প্রতারকরা প্রায়ই মিথ্যা তথ্য দিয়ে এবং মূল্য বেশি দেখিয়ে সম্পদ মর্টগেজ রেখে ঋণ নেয় – ফাহমিদা খাতুন

Originally posted in The Business Standard on 28 August 2024

এস আলম গ্রুপের সম্পদের প্রকৃত মূল্য কত?

প্রতিবেদন অনুযায়ী, এসব ঋণের অধিকাংশই এস আলমের আত্মীয়স্বজন এবং তার এলাকা চট্টগ্রামের পটিয়ায় এস আলম গ্রুপের সঙ্গে সম্পর্কিত নামসর্বস্ব কাগুজে কোম্পানির নামে নেওয়া হয়েছে

বিতর্কিত এস আলম গ্রুপকে ঘিরে নড়েচড়ে বসেছে বাংলাদেশের আর্থিক খাত। গেল ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন ও নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ক্ষমতা গ্রহণের পর এস আলম গ্রুপের সম্পদের পরিমাণ নিয়ে ওঠা প্রশ্ন এখন জাতীয় আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এছাড়া, এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম মাসুদ বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ঋণের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা লুট করেছেন— এমন সব প্রতিবেদনে চাপের মুখে রয়েছে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, এসব ঋণের অধিকাংশই এস আলমের আত্মীয়স্বজন এবং তার এলাকা চট্টগ্রামের পটিয়ায় এস আলম গ্রুপের সঙ্গে সম্পর্কিত নামসর্বস্ব কাগুজে কোম্পানির নামে নেওয়া হয়েছে।

ক্রমবর্ধমান চাপের মধ্যে নবনিযুক্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর আশ্বস্ত করেছেন যে, এস আলমের সম্পদ বিক্রি করে পাওনাদারদের অর্থ ফেরত দেওয়া হবে।

এখন প্রশ্ন হলো, এস আলম গ্রুপের সম্পদের পরিমাণ এবং এর মূল্য আসলে কত? এর উত্তর জানতে, দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড এস আলম গ্রুপের মালিকানাধীন কোম্পানিগুলো নিয়ে গভীর বিশ্লেষণ করেছে।

গ্রুপের ওয়েবসাইটে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, এস আলমের প্রায় দুই ডজন কোম্পানির মোট সম্পদের মূল্য প্রায় ১.৫ লাখ কোটি টাকা।

গ্রুপের সমস্ত সম্পদের মধ্যে রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড প্রপার্টিজ খাতের আর্থিক মূল্য সবচেয়ে বেশি; যার পরিমাণ ২৫,৪৫৪ কোটি টাকা। এরমধ্যে ২৮ ইউনিট জমি ও ভবন ঢাকা এবং চট্টগ্রামে অবস্থিত।

এছাড়া, এস আলমের রয়েছে ২১,০৯২ কোটি টাকা মূল্যের কয়লা-চালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং ২০,০০০ কোটি টাকারও বেশি সম্পদসহ আমদানি এবং বাণিজ্য খাত।

৭টি ব্যাংক, একটি নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং একটি বীমা কোম্পানিতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অংশীদারিত্ব রয়েছে এস আলম গ্রুপের; যার সম্মিলিত সম্পদের আনুমানিক মূল্য অন্তত ৪,০০০ কোটি টাকা।

যদিও, শিল্প বিশ্লেষকদের মতে, এস আলমের অনেক সম্পদই অতিমূল্যায়িত। যেমন— ২৮ ইউনিট জমি ও ভবনের মূল্য ২৫,০০০ কোটি টাকার বেশি হতে পারে না।

এ সম্পর্কে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, “প্রতারকরা প্রায়ই মিথ্যা তথ্য দিয়ে এবং মূল্য বেশি দেখিয়ে সম্পদ মর্টগেজ রেখে ঋণ নেয়।”

দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে তিনি বলেন, “আমি বিশ্বাস করি, এস আলম গ্রুপের সম্পদ, যার মূল্য প্রায় ১.৫ লাখ কোটি টাকা বলে দাবি করা হয়েছে, তা অতিমূল্যায়িত। বিষয়টি উদ্বেগের।”

অন্যদিকে, ব্যাংক এবং নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে নেওয়া এস আলমের ঋণের পরিমাণ সম্পর্কে এখন পর্যন্ত না জানা গেলেও সংশ্লিষ্টদের অনুমান, এসব প্রতিষ্ঠান থেকে এস আলম গ্রুপের মোট ঋণের পরিমাণ কমপক্ষে ১,২৫,০০০ কোটি টাকা।