বাজারভিত্তিক বিনিময় হার প্রতিষ্ঠায় এখনই সঠিক সময়, মনিটরিং ও সতর্কতা জরুরি – ফাহমিদা খাতুন

বাজারভিত্তিক বিনিময় হারের প্রয়োগ ও প্রভাব

Originally posted in বণিকবার্তা on 1 June 2025

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখা সম্ভব নয়

ডলারের দাম বাড়তে পারে—এ আশায় প্রবাসী বাংলাদেশী ও অ্যাগ্রিগেটরদের কেউ কেউ রেমিট্যান্সের ডলার ধরে রাখছেন। এ কারণে গত এক সপ্তাহে দেশে রেমিট্যান্স প্রবাহ কিছুটা কমেছে।

রাজধানীর দ্য ওয়েস্টিনে গত ২২ মে ‘বাজারভিত্তিক বিনিময় হারের প্রয়োগ ও প্রভাব’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনার আয়োজন করে বণিক বার্তা। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। বণিক বার্তার সম্পাদক ও প্রকাশক দেওয়ান হানিফ মাহমুদের সঞ্চালনায় আলোচনার সূত্রপাত করেন মানি ট্রান্সফার প্রতিষ্ঠান মাস্টারকার্ডের কান্ট্রি ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল। আলোচনায় অংশ নিয়ে বিভিন্ন প্রস্তাব ও সুপারিশ তুলে ধরেন অর্থনীতিবিদ, ব্যবসায়ী ও অংশীজনরা

ড. ফাহমিদা খাতুন
নির্বাহী পরিচালক
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)

বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করা নিয়ে অনেক শঙ্কা ছিল। অর্থনৈতিক যৌক্তিকতার দিক থেকে বিবেচনা করলে আমাদের একটা না একটা সময় বাজারভিত্তিক বিনিময় হারের দিকে যেতেই হতো। কবে আমরা বাজারভিত্তিক করব সেটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল। বর্তমানে রিজার্ভ স্থিতিশীল আছে, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির দাম কমতির দিকে, এটা অনেক দিন থাকবে। নিত্যপণ্যের দামও এখন আন্তর্জাতিক বাজারে কম। গত আগস্টের পর থেকে রেমিট্যান্সের প্রবাহ অনেক ভালো, রফতানি একটা শক্ত ভিত্তি পাচ্ছে, টাকা পাচার বন্ধ হয়েছে, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ নেই। অনেক ক্ষেত্রে সংস্কার করা যাচ্ছে, অনেক নীতি গ্রহণ করা যাচ্ছে। ব্যাংক ঋণের সুদের ওপর থেকে সীমা তুলে দেয়া সম্ভব হয়েছে। ফলে বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করার এটাই সুবর্ণ সময়। এতে রফতানিকারকরা অসুবিধার মধ্যে পড়েছিলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে তাদের প্রতিযোগিতা করার সক্ষমতা কমে গিয়েছিল। বিশেষ গোষ্ঠীকে সুবিধা দিতে দেশে অনেক দিন ধরে বিনিময় হার ধরে রাখা হয়েছিল। এতে রফতানিকারকরা অসুবিধার মধ্যে পড়েছিলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে তাদের প্রতিযোগিতা করার সক্ষমতা কমে গিয়েছিল। এ পরিস্থিতি থেকে এখন বের হয়ে আসা সম্ভব হয়েছে। তবে এখন ভালোভাবে মনিটরিং করতে হবে, যেন ঘন ঘন দাম ওঠানামা না করে। তাহলে বিনিয়োগকারীরা আগ্রহ হারাবেন। তাছাড়া টাকার দাম অনেক বেশি কমে গেলে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাবে। ব্যাংকগুলো তাদের ওয়েবসাইটে বৈদেশিক মুদ্রার সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন বিনিময় হার প্রকাশ করলে সাধারণ মানুষ সহজে জানতে পারবে। পাশাপাশি প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের মাধ্যমে প্রবাসীদের আরো বেশি জামানতবিহীন ঋণ দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। ভূরাজনৈতিক বিভিন্ন ইস্যুতে আমাদের সতর্কতার প্রয়োজন রয়েছে। সামনে এলডিসি থেকে উত্তরণের পর আমাদের অনেক সুবিধা বাতিল হয়ে যাবে। ফলে সেদিকে খেয়াল রেখে বাজার স্থিতিশীল করতে হবে। শ্রীলংকার উদাহরণ বারবার দেয়া হচ্ছে। তারা কিন্তু সামষ্টিক অর্থনীতির ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে পরিস্থিতির উন্নতি করেছে। আমাদেরও একই পথে যাওয়া উচিত। কারণ শ্রীলংকাও আইএমএফসহ আন্তর্জাতিক নানা সংস্থার সঙ্গে আমাদের মতোই যুক্ত ছিল, নানা বিধিনিষেধ মেনে চলেছে। তার মধ্যেই তারা নিজেদের অর্থনীতির উন্নয়ন করতে পেরেছে। ভৌগোলিক রাজনীতির কারণে এ অঞ্চলে যে নতুন অর্থনৈতিক মেরুকরণ হচ্ছে সেদিকেও আমাদের খেয়াল রাখতে হবে। কারণ এর আঘাত যেন আমাদের অর্থনীতিতে না লাগে। এই যে ট্যারিফ বাড়ানো হলো সেটি যদি কমানোও হয় তারপরও আরো অনেক চিন্তার বিষয় আছে। যেহেতু আগামী বছর বাংলাদেশ এলডিসি উত্তরণ করবে সেখানেও কিন্তু ট্রেড নিয়ে রফতানির বিষয়ে একটা পদক্ষেপ নিতে হবে।