মার্কিন উচ্চ শুল্কে পোশাক রপ্তানি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে: ড. মোয়াজ্জেম

Originally posted in Independent TV on 22 November 2025

রপ্তানি আয় কমছেই, পোশাক খাতে কি বড় কোনো সংকট আসছে?

চলতি অর্থবছরের আগস্ট থেকে টানা তিন মাস ধরে কমছে তৈরি পোশাকের রপ্তানি আয়। কমেছে রপ্তানি আদেশও। সবশেষ অক্টোবর মাসে রপ্তানি আয় কমেছে ৭ শতাংশ। রপ্তানি এবং আদেশ কমে যাওয়ার এ প্রবণতা চলতে থাকলে আগামী মাসগুলোতে তৈরি পোশাক খাত আরও বড় সংকটে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা বিশ্লেষকদের।

দেশের অর্থনীতির অন্যতম ও প্রধান চালিকাশক্তি তৈরি পোশাক খাত। তবে মার্কিন শুল্কের ধাক্কা লাগতে শুরু করেছে এ খাতে। বিশেষ করে বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান পোশাক আমদানিকারক ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাজারে চীন ও ভারতের ব্যাপক হারে প্রবেশ নতুন করে ভাবাচ্ছে দেশের রপ্তানিকারকদের।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যমতে, আগস্ট মাসে পোশাক রপ্তানি কমে দাঁড়িয়েছে ৩১৭ কোটি ডলারে, যা আগের বছরের আগস্টে ছিল ৩৩৩ কোটি ডলার। আর অক্টোবর মাসে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় পোশাক রপ্তানি কমেছে ২৮ কোটি ডলার। অন্যদিকে সেপ্টেম্বরে পোশাক রপ্তানির আদেশ ছিল ২৫৯ কোটি ডলার, যা অক্টোবরে কমে হয় ২২০ কোটি ডলার।

রপ্তানিকারকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্কের প্রভাবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দিকে ঝুঁকছে চীন ও ভারতসহ উচ্চ শুল্কের দেশগুলো। এমনকি প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে কম দামে পণ্য দিচ্ছে তারা। ফলে দেশের পোশাক রপ্তানি ও আদেশ কমছে।

তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ–র পরিচালক মাসুদ কবির বলেন, ‘বড় রপ্তানির জায়গা যেহেতু ইউরোপে ছিল, সেই মার্কেটে আমাদের সবচেয়ে বড় প্রতিযোগী চীন বা ভারতের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। ফলে আমাদের চেয়ে তারা (ইউরোপীয় ক্রেতারা) এই অল্টারনেটিভ মার্কেটগুলোকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে, কারণ এখানকার পরিবেশটা ততটা ক্রেতাবান্ধব নয়।’

বিশ্লেষকরা বলছেন, আমেরিকায় মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় সে দেশের গ্রাহকরা চাহিদা অনুযায়ী পণ্য কিনতে পারছেন না। এর প্রভাব এসে পড়ছে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানিতে। এছাড়া ইউরোপের বাজারে প্রতিযোগী দেশগুলোর প্রবেশে এক ধরনের অসম প্রতিযোগিতা তৈরি হচ্ছে।

সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘উচ্চ শুল্কের কারণে মার্কিন ক্রেতারা এখন আগের মতো পোশাক কিনতে পারছেন না। এটা শুধু খাদ্যপণ্য নয়, খাদ্য বহির্ভূত পণ্যের ক্ষেত্রেও সত্য। আমরা যে পোশাক পাঠাই, সেগুলোর ক্ষেত্রেও একই পরিস্থিতি। এতে আমেরিকায় মূল্যস্ফীতি বাড়ছে, পণ্যের চাহিদা কমছে এবং আমাদের কাছ থেকে ক্রেতারা প্রত্যাশা অনুযায়ী কিনছেন না। উপরন্তু উচ্চ শুল্কের একটি অংশ ক্রেতারা আমাদের সরবরাহকারীদের ওপর চাপিয়ে দিতে চাইছেন।’

ইউরোপীয় ইউনিয়নের ইউরোস্ট্যাটের তথ্য বলছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি বেড়েছে ১৩ শতাংশ। একই সময়ে চীনের রপ্তানি বেড়েছে প্রায় ১৭ শতাংশ। প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে এখনই নতুন বাজার, পণ্যের বহুমুখীকরণ ও নীতিগত সহায়তা জরুরি বলে মন্তব্য করেছেন সংশ্লিষ্টরা।