Originally posted in প্রথম আলো on 28 May 2024
কেমন বাজেট চাই
আগামী ৬ জুন ঘোষিত হতে যাচ্ছে নতুন বাজেট। নতুন বাজেটে কোন বিষয়গুলো গুরুত্ব দেওয়া উচিত এবং মূল্যস্ফীতির লাগাম টানতেই বা করণীয় কী—এ নিয়ে কথা বলেছেন তিনজন অর্থনীতিবিদ ও দুজন ব্যবসায়ী। তাঁরা বলেছেন, এ সময়ে প্রবৃদ্ধির চেয়ে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ফেরানোতেই বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত।
আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে রাজস্ব সংগ্রহ বাড়ানোকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। এ জন্য বাস্তবভিত্তিক লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা প্রয়োজন। রাজস্ব বাড়াতে দেশে একটি প্রগতিশীল করকাঠামো থাকা দরকার, যেখানে প্রত্যক্ষ করের ওপর বেশি নির্ভরশীলতা এবং পরোক্ষ করের ওপর কম নির্ভরশীলতা থাকবে। এ ছাড়া করজাল সম্প্রসারণেও বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।
যাঁরা কর ফাঁকি দেন বা এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন, তাঁদের নিয়ন্ত্রণে কঠোর হতে হবে। অন্যদিকে আমদানি শুল্কের ওপর নির্ভরশীলতা কমানো দরকার। বিভিন্ন খাতে যেসব কর অব্যাহতি সুবিধা রয়েছে, সেগুলোকে যথাযথ মূল্যায়নের মাধ্যমে সুবিন্যস্ত ও যুক্তিযুক্ত করা কিংবা বাদ দেওয়া উচিত।
বর্তমান পটভূমিতে উন্নত শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সুরক্ষার মাধ্যমে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরিতে বিনিয়োগ বাড়ানো আবশ্যক। কারণ, আমরা যে উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জনের কথা বলছি, দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি ছাড়া তা অর্জন করা ও টেকসই করা যাবে না। ফলে আসন্ন বাজেটে শিক্ষা ও দক্ষতা উন্নয়নে বরাদ্দ বাড়াতে হবে। এর মাধ্যমে দেশের তরুণেরা চাকরির বাজারের জন্য নিজেদের প্রস্তুত করতে পারবেন। দুঃখজনক হলেও সত্য, প্রায়ই নিয়োগকর্তারা চাকরির জন্য যোগ্য তরুণদের খুঁজে পান না। ফলে বাজেট হওয়া উচিত শিক্ষার মান উন্নয়নের জন্য। এ ছাড়া স্বাস্থ্য খাতে বাজেট বরাদ্দও বাড়াতে হবে।
দেশের উন্নয়নের গল্পে নীতিনির্ধারকেরা সব সময় মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) বৃদ্ধির কথা বলেন। কিন্তু শুধু জিডিপির প্রবৃদ্ধি দিয়ে চলমান অর্থনৈতিক সংকট কমবে না। তাই নতুন বাজেটে জিডিপির প্রবৃদ্ধিকে মূল লক্ষ্য না করে বরং সংকট মোকাবিলায় বেশি মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন। আমরা দীর্ঘ সময় ধরে উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপের মধ্যে রয়েছি। এ ছাড়া আমাদের অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে আয় বা সম্পদের প্রাপ্যতার পরিমাণও কম। ফলে বাজেট কোনোভাবেই সম্প্রসারণমূলক করা উচিত হবে না। অন্যথায় বাংলাদেশ ব্যাংক মূল্যস্ফীতির চাপ নিয়ন্ত্রণে যে ধরনের সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি নিয়েছে, তা কাজ করবে না। যেসব প্রকল্পের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে, সেগুলো দ্রুত শেষ করার উদ্যোগ নিতে হবে।
অর্থনীতির এ সংকটময় অবস্থায় সরকারের প্রশাসনিক ও পরিচালন ব্যয় কমানো প্রয়োজন। বাজেট-ঘাটতি অবশ্যই ৪ শতাংশের মধ্যে রাখতে হবে। ইতিমধ্যে দেশের ব্যাংকগুলো অতিরিক্ত তারল্যসংকটে ভুগছে। ফলে বাজেট-ঘাটতি মেটাতে ব্যাংকঋণের ওপর নির্ভরতা নিয়ন্ত্রণ করা উচিত। ব্যাংকঋণের পরিবর্তে সরকার উন্নয়ন সহযোগীদের থেকে বাজেট সহায়তা আনার চেষ্টা করতে পারে।
– ফাহমিদা খাতুন, নির্বাহী পরিচালক, সিপিডি