Published in বণিক বার্তা on Friday, 2 June 2017
প্রস্তাবিত বাজেটের আকার খুব বড় বলছি না, কারণ মাথাপিছু ২৫ হাজার টাকা বরাদ্দ বড় কিছু না। কিন্তু এমন বড় বাজেট বাস্তবায়নেও আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। বাজেট বাস্তবায়নে যে ধরনের উদ্যোগ দরকার, তাতে আমাদের খানিকটা ঘাটতি থেকে যায়। দেখা গেছে, সরকার যদি কোনো উন্নয়ন কার্যক্রমে ১ টাকা ব্যয় করে, ব্যক্তিখাত বিনিয়োগ করে ৪ টাকা। সুতরাং প্রণোদনার মাধ্যমে ব্যক্তিখাতের বিকাশ বা কর্মসংস্থান তৈরিতে সরকার কতখানি সুযোগ সৃষ্টি করতে পারল সেটিও গুরুত্বপূর্ণ।
বাজেট আট অনুমিতির ওপর ভিত্তি করে ঘোষণা করা হয়েছে, যার একটি হলো রেমিট্যান্স। বলা হয়েছে, রেমিট্যান্সপ্রবাহ ভালো থাকবে। কিন্তু আমরা দেখেছি বৈশ্বিক যে পরিস্থিতি এবং আমাদের গত কয়েক বছরের যে চিত্র, তাতে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে রেমিট্যান্সপ্রবাহ খুব বেশি বাড়বে বলে আশা করা যায় না। আমাদের রফতানি বা রেমিট্যান্সপ্রবাহে খুব ভালো প্রবৃদ্ধি দেখা যাচ্ছে না। বাজেট বাস্তবায়নের সময় বৈশ্বিক পরিস্থিতি খুব অনুকূল থাকবে বলেও মনে হয় না।
কর্মসংস্থানের বিষয়ে বাজেটে আরো সুস্পষ্ট ইঙ্গিত থাকলে ভালো হতো। শ্রমশক্তি নিয়ে সাম্প্রতিক এক জরিপে উঠে এসেছে, শিল্প খাতে গত তিন বছরে কর্মসংস্থান বেড়েছে মাত্র তিন লাখ। অর্থমন্ত্রী নিজেই উল্লেখ করেছেন প্রতি বছর শ্রমবাজারে ২০ লাখের মতো মানুষ যোগ হচ্ছে। সেটি একটি আশঙ্কার জায়গা। চলতি অর্থবছরের তুলনায় আগামী অর্থবছরের বাজেটের আকার বেড়েছে ২৬ শতাংশ। অন্যদিকে কর আহরণের প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৩৪ শতাংশ। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় সরকারের ব্যয় ১৪ থেকে ১৫ শতাংশ হারে বাড়ানো সম্ভব হয়েছে। সে কারণে বলা যায়, বড় বাজেট বাস্তবায়নে বড় ধরনের প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতার ঘাটতি রয়েছে সরকারের।
রাজস্ব আহরণের এত বড় প্রবৃদ্ধি অর্জন করা নিয়েও শঙ্কা থেকে যায়। বাজেটের দুর্বলতার জায়গাগুলো কাটিয়ে ওঠার জন্য বাড়তি কী করা হবে, সে বিষয়ে কোনো দিকনির্দেশনা নেই। ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্কহার যেভাবে নির্ধারণ করা হয়েছে, তাতে মূল্যস্ফীতির হার বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। অন্যান্য জায়গায় বিশেষত আয়করের সর্বসীমা আরো বাড়ানো প্রয়োজন ছিল। কিছু কিছু ক্ষেত্রে সারচার্জও আরোপ করা হয়েছে। এসব দেখে মনে হয়েছে, মানুষের জীবনযাত্রার ওপর বিরূপ প্রভাব পড়বে। বিশেষত পরোক্ষ করের আওতা বাড়ানো হয়েছে, যা শেষ পর্যন্ত সাধারণ মানুষের ওপরই বর্তাবে।