Originally posted in The Business Standard on 31 October 2022
উন্নয়ন ব্যয় কম, অতিরিক্ত মূল্যস্ফীতি: সঞ্চয়পত্রে ভাটা
চলতি অর্থবছরের তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বরে) সরকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে নীট ঋণ নিয়েছে ৩৩০ কোটি টাকা। যা সরকারের অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রার ১ শতাংশেরও কম। চলতি অর্থবছরে এই খাত থেকে লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ৩৫ হাজার কোটি টাকা।
দেশের মূল্যস্ফীতির ব্যাপক বৃদ্ধি ও বার্ষিক উন্নয়ন ব্যয় কম থাকায় সরকারের বাজেট ঘাটতি মেটাতে সঞ্চয়পত্র ও ব্যাংকিংখাত থেকে ঋণের পরিমাণ কমেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে পাওয়া গেছে এ তথ্য।
চলতি অর্থবছরের তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বরে) সরকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে নীট ঋণ নিয়েছে ৩৩০ কোটি টাকা। যা সরকারের অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রার ১ শতাংশেরও কম। চলতি অর্থবছরে এই খাত থেকে লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ৩৫ হাজার কোটি টাকা।
যদিও আগের ২০২১-২২ অর্থবছরের একইসময়ে সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের নীট ঋণ ছিল ৮,৫৫৮ কোটি টাকা। সে হিসেবে চলতি সময়ে সঞ্চয়পত্র ঋণ কমেছে ৮,২২৮ কোটি টাকা।
খাত সংশ্লিষ্টরা বলেন, সরকার ব্যয় সংকোচন নীতির অংশ হিসেবে সকল ধরণের ব্যয় কমিয়ে আনছে। এই সময়ে সঞ্চয়পত্র নীট ঋণের চেয়ে পরিশোধ ব্যাপক বাড়িয়েছে। একইসঙ্গে গ্রাহক ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে অধিক পরিমাণে হাতে টাকা রাখছে যার কারণে সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিপোর্ট বলছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম তিনমাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বরে) সরকার সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নিয়েছে ২১,৫১১ কোটি টাকা; এর মধ্যে আগের ঋণ পরিশোধ করেছে ২১,১৮০ কোটি টাকা।
অথচ গত ২০২১-২২ অর্থবছরে একই সময়ে সরকার সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নিয়েছে ২৬,৬০৫ কোটি টাকা। সেই সময়ে আগের ঋণ বাবদ পরিশোধ করেছে ১৮,০৪৭ কোটি টাকা।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন টিবিএসকে বলেন, সাধারণত সঞ্চয়পত্র রাখে মধ্যবিত্ত মানুষ। দেশের মূল্যস্ফীতি যে পরিমাণে বাড়ছে এর জন্য মধ্যবিত্তদের খরচ বেড়ে গেছে এবং সঞ্চয়ের পরিমাণও কমিয়ে দিয়েছে। এছাড়া সরকার যে পরিমাণে সঞ্চয়পত্র কিনছে তার তুলনায় অধিক হারে আগের ঋণ পরিশোধ করছে যার কারণে সঞ্চয়পত্র ঋণের পরিমাণ কমেছে।
বাংলাদেশ পরিশংখ্যান ব্যুরোর তথ্য বলেছে, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে সরবরাহ চেইনে ব্যাঘাত ও জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে গত আগস্ট মাসে মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯.৫ শতাংশ। সেপ্টেম্বরে তা কমে ৯ দশমিক ১ শতাংশে নেমে এসেছে।
সর্বশেষ মূল্যস্ফীতির হার ৯%-এর উপরে ছিল ২০১০-১১ অর্থবছরে।
সরকারের বার্ষিক উন্নয়ন ব্যয়ের চিত্র অনুযায়ী দেখা যায়, চলতি বছর সরকারের উন্নয়ন ব্যয়ের লক্ষ্য রয়েছে ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা। অথচ চলতি অর্থবছরের তিন মাসে ব্যয় করেছে মাত্র ৯,৮৪৩ কোটি টাকা। যা লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ৩.৮৫%।
এছাড়া গত ২০২১ সালের আগস্টে মানুষের হাতে নগদ টাকার পরিমাণ ছিল ২ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা। চলতি ২০২২ সালের আগস্টে এসে মানুষের হাতে নগদ টাকার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৪১ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ আগের বছরের তুলনায় মানুষ হাতে নগদ টাকা বেশি রাখছে প্রায় ১৩%।
এদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ বাড়লেও তফসিলি ব্যাংকগুলো থেকে ঋণ নেয়ার তুলনায় পরিশোধ বেশি করছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সূত্র বলছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে সরকার ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে নীট ঋণ নিয়েছে ১২,৫২৬ কোটি টাকা। যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৪,২১৮ কোটি টাকা।
একইসঙ্গে চলতি বছরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছে ১৬,৮৩৩ কোটি টাকা।
জাতীয় বাজেটে ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য অভ্যন্তরীণ ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ১,৪৬,৩৩৫ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১,০৬,৩৩৪ টাকা।