Originally posted in কালের কন্ঠ on 1 March 2024
বিদ্যুতের যে মূল্য বৃদ্ধি করা হয়েছে, সেটি প্রত্যাশিত নয়। এর মাধ্যমে আবাসিক গ্রাহকের যেমন ব্যয় বাড়বে, শিল্প-কারখানাগুলোরও উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাবে। কৃষি খাতে সেচকাজে এবং সেবা খাতেও ব্যয় বাড়বে।
বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি শুধু এই একবারই হচ্ছে না, এটি ধাপে ধাপে আগামী বেশ কিছু কাল বাড়বে।
ক্রমে বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির ধাক্কা পোহাতে হবে। উচ্চ মূল্যস্ফীতির মধ্যে বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির ঘটনাটি খুবই দুূর্ভাগ্যজনক। এটি খাদ্য মূল্যস্ফীতি ও খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি উভয় ক্ষেত্রেই প্রভাব ফেলবে।
বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর কারণ হিসেবে একটি ভুল ব্যাখ্যা দেওয়া হচ্ছে।
বলা হচ্ছে, ভর্তুকি কমিয়ে আনার জন্যই বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি দরকার। মূলত ভর্তুকি কমিয়ে আনতে মূল্যবৃদ্ধি না করলেও চলত। ক্যাপাসিটি পেমেন্টের জন্যই যেহেতু ভর্তুকির সৃষ্টি, তাই সরকারের উচিত ধীরে ধীরে ক্যাপাসিটির জায়গা থেকে সরে আসা। বিদ্যুৎ খাতে যে ভর্তুকি বা লস দিতে হচ্ছে, সেটি মূলত ক্যাপাসিটি পেমেন্টের জন্যই বহন করতে হচ্ছে।
উচ্চ ভর্তুকির জন্য তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসও (এলএনজি) দায়ী। সরকার এলএনজি আমদানিতে নজর কমিয়ে দেশীয় যেসব কূপে এরই মধ্যে গ্যাস পাওয়া গেছে, সেগুলো থেকে দ্রুত গ্যাস উত্তোলন করে সরবরাহ করতে পারত। নো ইলেকট্রিসিটি, নো পেমেন্ট নীতিতে পুরনো এবং নতুন সব বিদ্যুৎকেন্দ্রে সরকারের চুক্তিবদ্ধ হওয়া উচিত। একই সঙ্গে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বাড়িয়েও সরকার ভর্তুকি থেকে বেরিয়ে আসতে পারে। তাহলে আর মূল্যবৃদ্ধির খড়্গটি ভোক্তার ওপর পড়ে না।
অন্যদিকে সরকার যদি আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে জ্বালানি তেলের মূল্য সমন্বয় করে বিদ্যুতের মূল্য সমন্বয় করত, তাহলেও আমার ধারণা বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির বিষয়গুলোতে অন্য রকম হিসাব আসত।
ভর্তুকি সমন্বয়ের কথা বলে বিদ্যুতের যে দাম বাড়ানো হয়েছে, সেটি ক্যাপাসিটি পেমেন্টের জায়গাকে সমন্বয় করার মাধ্যমে হওয়ার কথা ছিল। কারণ ভোক্তার দায় এখানে খুব কম। এর পরও এখানে ভোক্তাকে এই দায়গ্রস্ত করা হচ্ছে। বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধিতে উৎপাদন ব্যয়সহ সব কিছুতে ব্যয় বৃদ্ধির ঘটনাটি আসলে অনাকাঙ্ক্ষিত।
লেখক : ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক।