বাজেট বাড়িয়ে বলা হয়: দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য

Originally posted in VOA on 20 May 2024

বাংলাদেশের আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ‘কেমন বাজেট চাই,” এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ, অর্থনীতিবিদ ও অংশীজনদের মতামত জানতে চেয়েছে ভয়েস অফ আমেরিকা। বাংলাদেশের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) এর সম্মাননীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য এ বিষয়ে তার মতামত জানিয়েছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন রেদওয়ানুল হক।

ভয়েস অফ আমেরিকা : কোন কোন খাতে অগ্রাধিকার দেয়া উচিত? কেন?

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য: এক. কর্মসংস্থান বাড়াতে সব ধরনের প্রচেষ্টা চালাতে হবে। দুই. মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। তিন. সামাজিক সুরক্ষা আরও বেশি বিস্তৃত করা এবং বরাদ্দ বাড়ানো।

ভয়েস অফ আমেরিকা: বাজেট বাস্তবয়ন সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য কী কী করা দরকার?

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য: একদিকে যেমন প্রশাসনের দক্ষতা বাড়ানো দরকার অপরদিকে নাগরিকদের কণ্ঠস্বর সোচ্চার হওয়ার সুযোগ রাখা দরকার। গণতন্ত্র যত বেশি চর্চা হবে বাজেট বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা তত সহজ হবে। তাই স্থানীয় পর্যায়ে জনগণের পছন্দমতো জনপ্রতিনিধি নির্বাচনের সুযোগ সৃষ্টি করা এবং আমলা-কর্মচারীদের জবাবদিহি করার ব্যবস্থা করা। তবে, অবশ্যই এক্ষেত্রে মিডিয়া (গণমাধ্যম) বড় ভূমিকা রাখতে পারে।

ভয়েস অফ আমেরিকা: আয় বাড়ানোর জন্য কী করা দরকার?

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য: অপচয় রোধ এবং দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে।

ভয়েস অফ আমেরিকা: কোন কোন খাতে খরচ কমানো উচিত?

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য: অতি মূল্যায়িত প্রকল্প বন্ধ করতে হবে। যেখানে ১০ টাকার জিনিস ১০০ টাকায় কেনা হয়। আর প্রকল্প সময় মত শেষ করতে হবে।

ভয়েস অফ আমেরিকা: আইএমএফ বাজেটের আকার ছোট রাখতে বলেছে, আপনি কী একমত? কেন?

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য: প্রকৃত বাজেট আর ঘোষিত বাজেটের মধ্যে বিরাট পার্থক্য রয়েছে। বাজেট যেটা করা হয় সেটা লোক দেখানো একটি বড় সংখ্যা । এরপর যখন সংশোধন হয় তখন ২০ শতাংশ কমে, এরপর বাস্তবায়ন হয় আরও কম। আসলে বাজেটের আকার ছোটই আছে। সরকার রাজনৈতিক কারণে বড় বাজেট করে, আর অর্থনৈতিক বাস্তবতায় ছোট বাজেট বাস্তবায়ন করে। আইএমএফ- এর এটা বোঝার কথা।

ভয়েস অফ আমেরিকা: কোন তিনটি খাতে সংষ্কার সবচেয়ে জরুরি কেন? কী করা উচিত?

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য: এক. ব্যাংকিং খাতের সংস্কার দরকার। এক্ষেত্রে খেলাপি ঋণ ও মালিকানা প্রশ্নে বর্তমানে যে একীভূতকরণ প্রক্রিয়ার নাটক চলছে তা বন্ধ করতে হবে।

দুই. কর আদায়ে বিভিন্ন ধরনের সংস্কার করা উচিৎ। এর মধ্যে কর আহরনের জায়গা বিস্তৃত করা এবং যারা কর দেয় না তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া। অর্থ পাচার বন্ধ করা।

তিন. স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করা। কারণ জনগণের জন্য সরকার যে সমস্ত কাজ করে, জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে সেগুলো জবাবদিহিতার মধ্যে নিয়ে আসা।

ভয়েস অফ আমেরিকা: বাজেট তৈরির সময় কোন কোন চ্যালেঞ্জের কথা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে মাথায় রাখা দরকার?

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য: সামষ্টিক অর্থনীতিতে প্রধান তিনটি চ্যালেঞ্জ রয়েছে, একটি হলো মূল্যস্ফীতি; এটি নিয়ন্ত্রণ আনতে হবে। পৃথিবীর অন্য দেশে কমলেও আমাদের দেশে মূল্যস্ফীতি কমেনি। দ্বিতীয়ত, আমাদের দেশী-বিদেশি, সরকারি-বেসরকারি সব ধরনের ঋণ পরিশোধে ঝুঁকি বাড়ছে। তৃতীয়ত. সাম্প্রতিককালে প্রবৃদ্ধির হার শ্লথ হয়ে আসছে; এর মানে বিনিয়োগ কমে গেছে এবং সরকারি সম্পদ সীমিত হয়েছে। এর ফলে কর্মসংস্থান কমবে এবং দারিদ্র পরিস্থিতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

ভয়েস অফ আমেরিকা: গত পাঁচ বছরের বাজেট পর্যালোচনা করলে কোন দুর্বলতা সীমাবদ্ধতা বা ভুলগুলো চোখে পড়েছে? এগুলো এড্রেস করা হয়েছে কি? কী করা উচিত?

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য: বাজেট বাড়িয়ে বলা হয়, যেটা বাস্তবতার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। এছাড়া যাদের উদ্দেশ্যে বাজেট করা হয় তারা এর সুফল পায় না; মধ্যস্বত্বভোগীরা টাকাও নিয়ে যায় ফলাফলও নিয়ে যায়। অন্যদিকে বাজেট বাস্তবায়নে জবাবদিহিতা, স্বচ্ছতা নেই; এটা সবচেয়ে বড় লক্ষনীয় বিষয়। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা শক্তভাবে মানুষের কথা তুলে ধরতে পারছে না।

ভয়েস অফ আমেরিকা: অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে লিঙ্গসমতা অর্জনের জন্য বাজেটে কী সংযোজন বা বর্জন করা যেতে পারে?

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য: জেন্ডার বাজেটের প্রবর্তন করা হয়েছিল সেটা আবার বন্ধ হয়ে গেছে। এবার জেন্ডার বাজেট প্রবর্তন করা উচিত। শিশু বাজেট প্রবর্তন করা হয়েছিল সেটাকেও একসাথে নেওয়া উচিত। এছাড়া আমরা যুব বাজেটের কথা বলে আসছি। এককথায় নারী, শিশু এবং পিছিয়ে পড়া মানুষের জন্য যে বরাদ্দ হয় তা স্বচ্ছ, সঠিকভাবে হিসাব করা এবং কি খরচ হলো সেটা মূল্যায়নের ভিতরে প্রতিফলন ঘটানো; এটা সবচেয়ে বড় বিষয়।

ভয়েস অফ আমেরিকা: গত পাঁচবছরে বাজেট বাস্তবায়নের সক্ষমতার বিচারে সরকারকে ১০ এ কত দেবেন?

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য: আমি গণিতে কাঁচা, তাই নম্বর দিতে পারবো না। আপনি ভাল থাকবেন।