Originally posted in সময় নিউজ on 8 September 2024
মাথাপিছু আয় বাড়লেও সাধারণ মানুষের মুক্তি মেলেনি কেন?
গেল অর্থবছরে বর্তমান মূল্যে (ডলারের বর্তমান বাজার দর হিসাবে) দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় বেড়েছে ৩২ হাজার ৭৮৪ টাকা। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর জাতীয় হিসাব পরিসংখ্যানে এ তথ্য জানিয়েছে বিবিএস। এরপরও দৈনন্দিন জীবন-যাপনে হিমশিম অবস্থা থেকে একটুও মুক্তি মেলেনি সাধারণ মানুষের। এজন্য বিগত সরকারের বৈষম্যমূলক উন্নয়নকে দায়ী করছেন তারা। এ অবস্থায় ক্রমবর্ধান আয় বৈষম্য দূর করতে রাজস্ব আদায়ে ধনীর অংশগ্রহণ বাড়িয়ে নিম্নবিত্তের কর্মসংস্থান বাড়ানোর তাগিদ দিচ্ছেন অর্থনীতিবিদরা।
রাজধানীর অভিজাত এলাকা গুলশানে গেলে দেখা যায়, ছুটে চলা ধনীদের গাড়ি থামতেই গরীবরা ছুটে আসেন সাহায্যের দাবিদার হয়ে। যদিও মাথাপিছু আয়ের হিসাবে তারা সবাই সমান।
কেউ আবার অভাবী সংসারের কালো ছায়া কাটাতে দিনভর বিক্রি করে ফেরেন রঙিন খেলনা। কেউবা ক্লান্ত হয়ে সড়কে বসেই কারণ খোঁজেন এতদিন কেন তিনি পাননি সামাজিক সুরক্ষার সুবিধা। দিনভর পরিশ্রমে কারও অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থানের মতো মৌলিক চাহিদা মিটলেও থাকছে না দুঃসময় পাড়ি দেয়ার মতো কোনো সঞ্চয়।
অথচ গেল ২৮ আগস্ট বিবিএস প্রকাশিত জাতীয় হিসাব পরিসংখ্যানে উঠে এসেছে, গেল অর্থবছর বর্তমান মূল্যে দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় বেড়েছে প্রায় ৩৩ হাজার টাকা। যদিও ব্যয় বাস্তবতায় কমেনি তাদের হিমশিম অবস্থা।
ক্রমাগত আয় বৈষম্য যে প্রকট করছে ভোগ্য বৈষম্য; গেল ডিসেম্বর খানা-আয় জরিপেই তা জানিয়েছে বিবিএস। যেখানে সংস্থাটি তুলে ধরেছে, দেশের শীর্ষ ৫ শতাংশ ধনী মানুষ ভোগ করছেন মোট সম্পদের ৩০ ভাগের বেশি। আর দারিদ্র্য ৫ শতাংশের কপালে জুটছে এক শতাংশের তিন ভাগের এক ভাগ।
এমন বাস্তবতায় যারা সন্তানের জন্য শিশু খাদ্য কিনতে হিমশিম খান সকাল-দুপুর-রাতে; তারা চান, কর্মসংস্থানের সুযোগ; যেন লড়তে পারেন উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপ মোকাবিলায়।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বাড়তে থাকা ভোগ বৈষম্য কমাতে বিশেষ নজর দিতে হবে কর্মমুখী শিক্ষা-শিল্পায়নের দিকে।
সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান সময় সংবাদকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, আমাদের দেশে বহুমাত্রিক বৈষম্য বেড়েছে। অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গড়তে চাইলে আয় বৈষম্য কীভাবে কমাতে পারি, সেই দিকে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নিতে হবে। যিনি বেশি আয়ের মানুষ, তার কাছ থেকে বেশি হারে কর নিয়ে তা সামাজিক সুরক্ষা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় করা গেলে দ্বিতীয় স্তরে এসে আয় বৈষম্য কমে যায়।
প্রকট আয় বৈষম্য কমাতে না পারলে সমাজ ও রাষ্ট্রে নৈরাজ্য বাড়তে পারে বলেও শঙ্কা তাদের।