Published in কালের কন্ঠ on Thursday, 3 May 2018
বৈদেশিক লেনদেন
বড় ঘাটতি চলতি হিসাবের ভারসাম্যে
নিজস্ব প্রতিবেদক
আমদানি বেড়ে যাওয়ায় বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যে বড় ধরনের ঘাটতিতে পড়েছে দেশ। চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) চলতি হিসাবের ভারসাম্যে ৬৩১ কোটি ৮০ লাখ ডলারের ঘাটতির সৃষ্টি হয়েছে, যা গত অর্থবছরের পুরো সময়ের ঘাটতির চারগুণেরও বেশি। ২০১৬-১৭ অর্থবছরের জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে চলতি হিসাবের ভারসাম্যে ৯৬ কোটি ৩০ লাখ ডলার ঘাটতি ছিল। অর্থবছর শেষে তা ১৪৮ কোটি ডলারে দাঁড়ায়।
পণ্য ও সেবা বাণিজ্যে বড় ধরনের ঘাটতির কারণে চলতি হিসাবের ভারসাম্যে এই পরিমাণ ঘাটতির সৃষ্টি হয়েছে বলে জানা যায়। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ করা বৈদেশিক লেনদেন ভারসাম্য সারণির তথ্য অনুযায়ী, অর্থবছরের জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে পণ্য বাণিজ্যে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে এক হাজার ১৭৩ কোটি ২০ লাখ ডলার। একই সময়ে সেবা খাতের বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ২৯৫ কোটি ৬০ লাখ ডলার। দেশে বরাবরই রপ্তানির তুলনায় পণ্য আমদানি বেশি। তবে বর্তমানে রপ্তানির তুলনায় আমদানি প্রবৃদ্ধি অনেক বেড়ে যাওয়ায় চলতি হিসাবের ভারসাম্যে বিশাল এই ঘাটতির সৃষ্টি হয়েছে।
তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, অর্থবছরের জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে আমদানিতে প্রবৃদ্ধি ২৬.২২ শতাংশ, অন্যদিকে রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৮.০৬ শতাংশ। এই আট মাসে আমদানির পেছনে দেশের ব্যয় হয়েছে ৩ হাজার ৫৮২ কোটি ডলার। অন্যদিকে রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ২ হাজার ৪০৮ কোটি ৮০ লাখ ডলার। সেই হিসেবে পণ্য বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়ায় ১ হাজার ১৭৩ কোটি ২০ লাখ ডলার। যেখানে গত অর্থবছরে ঘাটতি ছিল ৬০৮ কোটি ৯০ লাখ ডলার।
অন্যদিকে সেবা বাণিজ্যে দেশের ব্যয় হয়েছে ৫৭৫ কোটি ৮০ লাখ ডলার এবং আয় হয়েছে ২৮০ কোটি ২০ লাখ ডলার। সেই হিসেবে সেবা বাণিজ্যে ঘাটতি দাঁড়ায় ২৯৫ কোটি ৬০ লাখ ডলার। গত অর্থবছরের একই সময়ে যা ছিল ২১১ কোটি ৭০ লাখ ডলার। সেবা খাতের বাণিজ্যে মূলত বীমা, ভ্রমণ ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত হয়ে থাকে। বাংলাদেশের ইতিহাসে লেনদেন ভারসাম্যে এত বড় ঘাটতি আগে কখনো হয়নি। তবে সরকারের আর্থিক হিসাবে বড় উদ্বৃত্ত থাকায় এখনই উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই বলে মনে করছেন অর্থনীতির বিশ্লেষকরা।
সাধারণভাবে কোনো দেশের নিয়মিত বৈদেশিক লেনদেন পরিস্থিতি বোঝা যায় চলতি হিসাবের মাধ্যমে। আমদানি-রপ্তানিসহ অন্যান্য নিয়মিত আয়-ব্যয় এতে অন্তর্ভুক্ত হয়। এখানে উদ্বৃত্ত হলে চলতি লেনদেনের জন্য দেশকে কোনো ঋণ করতে হয় না। তবে ঘাটতি থাকলে তা পূরণ করতে ঋণ নিতে হয়।
অর্থনীতির গবেষক সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, লেনদেনের চলতি হিসাব ভারসাম্যে যে ঘাটতি তৈরি হয়েছে, তা অর্থবছরের বাকি সময়েও অব্যাহত থাকবে আমদানি বাড়তে থাকার কারণে। তবে আর্থিক হিসাবে উদ্বৃত্ত অর্থ থাকায় বড় কোনো ঝুঁকির আশঙ্কা নেই। আমদানি যেটা বাড়ছে সেটা রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, মেট্রো রেলসহ বড় প্রকল্পের প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম আমদানির জন্য। এসব আমদানির বিল ফরেন এইড যেটা আসছে সেটা থেকেই পরিশোধ করা হচ্ছে। এ কারণে চলতি হিসাবের ভারসাম্যে বড় ধরনের ঘাটতি হলেও সামগ্রিক লেনদেন ভারসাম্যে ঘাটতি কিছুটা কম। চলতি অর্থবছরের জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে সামগ্রিক লেনদেন ভারসাম্যে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৯৭ কোটি ৮০ লাখ ডলার। যেখানে গত অর্থবছরের জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে ২৪৫ কোটি ডলার উদ্বৃত্ত ছিল।
তবে বিদেশি বিনিয়োগ ও বিদেশি সহায়তা ছাড়ের পরিমাণ বাড়ায় অর্থবছরের প্রথম আট মাসে আর্থিক হিসাবে বড় উদ্বৃত্ত দেখা যাচ্ছে। গত অর্থবছরের জুলাই- ফেব্রুয়ারি সময়ে যেখানে ২৯৬ কোটি ৫০ লাখ ডলার উদ্বৃত্ত ছিল, এবার তা ৫৭৩ কোটি ৭০ লাখ ডলারে দাঁড়িয়েছে।