Dr Debapriya Bhattacharya speaks to Bangladesh Pratidin concerning the Indian Prime Minister’s visit to Bangladesh, published on Tuesday, 2 June 2015.
মোদির সফর দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে নতুন সোপান: ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য
জুলকার নাইন
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফর বাংলাদেশ ও ভারতের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে নতুন সোপান বলে মন্তব্য করেছেন স্বনামখ্যাত অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তবে তিনি বলেছেন, দুই দেশের কানেকটিভিটির চুক্তিগুলো বিচ্ছিন্ন ভাবে না হয়ে সমন্বিত কাঠামোর আওতায় হলে পুরো সুফল পাওয়া যেত। এ ছাড়া এখনো মাশুল ও প্রয়োজনীয় বিনিয়োগের বিষয়গুলো অস্বচ্ছ রয়েছে। গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে এসব কথা বলেন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয়।
জাতিসংঘে বাংলাদেশের সাবেক স্থায়ী প্রতিনিধি ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফর নিঃসন্দেহে ইতিবাচক। এটি বাংলাদেশ ও ভারতের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে নতুন সোপান হয়ে থাকবে। এই সম্পর্কের ভিত্তি রচিত হয়েছে দুই দেশের ভিতরে নিরাপত্তা সম্পর্কিত বিভিন্ন জটিল প্রশ্নের ক্ষেত্রে আস্থা সৃষ্টির ফলে। ভারতের বিভিন্ন বিচ্ছিন্নতাবাদী ও উগ্রপন্থিদের যারা বাংলাদেশে আশ্রয় পেয়েছে বলে অভিযোগ করা হয় সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকার যে সদিচ্ছা দেখিয়েছে তা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে আস্থায় এনেছে। এই আস্থা আরও বেড়েছে স্থলসীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া চূড়ান্ত হওয়ায়।
আরেকটি লক্ষণীয় বিষয়, ভারতকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের রাজনীতিতে যে বিপরীতমুখী স্রোত ছিল তা আগের চেয়ে এখন কমে এসেছে। অনেক ক্ষেত্রে দ্বিদলীয় ঐকমত্যও দেখা যাচ্ছে। এটা অত্যন্ত আশার বিষয়। এই অর্থনীতিবিদ বলেন, আগামী দিনগুলোতে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কে যোগাযোগ বিশেষ গুরুত্ব পেতে যাচ্ছে। যোগাযোগের ক্ষেত্রে আগে নৌ চলাচলে দুই দেশের মধ্যে একটি চুক্তি ছিল। এখন তার আওতা বাড়িয়ে দুই দেশের বাইরে তৃতীয় দেশকে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে।
এর ফলে বাংলাদেশ ও ভারত ছাড়া তৃতীয় দেশে নৌপথে পণ্য আনা-নেওয়া করা যাবে। আবার উপআঞ্চলিক সহযোগিতার মাধ্যমে ভারতের ভিতর দিয়ে ভুটান ও নেপালে যাওয়ার একটি নির্ভরযোগ্য পথ বা করিডর বাংলাদেশ পেতে পারে। ভারতও বাংলাদেশের ভিতর দিয়ে তার এক অংশ থেকে আরেক অংশে যেতে যাচ্ছে। এখানে লক্ষণীয়, এক দেশ আরেক দেশের ভিতর দিয়ে তৃতীয় দেশে যাবে সেটা ঠিক আছে। কিন্তু কোনো দেশ যখন আরেক দেশের ভিতর দিয়ে আবার নিজ দেশেই যাবে সেক্ষেত্রে কোনো মাশুল নির্ধারণ করা হবে কিনা তা একটি প্রশ্ন।
মাশুল নির্ধারণের বিষয়টি এখনো অস্পষ্ট রয়ে গেছে। কারণ বাংলাদেশ অবশ্যই তার ভূ-রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক কৌশলগত অবস্থানকে ব্যবহার করে সেবা বিক্রি করে উপার্জনের কথা বলবে। তিনি বলেন, স্থল যোগাযোগের সঙ্গে সমুদ্র বন্দরগুলো ব্যবহারের আরেকটি চুক্তি হতে যাচ্ছে। এটি নিঃসন্দেহে ইতিবাচক। আগে তৃতীয় দেশে বন্দর ব্যবহার করে আমদানি-রপ্তানি করতে হতো। এখন নতুন চুক্তির ফলে খরচ কমবে।
ড. দেবপ্রিয় বলেন, এই মুহূর্তে দুটি দুশ্চিন্তা কাজ করছে। প্রথমত, বিচ্ছিন্নভাবে বিভিন্ন ধরনের যোগাযোগ চুক্তি হচ্ছে। এটি কোনো সমন্বিত কাঠামোর অধীনে হচ্ছে না। আবার এর পরিচালনার কোনো প্রাতিষ্ঠানিক প্রস্তুতিও দেখা যাচ্ছে না। পুরো ব্যবস্থার সুফল নেওয়ার জন্য যে দক্ষতা, নীতিকাঠামো দরকার তার পূর্ণাঙ্গ রূপ আমরা দেখিনি। সেজন্য আমরা যোগাযোগ বা ট্রানজিটের ক্ষেত্রে এই বিচ্ছিন্ন চুক্তির বাইরে একটি সামগ্রিক চুক্তির পক্ষপাতী।
দ্বিতীয়ত, যোগাযোগ কাঠামোর পূর্ণাঙ্গ সুযোগ নিতে অবকাঠামোতে যে বড় ধরনের বিনিয়োগ দরকার সে বিষয়েও কোনো অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না। কোনো আলোচনাও দেখা যাচ্ছে না। সমীক্ষায় দেখা গেছে, রাস্তা-ঘাটে বর্ধিত যান চলাচল নিশ্চিত করতেই অন্তত ৬-৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ লাগবে। তিনি বলেন, সমন্বিত কাঠামোর মধ্যে মাশুল ও বিনিয়োগের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত হতেই পারত। তাতে পূর্ণাঙ্গ সুফল পাওয়াটা নিশ্চিত হতো।
দেবপ্রিয় বলেন, ভারতের পক্ষ থেকে আগে ১ বিলিয়ন ডলার ঋণ দেওয়ার ঘোষণা করা হয়েছিল। এর মধ্যে ২০০ মিলিয়ন ডলার পদ্মা সেতুর ক্ষেত্রে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বাকি টাকা ব্যবহারের ক্ষেত্রে আমরা অত্যন্ত স্লথ গতি দেখেছি। অনেক ক্ষেত্রেই ভারত থেকেই শুধু আমদানি করার শর্তের কারণে এটি ব্যবহারের ক্ষেত্রেও প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়েছে। ওই ঋণের অধীনের যে অবকাঠামো উন্নয়নের প্রকল্প নেওয়া হয়েছিল যেমন- আখাউড়া-আশুগঞ্জ সড়ক বা রূপসা থেকে মংলা বন্দরের ক্ষেত্রে খুব একটা অগ্রগতি দেখা যায়নি। সেজন্য আগামীতেও ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বা অন্য কোনো ঋণ এলে সেগুলোর ব্যবহারে আরেকটু স্বচ্ছতা দরকার।