Originally posted in কালের কন্ঠ on 17 November 2023
ক্যাপাসিটি চার্জ ও নানা উপায়ে জ্বালানি খাতে অপচয় বন্ধ না করলে ডলারের ক্ষয় কমিয়ে আনা কঠিন হবে। কয়লা ও এলএনজি জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন থেকে ধীরে ধীরে বেরিয়ে এসে দেশীয় জ্বালানির উৎস খুঁজে বের করতে হবে। পাশাপাশি বিকল্প জ্বালানিতে না গেলে দেশে ডলার সংকট বাড়তে থাকবে।
গতকাল বৃহস্পতিবার ‘পরিবর্তনের ধারা : বাংলাদেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের ত্রৈমাসিক সংক্ষিপ্ত বিবরণ’ শীর্ষক বিবরণী প্রকাশ অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।
রাজধানীর ধানমণ্ডির নিজস্ব কার্যালয়ে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির সহযোগী গবেষক হেলেন মাশিয়াত প্রিয়তি।
সিপিডি বলেছে, ডলার সংকট সহজে সমাধান হবে না। এটা দীর্ঘমেয়াদি চ্যালেঞ্জ।
আর এই চ্যালেঞ্জের বড় উৎস জ্বালানি খাত। সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ চাহিদার সময়ও দেশে মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতার ৪৪ শতাংশ ব্যবহার হয় না। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা দাঁড়িয়েছে ২৭ হাজার ৮৩৪ মেগাওয়াট। এ সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়েছে দিনে ১৫ হাজার ৬৪৮ মেগাওয়াট।
১১ হাজার ৭৩৬ মেগাওয়াট সক্ষমতা বসিয়ে রাখতে হয়েছে। তার মানে সর্বোচ্চ চাহিদার সময়ও ৪৪ শতাংশ বিদ্যুৎ সক্ষমতা অলস ছিল। গড়ে ৫০ শতাংশের বেশি বসিয়ে রাখতে হয়। কিন্তু উৎপাদন না করলেও দিতে হয় কেন্দ্র ভাড়া (ক্যাপাসিটি চার্জ)।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনে সিপিডির গবেষণা সহযোগী হেলেন মাশিয়াত প্রিয়তি বলেন, অতিরিক্ত অব্যবহৃত বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও বিপিডিবি এখনো বিদ্যুৎ সম্প্রসারণ করেছে।
সঞ্চালন লাইন ও সাবস্টেশনে অগ্রগতি সত্ত্বেও জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন ও বিভ্রাট বেড়েছে। এসব সমস্যা দূর করতে স্মার্ট গ্রিড এবং আধুনিক ট্রান্সমিশন ও ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম গড়ে তোলা প্রয়োজন।
প্রিয়তি বলেন, ‘আমাদের ধীরে ধীরে আমদানিকৃত গ্যাস দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন থেকে সরে আসতে হবে। ব্যয়বহুল গ্যাসের ওপর নির্ভরতা কমাতে ৪৬টি গ্যাসকূপ খনন ত্বরান্বিত করা জরুরি। ৪৬টি গ্যাসকূপ খননের কাজ ত্বরান্বিত করার জন্য সরকারের আরো অর্থ বরাদ্দ করা উচিত। উচ্চ মূল্যের পেট্রোলিয়াম তেল এবং এলএনজির কারণে আমদানি ব্যয় বাড়ছে। এ ক্ষেত্রে সরকারের পদক্ষেপ প্রয়োজন।’
মূল প্রবন্ধে জানানো হয়, গত ১২ বছরে বিদ্যুৎ খাতে এক লাখ চার হাজার কোটি টাকা ক্যাপাসিটি চার্জ দিয়েছে সরকার। এখন আর ক্যাপাসিটি চার্জ দেওয়ার যৌক্তিকতা নেই। পাশাপাশি বাংলাদেশে গ্যাস থেকে কার্বন নিঃসরণ বেড়েছে। বেড়েছে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন থেকে কার্বন নিঃসরণও। গত ১১ বছরে যা ৬৮ শতাংশ বেড়েছে। বায়ুদূষণের কারণে মানুষ গড় আয়ু হারাচ্ছে।
সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘আমরা খুঁজছি কোন জায়গা থেকে একটা ডলার বাঁচানো যায়। কিন্তু সেখানে ক্যাপাসিটি চার্জের নামে বিপুল পরিমাণ অর্থ দিতে হচ্ছে অথবা বাকি রাখতে হচ্ছে। অন্যদিকে এলএনজি ও কয়লা আমদানি করতেও খরচ হচ্ছে বিপুল পরিমাণ অর্থ। এই পরিস্থিতি থেকে আগামী ছয় মাসে খুব বেশি একটা যে উন্নতি হবে, সেটাও প্রত্যাশা করা যাচ্ছে না। আমরা এক ধরনের জ্বালানি সংকটে রয়েছি। জীবাশ্ম জ্বালানি আমদানি না করা ছাড়া আমাদের উপায় নেই।’
ক্যাপাসিটি চার্জকে বড় রকমের অপচয় উল্লেখ করে খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘আমরা মনে করি ২০০৯ সালে দেশে বিদ্যুতের ঘাটতি ছিল। সে সময় ক্যাপাসিটি চার্জ দিয়ে বেসরকারি খাতকে আকৃষ্ট করার যুক্তি ছিল। তখন আমাদের ঘাটতি ছিল। কিন্তু পর্যায়ক্রমে বেসরকারি খাত উদ্বৃত্ত হয়েছে। উদ্বৃত্ত থেকে এখন বাহুল্য হয়েছে। এটা বাহুল্য বা মাথা ব্যথার জায়গা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখন আর ক্যাপাসিটি চার্জ দেওয়ার যৌক্তিকতা নেই।’
গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘এখন আমাদের উচিত গ্যাসের নতুন কূপ অনুসন্ধান ও গ্যাস উত্তোলনে মনোযোগী হওয়া। এখন পর্যন্ত আমরা সরকারকে সেদিকে মনোযোগী হতে দেখছি না। তিনি মনে করেন, নতুন কূপ অনুসন্ধান ও গ্যাস উত্তোলনে নিরুৎসাহ করার পেছনে এলএনজি আমদানির লবি কাজ করছে।’
এ সময় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদনে সরকারের আগ্রহ দেখা গেলেও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত প্রতিষ্ঠানগুলোর দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। দক্ষতা বৃদ্ধি ছাড়া দেশি-বিদেশি বিনিয়োগের যে সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে, তাতে কার্যত লাভবান হওয়া যাবে না।