Originally posted in বণিকবার্তা on 29 June 2022
ড. ফাহমিদা খাতুন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক। যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডন থেকে ডিস্টিংশন নিয়ে সম্পদ ও পরিবেশ অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর এবং অর্থনীতিতে পিএইচডি সম্পন্ন করেন। যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থ ইনস্টিটিউটে পোস্ট-ডক্টরাল ও হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে নেতৃত্বের ওপর নিয়েছেন উচ্চতর প্রশিক্ষণ। কাজ করেছেন বিআইডিএস, ইউএসএআইডি ও ইউএনডিপিতে। সম্প্রতি প্রস্তাবিত বাজেটের নানা দিক নিয়ে বণিক বার্তার সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি।
সাক্ষাৎকার নিয়েছেন এম এম মুসা
করোনা ভালোভাবে মোকাবেলা করেছি। এবারে মূল্যস্ফীতি ও ডলার সংকটের মতো সমস্যা এসেছে। এবারের বাজেটে এগুলো কতটা গুরুত্ব পেল?
প্রথম কথা হলো, কভিড নেই—এ কথা আমরা পুরোপুরি বলতে পারব না। যদিও বাজেটে মনে করা হচ্ছে আমরা কভিড থেকে পরিত্রাণ পেয়ে গেছি। যেখানে বাজেটটির নামই দেয়া হচ্ছে কভিড-পরবর্তী বাজেট। গণমাধ্যমের খবরে আসছে কভিড সংক্রমণ আবারো বাড়ছে। কভিড-বিষয়ক স্বাস্থ্যবিধি ও সব ধরনের সতর্কতা পালন করতে হচ্ছে। সুতরাং আমরা একেবারে নিশ্চিত হতে পারছি না। কভিড থেকে কিছুটা পরিত্রাণ পাওয়া গেছে। কিন্তু পুরোপুরি নয়।
এদিকে কভিড পার হতে না হতেই নতুন অনেক সমস্যা এল। যেমন রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। প্রকৃতপক্ষে যুদ্ধের আগেই যখন বিশ্বের সর্বত্র অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড কিছুটা বাড়তে শুরু করে তখন সরবরাহ ব্যবস্থায় একটা বাধা সৃষ্টি হয়েছিল। ফলে পণ্য চলাচলের খরচ বেড়ে যায়। এর ওপর যুদ্ধের কারণে জ্বালানি তেল থেকে শুরু করে সবকিছুরই দাম অসম্ভব রকম বেড়ে গেল। এর অভিঘাত আমাদের দেশেও পড়েছে। আমাদের দেশে জ্বালানি তেল শতভাগ আমদানির ওপর নির্ভরশীল। এছাড়া নিত্যপ্রয়োজনীয় অনেক পণ্যও আমদানি করি আমরা। এর পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের ওপর মূল্যস্ফীতির চাপ অসম্ভব রকম হারে বেড়েছে। দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ওপর এর চাপ আরো অসমভাবে পড়েছে। কারণ কভিডে যারা চাকরি হারিয়েছেন, তারা কিছুটা ঘুরে দাঁড়ালেও আগের মতো তাদের অনেকেরই আয় নেই কিংবা সঞ্চয় যা ছিল তাও শেষ হয়েছে। সব মিলিয়ে তাদের অবস্থা সঙ্গিন। আর দরিদ্রের অবস্থা তো বলার অপেক্ষাই রাখে না।
মূল চ্যালেঞ্জগুলো কী?
