Originally posted in প্রথম আলো on 9 April 2025
বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা আসতে চান না; কারণ, এর চেয়ে ভালো বিকল্প রয়েছে তাঁদের কাছে। আবার এ দেশে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে অনেক বাধা রয়েছে। বড় বাধা নীতির ধারাবাহিকতা না থাকা। এ ছাড়া রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার অভাব ও বিভিন্ন সরকারি সংস্থার মধ্যে সমন্বয়হীনতাও বিনিয়োগ না আসার অন্যতম কারণ।
রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে চার দিনের বিনিয়োগ সম্মেলনের তৃতীয় দিনে আজ বুধবার একটি প্যানেল আলোচনায় দেশি-বিদেশি ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীরা এমন অভিমত দেন।
স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উত্তরণ-পরবর্তীকালে দেশের বাণিজ্য ও বিনিয়োগকৌশল নিয়ে প্যানেল আলোচনাটির আয়োজন করে ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই।
বক্তারা আরও বলেন, শিল্পের জন্য এখনো অতিরিক্ত দামে গ্যাস-বিদ্যুৎ কিনতে হচ্ছে। যার ফলে উৎপাদন খরচ বাড়ছে। নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে রয়েছে অসামঞ্জস্য। এ পরিস্থিতিতে বিদেশি বিনিয়োগ আনতে নীতি ও কাঠামোগত পরিবর্তনের দিকে নজর দেওয়ার পরামর্শ দেন তাঁরা।
অনুষ্ঠানে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, বাংলাদেশ একটি পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। বিদ্যমান নীতিগুলো নিয়ে পর্যালোচনা চলছে। বিনিয়োগসংক্রান্ত ঝুঁকি ও চ্যালেঞ্জগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে। এগুলো সমাধানের কাজও চলছে।
শেখ বশিরউদ্দীন আরও বলেন, ‘কেন বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করবেন, এ প্রশ্ন সব সময় আসে। এ বিষয়ে বলব, বাংলাদেশ ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বের নবম ভোক্তা বাজার হতে যাচ্ছে। বাংলাদেশের শক্তিশালী জনবল রয়েছে। এ ছাড়া বিনিয়োগবান্ধব অনেক নীতি আছে। আর বিনিয়োগের বিদ্যমান বাধাগুলো চিহ্নিত করে বিনিয়োগ পরিবেশ নিশ্চিত করা হবে।’
রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা জরুরি
আলোচনায় বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, বিনিয়োগের জন্য রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা জরুরি। বিনিয়োগকারীরা নীতির ধারাবাহিকতা চান। তাঁরা হঠাৎ নীতির পরিবর্তনকে বড় প্রতিবন্ধকতা হিসেবে দেখেন। আরও সমস্যা রয়েছে। যেমন জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও বাংলাদেশ ব্যাংকের মধ্যে নীতির সমন্বয় নেই। এসব জায়গায় প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার প্রয়োজন।
অ্যাপেক্স ফুটওয়্যারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর বলেন, ‘আমরা কি আসলেই বিনিয়োগবান্ধব হতে পেরেছি? আমাদের কাছে প্রশ্ন আসে, বাংলাদেশে কেন বিনিয়োগ করবে। বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা আসতে চান না; কারণ, তাঁদের কাছে এর চেয়ে ভালো বিকল্প রয়েছে। তাঁদের সামনে ভারত, চীন ও মালয়েশিয়া ভালো বিকল্প। ফলে এখন আমাদের প্রয়োজন নীতির প্রাসঙ্গিকতা ও তার সঠিক বাস্তবায়ন।’
বস্ত্রকলের মালিকদের সংগঠন বিটিএমএর সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল বলেন, বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিনা শুল্কে সুতা আমদানি করে। এটা অব্যাহত রাখতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য–ঘাটতি কমানোর উদ্যোগ নিতে হবে। বাংলাদেশের উচিত পণ্য ধরে ধরে আলোচনা করা। তবে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্ক আরোপের কারণে দ্রুত কোনো দুর্যোগ হবে বলে মনে করেন না এই ব্যবসায়ী নেতা।
বিজনেস ইনিশিয়েটিভ লিডিং ডেভেলপমেন্টের (বিল্ড) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ফেরদৌস আরা বেগম বলেন, বাংলাদেশে ভেঞ্চার ক্যাপিটাল প্রতিষ্ঠান খুবই কম। যারা আছে, তাদের নিবন্ধন–জটিলতা অনেক বেশি। বিএসইসিসহ আরও অনেক প্রতিষ্ঠান থেকে নিবন্ধন নিতে হয়।
এইচঅ্যান্ডএম ও প্রাণ-আরএফএলের চুক্তি
বিনিয়োগ সম্মেলনে আজ বিশ্বের খ্যাতনামা পোশাক বিপণনকারী সুইডিশ ব্র্যান্ড এইচঅ্যান্ডএম (হেন্স অ্যান্ড মরিটজ) ও দেশের বৃহৎ শিল্পগোষ্ঠী প্রাণ-আরএফএলের মধ্যে একটি সমঝোতা চুক্তি (এমওইউ) হয়েছে।
মৌলভীবাজার জেলায় প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের সমন্বিত কৃষি খামার রয়েছে। সেখানে তাদের ৩৫০ একর জমি আছে। ওই জমিতে সৌর প্যানেল স্থাপন করবে গ্রুপটি। সেখানে উৎপাদিত বিদ্যুৎ কিনবে এইচঅ্যান্ডএমকে পোশাক সরবরাহকারী বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো। এই জ্বালানি উৎপাদনে প্রাণ-আরএফএলকে অর্থায়ন করবে বিশ্বব্যাংক গ্রুপের প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশন (আইএফসি)।
এমওইউ স্বাক্ষরের পর সেখানে একটি প্যানেল আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। এতে অন্তর্বর্তী সরকারের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, বাংলাদেশে বিদ্যুৎ খাতে বিপুল ভর্তুকি দেওয়া হয়। সরকার এখানে ভারসাম্য আনার চেষ্টা করছে। এ ক্ষেত্রে নবায়নযোগ্য জ্বালানি একটি ভালো সহায়ক হতে পারে।