Originally posted in The Business Standard on 7 July 2024
“আমাদের দেশের মূল সমস্যা হলো, বাজেট বাস্তবায়ন হচ্ছে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কাঠামোর মধ্য দিয়ে— যেখানে রাজনৈতিক জবাবদিহিতা থাকেনা, সেখানে ভালো কিছু আশা করা বাতুলতা,” বলেন ড. ফাহমিদা খাতুন।
বাজেটের মূল লক্ষ্য হলো, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং পর্যাপ্ত পরিমাণ খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করে সাধারণ মানুষকে স্বস্তি দেওয়া। কিন্তু চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে মূল্যস্ফীতি কমানো ও খাদ্য সরবরাহ বাড়িয়ে সাধারণ মানুষের স্বস্তি দেওয়ার দিক নির্দেশনা নেই বলে মনে করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন।
ফোরাম ফর বাংলাদেশ স্টাডিস কর্তৃক আয়োজিত ‘বাজেট ২০২৪-২৫: কেমন হবে অর্থনীতির আগামী দিনগুলো’ শীর্ষক ওয়েবিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, “আমরা দেখছি, নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য খোলা বাজারে খাদ্যশস্য বিক্রয় (ওএমএস) যথেষ্ট পরিমাণে কমে গেছে। এছাড়া, সার্বিক খাদ্য বিষয়ক কর্মসূচি নেতিবাচক অবস্থানে রয়েছে।”
“আমাদের দেশের মূল সমস্যা হলো, বাজেট বাস্তবায়ন হচ্ছে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কাঠামোর মধ্য দিয়ে— যেখানে রাজনৈতিক জবাবদিহিতা থাকেনা, সেখানে ভালো কিছু আশা করা বাতুলতা,” বলেন ড. ফাহমিদা খাতুন।
তিনি আরও বলেন, “যত ভালো অর্থনৈতিক নীতিমালা প্রণীত হোক না কেন– সাধারণ মানুষের কষ্টকে প্রাধিকার দেওয়া হয়না। যেখানে জবাবদিহিতার ঘাটতি থাকে, সেখানেই অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলো দুর্বল হয়ে পড়ে।”
তিনি বলেন, “বাজেট শুধু আয়-ব্যয়ের হিসাব না, এর মাধ্যমে ন্যায্যতার কথাও বলা যায়। আয় ব্যয়ের বৈষম্য ও সমাজের বৈষম্য দূর করা যায়।”
“বাজেটে এমপিদের গাড়ির ওপর কর আরোপের প্রস্তাব বাতিল করে দেওয়া হলো। অথচ সংসদে যারা অবস্থান করছেন, তারা নিজেরাই অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী।”
“আমাদের রপ্তানির ডেটা মেলাতে গিয়ে দেখা গেছে, বিরাট একটা গরমিল। এটা আমাদের দেশের সরকারের তথ্য নিয়ে উদাসিনতার বহিঃপ্রকাশ।”
“ভুল তথ্যের ভিত্তিতে নীতিমালা প্রণয়ন করবেন, সেটাই তো ভুল। আমরা দেখছি আমাদের জিডিপি এত ভালো, কিন্তু সেখানেও বিভ্রান্ত রয়ে যায়। জিডিপির প্রবৃদ্ধিটা কোথা থেকে আসছে, সেটা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে,” যোগ করেন তিনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর বলেন, “সাংবাদিকদের উচিত পরিকল্পনা ও অর্থমন্ত্রীর কাছে জিজ্ঞাসা করা যে, প্রায় ১৪ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি সংক্রান্ত তথ্যের ভুল সংশোধন করে কবে জিডিপির সংশোধিত তথ্য প্রকাশ করা হবে।”
ওয়েবিনারে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন সিডনি পলিসি অ্যানালাইসিস সেন্টারের আন্তর্জাতিক বিষয়ক পরিচালক জ্যোতি রহমান। তিনি বলেন, “বাংলাদেশ সরকারে তথ্য নিয়ে মানুষের কাছে যথেষ্ট পরিমাণ প্রশ্ন রয়েছে। এমন প্রশ্ন ওঠাটাই স্বাভাবিক, কারণ দেশের ১৪ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি সংক্রান্ত তথ্যের গরমিল এখন সামনে এসেছে।”
“আমরা সরকারের দেওয়া তথ্য কতটা ট্রাস্ট করব, কতটা মূল্যায়ন করবো- তা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়,” যোগ করেন তিনি।
এই বিশ্লেষক আরও বলেন, “আওয়ামী লীগ সরকার যখন ক্ষমতায় আসে, তখন বাজেট ঘাটতি ছিল জিডিপির ২.৫ শতাংশ, প্রাথমিক ব্যয় ছিল জিডিপির ১ শতাংশের নিচে। ২০১৬-১৭ অর্থবছর থেকে ২০২১-২২ অর্থবছর পর্যন্ত আমরা বাজেট ঘাটতি ৩ শতাংশের নিচে লক্ষ্য করছি— যেখানে প্রাথমিক ঘাটতি থাকছে ১.৫ শতাংশের নিচে।”
“২০১৭ সাল থেকে ঘাটতি বাড়তে শুরু করে, কোভিড-১৯ মহামারির আগে তা জিডিপির ৪.৫ শতাংশে পৌঁছায়। মহামারির আগে এই পরিমাণ ঘাটতি বৃদ্ধির মূল কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন উন্নয়ন ব্যয়, ভর্তুকি, অনুদান ও স্থানান্তর সংক্রান্ত বিষায়াদি ,” বলেন জ্যোতি রহমান।
তিনি আরও বলেন, “তবে, কোভিড-পরবর্তী বাজেটে, অনুন্নয়ন-মূলক ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় আমাদের ঘাটতি আরও বেড়েছে।”
জ্যোতি রহমান বলেন, সরকারের রাজস্ব আদায়ের প্রায় ২০ শতাংশ যায় দেশি-বিদেশি ঋণের সুদ পরিশোধে; ৪০ শতাংশ ভর্তুকি, অনুদান ও স্থানান্তরে; ২০ শতাংশ যায় সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন এবং বাকি ২০ শতাংশ দিয়ে অন্যান্য অনুন্নয়ন-মূলক ব্যয় মেটানো হয়।
“বাজেটের তথ্য পর্যবেক্ষণ করলে এটা স্পষ্ট হয়ে যায় যে, ২০২১ অর্থবছর এবং ২০২৪ অর্থবছরের মধ্যে আমাদের জিডিপি ১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এই প্রবৃদ্ধির অর্ধেক— যার পরিমাণ ৪২৯ বিলিয়ন টাকা— ব্যয় করা হয়েছে ভর্তুকিতে। বিশেষ করে, এই সময়ে বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের (পিডিবি) ভর্তুকি বেড়েছে ২৬১ বিলিয়ন টাকা,” বলেন তিনি।
জ্যোতি রহমান আরও জানান, “প্রণোদনার ক্ষেত্রে জিডিপির ০.৩ শতাংশ বৃদ্ধির পরিমাণ ২০২১ অর্থবছর থেকে ২০২৪ অর্থবছরের মধ্যে ২২০ বিলিয়ন টাকায় পৌঁছেছে; এখানে কৃষিতে বরাদ্দ করা হয়েছে ১৭৩ বিলিয়ন টাকা। ভর্তুকি বৃদ্ধি আগামী দিনের বাজেট ঘাটতিতে অবদান রাখার একটি প্রধান কারণে পরিণত হতে পারে।”