Published in দৈনিক সমকাল on Monday, 14 December 2015
বিনিয়োগ সহায়ক আমদানিতে ভাটা
জাকির হোসেন
শিল্প-কারখানা স্থাপন ও সম্প্রসারণের জন্য মূলধনী যন্ত্রপাতি এবং উৎপাদনের জন্য মধ্যবর্তী পণ্যের আমদানি কমে গেছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানির ব্যয় গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১৭ শতাংশ কম। মূলধনী যন্ত্রপাতি এবং মধ্যবর্তী পণ্য আমদানি বাড়লে তাকে বিনিয়োগ ও উৎপাদন সহায়ক মনে করা হয়।
অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা এ প্রবণতাকে সার্বিকভাবে দেশে বিনিয়োগের ধীরগতির প্রতিফলন হিসেবেই দেখছেন। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেল ও পণ্যমূল্য হ্রাস এবং বাংলাদেশি মুদ্রা টাকার শক্তিশালী অবস্থানকেও আমদানি ব্যয় কমার অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন তারা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০১৫-১৬ অর্থবছরের জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত প্রায় ৯৪ কোটি ডলারের মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি হয়েছে। ২০১৪-১৫ অর্থবছরের একই সময়ে এর পরিমাণ ছিল ১১৩ কোটি ডলার। যন্ত্রপাতির বাইরে বিভিন্ন প্ল্যান্ট ও অন্যান্য মূলধনী পণ্যের আমদানিও কম হয়েছে। আলোচ্য সময়ে মোট ২৭৮ কোটি ডলারের মূলধনী পণ্য এসেছে, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১৫ শতাংশ কম। মধ্যবর্তী পণ্যগুলোর আমদানিতে অবশ্য মিশ্র প্রবণতা রয়েছে, যেমন_ তুলা আমদানি কমেছে ১২ শতাংশ। সুতা আমদানিও কিছুটা কমেছে। সিমেন্ট উৎপাদনের মধ্যবর্তী পণ্য ক্লিঙ্কারের আমদানি কমেছে। অন্যদিকে আয়রন, স্টিল ও অন্যান্য মৌলিক ধাতুর আমদানি ৯ শতাংশের মতো বেড়েছে। ওষুধের কাঁচামাল বা মধ্যবর্তী পণ্য আমদানি বেড়েছে।
ঢাকা চেম্বারের সভাপতি ও আনোয়ার গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হোসেন খালেদ সমকালকে বলেন, বিনিয়োগ পরিবেশের তেমন উন্নতি হয়নি। অবকাঠামোর অনেক ঘাটতি রয়ে গেছে। এ কারণে নতুন বিনিয়োগ কম হচ্ছে। অবশ্য মূলধনী যন্ত্রপাতি এবং মধ্যবর্তী পণ্য আমদানি ব্যয় হ্রাসের এই পরিসংখ্যানকে শুধু বিনিয়োগে ধীরগতি দিয়ে ব্যাখ্যা করা ঠিক হবে না বলে মনে করেন হোসাইন খালেদ। এর ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, চীন ও ভারত হলো বাংলাদেশের প্রধান দুটি আমদানি গন্তব্য। ওই দুই দেশের মুদ্রার ব্যাপক পতন হয়েছে। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যমূল্য কম রয়েছে। সুতরাং আমদানি ব্যয় কম হওয়ার পেছনে এ দুই কারণকে বিবেচনায় নিতে হবে।
গবেষণা সংস্থা সিপিডির অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম সমকালকে বলেন, সার্বিকভাবে বিনিয়োগে তেজি ভাব থাকলে মূলধনী পণ্যের আমদানি ব্যয় এত কম হতো না। অবশ্য বিশ্ববাজারে পণ্যমূল্য হ্রাস ও টাকার শক্তিশালী অবস্থানকে আমদানি ব্যয় কম হওয়ার অন্যতম কারণ বলে তিনিও মনে করেন।
গোলাম মোয়াজ্জেম মনে করেন, সামগ্রিকভাবে উৎপাদন ও বিনিয়োগ বেগবান হবে বলে যে প্রত্যাশা করা হয়েছিল, বাস্তবে তা হয়নি। গ্যাসের স্বল্পতা ও বিদ্যুতের ঘাটতি বিনিয়োগ সিদ্ধান্তকে পিছিয়ে দিচ্ছে। আবার সরকার বিদ্যুতে যতটা গুরুত্ব দিয়েছে, অন্য অবকাঠামো উন্নয়নে ততটা দেয়নি। ফলে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ত্বরণ সৃষ্টি করা যায় নি। তিনি বলেন, আমাদের আমদানির একটা বড় অংশ রফতানি পণ্য তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। রফতানিতে ভালো প্রবৃদ্ধি হচ্ছে না। দেশের ভেতরেও ভোগ্যপণ্যের চাহিদাও খুব বাড়ছে বলে মনে হয় না। এর কারণ, কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে বড় ধরনের অগ্রগতি হয়নি। রেমিট্যান্স প্রবাহও কমে গেছে। এগুলোও উৎপাদন ও বিনিয়োগকে প্রভাবিত করছে।
কমেছে বাণিজ্য ঘাটতি : লেনদেনের ভারসাম্যের ওপর বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনের তথ্যমতে, চলতি অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবর সময়কালে এফওবি (পরিবহন এবং জাহাজীকরণ ব্যয় ছাড়া) ভিত্তিতে মোট আমদানি ব্যয় হয়েছে এক হাজার ১৮৫ কোটি ডলার। গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় যা ২ দশমিক ৩ শতাংশ কম। এ সময়ে রফতানি আয় হয়েছে ৯৮৭ কোটি ডলার। রফতানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ৪ শতাংশ। আমদানি ও রফতানি পার্থক্য, অর্থাৎ বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১৯৮ কোটি ডলার। গত অর্থবছরের একই সময়ে বাণিজ্য ঘাটতি ছিল ২৬২ কোটি ডলার।