Originally posted in আমাদের সময় on 18 August 2025
অভ্যন্তরীণ চ্যালেঞ্জই রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রার প্রধান বাধা
নতুন লক্ষ্যমাত্রা ৬৩.৫ বিলিয়ন ডলার
চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরে পণ্য ও সেবা রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬৩ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার বা ৬ হাজার ৩৫০ কোটি ডলার। বিদায়ী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মোট রপ্তানি আয়ের চেয়ে তা ১৬ দশমিক ৫ শতাংশ বেশি। গত অর্থবছরে মোট রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৫৫ বিলিয়ন ডলার, যা পুরোপুরি অর্জিত হয়নি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নতুন লক্ষ্যমাত্রা অনেক উচ্চাভিলাষী মনে হলেও চ্যালেঞ্জটা বিদেশের বাজার নয়, বরং দেশের ভেতরে। এ মুহূর্তে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার চেয়ে দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যাগুলোয় আগে নজর দিতে হবে।
জানা গেছে, গত অর্থবছরে ৫৫ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে পণ্য ও সেবা কোনো খাতেই তা অর্জিত হয়নি। পণ্য রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা থেকে আয় কম হয়েছে ৩ দশমিক ৪৩ শতাংশ। রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৪৮ দশমিক ২৮ বিলিয়ন ডলার। অন্যদিকে সেবা রপ্তানি থেকে আয় আসে ৫ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন ডলার, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২৩ শতাংশ কম। গত অর্থবছর সেবা রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার। এই অবস্থায় সম্প্রতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা করেছে সরকার।
রপ্তানিকারকরা বলছেন, রাজনৈতিক স্থিতিশলীতার ওপরও নির্ভর করছে রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা
অর্জন। বিদেশি চাহিদা বা আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা নিয়ে দুশ্চিন্তার চেয়ে দেশের ভেতরের সমস্যাগুলো ভোগাচ্ছে বেশি। এ ছাড়া নতুন নতুন বাজার খোঁজার পাশাপাশি রপ্তাণি পণ্যে বৈচিত্র্য আনা না গেলে রপ্তানি আয় বেগবান হবে না।
ব্যবসায়ীরা বলেন, ব্যাংকগুলো যদি সহজে এলসি ছাড়ে, কারখানাগুলোতে গ্যাস-বিদ্যুতের নির্বিঘ্ন সরবরাহ থাকে এবং শুল্ক কর্তৃপক্ষ দ্রুত পণ্য ছাড়পত্র দেয়, তাহলে এই লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব। মার্কিন শুল্কনীতির সাম্প্রতিক পরিবর্তন বাংলাদেশের জন্য; বিশেষ করে পোশাক খাতে বাড়তি সুযোগ তৈরি করেছে। বাংলাদেশি পণ্যের ওপর এখন গড় শুল্ক হার ৩৬.৫ শতাংশ, যা প্রতিদ্বন্দ্বীদের তুলনায় কম। ফলে মার্কিন বাজারে বাংলাদেশের জন্য একটি সুযোগ তৈরি হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরাও বলেছেন, বিশ্ববাজারের বিদ্যমান সমীকরণ বাংলাদেশের জন্য বিপুল সুযোগ তৈরি করেছে। তবে এ সুযোগ কাজে লাগাতে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার চেয়ে দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যাগুলোয় নজর দিতে হবে আগে।
রপ্তানিতে যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, তা পুরোপুরি না হলেও কাছাকাছি অর্জন করা সম্ভব বলে মনে করেন বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান। তবে এর জন্য রপ্তানিতে যেসব প্রতিবন্ধকতা ও সমস্যাগুলো রয়েছে, সেগুলো দূর করতে হবে। সেই সঙ্গে রপ্তানিতে বাণিজ্য দক্ষতা, বহুমুখীকরণ ও বাজার সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে যেসব সুযোগ রয়েছে, সেগুলোকেও কাজে লাগাতে হবে বলে মনে করেন এ অর্থনীতিবিদ। আমাদের সময়কে তিনি বলেন, যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, সেখানে কেবল পণ্য নয়, সেবা খাতও রয়েছে। পণ্যের পাশাপাশি সেবা খাতেও আমাদের অনেক সম্ভাবনা, সুযোগ ও সক্ষমতা রয়েছে। তাই এ লক্ষ্যমাত্রার অনেকটাই অর্জন করা সম্ভব, যদি আমরা প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বাড়াতে এবং রপ্তানিকারকদের সহায়তা দিতে পারি। এর পাশাপাশি আমাদের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাটাও প্রয়োজন। সবাই যেন দেশের অর্থনীতি এবং দেশের স্বার্থকে তাদের চিন্তায় রাখেন।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কের কারণে ভারত ও চীন থেকেও সুযোগ তৈরি হতে পারে। এটা অনেকটাই নির্ভর করবে তৈরি পোশাকের ওপর। এই সুযোগগুলোকে কাজে লাগানো গেলে দুই অঙ্কের প্রবৃদ্ধি অর্জন করা সম্ভব। সেবা খাতে সুযোগগুলো কাজে লাগাতে আমাদের ইন্টারনেটের গতি বাড়ানো, ব্যাংকিং খাতে বৈদেশিক আয় আনার ক্ষেত্রে সেসব সমস্যা রয়েছে, সেগুলো দূর করতে হবে।’
উৎপাদন ও রপ্তানিতে বড় বাধা দূর করা না গেলে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা যাবে না বলে মনে করেন বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বাবু। তিনি আমাদের সময়কে বলেন, আমাদের বড় বাধা জ¦ালানি সংকট। কারখানাগুলোতে গ্যাস সংকট দূর করতে হবে। এ ছাড়া ব্যাংকিং খাতে জটিলতা দূর করা, এনবিআর ও বন্দরের দক্ষতা বাড়ানো- এগুলো করা গেলে তৈরি পোশাকের জন্য যে ১২ শতাংশের প্রবৃদ্ধি ধরা হয়, তা অর্জন করা যাবে।
রপ্তানিতে পিছিয়ে পড়া পাট খাতের ব্যবসায়ীরাও বলছেন, রপ্তানি খাতে বাধাগুলোর সমাধান না করে উচ্চ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হবে না। কথা হলে বাংলাদেশ জুট গুডস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজেজিইএ) সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান মো. রেজাউল করিম পিন্টু বলেন, আগে তো সমস্যাগুলো দূর করতে হবে। তারপর কোথায় কোথায় সুযোগ রয়েছে, সেগুলোকে কাজে লাগাতে হবে। তারপর লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে আলোচনা। আমাদের সমস্যাগুলো তো এখনও রয়ে গেছে। এক সময়ে বড় অবদান রাখা পাট খাত এখন ধসের মুখে। তাই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে রপ্তানিতে বাধাগুলো চিহ্নিত করে সমাধান করতে হবে।