Originally posted in প্রথম আলো on 27 November 2025
চট্টগ্রাম বন্দরে ট্রানজিটের চতুর্থ চালান খালাস
চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছানোর প্রায় দুই মাস পর ভুটানের ট্রানজিটের চালানটি খালাস হয়েছে। বুধবার রাতে চালানটি খালাস করেন ভুটানের পণ্য খালাসের জন্য নিযুক্ত বাংলাদেশের প্রতিনিধি। চালানটি সড়কপথে বুড়িমারী স্থলবন্দরের পথে রয়েছে। সেখান থেকে ভারতের ভূখণ্ড ব্যবহার করে চালানটি ভুটানে নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ ও ভুটানের মধ্যে সই হওয়া ‘অ্যাগ্রিমেন্ট অন দ্য মুভমেন্ট অব ট্রাফিক-ইন-ট্রানজিট’ চুক্তি ও প্রটোকলের আওতায় পরীক্ষামূলক চালানটি নেওয়া হচ্ছে। ২০২৩ সালের ২২ মার্চ এই চুক্তি ও প্রটোকল সই হয়েছিল। ভুটান স্থলবেস্টিত হওয়ায় দেশটিতে কোনো সমুদ্রবন্দর নেই। ফলে বাংলাদেশের মাধ্যমে পণ্য নেওয়ার এই উদ্যোগ। এর আগে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ভারতের ট্রানজিটের পরীক্ষামূলক তিনটি চালান খালাস হয়েছে। সব মিলিয়ে ২০২০ সালের পর চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ট্রানজিটের চারটি চালান খালাস হলো।
ভুটানের চালানটি আনা হয়েছে থাইল্যান্ড থেকে। ৬ হাজার ৫৩০ কেজির এই চালানে রয়েছে শ্যাম্পু, শুকনা পাম ফল, আইস টি, চকলেট ও জুস। চালানটির রপ্তানিকারক থাইল্যান্ডের অ্যাবিট ট্রেডিং কোম্পানি। চালানটি আমদানি করেছে ভুটানের অ্যাবিট ট্রেডিং। দুই মাস আগে চালানটি চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছালেও সরকারি সংস্থাগুলোর এ–সংক্রান্ত অনুমোদন না পাওয়ায় এত দিন খালাস করা যায়নি। বিভিন্ন সংস্থার অনুমোদনের পর বুধবার চালানটি খালাস করা হয়।
জানতে চাইলে ভুটানের পণ্য খালাসের জন্য নিযুক্ত বাংলাদেশের প্রতিনিধি এন এম ট্রেডিং করপোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শহীদুল আলম খান প্রথম আলোকে বলেন, বুধবার সন্ধ্যায় কনটেইনার পরিবহনকারী একটি প্রাইম মুভার ট্রেলারে করে এক কনটেইনারের চালানটি সড়কপথে বুড়িমারী স্থলবন্দরের পথে রওনা হয়েছে। বুড়িমারী স্থলবন্দর থেকে ভারতের ভূখণ্ড ব্যবহার করে ভুটানে নেওয়া হবে কনটেইনারটি।
বাংলাদেশের মাধ্যমে শুরু হওয়া পরীক্ষামূলক চালান পরিবহনে দেশটি সন্তুষ্ট হলে নিয়মিত পণ্য পরিবহন শুরু হতে পারে। তবে সেটি নির্ভর করছে ভুটানের আগ্রহের ওপর।
রাজস্ব আয় লাখ টাকা
ট্রানজিট চালান খালাস প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তারা জানান, ভুটানের এক কনটেইনারের চালান থেকে সরকারি তিনটি সংস্থা ফি ও মাশুল আদায় করেছে। এর মধ্যে কাস্টমস বিভিন্ন মাশুল (মূসকসহ) হিসেবে পেয়েছে ৬৮ হাজার ৮৭৪ টাকা। সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ পেয়েছে ১৬ হাজার ৭৯২ টাকা। সব মিলিয়ে সরকারি কোষাগারে জমা হয়েছে ৮৫ হাজার ৬৬৬ টাকা। সরকারি কোষাগার ছাড়াও সরকারি সংস্থা বন্দর কর্তৃপক্ষ মাশুল আদায় করেছে ১৬ হাজার ৪৭ টাকা। জাহাজ থেকে কনটেইনার নামানো, ইয়ার্ডে স্থানান্তর ইত্যাদি সেবা বাবদ এই মাশুল আদায় করেছে বন্দর। সব মিলিয়ে সরকারি তিন সংস্থা ১ লাখ ১ হাজার ৭১৩ টাকা আয় করেছে এই ট্রানজিটের চালান থেকে।
ট্রানজিট চালানের কনটেইনার ২১ দিন বন্দরে বিনা ভাড়ায় রাখা যায়। এর বেশি সময় রাখা হলে ভাড়া দিতে হয়। তবে ভুটানের পরীক্ষামূলক চালানটি দুই মাসের বেশি সময় রাখা হলেও এ জন্য বাড়তি ভাড়া মওকুফ করা হয়েছে।
সরকারি খাত ছাড়াও বেসরকারি খাতে আয় হয়েছে ট্রানজিটের এই চালান থেকে। এই আয়ের মধ্যে রয়েছে পরিবহন ভাড়া, খালাসের সঙ্গে যুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর সেবা বাবদ আয়। তবে বেসরকারি খাতের আয় কত হয়েছে, তা জানা যায়নি।
তবে কনটেইনারটি দীর্ঘ সময় বন্দরে পড়ে থাকায় শিপিং লাইনকে ‘ডিটেনশন’ ফি দিতে হচ্ছে। চালানের নথি অনুযায়ী, কনটেইনারটি ২১ দিনের মধ্যে বন্দর থেকে খালাস করা গেলে কোনো ফি দিতে হতো না। তবে ২১ দিন অতিক্রম করায় ফি দিতে হবে ৩ হাজার ৭৮০ ডলার।
জানতে চাইলে ভুটানের চালানটির শিপিং এজেন্ট টি আই টু শিপিং লাইনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাহেদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, সাধারণত ১৪ দিনের মধ্যে পণ্য খালাস হলে কোনো ‘ডিটেনশন’ ফি নেওয়া হয় না। ট্রানজিটের চালানের ক্ষেত্রে ২১ দিন পর এই ফি ধার্য করা হয়েছে। অর্থাৎ স্বাভাবিক সময়ে খালাস হলে এই ফি দিতে হতো না।
ট্রানজিটের চালানে আগে কত আয়
ভুটানের আগে ভারতের ট্রানজিটের তিনটি চালান নেওয়া হয় চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করে। ট্রানজিটের আওতায় ভারতের প্রথম চালানটি নেওয়া হয়েছিল ২০২০ সালের জুলাই মাসে। চার কনটেইনারের চালানটিতে কাস্টমস ও বন্দরের রাজস্ব আয় হয়েছিল ৫৮ হাজার ৯০০ টাকা। এরপর ২০২২ সালে ভারতের আরও দুটি পরীক্ষামূলক চালান খালাস করা হয়। এ ছাড়া মোংলা বন্দর দিয়েও পরিবহন হয়েছে দুটি চালান। ভারতের পাঁচটি পরীক্ষামূলক চালান পরিবহনের পর ২০২৩ সালের এপ্রিলে নিয়মিত ট্রানজিট চালুর স্থায়ী আদেশ জারি করেছিল জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। তবে পরীক্ষামূলক চালানের পর নিয়মিত ট্রানজিট পণ্য পরিবহন শুরু হয়নি।
ট্রানজিটের চালানে সরকারি সংস্থার আয় কত হবে, তা নির্ভর করে পণ্যের পরিমাণ ও কনটেইনারের সংখ্যার ওপর। কাস্টমস, মহাসড়ক বিভাগ ও বন্দর যেসব খাতে মাশুল আদায় করে, তা মূলত চালান ও পণ্যের পরিমাণের ওপর।
জানতে চাইলে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ভুটান নিয়মিত এই পথ ব্যবহার করলে দেশটির আমদানিকারক ও ভোক্তারা লাভবান হবে। বাংলাদেশের সরকারি–বেসরকারি খাতেও আয় হবে। এর আগে ভারতের সঙ্গে নিয়মিত ট্রানজিটের পথ খুলেছিল। তবে তা ব্যবহার হচ্ছে না। এখন ভুটানের ট্রানজিট পণ্য পরিবহনে যাতে কোনো প্রতিবন্ধকতা তৈরি না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে।



