ করা হবে। অভিযোগ রয়েছে-কমার্সিয়াল কাউন্সিলররা পদ ও পোস্টিং নিয়ে যতটা ব্যস্ত থাকেন সেই তুলনায় সরকারি কাজে মনোযোগ দেন না। ফলে নির্দিষ্ট কিছু পণ্যের বাইরে সেই অর্থে বাংলাদেশের রপ্তানি বাড়ার তেমন কোনো সুযোগ তৈরি হয়নি। একাধিক ব্যবসায়ী ও রপ্তানিকারকরা জানিয়েছেন, বিদেশে গেলে এদের খুঁজেই পাওয়া যায় না। অথচ কোন দেশের কী পণ্যের চাহিদা রয়েছে তা খুঁজে বের করে রপ্তানির ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। তাদের মতে, প্রতিটি দেশের আমদানি-রপ্তানিকারক, ব্যবসায়িক অ্যাসোসিয়েশন, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, এমনকি ব্যক্তি পর্যায়ে সম্পর্ক তৈরির মাধ্যমে যোগাযোগ বাড়াতে হবে। কমার্সিয়াল কাউন্সিলরদের আরও উদ্ভাবনী হতে হবে। যে দেশে কমার্সিয়াল কাউন্সিলররা কর্মরত আছেন সেখানের ভাষা আয়ত্ত করতে হবে। যেসব দেশ আন্তর্জাতিক এবং আঞ্চলিক জোটে আছে তাদের মধ্যে বাণিজ্যিক পরিসংখ্যান সম্পর্কে জানতে হবে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পোশাক শিল্পের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে পণ্যের বহুমুখীকরণের ওপর জোর দিতে হবে। দেশ থেকে এগ্রোফুড, সি ফুড, প্লাস্টিক, সিরামিক, বাই সাইকেল, ফার্নিচার, চা-সহ অনেক রপ্তানিযোগ্য পণ্য রয়েছে। এগুলো রপ্তানির নতুন বাজার ধরতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সে সঙ্গে জরুরি ভিত্তিতে আমদানির জন্য বিকল্প বাজার খুঁজতে হবে। এককভাবে কোনো দেশের ওপর নির্ভরশীল হওয়া যাবে না। উল্লেখ্য, বাংলাদেশ চলতি অর্থবছরে আগের বছরের চেয়ে প্রায় ১৭ শতাংশ বেশি রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। ৬ হাজার ৩৫০ কোটি ডলারের এই লক্ষ্যটা বেশ উচ্চাভিলাষী মনে হলেও রপ্তানিকারকরা বলছেন, চ্যালেঞ্জটা বিদেশে নয়, বরং দেশের ভেতরেই। তাদের দাবি, বিদেশি চাহিদা বা আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা নিয়ে দুশ্চিন্তার চেয়ে আসল চ্যালেঞ্জ দেশের ভেতরেই। ব্যবসায়ীরা মনে করছেন, ব্যাংকগুলো যদি সহজে এলসি ছাড়ে, কারখানাগুলোতে গ্যাস-বিদ্যুতের নির্বিঘœ সরবরাহ থাকে এবং শুল্ক কর্তৃপক্ষ দ্রুত পণ্য ছাড়পত্র দেয়, তাহলে এই লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব। ব্যবসায়ীদের এই দাবি এতটাই জরুরি যে, লক্ষ্য ঘোষণার পরপরই সরকার অংশীজনদের সঙ্গে যৌথ বৈঠকের আহ্বান জানিয়েছে। এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান জানান, শীঘ্রই ২২টি খাতের রপ্তনিকারক, জ্বালানি খাত ও ব্যাংক খাতের কর্মকর্তাদের নিয়ে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা আছে।
এদিকে, মার্কিন শুল্কনীতির সাম্প্রতিক পরিবর্তন বাংলাদেশের জন্য বিশেষ করে পোশাক খাতে বাড়তি সুযোগ তৈরি করেছে। বাংলাদেশি পণ্যের ওপর এখন গড় শুল্ক হার ৩৬.৫ শতাংশ, যা প্রতিদ্বন্দ্বীদের (ভারত-চীন) তুলনায় কম। ফলে মার্কিন বাজারে বাংলাদেশের জন্য একটি সুযোগ তৈরি হয়েছে। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ নিটওয়্যার প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিকেএমইএ) সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম জনকণ্ঠকে বলেন, বিশ্ববাজারে চাহিদা আছে, আবার প্রতিযোগিতাও আছে। কিন্তু গ্যাসের অনিয়মিত সরবরাহ, হঠাৎ বিদ্যুৎ বিভ্রাট আর ভেঙে পড়া ব্যাংকিং ব্যবস্থার কারণে এলসি খোলা বিলম্বিত হলে, কীভাবে বাড়তি অর্ডার সামলাব? তবুও লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি পণ্য সরবরাহের সক্ষমতা আছে বলে জানান তিনি। শিল্পোদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, জ্বালানি সংকটে উৎপাদনে বাড়তি সময় লাগছে, খরচও বাড়ছে। টেক্সটাইল ও চামড়ার মতো বিদ্যুৎনির্ভর শিল্পের জন্য স্থিতিশীল জ্বালানি সরবরাহ না থাকলে লক্ষ্য পূরণ কঠিন হবে। অন্যদিকে, ব্যাংক খাতের সংকট ও উচ্চ সুদের হার রপ্তানিকারকদের চাপে ফেলছে। তারা বলছেন, ব্যাংক ব্যবস্থায় সংস্কার ও সহজে সুলভ ঋণপ্রাপ্তির পথ খুলে দিতে হবে।
