Originally posted in The Daily Star on 29 January 2024
বিদ্যুৎ খাতে দেনা ৪৪ হাজার কোটি টাকা
‘সংকটের গভীরতা বুঝতে চাচ্ছে না সরকার, এটাই বড় সংকট’
এমন পরিস্থিতিতে মার্চে গরমের মৌসুমে বিদ্যুৎকেন্দ্র চালাতে প্রয়োজনীয় বাড়তি গ্যাস, কয়লা ও জ্বালানি তেল আমদানি করা যাবে কি না, তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে।
দেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে প্রায় ৪৪ হাজার কোটি টাকা দেনা নিয়ে বিপাকে পড়া সরকার এখনো সংকটের গভীরতাই বুঝে উঠতে পারছে না বলে মন্তব্য করেছেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও অর্থনীতিবিদরা।
সর্বশেষ হিসাব অনুসারে, দেশে উৎপাদনরত বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) কাছে পাওনা প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা। পিডিবি বাংলাদেশ তেল, গ্যাস, খনিজ সম্পদ করপোরেশনের (পেট্রোবাংলা) কাছে গ্যাস বিল বকেয়া রেখেছে প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা।
ভারতের আদানির কাছে বিদ্যুতের দাম বকেয়া পড়েছে ৫০ কোটি ডলারের মতো (প্রায় সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা)। জ্বালানি তেল আমদানিকারক সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) কাছে বিদেশি সরবরাহকারীরা পাবে প্রায় ২৭ কোটি ডলার (প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা)। আর বাংলাদেশে গ্যাস উত্তোলনকারী মার্কিন কোম্পানি শেভরন গ্যাসের দাম বাবদ পাবে ২০ কোটি ডলার (প্রায় ২ হাজার ২০০ কোটি টাকা)। এর বাইরে আরও কিছু খাতে বকেয়া রয়েছে। সবমিলিয়ে মোট দেনার পরিমাণ প্রায় ৪৪ হাজার কোটি টাকা।
একদিকে সরকার টাকার অভাবে বেসরকারি কেন্দ্রগুলোকে বিদ্যুতের দাম যথাসময়ে দিতে পারছে না, অন্যদিকে ডলারের অভাবে বকেয়া রাখতে হচ্ছে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের বিদেশি কোম্পানিগুলোর পাওনা।
এমন পরিস্থিতিতে মার্চে গরমের মৌসুমে বিদ্যুৎকেন্দ্র চালাতে প্রয়োজনীয় বাড়তি গ্যাস, কয়লা ও জ্বালানি তেল আমদানি করা যাবে কি না, তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে দ্য ডেইলি স্টার কথা বলেছে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক এম শামসুল আলম, অর্থনীতিবিদ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ এবং সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেমের সঙ্গে।
অধ্যাপক এম শামসুল আলমের অভিমত, ‘(বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে) যে সংকট এখন বিরাজ করছে, সেটা একদিনে তৈরি হয়নি। হঠাৎ করে কিংবা দৈব-দুর্বিপাকেও তা জাতির ওপর চেপে বসেনি। দিনে দিনে এই সংকটটা পুঞ্জীভূত করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘এ সংক্রান্ত নানা ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে যেসব উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, সেগুলো না করার জন্য আমরা গত দেড় দশক ধরে বলে আসছি। যে আশঙ্কার কথা বলে আসছি, তারই নানামুখী অভিঘাতের শিকার হচ্ছি এখন।’
বিষয়টি ব্যাখ্যা করে এই অধ্যাপক বলেন, ‘এই ব্যাপারটা এখন আপনি-আমি যেভাবে বুঝতে পারছি, সেভাবে সরকারকেও বুঝতে হবে যে আমরা সত্যিকার অর্থেই সংকটে পড়েছি। যেসব ভুল ও অদূরদর্শিতার কারণে এই সংকট ডেকে এনেছি, সেটা সরকারকে স্বীকার করতে হবে এবং সেখান থেকে উত্তরণের চেষ্টা করতে হবে। সেই চেষ্টায় জনগণের সম্পৃক্ততা আনতে হবে। অব্যবস্থা, দুরবস্থা কিংবা সংকট—যাই বলি না কেন, সরকারকেই সেটা মোকাবিলা করতে হবে।’