চ্যালেঞ্জের মধ্যে অন্যতম হলো মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, ডলারের বাজার স্থিতিশীল করা, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ধরে রাখা। প্রথম বিষয় হলো মূল্যস্ফীতি। এটিই এখন সবচেয়ে বড় উদ্বেগ। আগামী অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি ধরা হয়েছে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে এটি ৭ শতাংশ ছাড়িয়েছে। যদিও সংখ্যা নিয়ে একটা বিতর্ক আছে। বাজারে যে পণ্যের মূল্য পরিস্থিতি, তার সঙ্গে এটা সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। টিসিবির দৈনিক পণ্যমূল্যের তালিকা দেখলে দেখা যায়, কোনো কোনো নিত্যপণ্যের দাম ৩০-৪০ শতাংশ বেড়ে গেছে। সুতরাং মূল্যস্ফীতির সরকারি হিসাবের সঙ্গে বাস্তবতার কোনো মিল নেই। সবচেয়ে বড় বিষয়, এখনকার সমস্যাটা বিশ্বে কতদিন চলবে তা অনেকটা অনিশ্চিত। তবে বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের মতো আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, এটা চলবে আরো কিছুদিন। বিশ্বের অনেক দেশই এখন মন্দার দিকে যাচ্ছে। একটা স্ট্যাগফ্লেশন হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। অর্থাৎ একদিকে মূল্যস্ফীতি বাড়বে, অন্যদিকে প্রবৃদ্ধি কমবে। বলা চলে, একটা কঠিন অবস্থা তৈরি হতে পারে, যা বিশ্ব সত্তরের দশকের পরে দেখেনি। আশঙ্কা করা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের মতো বড় অর্থনীতিও ২০২৩ সাল জুড়েই চ্যালেঞ্জের মধ্যে থাকবে। এখান থেকে আমরা কবে মুক্তি পাব তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।
আইএমএফ তাদের বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি প্রাক্কলন ৬ দশমিক ১ শতাংশ থেকে ৩ দশমিক ৫ শতাংশে নামিয়েছে। বিশ্বব্যাংকও তার প্রাক্কলন কমিয়েছে। তাহলে আমরা যে ৫ দশমিক ৬ শতাংশের মূল্যস্ফীতি বা ৭ দশমিক ৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির হিসাব করছি তা কিসের ভিত্তিতে করছি। আমরা যদি বলেই থাকি আমদানি মূল্যস্ফীতিই এখানে মূল, তাহলে সেটিই তো মূল্যস্ফীতির অনেকখানি নির্ধারণ করবে। আবার দেখুন, শুধু আমদানি মূল্যস্ফীতি নয়, দেশে উৎপাদিত পণ্যেরও দাম বেড়েছে। আমাদের বাজার ব্যবস্থাপনার এত দুর্বলতা এবং কিছু বাজারে একটা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী গোষ্ঠী এমন অন্যায়ভাবে দাম বাড়িয়ে দেয়, সেটা ভোক্তাদের ওপর ব্যাপক আর্থিক চাপ সৃষ্টি করে। আমদানি করা পণ্যের দাম বাড়লে তারা সেটির দাম বাড়িয়ে দেন। আবার দেশীয় পণ্যেরও দাম আরেক দফা বাড়ে। এর কারণ হলো বাজারে সুশাসন নেই। আমদানীকৃত পণ্যের দাম কমার কোনো লক্ষণ নেই। সুতরাং বাজারে মূল্যস্ফীতির চাপ থাকবেই। অর্থমন্ত্রী ৫ দশমিক ৬ শতাংশ মূল্যস্ফীতি কীভাবে নির্ধারণ করেছেন তা একেবারে বোধগম্য নয়।
চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় যথেষ্ট পদক্ষেপ আছে কী?
যদি মনে করা হয়, সারা বিশ্বে যা-ই হোক না কেন আমরা প্রবৃদ্ধি চালিয়ে যাব, এটা একেবারেই অমূলক। কারণ আমাদের অর্থনীতি এখন বিশ্বের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। আমরা তো বলছি, বিশ্বের সঙ্গিন অবস্থার কারণে আমাদের এখানেও তার প্রভাব পড়বে। দ্বিতীয় বিষয় হলো, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য কী কী পদক্ষেপ নেয়া হলো। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আমরা যদি মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে চাই তাহলে প্রথম কাজ হলো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের আমদানি শুল্ক কমানো। এক্ষেত্রে কিছুটা করছাড় দেয়া গেলে মূল্যস্ফীতি একটু নিয়ন্ত্রণ করা যেত। সেখানে সম্পূর্ণ করছাড় দিচ্ছি না আমরা। মাত্র দু-একটা পণ্যের ওপর করছাড় দেয়া হচ্ছে। ভোজ্যতেলের ওপর আগে কিছুটা কর কমানো হয়েছিল। কিন্তু খুব একটা সুবিধা হয়নি। আরেকটা বিষয় হলো, ভোজ্যতেলের মধ্যে সয়াবিনের দাম বাড়ার ফলে অনেকে কিন্তু পাম তেল ব্যবহার করছে। এর ওপর করছাড় হয়নি। তাই বাজেটের মধ্যে মোকাবেলার যে আর্থিক পদক্ষেপ তা দেখা যাচ্ছে না। ফলে আমদানিজনিত মূল্যস্ফীতির চাপটা থাকবে।
দ্বিতীয়ত, সরাসরি কিছু সহায়তার জন্য আর্থিক বরাদ্দ দেয়া যেত। শুধু দরিদ্র নয়, মধ্যবিত্তের জন্যও পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি অসহনীয় হয়ে উঠছে। তাদের জন্য স্বল্পমূল্যে রেশনিং ব্যবস্থা চালু করা, খোলাবাজারে পণ্য বিক্রির ব্যবস্থা বাড়ানো দরকার। খোলাবাজারের আওতা বাড়াতে হবে, যাতে অনেক মানুষ এর সুফল পায় এবং এতে আরো অধিক পণ্য অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
একই সঙ্গে নিরাপত্তাবেষ্টনীর সুফলভোগীদের সংখ্যা বাড়াতে হবে। তাদের ভাতা বাড়াতে হবে। দুঃখজনকভাবে সামাজিক নিরাপত্তার বাজেট জিডিপির তুলনায় এখনো অনেক কম। এ বছরে এ খাতে বরাদ্দ বেড়েছে মাত্র ১ দশমিক ৮৯ শতাংশ। কিন্তু এর মধ্যে আবার সরকারি কর্মচারীদের পেনশন অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। পুরো সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ এত কম বাড়লেও পেনশনের অংশটা বেড়েছে ২১ দশমিক ৮ শতাংশ। আবার যদি ভাগ করে দেখি, অনেক কর্মসূচির বরাদ্দ কমে গেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ হলো, খোলাবাজারে পণ্য বিক্রির জন্য বরাদ্দ ১১ দশমিক ৫ শতাংশ কমে গেছে।
এদিকে তিন বছর ধরে করমুক্ত আয়ের সীমা ৩ লাখ টাকা রাখা হয়েছে। এটা চাইলেই সাড়ে ৩ লাখ করা যেত, এমনকি ৪ লাখও করা যেত। তাতে এমন কিছু হতো না। বরং মানুষের উপকার হতো। সত্য যে রাজস্ব কিছুটা কমত। কিন্তু সরকার তো অনেককে নানাভাবে রাজস্ব সহায়তা দিচ্ছে। সেখান থেকেও তো কর আদায় কমে যাবে। মূল বেতনের বাইরে যে ভাতা থাকে, যেমন বাড়ি ভাড়া, যাতায়াত, স্বাস্থ্য প্রভৃতি ভাতার করমুক্ত সীমাটা সাড়ে ৫ লাখ থেকে ১০ লাখ টাকা করা হয়েছে। সেখান থেকেও সরকার কিছুটা করবঞ্চিত হবে। আবার বিভিন্ন বিনিয়োগে মানুষ যে কর রেয়াত পায়, সেটাও ১০ থেকে ১৫ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। সেখানে তো একটা স্বস্তি দেয়া হলো। সব মিলিয়ে স্বস্তির জায়গাটা হলো যারা ভালো অবস্থায় আছে তাদের জন্য। কিন্তু এটা তো দরিদ্র, নিম্নমধ্যবিত্তদের জন্য কোনো কাজে আসছে না। যাদের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন তারা তো পাচ্ছে না।
আমাদের দেশে করপোরেট কর বেশি। এ কারণে ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগ বাড়ছে না, বিদেশী বিনিয়োগ আসছে না। কাজেই করপোরেট কর কমানোর জন্য দাবি রয়েছে। কিন্তু এতে দরিদ্র জনগণ সরাসরি উপকৃত হবে না। একটা প্রবৃদ্ধিমুখী পদক্ষেপ এবং এর ফল পেতে কিছুটা সময় লাগবে। তাছাড়া এ মুহূর্তে কে বিনিয়োগ করবে এবং ফলাফল কতদিনে দেখব। তার চেয়ে বরং আগামী এক বছরের জন্য জরুরি ব্যবস্থাপনা দরকার।
তাই আমি মনে করছি না মূল্যস্ফীতি কমানোর জন্য আসলে যথেষ্ট আর্থিক পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। অন্যদিকে মনিটরিং ব্যবস্থার কথা বলা হচ্ছে। মুদ্রানীতির মাধ্যমে মূল্য নিয়ন্ত্রণ করা হবে। আমাদের দেশে তো মুদ্রানীতি খুব একটা কাজ করে না। বর্তমানে শুধু আমদানি ব্যয় নিয়ন্ত্রণের জন্য যদি মুদ্রানীতি ঠিক করি তাহলে সেটি একপক্ষীয় হয়ে যাচ্ছে। বরং কোন পণ্য আমদানি করা এখন দরকার এবং কোনগুলো এখন দরকার নেই, সেগুলো চিহ্নিত করে নিষেধাজ্ঞা দিতে পারি। চলতি অর্থবছরে রেমিট্যান্স প্রবৃদ্ধির হার ১৬ শতাংশ কমে গেছে। তাহলে কীভাবে আমরা বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের স্থিতিশীলতা বজায় রাখব। বাণিজ্য ঘাটতি বেড়েছে অনেক, বেড়েছে চলতি হিসাবের ঘাটতি। এসব ঘাটতি মিলে বহিঃখাতের ওপর প্রচণ্ড চাপ দেখা যাচ্ছে।
সরকার কী খাদ্যপণ্য বা জ্বালানি তেল মজুদে সঠিক পথে রয়েছে?
আমরা শুধু বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নিয়ে চিন্তা করছি। সরকারিভাবে খাদ্যের মজুদ বা ভোজ্যতেলের মজুদ নিয়ে চিন্তা করছি না। এসব মজুদ বাড়াতে অন্য সরকারগুলো কী করছে, সেটা দেখছি না। কেবল বলছি, আমাদের প্রবৃদ্ধি হচ্ছে, মূল্যস্ফীতি কমবে, বিনিয়োগ বাড়বে ইত্যাদি। সেগুলো নিয়ে মোহগ্রস্ত হয়ে আছি। কিন্তু চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য প্রস্তুতি পর্যাপ্ত নয়। এখানে সংবেদনশীল চিন্তাভাবনার যথেষ্ট অভাব রয়েছে। আমাদের রিজার্ভের পরিমাণ কিছুটা কমেছে। কিন্তু তার পরও এখনো ভালো অবস্থায় আছে। সেটা দিয়েই আমাদের খাদ্যদ্রব্য ও জ্বালানিপণ্য আনার প্রস্তুতি নিতে হবে। দ্বিতীয় বিষয় হলো ব্যবস্থাপনা। এটা সামগ্রিক প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা, ব্যবস্থাপনা ও সুশাসনের ওপর নির্ভরশীল। যাতে আমরা দুর্নীতিমুক্তভাবে খাদ্য ও পণ্যের মজুদ ব্যবস্থাপনা করতে পারি। তার জন্য যারা দায়িত্বপ্রাপ্ত তাদের আরো সক্রিয় হতে হবে। শুধু বাজার তদারক করলে, হঠাৎ হঠাৎ কোথাও গিয়ে পরিদর্শন কার্যক্রম চালিয়ে তেমন সুফল পাওয়া যায় না। বাজার কারা কারা নিয়ন্ত্রণ করছে—এটা ক্ষুদ্র একটা গোষ্ঠী—সেটি সরকার জানে। তাদের বিরুদ্ধে তো কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয় না। বাজারে ঘুরে ঘুরে দেখার দরকার নেই। অনিয়ম করতে গিয়ে কেউ যদি ধরা পড়ে, তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিলে অন্যরাও সতর্ক হবে। বাজারে চলমান অব্যবস্থাপনা বন্ধ করতে না পারলে সুফলটা পাওয়া যাবে না। তবে হ্যাঁ, পাশাপাশি যথেষ্ট সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। এটিই সরকারের প্রাধিকার হওয়া উচিত।
শিক্ষা-স্বাস্থ্যে বরাদ্দ সম্পর্কে আপনার মত কী?
