Published in বণিকবার্তা on Sunday 8 March 2020
বিশ্ব নারী দিবসে জাতিসংঘ প্রতি বছর বেছে বেছে অনেক সুন্দর ভাব ও স্লোগান বের করে। এবারের প্রচারণা স্লোগান হচ্ছে—EachForEqual বা ‘সমতার জন্য প্রত্যেকে’। অর্থাৎ নারী সমতার জন্য প্রত্যেক ব্যক্তি কীভাবে ভূমিকা রাখতে পারেন, সেটিই জোর দেয়া হয়েছে। একটি সমতাভিত্তিক সমাজ হচ্ছে একটি ক্ষমতায়িত সমাজ। সেখানে নারীর সমতার জন্য আমরা প্রত্যেকেই ভূমিকা রাখতে পারি। এটিকে আরো সম্প্রসারিত করে বলা যায়, নারীর সমতা শুধু নারীর বিষয় নয়। এটি একটি অর্থনৈতিক বিষয়। কেননা অর্থনৈতিক ও সামাজিক অগ্রগতির জন্য নারীর সমান অংশগ্রহণ অত্যাবশ্যক। নারীর অর্জনকে উদযাপন করে এবং নারীবিরুদ্ধ মানসিকতা ও অসমতার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে আমরা সমাজে পরিবর্তন আনতে পারি। এটিই এবারের নারী দিবসের অন্তর্নিহিত অর্থ। আর ‘সমতার জন্য প্রত্যেকে’—এ স্লোগান শুধু ৮ মার্চ ২০২০-এর জন্য প্রযোজ্য নয়। সারা বছর ধরেই এ লক্ষ্যে কাজ করতে হবে।
এবারের স্লোগানে ছয়টি মূল ক্ষেত্রে জোর দেয়া হয়েছে। প্রথমত, প্রযুক্তি উদ্ভাবনে নারীদের সমর্থন করা। দ্বিতীয়ত, খেলাধুলায় নারীর সমান অংশগ্রহণ উৎসাহিত করা। তৃতীয়ত, নারীরা যাতে আরো বিকশিত হতে পারেন, সেজন্য কর্মক্ষেত্রকে অন্তর্ভুক্তিমূলক করা। চতুর্থত, নারীরা যাতে স্বাধীনভাবে আয় করতে পারেন, সেজন্য সহায়তা করা। পঞ্চমত, স্বাস্থ্য ও শিক্ষার মাধ্যমে নারীদের ক্ষমতায়িত করা। ষষ্ঠত, নারীর সৃজনশীল কাজকে আরো তুলে ধরা। সন্দেহের অবকাশ নেই, একটি স্বাস্থ্যবান, সমৃদ্ধিশালী এবং সদৃশ সমাজ ও পৃথিবীর জন্য উল্লিখিত ক্ষেত্রগুলোয় সমতা আনা অপরিহার্য।
ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের ‘গ্লোবাল জেন্ডার গ্যাপ রিপোর্ট ২০২০’ অনুযায়ী, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ নারী সমতার ক্ষেত্রে বিভিন্ন অবস্থানে রয়েছে। এমনকি উন্নত দেশেও নারী সমতা পুরোপুরি অর্জিত হয়নি। তাদের রিপোর্ট অনুযায়ী, ১৫৩টি দেশের মধ্যে একটি দেশও পুরোপুরি নারী-পুরুষের সমতা অর্জন করতে পারেনি। সামগ্রিকভাবে গড়ে সারা পৃথিবীর ১৫৩টি দেশে জেন্ডার গ্যাপ পূরণ হয়েছে ৬৯ শতাংশ। সবচেয়ে এগিয়ে আছে আইসল্যান্ড, যে দেশটি নারী-পুরুষের ফারাক ৮৮ শতাংশ পূরণ করতে পেরেছে। প্রথম পাঁচটি দেশের মধ্যে চারটিই নরডিক। এর মধ্যে রয়েছে আইসল্যান্ড (১ম), নরওয়ে (২য়), ফিনল্যান্ড (৩য়) ও সুইডেন (৪র্থ)। পাঁচ নম্বরে রয়েছে লাতিন আমেরিকার দেশ নিকারাগুয়া। এ জেন্ডার গ্যাপ সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ৫০তম। দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশগুলোর মধ্যে নেপাল ১০১তম, শ্রীলংকা ১০২তম, ভারত ১১২তম, ভুটান ১৩১তম ও পাকিস্তান ১৫১তম। অর্থাৎ এখানে বাংলাদেশ সবার চেয়ে এগিয়ে আছে। শুধু দক্ষিণ এশিয়াতেই নয়, এমনকি সিঙ্গাপুর (৫৪তম), চীন (১০৬তম), জাপান (১২১তম) এবং অন্য অনেক দেশের চেয়েও বাংলাদেশ এগিয়ে রয়েছে; যা সত্যিই বিস্ময়কর ও প্রশংসনীয়।
