Originally posted in ভোরের কাগজ on 6 July 2023
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেছেন, মূল্যস্ফীতির পাশাপাশি ঘাটতি অর্থায়ন, আর্থিক সীমাবদ্ধতার মধ্যে সতর্কভাবে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির প্রকল্প বাছাই, সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বাড়ানো, সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি বিস্তৃত করা নতুন অর্থবছরের চ্যালেঞ্জ। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকারকে প্রাতিষ্ঠানিক নজরদারি শক্তিশালী করতে হবে। গতকাল বুধবার ভোরের কাগজকে তিনি এসব কথা বলেন।
অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বিনিময়হার বাজারভিত্তিক করার ফলে মূল্যস্ফীতির চাপ কিছুটা বেড়ে যেতে পারে। আর ঋণের সুদহার বাজারভিত্তিক করার ফলে বিনিয়োগের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। এসব সামাল দেয়া নতুন অর্থবছরের বড় চ্যালেঞ্জ হবে। এছাড়া বিভিন্ন দেশে কিছু মন্দাভাব দেখা যাচ্ছে। তাই বৈশ্বিক পরিস্থিতি খেয়াল রাখতে হবে। কারণ তার উপরে নির্ভর করবে বাংলাদেশের রপ্তানি এবং রেমিট্যান্স কি রকম হবে।
তিনি বলেন, আমাদের দেশে মূল্যস্ফিতি নিয়ন্ত্রণে একটি বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে অভ্যন্তরীণ বাজার ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা। কারণ, আমদানি স্তর থেকে ভোক্তা স্তর এবং উৎপাদক স্তর থেকে ভোক্তা স্তরে বাজার ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা রয়েছে। বিভিন্ন সরকারি মনিটরিং সংস্থা রয়েছে, বিভিন্ন আইন আছে, কিন্তু তাদের কার্যক্রম চোখে পড়ে না। ফলে বাজারে মূল্যের অযৌক্তিক ওঠানামা হয়। এসব জায়গায় সরকারকে অবশ্যই সঠিক তথ্য উপাত্তের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। প্রাতিষ্ঠানিক নজরদারি খবরদারি শক্তিশালী করতে হবে।
তিনি আরো বলেন, রপ্তানি আয় বাড়াতে রপ্তানি খাতে বৈচিত্র্যকরণ এবং বাজার বৈচিত্র্যকরণ করতে হবে। বিশেষ করে আঞ্চলিক বাজারের সম্ভাবনাময় জায়গাগুলোতে বৈচিত্র্য আনতে হবে। এমনকি রেডিমেট গার্মেন্টসের ভেতরে ও বাইরে বৈচিত্র্যকরণ করা দরকার।
সিপিডির এ গবেষকের মতে, আমাদের অন্যান্য খাতের কস্ট অব ডুয়িং বিজনেস, ব্যবসায়িক পরিবেশ, রপ্তানিকারকদের অন্যান্য সুবিধা কার্যকরভাবে ব্যবহার করতে না পারায় আমরা প্রতিযোগিতা সক্ষমতা অর্জন করতে পারেনি। এদিকে সরকারকে নজর দিতে হবে।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, রেমিট্যান্সের বাড়াতে কীভাবে ফরমাল চ্যানেলে আনা যায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। সুখবর হচ্ছে, বৈদেশিক মুদ্রার দর বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করা হচ্ছে। সুতরাং বিদেশ থেকে যেন প্রবাসীরা সহজে টাকা পাঠাতে পারেন সেদিকে নজর দিতে হবে। আবার দেশেও যেসব চক্র আছে, এদেরও যাতে আইনি নজরদারি খবরদারির মধ্যে নিয়ে আসা যায়।
তিনি বলেন, সরকার স্বর্ণ আমদানির ক্ষেত্রে বাজেটে যে নতুন আইন করেছে, কতটুকু স্বর্ণ ব্যাগেজ রুলসের মাধ্যমে আনা যাবে বা শুল্ক যে বাড়ানো হলো সেটা অবশ্যই ভালো উদ্যোগ। কারণ স্বর্ণের মাধ্যমেও অর্থপাচার হচ্ছিল। একইসঙ্গে অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণের ক্ষেত্রে ডিজিটাল টেকনোলজিকে আরো বেশি ব্যবহার করতে হবে। এনবিআরের জনবল বাড়াতে হবে। এনবিআরের উপরে একটি বড় চ্যালেঞ্জিং দায়িত্ব দেয়া আছে, তাই তাদের আরো বেশি ডিজিটালাইজেশন করা, তাদের জনবল বাড়ানো ডিস্ট্রোরাইজড করা এগুলোর দিকে নজর দিতে হবে।