Originally posted in কালের কন্ঠ on 10 May 2024
ডলারের মূল্য ও সুদহার বৃদ্ধির প্রভাবে মূল্যস্ফীতিতে নেতিবাচক অভিঘাত থাকবে। এই পরিস্থিতি মোকাবেলায় এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি বাজার ব্যবস্থাপনা আরো জোরদার করতে হবে। সামষ্টিক অর্থনীতির উৎকর্ষে আরো বেশি নজর দিতে হবে।
বাজারভিত্তিক সুদহার নির্ধারণে ঋণের সুদ আপাতত আরো বেড়ে যাবে। ডলারের বিনিময় হার নির্ধারণের ক্রলিং পেগ পদ্ধতি চালু করা হয়েছে। একই সঙ্গে ডলারের দাম বাড়ানো হয়েছে—এটা ঠিক। যদিও আগে বাংলাদেশ ব্যাংক নির্ধারিত ডলারের দর ১১০ টাকা ছিল, তখন ব্যাংকগুলো থেকে ১১৭-১১৮ টাকায় কিনতে হয়েছে।
এই দর সমন্বয় করতে ডলারের মূল্য বাড়ানো হয়েছে। এখন নতুন সিদ্ধান্তের পর তাৎক্ষণিকভাবে খোলাবাজারে ডলারের দাম ১২৪-১২৫ টাকা উঠলেও তা আবার নেমে আসবে।
এই মুহূর্তে অর্থনৈতিক সংকট উত্তরণে এটা ছাড়া বিকল্প উপায় ছিল না। দেশের প্রয়োজনে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
তবে এই সিদ্ধান্ত অনেক আগে নেওয়ার জন্য আমরা বলে আসছি। তখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদের হার নিয়ন্ত্রণ করতে আমানতের সুদ ৬ শতাংশ এবং ঋণের সুদ সর্বোচ্চ ৯ শতাংশে বেঁধে রেখে ছিল। ডলারের দাম দীর্ঘদিন আটকে রাখায় সমন্বয় হয়নি। যার বিরূপ প্রভাব এখন পড়ছে। এই সিদ্ধান্ত আগে নেওয়া হলে অর্থনৈতিক ভারসাম্য অনেক নিচে থাকত।
মূল্যস্ফীতির বিরূপ প্রভাব এতটা পড়ত না। কম আয়ের মানুষের ওপর চাপ কম হতো।
এখন ডলারের মূল্যবৃদ্ধিতে আমদানি পণ্যে মূল্যস্ফীতি কিছুটা বাড়াবে, যা ভোক্তাদের আরো চাপে ফেলবে। তবে যারা আগে থেকে ১১৭-১১৮ টাকা দরে আমদানি করেছে, সেখানে এখন মূল্যস্ফীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার কথা নয়। সরকার ১১০ টাকা ডলারে যেসব পণ্য এত দিন আমদানি করেছে, সেখানে সাত টাকা বেড়ে যাওয়ার চাপ থাকবে, এটা সত্যি। তবে নতুন করে ডলারের দামে অস্থিরতা তৈরি না হয় সেদিকে এখন নজর দিতে হবে। ডলারের নেতিবাচক প্রভাবে মূল্যস্ফীতির অভিঘাতে আমাদের পড়তে হবে। এ ক্ষেত্রে বাজার মনিটরিং জোরদার করতে হবে। এখন থেকে পরিস্থিতি মোকাবেলায় বাজার ব্যবস্থাপনা ও প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বাড়ানো জরুরি। এ ছাড়া সুশাসন নিশ্চিত করে সামগ্রিকভাবে অর্থনৈতিক ভারসাম্য আনতে সরকারের বড় ভূমিকা নেওয়ার এখনই সময়।
মধ্যমেয়াদে মূল্যস্ফীতি কমাতে উৎপাদন বাড়াতে এবং বাজারে পণ্য সরবরাহ পর্যাপ্ত নিশ্চিত করতে আরো জোরালো পদক্ষেপ নিতে হবে। শিল্পের উৎপাদনশীলতা বাড়াতে সহায়ক সহযোগিতা দিতে হবে। পণ্যের জোগান ও চাহিদার মধ্যে ভারসাম্য এনে মনিটরিং জোরদার করলে বাজার সহনীয় পর্যায়ে আসবে।
সুদহার বেড়ে যাওয়ায় বেসরকারি খাতে ব্যয় বৃদ্ধির চাপ তৈরি হবে। এতে যেমন বিনিয়োগ কমবে। পাশাপাশি ঋণ পরিশোধের ব্যয় বেড়ে যাবে। ফলে কর্মসংস্থানে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এ জন্য ব্যবসার পরিচালন ব্যয় কমানো ও ব্যবসা প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বাড়াতে সহযোগিতা লাগবে। এটি করতে পারলে নেতিবাচক প্রভাব মোকাবেলা কিছুটা সহনীয় পর্যায়ে থাকবে। এ ক্ষেত্রে সরকার উদ্যোগী হলে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের নেতিবাচক প্রভাব কিছুটা প্রশমিত করা যাবে।
সরকারের এই পদক্ষেপে একদিকে যেমন নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। অন্যদিকে কিছুটা সুবিধা মিলবে। যারা সঞ্চয় করবে তারা প্রণোদনা বেশি পাবে। রপ্তানিকারকরা বেশি মুনাফা পাবেন। রেমিট্যান্সে প্রণোদনা হবে, যা বৈধ পথে রেমিট্যান্স বাড়াতে সহায়ক হবে। তবে আমদানি পণ্যে নেতিবাচক প্রভাব থাকবে।
লেখক : বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো।