Originally posted in The Daily Star on 27 May 2022
অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার মূল স্তম্ভ হতে হবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ
প্রথম আলোর আয়োজনে ‘অর্থনীতির চ্যালেঞ্জ ও বাজেট প্রত্যাশা’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় ২১ মে ২০২২। এ গোলটেবিল আলোচনার বক্তব্য সংক্ষিপ্ত আকারে এই ক্রোড়পত্রে প্রকাশিত হলো।
আসন্ন বাজেট নিয়ে এত কম আলোচনা গত ৩০ বছরে দেখিনি। আমি মনে করি, বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে তিনটি বিষয়কে গুরুত্ব দিতে হবে। ১. পরিস্থিতির বিশ্লেষণ, ২. ব্যবস্থাপত্র কী ৩. এই ব্যবস্থাপত্র বাস্তবায়নে প্রক্রিয়াগত কী বিষয় আছে।
প্রথমেই আসি পরিস্থিতির বিশ্লেষণে। যদি বলেন, পরিস্থিতি বোঝা যায়নি, তাহলে এটা আমি সম্পূর্ণভাবে অস্বীকার করি। কারণ, গত এক বছর বা তার বেশি সময় ধরে এখানে যাঁরা বসে আছেন, তাঁরা অর্থনীতিতে বিভিন্ন কাঠামোগত অসংগতির কথা বলছেন, সংস্কারের অভাবে এগুলো অর্থনীতিতে কত ধরনের বাধা সৃষ্টি করছে, তা বলে আসছেন। তাই এসব বিষয় নিয়ে একধরনের অস্বীকৃতির মনোভাব আছে। তথ্যের প্রতি অবজ্ঞা, অনেক ক্ষেত্রে তথ্যের প্রতি অন্ধত্ব আমাদের এই জায়গায় নিয়ে এসেছে। আমরা যে উন্নয়ন উপাখ্যান তৈরি করেছি, এটি যদি যুক্তিসংগত না হয়, তাহলে তথ্যভিত্তিক বিশ্লেষণকেও অপমানসূচক বক্তব্য দিয়ে ছোট করার চেষ্টা করছি।
অত্যন্ত দুঃখের বিষয়, অনিচ্ছা সত্ত্বেও সরকার ক্রমান্বয়ে মেনে নিচ্ছে, অর্থনীতিতে সংকটময় পরিস্থিতি বিকাশমান। আমরা বলি বিরাজমান। বিকাশমান ও বিরাজমান—দুটিই সত্য। একধরনের ঐকমত্য সৃষ্টি হয়েছে যে আয়-ব্যয় পরিস্থিতি, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, চলতি খাতে ক্রমবর্ধমান ঘাটতি সৃষ্টি হচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে আমরা বিচ্ছিন্ন ও অপর্যাপ্ত পদক্ষেপ দেখতে পাচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী এসব বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কমিটিতে আলোচনা করার কথা বলছেন। বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন বিভিন্ন ধরনের ঝুঁকির মধ্যে আছে, যা বড় ধরনের সংকট সৃষ্টি করতে পারে। দেরিতে হলেও অনিচ্ছা সত্ত্বেও মেনে নেওয়া হয়েছে। দ্বিতীয় বিষয় হলো, এ পরিস্থিতি থেকে বেরোনোর উপায় কী, ব্যবস্থাপত্র কী? এখন সময় হলো মধ্য মেয়াদের চেয়ে স্বল্প মেয়াদে বেশি মনোযোগ দেওয়া। দু-তিন বছরের একটি স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনা দরকার। পাশাপাশি ব্যাংক-বিমাসহ আর্থিক খাত, পুঁজিবাজার, রাজস্ব খাত, স্থানীয় সরকার—এসব বিষয়েও মনোযোগ রাখতে হবে।
প্রবৃদ্ধিকে আমরা এখন অনন্য দেবতার স্থানে নিয়ে গেছি। প্রবৃদ্ধিকে সেখান থেকে নামাতে হবে। অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতাকে গুরুত্ব দিতে হবে। অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার লক্ষ্য হতে হবে নিম্নবিত্ত, সীমিত আয়ের মানুষের ক্রয়ক্ষমতাকে সুরক্ষা দেওয়া। ব্যয় ও আয়—দুই ক্ষেত্রেই তাদের সুরক্ষা দিতে হবে।
মূল্যস্ফীতিকে সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার মূল স্তম্ভ হিসেবে দেখতে হবে। খাদ্যমূল্যস্ফীতি এখন অনেক বেশি। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে যেসব কথা বলা হচ্ছে, তা একধরনের ‘ছদ্ম অর্থনীতি’র মতো। যেমন দুই মাসের রেমিট্যান্স আয় দিয়ে বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ করা, আমদানি খরচ বৃদ্ধির ফলে রাজস্ব আয় বৃদ্ধি।
বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় গরিব মানুষকে সুরক্ষা দেওয়ার কথা চিন্তা করলে বাজেট ঘাটতি বড় বিষয় নয়। এই শ্রেণির মানুষের জন্য প্রত্যক্ষ অর্থসহায়তা ও খাদ্যসহায়তার ব্যবস্থা রাখা দরকার। তাদের সুরক্ষা প্রতিষেধক হলো টিসিবির কার্যক্রম বিস্তৃত করা, খাদ্যমূল্য কমানো, এক কোটি পরিবারকে সহায়তা দেওয়া।
দ্বৈত বিনিময় হার অর্থনীতির জন্য সুবিধাজনক হয় না। সুদের হার ধরেবেঁধে রাখা উচিত নয়। আরেকটু নমনীয় বা মুক্ত করা উচিত। আবার ব্যক্তি খাতের ঋণপ্রবাহ বিঘ্নিত না করে সরকারি ঋণ নেওয়ার সুযোগ করতে হবে।