শামসুল আলম আরও বলেন, ‘এই বেসিক ব্যাপারটা যতক্ষণ পর্যন্ত সরকারের ভেতর না দেখা যাবে, ততক্ষণ পর্যন্ত কোনো সমস্যাই সরকারের পক্ষে মোকাবিলা করা সম্ভব হবে না।’
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের নানাবিধ অব্যবস্থাপনা বিষয়ে এই বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘জ্বালানি খাতের হর্তাকর্তা ও নিয়ন্ত্রণকারী যারা, তারাই সরকার। কিংবা সরকার মানেই তারা। কিন্তু সরকারের মধ্যে এই উপলব্ধিটা এখন পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে না। এটাকেই সংকট মনে করছি।’
তিনি বলেন, ‘আমরা চারটা কারণে এই অবস্থা ডেকে এনেছি। একটা হচ্ছে স্পিডি অ্যাক্ট। দ্রুত বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ আইন তৈরি এই খাতে বিনিয়োগ প্রতিযোগিতাহীন করে লুণ্ঠনমূলক ব্যয় বাড়িয়েছে। মুনাফা অর্জনকারীদের সুযোগ বাড়িয়েছে। এই খাতে ব্যাপক ঘাটতি তৈরি করেছে। এটা অন্যায়, অযৌক্তিক এবং শুধুমাত্র বিনিয়োগকারী ও তাদের নেপথ্যে দৃশ্যে-অদৃশ্যে থাকা কমিশনভোগীরা এতে লাভবান হয়েছে। এই আইন বন্ধ করে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতকে বাঁচাতে হবে। কিন্তু এটা কেউ মুখেও আনছেন না।’
শামসুল আলম বলেন, ‘সরকারি কিংবা বেসরকারি খাতে বিদ্যুতসহ এলপিজি, এলএনজি ও কয়লার মতো জ্বালানির দাম বৃদ্ধির ক্ষেত্রে উৎপাদনকারীরা এটা কত দামে উৎপাদন করছে এবং সাপ্লাই চেইনের বিভিন্ন সেগমেন্টে যে ভ্যালু অ্যাড হচ্ছে সেটা যৌক্তিক হচ্ছে কি হচ্ছে না, সেটা পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে বিচার করা দরকার। এই বিচারটা হচ্ছে না। উপরন্তু বিইআরসি আইন পরিবর্তন করে সেখানে গণশুনানি রহিত করে এখন প্রতি মাসে বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি করা হচ্ছে। এটাও প্রচণ্ড রকমের একটি আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত।’
এই খাতের সরকারি মালিকানাধীন কোম্পানিগুলো বাণিজ্যিকভাবে পরিচালনার সমালোচনাও করেন এই অধ্যাপক। বলেন, ‘সরকারি মালিকানাধীন যেসব কোম্পানি আছে সেগুলো বাণিজ্যিকভাবে পরিচালিত হচ্ছে। দেখা যায়, সেসব কোম্পানির মালিকানা বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিভাগের কর্মকর্তাদের। এতে বড় ধরনের বিপর্যয় ঘটেছে। মালিক হিসেবে তারা লাইসেন্সধারী ব্যবসায়ী। আবার সরকারের কর্মকর্তা হিসেবে তারা জ্বালানি বিভাগের সচিব, অতিরিক্ত সচিবের দায়িত্বে। রেগুলেটর তো কখনো মালিক হতে পারে না। মালিক কখনো রেগুলেটর হতে পারে না। এই জায়গাটা ভাঙতে হবে। সরকারি মালিকানাধীন কোম্পানিকে বাণিজ্যিকভাবে পরিচালনার জায়গা থেকে সরে এসে সুলভ মূল্যে সেবা দিতে হবে।’
‘তাই যে কারণে এই সমস্যাগুলো তৈরি হয়েছে, সেই কারণগুলো থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করতে হবে। এটা স্বল্পমেয়াদে সম্ভব না। অর্থাৎ টাকা ছাপিয়ে এই সমস্যার সমাধান হবে না।’
একইসঙ্গে কোনো প্রকল্প সরকার বেসরকারি খাতের সঙ্গে যৌথ মালিকানায় করতে পারবে না মন্তব্য করে শামসুল আলম বলেন, ‘এতেও বাজে অভিজ্ঞতা হয়েছে আমাদের। সরকার এখন তেলের রিফাইনারি করতে যাচ্ছে এস আলম গ্রুপের সঙ্গে। এটা একটা ভয়ঙ্কর আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত।’
বিষয়টি নিয়ে অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘বিদ্যুৎ খাতে যে দেনাটা তৈরি হয়েছে তার দায় জনগণ নিতে পারে না। কারণ মানুষের জন্য বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে গিয়ে সরকারের দেনা বেড়েছে বিষয়টা এ রকম না। কিন্তু সরকার থেকে বিষয়টা এভাবেই উপস্থাপন করার চেষ্টা চলছে যে—আমাদের ভর্তুকি দিতে হচ্ছে, ভর্তুকি পরিশোধ করতে হবে। সুতরাং দামও বাড়াতে হবে।’
তার ভাষ্য, ‘জ্বালানি খাতে উৎপাদন খরচ যেটা বেড়েছে সেটা এলএনজি আমদানি করার কারণে এবং টোটালি আমদানিনির্ভর ও ঋণনির্ভর প্রকল্পগুলো নেওয়ার কারণে। বিষয়টা অনিবার্যও ছিল না। এমন যদি হতো যে ঋণ না নিয়ে, এলএনজি না এনে আর কোনো উপায় ছিল না তাহলে একটা যুক্তি ছিল।’
তিনি বলেন, ‘বিশ্ববাজার থেকে জ্বালানি আমদানি করতে হলে দামের স্থিতিশীলতা থাকবে না, নিশ্চয়তা থাকবে না। যুদ্ধসহ নানা কারণে গ্লোবাল মার্কেট অস্থিতিশীল হয়ে উঠতে পারে—এগুলো তো জানাই ছিল।’
আনু মুহাম্মদ মনে করেন, ‘রাজনৈতিক কারণে’ দেশি-বিদেশি কিছু ব্যবসায়িক গোষ্ঠীকে ‘খুশি করার জন্য’ সরকার এটা করেছে।
তিনি বলেন, ‘এর মধ্যে ফিনান্সিয়াল ইন্টারেস্টের ব্যাপার ছিল, পটিলিক্যাল ডিসিশানের ব্যাপার ছিল।’
কিন্তু এর বিকল্প হিসেবে তাৎক্ষণিকভাবে দেশের স্থলভাগ ও সমুদ্রবক্ষের গ্যাসক্ষেত্রগুলোতে উৎপাদন বাড়ানো কিংবা দীর্ঘমেয়াদে অনুসন্ধান চালানোর মতো কাজগুলো সরকার একেবারেই করেনি বলেও মন্তব্য করেন এই অধ্যাপক। বলেন, ‘ফলে এলএনজি নির্ভরতা বেড়েছে। কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর ক্ষেত্রেও সেটা ঘটেছে। এটার দরকার হতো না যদি গ্যাসের অনুসন্ধান চলত। ফলে ঋণ বেড়ে গেছে। নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট—সেটা তো বিশাল ঋণ। সেটার উৎপাদন খরচও অনেক বেশি হবে। এর বাইরে আছে পুরো পাওয়ার সেক্টরে করাপশন ও কমিশনের সমস্যা। এর দায়িত্ব মানুষ কেন নেবে?’
এসবের কারণে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হলে, ভর্তুকি তুলে দিলে, সেটা মেনে নেওয়া যায় না মন্তব্য করে আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘যে কারণে তুমি (সরকার) ভর্তুকি দিচ্ছ, সেই কারণটা দূর করতে হবে। ব্যবসায়িক গোষ্ঠীগুলোর স্বার্থ রক্ষা করতে গিয়ে যে ভুল সিদ্ধান্তগুলো নিয়েছো, সেগুলো দূর করলে দায়-দেনা থাকবে না।’
‘কিছু গোষ্ঠীকে’ সহায়তা করতে গিয়ে এসব দায়-দেনার কারণে বার বার বিদ্যুতের দাম বাড়াতে হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন এই অর্থনীতিবিদ। বলেন, ‘তাতে পুরো অর্থনীতি অ্যাফেক্টেড হচ্ছে। বর্তমানে আর্থিক সংকটের অন্যতম উৎস এই বিদ্যুৎ খাত। বিদেশি ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে চাপটা ডলারের ওপর গিয়ে পড়ছে। নিজেদের গ্যাস উত্তোলন করলে কোনো বৈদেশিক মুদ্রা লাগত না। কিন্তু এলএনজি আমদানি করতে গিয়ে ফরেন কারেন্সি লাগছে, কয়লা আমদানি করতে গিয়ে ফরেন কারেন্সি লাগছে। ফলে রিজার্ভের ওপর চাপ পড়ছে।’
তিনি বলেন, ‘আমদানি ও ঋণের কারণে যখনই প্রোডাকশন কস্ট বেড়ে যাচ্ছে তখনই দাম বাড়ানোর প্রক্রিয়াটাও চালু থাকছে। আর দাম বাড়লে তার বহুমুখী প্রভাব দেখা যায়। বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি মানে অন্যান্য জিনিসের উৎপাদন খরচ বাড়ল, জ্বালানির দাম বৃদ্ধি মানে পরিবহন খরচ বাড়ল, মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়ল, মূল্যস্ফীতি বাড়ল। বর্তমান সময়ে আমাদের ভোগান্তির অন্যতম উৎস হলো এই বিদ্যুৎ খাত। ম্যাক্রো ইকোনোমিক লেভেল যে টোটালি একটা বিপর্যয়ের দিকে যাচ্ছে তারও অন্যতম উৎস এটা।’
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে যে দেনার কথা বলা হচ্ছে এর আসল পরিমাণ আরও বেশি বলে মনে করেন খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। তিনি বলেন, ‘এর ভেতর বিদেশি অর্থে অর্থাৎ ডলারে প্রাপ্ত দেনা আছে। আবার দেশে যারা আছেন তাদেরও বকেয়া পাওনা রয়েছে। সেগুলো বিবেচনা করলে পরিমাণটা হয়তো আরও বেশি হবে। এখন বন্ড ছাপিয়ে সরকার টাকার চাহিদা আংশিকভাবে মেটানোর উদ্যোগ নিচ্ছে। কিন্তু ডলারের যে সংকট, সেটা পাওয়া কষ্টকর। উপরন্তু সরকার ঋণ নিয়ে এই ডলার পাওয়ার চেষ্টা করছে। অথবা কাউকে রিকোয়েস্ট করা হচ্ছে ডিলে পেমেন্টের জন্য। এই দুটোর কোনোটাই আসলে এই মুহূর্তে কিংবা দীর্ঘমেয়াদে সাসটেইনেবল না।’
তার ভাষ্য, ‘ফলে, জ্বালানি খাত যথেষ্ট চ্যালেঞ্জের মধ্যেই রয়েছে। এর আশু সমাধান কষ্টকর এবং দীর্ঘমেয়াদী চ্যালেঞ্জ। হুট করে এখান থেকে বেরিয়ে যাওয়া যাওয়া যাবে বলেও মনে হচ্ছে না। অন্তত আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য যদি কোভিডপূর্ব সময়কালে না নামে তাহলে আমাদের এই পরিস্থিতি যে স্বাভাবিক হবে, এমন কোনো ইঙ্গিত নেই।’
‘তাই যে কারণে এই সমস্যাগুলো তৈরি হয়েছে, সেই কারণগুলো থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করতে হবে। এটা স্বল্পমেয়াদে সম্ভব না। অর্থাৎ টাকা ছাপিয়ে এই সমস্যার সমাধান হবে না,’ যোগ করেন তিনি।
গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘বিপুল পরিমাণে উদ্বৃত্ত বিদ্যুৎ ক্যাপাসিটি আমরা তৈরি করেছি। সেই বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর বিপুল পরিমাণ ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে গিয়ে, একইসঙ্গে অভ্যন্তরীণ দেশীয় গ্যাসের ব্যবহার না করে আমদানিনির্ভর এলএনজি দিয়ে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করেছি। সেটাও একটা চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। তাই উচিত হবে সরকার যাতে এক বছর পরে অন্তত একটা স্বস্তিদায়ক অবস্থায় যেতে পারে সেই উদ্যোগ নিয়ে কাজ করা।’
এ জন্য বিদ্যুৎ খাতের ক্যাপাসিটি চার্জ থেকে বেরিয়ে আসতে নতুন কোনো বিদ্যুৎকেন্দ্রের ক্ষেত্রে ‘নো ইলেকট্রিসিটি নো পে’ শর্তে যাওয়া উচিত বলে মনে করেন এই গবেষক। বলেন, ‘বিদ্যমান বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর সঙ্গেও নেগোশিয়েট করতে হবে। কেননা এই ধরনের জটিল পরিস্থিতিতে যেকোনো দেশের যেকোনো চুক্তির শর্ত নিয়ে নেগোশিয়েট করার সুযোগ আছে।’
যেসব বিদ্যুৎকেন্দ্রের চুক্তি শেষ হচ্ছে, সেগুলোর চুক্তি নবায়ন না করার ব্যাপারেও জোর দেন গোলাম মোয়াজ্জেম। পাশাপাশি ভবিষ্যতে যেকোনো ধরনের জ্বালানি আমদানির ক্ষেত্রে আমদানি ব্যয় আরও বৃদ্ধির আশঙ্কার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘একদিকে বিপুল পরিমাণ অর্থ অনাদায়ী থাকায় রিজার্ভের যে পরিমাণের কথা আমরা বলছি, প্রকৃত অর্থে নেট রিজার্ভ তারচেয়ে অনেক কম। তার মানে বৈদেশিক লেনদেনের ক্ষেত্রে আগামী দিনগুলোতে আরও চাপ তৈরি হবে, টাকার বিনিময় হার আরও দুর্বল হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা যতই এই ধরনের ফাইন্যান্সিং মডেলে থাকব—বাকি থাকা, পেমেন্ট করতে না পারার মতো বিষয়গুলো—ততই আমাদের ইন্টারন্যাশনাল ক্রেডিট রেটিং আরও দুর্বল হবে। আন্তর্জাতিক ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রে এটা সমস্যা সৃষ্টি করবে—সেটা জি-টু-জি লেভেলেই হোক কিংবা জি-টু-বি। একইসঙ্গে রিস্ক ফ্যাক্টরের জন্য এ সব ঋণের যে সিকিউরিটি মানি, সেগুলোও বেড়ে যাবে।’