জানা গেছে, বর্তমানে দেশের মোট রপ্তানি আয়ের ৮২ শতাংশেরও বেশি আসে তৈরি পোশাক খাত থেকে। আর মোট রপ্তানি আয়ের দুই-তৃতীয়াংশের বেশি আসে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও যুক্তরাষ্ট্রের বাজার থেকে। সদ্য সমাপ্ত ২০২৪-২৫ অর্থবছরে রেকর্ড ৪৮ বিলিয়ন ডলারের বেশি রপ্তানির মধ্যে এই দুই অঞ্চলে রপ্তানি পরিমাণ সামান্য কমে দাঁড়িয়েছে ৬২ শতাংশে, যা তিন বছর আগে ছিল ৬৫ শতাংশ। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, গত বছর বাংলাদেশের রপ্তানিকাররা শুধু ইউরোপীয় ইউনিয়নে মোট রপ্তানির ৪৪ শতাংশ পাঠিয়েছেন। এর বড় কারণ হলো স্বল্পোন্নত দেশগুলোর জন্য শুল্কমুক্ত ও কোটামুক্ত সুবিধা। এ প্রসঙ্গে রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্টের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক বলেন, কোম্পানিগুলো কেবল ওই দেশগুলোতেই পণ্য পাঠাতে চায়, এটা মূল কারণ নয়। আসল সমস্যা হলো আমাদের রপ্তানি ঝুড়ি এখনো পোশাককেন্দ্রিক। পোশাক ছাড়া প্রতিযোগিতামূলক ও বড় আকারে উৎপাদনযোগ্য নতুন পণ্যের সংখ্যা খুবই কম। তাই নতুন বাজারে প্রবেশ করা কার্যত কঠিন। এদিকে, বর্তমানে ৪৩টি পণ্যে প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ), যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার মতো বাজারের বাইরে রপ্তানি উৎসাহিত করতে সরকার পোশাক রপ্তানিকারকদের ২ শতাংশ প্রণোদনা দেয়। তবে এই সহায়তা আসলেই কতটা কার্যকর তা নিয়ে বিশ্লেষকদের মধ্যে ভিন্নমত রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, প্রণোদনা আসলেই কোনো সুফল বয়ে আনছে কি না, তা খতিয়ে দেখা জরুরি। তিনি বলেন, রপ্তানি পোশাকের ওপর এত বেশি নির্ভরশীল যে, মোট প্রণোদনার দুই-তৃতীয়াংশ ওই খাতে চলে যাচ্ছে। কিন্তু ব্যাপারটা উল্টো হওয়া উচিত। রপ্তানি প্রণোদনা হওয়া উচিত লক্ষ্যভিত্তিক, বাজারভিত্তিক ও প্রভাবভিত্তিক। অথচ আমরা দেখি, চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠী, সমিতি, লবিস্ট এমনকি নির্দিষ্ট কিছু প্রতিষ্ঠানের দাবির প্রেক্ষিতে অনেক প্রণোদনা দেওয়া হয়।
এ প্রসঙ্গে সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান বলেন, বাংলাদেশকে পোশাকের বাইরে আরও পণ্য খাত বাড়াতে হবে। বাংলাদেশকে পোশাকের বাইরে রপ্তানিযোগ্য পণ্য, যেমন হালকা ইঞ্জিনিয়ারিং, কৃষি-প্রক্রিয়াজাত পণ্য, ইলেকট্রনিকস ও আইটি সেবায় বিনিয়োগ করতে হবে। বাণিজ্য কূটনীতি শক্তিশালী করতে হবে, যেন এশিয়া, লাতিন আমেরিকা ও আফ্রিকার উদীয়মান বাজারের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি করা বা শুল্ক বাধা কমানো যায়। তিনি আরও বলেন, বাজার গবেষণা ও সক্ষমতা বৃদ্ধির সঙ্গে মিলিয়ে সরকারি সহায়তা আরও লক্ষ্যভিত্তিক হওয়া উচিত। যেন রপ্তানিকারকরা নতুন বাজারে প্রবেশ করতে পারে। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী পারভেজ বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় বাজারে বাংলাদেশি তৈরি পোশাকের চাহিদা আছে। বিশেষ করে চীন ধীরে ধীরে নি¤œমানের পোশাক বাজার থেকে সরে যাচ্ছে। আমাদের দ্রুত সক্ষমতা বাড়াতে হবে এবং ডিজাইন বৈচিত্র্য আনতে হবে। চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের লক্ষ্য ১ দশমিক ২৫ বিলিয়ন ডলার (৯ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি)। তবে এই খাতে মান নিয়ন্ত্রণ, কম দামের কাঁচা চামড়ার ওপর নির্ভরতা ও সাভার ট্যানারি শিল্পনগরীর দুর্বল অবকাঠামোকে বড় সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