শিক্ষা-স্বাস্থ্য বাজেটে কোনো উন্নতি নেই। কভিডে স্বাস্থ্য খাতের ভঙ্গুরতা প্রকাশ পেয়েছে। সেটি যথাযথভাবে গুরুত্ব পায়নি। স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ এখনো জিডিপির ১ শতাংশের নিচে। আর শিক্ষা খাতে বাজেট বরাদ্দ জিডিপির মাত্র ২ শতাংশের মতো। শিক্ষা একটি জটিল সময় পার করছে। কভিড শিক্ষার মানটা অনেক কমিয়ে দিয়েছে। অনেক শিক্ষার্থী ঝরে পড়েছে। শিক্ষার ক্ষতি পোষানোর জন্য এ খাতে আরো অর্থ ও উদ্যোগ প্রয়োজন। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাত হলো গুণগত অবকাঠামো, যা মানবসম্পদ উন্নয়নের সঙ্গে জড়িত। সেখানে যদি সম্পদ বরাদ্দ বাড়ানো না যায় এবং সম্পদের যথাযথ ব্যবহার না করা যায় তাহলে জাতি কীভাবে এগোবে। মানবসম্পদের অবক্ষয় রোধে এ দুটি খাতকে আর উপেক্ষা করা যাবে না। তাহলে আমাদের উন্নয়ন টেকসই হবে না।
রাজস্ব ব্যয়ের একটি বড় অংশ চলে যাচ্ছে জনপ্রশাসনের জন্য। এক্ষেত্রে আপনার অভিমত কী?
এখন প্রয়োজন মূল্যস্ফীতির চাপ কমানো, চাহিদা বৃদ্ধি এবং ব্যয়ের মধ্যে একটা রাশ টানা। সুচারুভাবে ব্যয় করা। সরকারি ব্যয় কোনো কোনো ক্ষেত্রে দরকার, যাতে সামষ্টিক চাহিদা একেবারে পড়ে না যায়। পণ্য আছে চাহিদা নেই, মানুষের হাতে টাকা নেই, সেটি হলে আবার অর্থনীতিতে তেজি ভাব আসবে না। চাহিদা বাড়ানোর অন্যতম উপায় হলো সরকারি ব্যয়। তবে সরকারি ব্যয় অনেক চিন্তাভাবনাপূর্বক করতে হবে। উৎপাদনের সঙ্গে সম্পর্ক নেই, সেসব ব্যয় কমিয়ে ফেলতে হবে। এবারের বাজেটে দেখবেন জনপ্রশাসনের বরাদ্দ সবচেয়ে বেশি। এখানে কোথায় কোথায় ব্যয় হচ্ছে তা দেখতে হবে। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন তো আর কমানো যাবে না। কারণ মূল্যস্ফীতির চাপ তাদের ওপরও পড়বে। কিন্তু যেখানে কমানো সম্ভব যেমন গাড়ি, বিদ্যুৎ খরচ, বিদেশ ভ্রমণ, বিনোদন খরচ প্রভৃতি কমাতে হবে। আমরা দেখেছি গাড়ির অপারেশনাল ব্যয় অনেক জায়গায় শ্বেতহস্তীর মতো। এটা বন্ধ করতে দৃঢ় ঘোষণা আসা এবং তার সত্যিকার বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে। আর প্রকল্পের ক্ষেত্রেও সতর্ক হতে হবে। কম প্রয়োজনীয় প্রকল্প হলে, চলমান না থাকলে কিংবা মানুষের আয় ও কর্মসংস্থানের ওপর তেমন প্রভাব না পড়লে ওই ধরনের প্রকল্প স্থগিত রাখতে হবে।