রপ্তানি-রেমিট্যান্স বাড়াতে ডলার নিলাম কার্যকর পদক্ষেপ – ফাহমিদা খাতুন

Originally posted in The Business Standard on 22 September 2025

দর স্থিতিশীল রাখতে নিলামে আরও ১৩০ মিলিয়ন ডলার কিনল বাংলাদেশ ব্যাংক

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) -এর নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুনের মতে, নিলামে ডলার কেনার মাধ্যমে সঠিক পদ্ধতি অবলম্বন করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে বৈদেশিক মুদ্রাটির দর স্থিতিশীল পর্যায়ে রাখা সম্ভব হচ্ছে। এই পদক্ষেপ রপ্তানিকারক ও রেমিট্যান্স প্রেরকদের জন্য ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে সহায়তা করছে।

মার্কিন ডলারের দর স্থিতিশীল রাখার জন্য বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে নিলামে আরও ডলার কিনেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

আজ সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) ১২১.৭৫ পয়সা দরে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে ১২৯.৫০ মিলিয়ন ডলার কিনেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর ফলে চলতি বছর জুলাই থেকে এপর্যন্ত নিলামে ১.৮৮ বিলিয়ন ডলার কিনল বাংলাদেশ ব্যাংক।

চলতি মাসের ১৫ তারিখে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে ১২১.৭৫ দরে ৩৫৩ মিলিয়ন ডলার কিনেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। এক সপ্তাহ ব্যবধানে একই দরে নিলামের মাধ্যমে ডলার কেনা হলো।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন জেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক ১২১.৭৫ টাকা দরে ডলার কিনেছে, অর্থাৎ এটাই হচ্ছে ব্যাংকগুলোর জন্য ডলারের রেফারেন্স রেট।

ব্যাংকার ও অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, ডলারের দরে এক রকম স্থিতিশীলতা জরুরি। এজন্য বাংলাদেশ ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে নিলামের মাধ্যমে ডলার কিনছে। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে ডলার না কিনলে বৈদেশিক মুদ্রাটির দর পড়ে যেত। আর ডলার দর বেড়ে যাওয়া যেমন অর্থনীতির জন্য ভালো নয়, তেমনি কমে যাওয়াও ভালো নয়।

বর্তমানে নিলামের মাধ্যমে বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডলার কেনার জন্য রেমিট্যান্স প্রেরক ও রপ্তানিকারকরা সুবিধা পাচ্ছেন। আর বাংলাদেশ ব্যাংকও এ দুই সূচকের প্রবাহ ইতিবাচক রাখার জন্যই নিলামের মাধ্যেমে ডলার কিনছে। অন্যদিকে ডলার কেনার মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ-ও বাড়াচ্ছে।

তাই নিলামের মাধ্যমে ডলার কেনার সিদ্ধান্তটি একটি সঠিক টুল হিসেবে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) -এর নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুনের মতে, নিলামে ডলার কেনার মাধ্যমে সঠিক পদ্ধতি অবলম্বন করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে বৈদেশিক মুদ্রাটির দর স্থিতিশীল পর্যায়ে রাখা সম্ভব হচ্ছে। এই পদক্ষেপ রপ্তানিকারক ও রেমিট্যান্স প্রেরকদের জন্য ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে সহায়তা করছে।

তিনি বলেন, “এ মূহুর্তে রপ্তানি ও রেমিট্যান্স বাড়ানোর জন্য এ পদ্ধতি ইতিবাচকভাবে কাজ করবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সবসময় চেষ্টা করে ডলার বাজারকে স্থিতিশীল রাখতে। কারণ হঠাৎ করে ডলারের দর উঠানামা করলে তা অর্থনীতির জন্য সমস্যা। সঙ্গে আমদানিকারকদের যেন অসুবিধা না হয়— সেদিকটাও বিবেচনায় রেখে যাতে একটা ভারসাম্য বজায় থাকে— তেমনভাবে ডলারের দর রাখা উচিত।”

একাধিক ব্যাংকার বলছেন, মূলত মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি অনেক কমেছে। তাতে ডলারের চাহিদাও আগের চেয়ে অনেক কমেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, আগের অর্থবছরে মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানির এলসি খোলা কমেছে সাড়ে প্রায় ২৫ শতাংশ।

বেসরকারি একটি ব্যাংকের ট্রেজারি প্রধান টিবিএসকে বলেন, মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি কম হওয়ায় মার্কিন ডলারের চাহিদা আগের থেকে কমেছে।

শীর্ষস্থানীয় আরেকটি বেসরকারি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, এক বছর ধরে রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয়ের শক্তিশালী প্রবাহের সুবাদে ব্যাংকগুলো দীর্ঘদিনের বকেয়া আমদানি দায়গুলো পরিশোধ করতে পেরেছে, বিশেষত জ্বালানি আমদানির পেমেন্টগুলো ক্লিয়ার করা সম্ভব হয়েছে। এসব পেমেন্ট নিষ্পত্তির পর এখন আমদানির চাপও কম, ফলে ডলারের চাহিদার চেয়ে জোগান এখন বেশি, যেকারণে দর পতন দেখা দেয়।

ফাহমিদা খাতুন বলেছেন আমদানি, রপ্তানি ও বিনিয়োগের জন্য অবশ্যই ডলার দরে স্থিতিশীলতা গুরুত্বপূর্ণ।

বিশিষ্ট এই অর্থনীতিবিদ বলেন, ” ডলারের দর বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে এবং বাজারভিত্তিক করার চেষ্টা করা হচ্ছে। নিলামের মাধ্যমে ডলার কিনে রিজার্ভও বাড়ানো হচ্ছে। এ পদ্ধতি অন্যান্য দেশ যেমন ভারতেও করা হয়। আবার যখন বাজারে ডলার সংকট তৈরি হবে, তখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলার ছাড়বে। এভাবে বাজারে এক রকমের স্থিতিশীলতা বজায় রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে।”

“একটু একটু করে দাম বাড়া কিংবা কমা তা ঠিক রয়েছে, তবে হঠাৎ করে বেড়ে যাওয়া কিংবা কমে যাওয়া অর্থনীতির জন্য ভালো নয়- কারণ এমন পরিবর্তন বাজারকে আরো বেশি অস্থির করে তোলে”- যোগ করেন তিনি।