পাট রপ্তানি ৯ দশমিক ৭ শতাংশ বেড়ে ৯০০ মিলিয়ন ডলার হতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। এই খাতের উদ্যোগীরা ল্যাব টেস্টিং, গবেষণা ও উন্নয়নে বিনিয়োগের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। কিন্তু তারা ধীর অগ্রগতি এবং ভারতীয় বাজারে কঠিন প্রবেশাধিকার নিয়ে অভিযোগ করেছেন, যেখানে বাণিজ্য নীতি এখনও অস্থির। সম্প্রতি, ভারত বাংলাদেশের পাটজাত পণ্যের ভারতীয় বাজারে প্রবেশে কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। এদিকে, পাল্টা শুল্কে ভারত ও চীনের চেয়ে এগিয়ে আছে বাংলাদেশ। এতে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি বৃদ্ধির সম্ভাবনা দেখছেন উদ্যোক্তারা। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যে শুরুতে যে হারে বাড়তি শুল্ক বসানোর কথা ছিল, তা বাংলাদেশের জন্য মহাবিপদস্বরূপ ছিল। কারণ ওই বাড়তি শুল্কের কারণে অনেকের ব্যবসা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছিলো। কিন্তু ওই শুল্ক এখন ২০ শতাংশে নেমে আসার ফলে মহাবিপদ সুযোগে পরিণত হয়েছে, মনে করেন বিশ্ব ব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন। অন্তর্বর্তী সরকারও মনে করে শুল্ক কমানোর এই চুক্তি সুস্পষ্ট কূটনৈতিক সাফল্য।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সম্ভাবনার পুরোটা কাজে লাগাতে নজর দিতে হবে অভ্যন্তরীণ সংকট কমাতে। ক্রেতার কাছ থেকে দাম কমানোর চাপ এলেও তা শক্তভাবে দরকষাকষির সুযোগ রয়েছে বলে মত সংশ্লিষ্টদের। যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ প্রায় হাজার কোটি ডলার। সবশেষ অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ৮৬৯ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ। যার সিংহভাগ তৈরি পোশাক। নতুন শুল্কহারে চীন ও ভারতের তুলনায় এগিয়ে থাকায় বেড়েছে সম্ভাবনা। যা কাজে লাগাতে অভ্যন্তরীণ সংকট নিরসনে জোর দেয়ার আহ্বান খাত সংশ্লিষ্টদের। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এক্ষেত্রে গতি আসতে পারে অন্যান্য পণ্যের রপ্তানিতেও। যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানির ক্ষেত্রে মান ও ধরন ভেদে দেশের তৈরি পোশাকে গড়ে সাড়ে ১৫ শতাংশ শুল্ক দিতে হয়। যা মোকাবিলা করেই বাজারটিতে বাংলাদেশ তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে। রপ্তানি আরও বাড়াতে এই শুল্কহার শূন্যের কোটায় নামানোর চেষ্টা চলছিল দীর্ঘদিন ধরেই। কিন্তু এপ্রিলে সেই ঘোর কেটে গেলো ট্রাম্পের রেসিপ্রোকাল ট্যারিফে। এখন বাংলাদেশি পোশাকে যুক্ত হলো আরও ২০ শতাংশ শুল্ক। তবে তা প্রতিযোগি দেশ ভিয়েতনামের সমান বা পাকিস্তানের তুলনায় কিছুটা বেশি হলেও চীন ও ভারতের চেয়ে কম। উদ্যোক্তারা বলছেন, নতুন শুল্কহারে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বজায় থাকলেও কোনো কোনো ক্রেতার কাছ থেকে দাম কমানোর চাপ আসতে পারে। এক্ষেত্রে শক্তভাবে দরকষাকষির সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশ গার্মেন্টস প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) এর সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বাবু জনকণ্ঠকে বলেন, এই শুল্ক কাঠামো বিশ্বব্যাপী সমভাবে কার্যকর হওয়ায় রপ্তানিতে হঠাৎ করে বড় ধাক্কা লাগার আশঙ্কা নেই। এতে করে ক্রেতারা কোনো বিশেষ দেশকে বেছে নেওয়ার সুযোগও কম পাবে। সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, শুধু পোশাকই নয়, ফুটওয়্যারসহ অন্যান্য সম্ভাবনাময় খাতেও রপ্তানি বাড়ানো সম্ভব। এটি দেশের জন্য একটি ইতিবাচক বার্তা।