Originally posted in সমকাল on 11 July 2021
বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) মধ্যস্থতায় স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) জন্য বাণিজ্য সম্পর্কিত মেধাস্বত্ব অধিকার (ট্রিপস) পরিপালন বিষয়ে অব্যাহতির মেয়াদ আরও ১৩ বছর সম্প্রতি বাড়ানো হয়েছে। এলডিসিগুলো ২০৩৪ সালের ১ জুলাই পর্যন্ত সময় পেয়েছে। অন্যদিকে ওষুধশিল্প সম্পর্কিত নিয়ম পরিপালনে অব্যাহতি আগে রয়েছে ২০৩২ সাল পর্যন্ত। ২০২৬ সালে বাংলাদেশ এলডিসি থেকে বের হলে দুই ক্ষেত্রেই সুবিধা থাকার কথা নয়। বাংলাদেশসহ এলডিসি থেকে উত্তরণকারী দেশগুলো যাতে উত্তরণের পর বাড়তি ১২ বছর সময় পায়, তা নিয়ে এ মাসের শেষের দিকে ডব্লিউটিওর সাধারণ পরিষদের বৈঠকে আলোচনা হবে। অর্থনীতিবিদ ও গবেষণা সংস্থা সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য মনে করেন, বাংলাদেশের জন্য বাড়তি এ সুবিধা আদায়ে জোরালো তদবির করতে রাজনৈতিক উদ্যোগ দরকার।
ট্রিপস নিয়ে সাম্প্রতিক সিদ্ধান্ত এবং এলডিসি থেকে উত্তরণকারী দেশের জন্য প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে সাংবাদিকদের সঙ্গে এক আলাপচারিতায় তিনি এমন মত দেন। প্রসঙ্গত, ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য জেনেভাতে জাতিসংঘ, ডব্লিউটিও এবং আন্তর্জাতিক অন্যান্য সংস্থার জন্য বাংলাদেশের সাবেক স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত। বর্তমানে তিনি জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসির (সিডিপি) সদস্য। এ কমিটি এলডিসি থেকে উত্তরণের জন্য সুপারিশ করে থাকে।
ড. দেবপ্রিয় বলেন, আগামী ২৬ ও ২৭ জুলাই ডব্লিউটিওর সাধারণ পরিষদের বৈঠক। বৈঠকটি বাংলাদেশের জন্য বিশেষত ওষুধ খাতের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। ওষুধের ক্ষেত্রে মেধাস্বত্ব চুক্তি পরিপালনে যেসব অব্যাহতি রয়েছে, তার সুফল এলডিসি হিসেবে বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি পাচ্ছে। এলডিসি না থাকলে এ সুবিধা আরও ১২ বছর রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। সাধারণ পরিষদে এ বিষয়ে সমঝোতা না হলে এ বছরের শেষের দিকে জেনেভাতে মন্ত্রিপর্যায়ের বৈঠকে যা অন্যতম এজেন্ডা হবে। সাধারণ পরিষদের বৈঠকের সময় আছে মাত্র দুই সপ্তাহ। এই স্বল্পতম সময়ের মধ্যেই বড় ধরনের তদবির করতে হবে। শুধু জেনেভা মিশনের দরকষাকষির ওপর নির্ভর করলে হবে না, রাজনৈতিক প্রচেষ্টা নেওয়াও খুব গুরুত্বপূর্ণ। ঢাকা থেকে এক্ষেত্রে সমন্বয় জোরদারের চেষ্টা চালাতে হবে। এ প্রক্রিয়ায় বড় বড় দেশে বাংলাদেশের দূতাবাসগুলোকে সম্পৃক্ত করা যেতে পারে।
ওষুধশিল্পে মেধাস্বত্ববিষয়ক চুক্তি পরিপালন করতে গেলে বাংলাদেশের ওপর সম্ভাব্য প্রভাব সম্পর্কে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ওষুধ আমদানির ওপর বর্তমানে যে নিয়ন্ত্রণ রয়েছে, তা তুলে নিতে হবে। ছোট ওষুধ কোম্পানির ওপর প্রতিযোগিতার চাপ বাড়বে। পেটেন্ট আছে এমন ওষুধের ক্ষেত্রে ফি দিতে হবে। স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত ওষুধের দাম বেড়ে যাবার চাপ তৈরি হবে। এছাড়া ওষুধের কাঁচামাল (এপিআই) উৎপাদনের উদ্যোগ বাধাগ্রস্ত হবে। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার আগামী মন্ত্রিপর্যায়ের সম্মেলনে বাংলাদেশকে এলডিসি অবস্থানের বাইরে গিয়ে নিজস্ব প্রস্তাবও দিতে হবে। এলডিসি থেকে উত্তরণ-পরবর্তী পর্যায়ে নিজের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ঘোষণা করতে হবে এবং সে অনুযায়ী আন্তর্জাতিক সমর্থন চাইতে হবে।
কভিড সম্পর্কিত অব্যাহতি :ড. দেবপ্রিয় জানান, ডব্লিউটিওতে বর্তমানে ট্রিপসের আওতায় কভিডবিষয়ক ছাড় নিয়ে আরেকটি প্রস্তাবের আলোচনা চলছে। ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকা এ বিষয়ে প্রস্তাব দিয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে, কভিডকে বিবেচনায় নিয়ে স্বাস্থ্য সম্পর্কিত পণ্য ও প্রযুক্তি উৎপাদনে মেধাসম্পদ সুরক্ষা-সংক্রান্ত সকল প্রতিশ্রুতির ক্ষেত্রে অন্তত তিন বছর অব্যাহতি দিতে হবে। যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যে এ প্রস্তাবে সমর্থন দিয়েছে। ইইউ বিবেচনা করতে রাজি হয়েছে। ৬০টির বেশি দেশ এ প্রস্তাবে সমর্থন দিয়েছে। বাংলাদেশের উচিত এ প্রস্তাব পর্যালোচনা করা এবং সেখান থেকে নিজে কোন সুবিধা পেতে পারে তা খতিয়ে দেখে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া।
একপেশে মনোযোগ :ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য মনে করেন, বাংলাদেশে যত ধরনের আলোচনা হয়, তার বেশিরভাগই অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য সুবিধাকেন্দ্রিক অর্থাৎ এলডিসি থেকে বের হলে কতদিন শুল্ক্কমুক্ত সুবিধা ধরে রাখা যাবে। বহুমুখী আলোচনা খুব কম হয়। নতুন পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর প্রস্তুতির জন্য আলোচনা কম হয়। উত্তরণ নিয়ে আলোচনায় বাংলাদেশের প্রণোদনার প্রতি আসক্তি বেশি। উৎপাদনশীলতা এবং বৈচিত্র্যকরণের ওপর আলোচনা কম হয়। তিনি বলেন, এলডিসি থেকে উত্তরণের আলোচনায় মেধাসম্পদের আলোচনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রে মেধাস্বত্ব বিশেষজ্ঞদের মেধা, দক্ষতা ও অভিজ্ঞতাকে অবশ্যই কাজে লাগাতে হবে।