বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার বালি ঘোষণা ও বাংলাদেশে এর তাৎপর্য

Dr Fahmida Khatun writes on Bali WTO MC9 and its implications for Bangladesh, published in Banik Barta on Sunday, 22 December 2013.

বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার বালি ঘোষণা ও বাংলাদেশে এর তাৎপর্য

ড. ফাহমিদা খাতুন

fk-banik-barta2

বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার সদস্যভুক্ত দেশগুলোর বাণিজ্য মন্ত্রীরা ৩-৬ ডিসেম্বর ২০১৩তে ইন্দোনেশিয়ার বালিতে বৈঠক করার পর যে সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন, তাকে ঐতিহাসিক অর্জন বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। কেননা ১৯৯৫ সালে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর বহুপক্ষীয় আলোচনায় এ রকম সাফল্য আর কখনো অর্জিত হয়নি। উরুগুয়ে রাউন্ড শেষ হওয়ার পর ২০০১ সালে কাতারের দোহায় মন্ত্রিপর্যায়ের চতুর্থ বৈঠকের ১২ বছর পেরিয়ে গেলেও দোহা রাউন্ড এখনো আলোর মুখ দেখেনি। এটি শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০০৫ সালে। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার দোহা রাউন্ড আলোচনা ২০০১ সালে শুরু হওয়ার পর বালি মন্ত্রিপর্যায়ের বৈঠকটি ছিল নবম। দোহা রাউন্ডের অধীনে সদস্য দেশগুলো যেসব চুক্তিতে উপনীত হওয়ার কথা ছিল, তার মধ্যে প্রধান হচ্ছে (১) কৃষি (২) অ-কৃষিজাত পণ্যের বাজার সুবিধা (৩) সেবা খাত (৪) বাণিজ্য-সংক্রান্ত মেধাস্বত্ব, এবং (৫) অন্যান্য। কিন্তু বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার সদস্যরা দু-একটি ক্ষেত্র ছাড়া মূল মূল চুক্তিগুলোয় কোনো মতৈক্যে পৌঁছতে পারেনি। মন্ত্রিপর্যায়ের বৈঠক ছাড়াও সারা বছর ধরে জেনেভায় বিভিন্ন বিষয়ের ওপর নির্ধারিত কমিটিগুলো যে আলোচনা করে আসছে, তাতে সদস্য দেশগুলোর অবস্থান ভিন্ন ভিন্ন। তবে বালি সম্মেলনে যাওয়ার আগে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার সদস্য দেশগুলো দোহা রাউন্ডের চুক্তি থেকে শুধু তিনটি বিষয় বেছে নেয় এবং এর নাম দেয় বালি প্যাকেজ। বালি প্যাকেজে আছে বাণিজ্য সহজীকরণ চুক্তি, কৃষি-সংক্রান্ত কয়েকটি বিষয় এবং উন্নয়ন ও স্বল্পোন্নত দেশ-সংক্রান্ত প্রস্তাবনা। বালি ঘোষণার প্রতিটি বিষয় বাংলাদেশের জন্য তাৎপর্যপূর্ণ।

বাণিজ্য সহজীকরণ চুক্তির উদ্দেশ্য হলো, কাস্টমস নীতিমালা সহজ ও দ্রুততর করা, সীমান্তে পণ্য চলাচলে দেরির কারণে বাড়তি খরচ কমানো, প্রযুক্তি ব্যবহার এবং আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও দুর্নীতি দূর করা। বাণিজ্য সহজীকরণ চুক্তিটি বাস্তবায়ন হলে বিশ্ব বাণিজ্যের পরিমাণ এক ট্রিলিয়ন ডলার বেড়ে যাবে। বাণিজ্য খরচ ১০ থেকে ১৫ শতাংশ কমবে। বর্তমানে বিশ্ব অর্থনীতি ক্রমান্বয়ে নানাভাবে একীভূত হচ্ছে। তবে উত্পাদন প্রক্রিয়া ছড়িয়ে ছিটিয়ে যাচ্ছে। একটি পণ্যের বিভিন্ন অংশ নানা স্থানে, নানা দেশে উত্পাদন হচ্ছে। বিভিন্ন দেশে উত্পাদন হয়ে পণ্যটি বাজারে ঢুকছে। বিশ্বে পণ্য সরবরাহের এ চেইন দক্ষভাবে পরিচালনার জন্য বাণিজ্য সহজীকরণ অত্যন্ত জরুরি। এ লক্ষ্যে বাণিজ্য সহজীকরণ চুক্তিটি উন্নত দেশের জন্য পরিপালন আবশ্যক করা হয়েছে। তবে উন্নয়নশীল এবং স্বল্পোন্নত দেশ যত দিন পর্যন্ত এ চুক্তি বাস্তবায়নের সক্ষমতা অর্জন না করবে, তত দিন তারা এ থেকে অব্যাহতি পাবে। বাণিজ্য সহজীকরণ চুক্তিটি বাস্তবায়ন হলে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়বে সন্দেহ নেই। কিন্তু স্বল্পোন্নত দেশের পক্ষে এ চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য আর্থিক ও কারিগরি সহায়তা প্রয়োজন, যাতে তারা বাণিজ্যের জন্য উপযোগী অবকাঠামো তৈরি করতে পারে ও প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা অর্জন করতে পারে।

বালিতে সবচেয়ে বিতর্কিত বিষয় ছিল কৃষি ভর্তুকি ও পণ্য মজুদ। ভারত এক্ষেত্রে শক্ত অবস্থান নেয়। উল্লেখ করা যেতে পারে, দোহা রাউন্ডে একটি ন্যায্য এবং বাজারমুখী কৃষি বাণিজ্য ব্যবস্থার কথা বলা হয়েছে। আর এটা অর্জন করতে হলে যে পদক্ষেপগুলো নেয়া প্রয়োজন, সেগুলো হচ্ছে কৃষিপণ্যে বাণিজ্যের জন্য ক্ষতিকর ভর্তুকি যথেষ্ট পরিমাণে কমাতে হবে এবং ক্রমান্বয়ে তা পুরোপুরি তুলে দিতে হবে। কৃষি ভর্তুকির বিষয়টিতে মতৈক্য বেশ কষ্টকর। কেননা উন্নত দেশগুলো তাদের কৃষিতে যে ভর্তুকি দিচ্ছে, উন্নয়নশীল দেশগুলো তা বন্ধ করার ওপর জোর দিয়ে আসছে। উন্নয়নশীল দেশগুলো তাদের ক্ষুদ্র কৃষকদের জন্য বিশেষ সুবিধা দাবি করছে, যাতে জনগণ ভর্তুকিকৃত দামে খাদ্য কিনতে পারে। খাদ্যনিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে বালি সম্মেলনে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার সদস্য দেশগুলো উন্নয়নশীল দেশগুলোকে খাদ্য মজুদ করার অনুমতি দেয়। যদিও এটা আইনানুগ নয়, তবুও বালি ঘোষণায় বলা হয়েছে, খাদ্য মজুদের জন্য উন্নয়নশীল দেশগুলোর বিরুদ্ধে কোনো আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে না। তবে ব্যবস্থাটি সাময়িক। সদস্য দেশগুলো ২০১৭ সালে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার ১১তম সম্মেলনের আগেই এ ব্যাপারে একটি স্থায়ী সমাধানে পৌঁছানোর অঙ্গীকার করেছে। কৃষি বিষয়ে নেয়া বালি সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের খাদ্যনিরাপত্তার ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলতে পারে। উন্নয়নশীল দেশগুলো যদি বেশি করে খাদ্য মজুদ করে, তাহলে আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক পর্যায়ে খাদ্য সরবরাহ কমে গিয়ে তা খাদ মূল্য বাড়িয়ে দিতে পারে। তাতে বাংলাদেশী ভোক্তাদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। খাদ্য মজুদের ফলে খাদ্য রফতানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের ভয় থাকে। আন্তর্জাতিক খাদ্য সংকটের সময় তা দরিদ্র দেশগুলোর ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। ২০০৭-০৮ সালে বিশ্বব্যাপী খাদ্য সংকটের সময় কোনো কোনো দেশ খাদ্য রফতানি নিষিদ্ধ করার ফলে খাদ্য আমদানিকারক দেশগুলো বিপাকে পড়েছিল।

বালি সম্মেলনে যে ঘোষণাটি গৃহীত হয়েছে, তার পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার মহাপরিচালককে আগামী ১২ মাসের মধ্যে একটি বিস্তারিত কর্ম-পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে। এতে বিভিন্ন অঙ্গীকার বাস্তবায়নের একটি স্বচ্ছ রোডম্যাপ থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে। এ প্রক্রিয়ায় অর্থপূর্ণভাবে অংশগ্রহণ করতে হলে বাংলাদেশকেও একটি বিশদ কর্মসূচি প্রস্তুত করতে হবে।

বাণিজ্য সহজীকরণ চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য কী ধরনের কারিগরি ও আর্থিক সাহায্য প্রয়োজন, সেগুলো জানাতে হবে। সেবার ক্ষেত্রে কোন কোন খাতে ও কোন কোন মোডে বাংলাদেশ রফতানি করতে প্রস্তুত, সেগুলো নির্ধারণ করতে হবে এবং বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার সদস্যদের কাছে তা তুলে ধরতে হবে।

সর্বোপরি, বালি সম্মেলনের ঘোষণাটি যাতে সদস্য দেশগুলোর জন্য বাধ্যতামূলক হয় এবং বাস্তবায়নে যাতে সুনির্দিষ্ট সময়সীমা বেধে দেয়া হয়, সে ব্যাপারেও বাংলাদেশ তার দাবি তুলে ধরতে পারে।

বালি ঘোষণার উন্নয়ন এবং স্বল্পোন্নত দেশ-সংক্রান্ত বিষয়গুলো বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রে বালি ঘোষণায় মূলত চারটি বিষয়ের অবতারণা করেছে। প্রথমত. স্বল্পোন্নত দেশগুলোর জন্য অ-কৃষিজাত পণ্যের ক্ষেত্রে উন্নত এবং অগ্রগামী উন্নয়নশীল দেশগুলোয় শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা পাওয়ার দাবিটি এখনো অপূর্ণ রয়ে গেছে। ২০০৫ সালে হংকংয়ে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার পঞ্চম মন্ত্রিপর্যায়ের সভায় উন্নত দেশগুলোর প্রতি আহ্বানের পরিপ্রেক্ষিতে প্রায় সব উন্নত দেশ স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে তাদের প্রায় সব পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশের সুযোগ দিলেও যুক্তরাষ্ট্র শুধু ৯৭ শতাংশ শুল্ক রেখার অন্তর্ভুক্ত পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার দিয়েছে। অথচ স্বল্পোন্নত দেশের প্রধান প্রধান পণ্যগুলো যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে উচ্চ শুল্ক দিয়ে প্রবেশ করছে। বালি ঘোষণায় উন্নত দেশগুলোকে বাকি ৩ শতাংশ শুল্ক রেখার পণ্যের ক্ষেত্রেও স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে শুল্কমুক্ত প্রবেশের সুবিধা দেয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। তাছাড়া উন্নয়নশীল দেশগুলো, যাদের সক্ষমতা আছে তাদেরও স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা দেয়ার কথা বলা হয়েছে। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার সদস্যরা এ ব্যাপারে কী ভূমিকা নিচ্ছে, তাদের তা জানাতে হবে। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার বাণিজ্য ও উন্নয়ন বিষয়ক কমিটি বার্ষিক মূল্যায়নের মাধ্যমে দেখবে যে, স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা দেয়ার ব্যাপারে কী পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে এবং এটি তারা সাধারণ কাউন্সিলকে জানাবে, যাতে তারা যথোপযুক্ত পদক্ষেপ নিতে পারে।

দ্বিতীয়ত. বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার নবম সম্মেলনের ঘোষণায় স্বল্পোন্নত দেশের উপযোগী রুলস অব অরিজিন প্রয়োগ করার কথা বলা হয়েছে। হংকং সম্মেলনের পরবর্তী সময়ে শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার মূল্যায়ন পদ্ধতি শক্তিশালী করার ওপরও স্বল্পোন্নত দেশগুলোর পক্ষ থেকে জোর দেয়া হয়েছে। শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা পাওয়ার পরও স্বল্পোন্নত দেশগুলো তা পুরোপুরি কাজে লাগাতে পারে না অনেক সীমাবদ্ধতার কারণে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে, পণ্যের কতটুকু অংশ নিজ দেশে উত্পাদন হচ্ছে (রুলস অব অরিজিন) সে ব্যাপারে কঠিন নিয়ম থাকার কারণে। উন্নত দেশে পণ্য রফতানির ক্ষেত্রে উত্পাদিত পণ্যটি স্বল্পোন্নত দেশের ভেতরে কতখানি মূল্য সংযোজন করেছে— এ ব্যাপারে বাস্তবভিত্তিক সিদ্ধান্ত নেয়ার অনুরোধ করে আসছে স্বল্পোন্নত দেশগুলো। তাদের সরবরাহজনিত এবং উত্পাদন সক্ষমতা মাথায় রেখে সহজ একটি পন্থা অবলম্বনের অনুরোধ করছে এই দেশগুলো। এ বিষয়ে বালি সম্মেলনের ঘোষণা কার্যকর হলে বাংলাদেশ উপকৃত হবে।

তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হলো, সেবা খাতের বাজার সুবিধা। ২০১১ সালে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার অষ্টম সম্মেলনে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর জন্য বিশেষ সুবিধার প্রস্তাব করা হয়। ‘বিশেষ এবং ভিন্ন আচরণের’ (স্পেশাল অ্যান্ড ডিফারেন্সিয়াল ট্রিটমেন্ট) আওতায় স্বল্পোন্নত দেশগুলো থেকে সেবা এবং সেবা প্রদানকারীদের উন্নত দেশগুলোয় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাজার সুবিধা দেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়। স্বল্পোন্নত দেশে সেবা খাতের ভূমিকা ক্রমে বাড়ছে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যেও এ খাতের অংশ বাড়ছে। সেদিক থেকে এ ঘোষণার তাৎপর্য অনেক। তবে এ প্রস্তাব বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে নানা ধরনের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। প্রথমত. এ ঘোষণা কোনো আইনগত অঙ্গীকার নয়। তাই উন্নত দেশগুলোর সদিচ্ছার ওপরও সেবা খাতে বাজার সুবিধা পাওয়াটা নির্ভর করবে। দ্বিতীয়ত. এ খাতের বাজার সুবিধা পুরোপুরি ব্যবহার করতে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর নিজেদের সেবা খাতের সক্ষমতা বাড়াতে হবে। এজন্য প্রয়োজন কারিগরি ও আর্থিক সহায়তা। তৃতীয়ত. বিভিন্ন ধরনের অশুল্ক বাধা দূর করা প্রয়োজন। যেমন: উন্নত দেশে কাজের অনুমতি পাওয়ার ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক প্রয়োজন পরীক্ষা (ইকোনমিক নিডস টেস্ট) দিতে হয়। বালি ঘোষণায় ২০১৪ সালে একটি উচ্চপর্যায়ের সভা আয়োজনের কথা বলা হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, সেখানে উন্নত দেশগুলো কোন কোন খাতে এবং কীভাবে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে সেবা আমদানি করবে তা নিয়ে আলোচনা হবে। বাংলাদেশের মতো স্বল্পোন্নত দেশগুলোর দাবি হচ্ছে, তাদের সেবা খাতের জন্য উন্নত ও সক্ষম উন্নয়নশীল দেশগুলো দ্রুত এবং অর্থপূর্ণ বাজার সুবিধা দেবে। বাংলাদেশের জন্য আগ্রহের জায়গাটি হচ্ছে তার দেশ থেকে উন্নত দেশে শ্রমশক্তির চলাচল, যেহেতু বাংলাদেশে বর্ধিত জনসংখ্যা রয়েছে। কিন্তু সেবা খাতে কিছুটা অগ্রগতি সত্ত্বেও অনেক অমীমাংসিত বিষয় এখনো সামনে রয়েছে। আগামীতে এগুলো নিয়ে বিশদ আলোচনা অব্যাহত থাকবে। বাংলাদেশকে এ আলোচনায় সক্রিয় ভূমিকা রাখতে হবে।

চতুর্থত. বালি ঘোষণায় বিশেষ এবং ভিন্ন আচরণ-সংক্রান্ত ধারাগুলো পর্যবেক্ষণ করার ওপর জোর দেয়া হয়েছে, যাতে উন্নয়নশীল এবং স্বল্পোন্নত দেশগুলো বহুপক্ষীয় বাণিজ্য ব্যবস্থায় ভালোভাবে অন্তর্ভুক্ত হতে পারে। এ পর্যবেক্ষণ প্রক্রিয়ার ফলে বাংলাদেশ বিশেষ এবং ভিন্ন আচরণের আওতায় যে সুবিধাগুলো পায়, সেগুলো বাস্তবায়নে যে বাধার সম্মুখীন হচ্ছে, তা তুলে ধরার সুযোগ পাবে। তবে বিশেষ এবং ভিন্ন আচরণের ধারাগুলো আইনি বাধ্যবাধকতার মধ্যে না আনলে সেগুলো বাস্তবায়ন আশানুরূপ হবে না।

বালি সম্মেলনে যে ঘোষণাটি গৃহীত হয়েছে, তার পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার মহাপরিচালককে আগামী ১২ মাসের মধ্যে একটি বিস্তারিত কর্ম-পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে। এতে বিভিন্ন অঙ্গীকার বাস্তবায়নের একটি স্বচ্ছ রোডম্যাপ থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে। এ প্রক্রিয়ায় অর্থপূর্ণভাবে অংশগ্রহণ করতে হলে বাংলাদেশকেও একটি বিশদ কর্মসূচি প্রস্তুত করতে হবে। বাণিজ্য সহজীকরণ চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য কী ধরনের কারিগরি ও আর্থিক সাহায্য প্রয়োজন, সেগুলো জানাতে হবে। সেবার ক্ষেত্রে কোন কোন খাতে ও কোন কোন মোডে বাংলাদেশ রফতানি করতে প্রস্তুত, সেগুলো নির্ধারণ করতে হবে এবং বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার সদস্যদের কাছে তা তুলে ধরতে হবে। সর্বোপরি, বালি সম্মেলনের ঘোষণাটি যাতে সদস্য দেশগুলোর জন্য বাধ্যতামূলক হয় এবং বাস্তবায়নে যাতে সুনির্দিষ্ট সময়সীমা বেধে দেয়া হয়, সে ব্যাপারেও বাংলাদেশ তার দাবি তুলে ধরতে পারে।

লেখক: গবেষণা পরিচালক, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)