তবে এ জেন্ডার গ্যাপ সূচকটি যদি একটু ভেঙে দেখা হয়, তাহলে দুর্বলতাগুলো ধরা পড়ে। যেমন এ সূচকে চারটি বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এগুলো হচ্ছে: (ক) অর্থনৈতিক অংশগ্রহণ এবং সুযোগ; (খ) শিক্ষাগত অর্জন; (গ) স্বাস্থ্য এবং বেঁচে থাকা; (ঘ) রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অংশগ্রহণে ১৪১তম অবস্থানে, শিক্ষাগত অর্জনে ১২০তম, স্বাস্থ্য ও বেঁচে থাকার ক্ষেত্রে ১১৯তম এবং রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে ৭তম অবস্থানে রয়েছে। রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে বাংলাদেশের অবস্থান আইসল্যান্ড, নরওয়ে, নিকারাগুয়া, রুয়ান্ডা, ফিনল্যান্ড ও কোস্টারিকার ঠিক পরই। এটিও একটি গৌরবময় অর্জন। এক্ষেত্রে নারী সংসদ সদস্যের সংখ্যার দিক থেকে অবশ্য বাংলাদেশের অবস্থান ৮৬তম। আর নারী মন্ত্রীর ক্ষেত্রে আমাদের অবস্থান ১২৪তম। যে সূচকটি নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে অগ্রগামী অবস্থানে রেখেছে সেটি হলো, দেশের রাষ্ট্রপ্রধানের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান এক নম্বরে।
তবে সমাজের সর্বস্তরে নারীর ক্ষমতায়ন ও সমতা অর্জন করতে হলে নারীর অর্থনৈতিক অংশগ্রহণ অপরিহার্য। আর সেটি অর্জন করতে হলে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য পূর্বশর্ত। বাংলাদেশে গত পাঁচ দশকে কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ অনেক বেড়েছে। যেমন ১৯৭৪ সালে মোট শ্রমশক্তিতে নারীর অংশগ্রহণ ছিল মাত্র ৪ শতাংশ। শ্রমশক্তি জরিপ অনুযায়ী, সেটি বেড়ে ২০১০ সালে হয় ২৩ দশমিক ৯ শতাংশ, আর ২০১৭ সালে হয় ৩৬ দশমিক ৩ শতাংশ। কিন্তু শ্রমশক্তিতে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের মধ্যে এখনো ৪৪ দশমিক ২ শতাংশ ফারাক রয়েছে। আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো, শ্রমশক্তিতে গ্রামাঞ্চলে নারীর অংশগ্রহণ বাড়লেও শহরাঞ্চলে নারীর অংশগ্রহণ কমছে। যেমন গ্রামাঞ্চলে ২০১০ সালে শ্রমশক্তিতে নারীর অংশগ্রহণের হার ৩৮ দশমিক ৬ শতাংশ থেকে বেড়ে ২০১৭ সালে হয়েছে ৪২ দশমিক ২ শতাংশ। অন্যদিকে শহরে নারীর কর্মক্ষেত্রে অংশগ্রহণের হার ২০১০ সালে ৩৪ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে ২০১৭ সালে ৩১ শতাংশে নেমে এসেছে।
আরেকটি বিষয় হলো, এখন নারীরা গতানুগতিক খাতগুলোর বাইরেও বিভিন্ন ধরনের কাজে অংশগ্রহণ করছেন। যেমন হোটেল, রেস্তোরাঁ, দোকানপাট, আবাসন, প্রযুক্তি, পর্যটন, ব্যাংক-বীমা ইত্যাদি ক্ষেত্রে তারা কাজ করছেন। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বিভিন্ন ধরনের কাজের সুযোগ সৃষ্টি হওয়ার ফলে নারীরাও বৈচিত্র্যময় কাজে অংশ নেয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। কিন্তু সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশের অর্থনীতি এখনো সবার জন্য কাজের সুযোগ করতে পারছে না। ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সী যুবকদের মাঝে বেকারত্বের হার ১০ দশমিক ৬ শতাংশ। এর মধ্যে পুরুষ যুবকদের বেকারত্বের হার ৮ দশমিক ২ শতাংশ, আর নারী যুবকদের বেকারত্বের হার ১৫ শতাংশ। চিন্তার বিষয় হলো, বেশি শিক্ষিত নারীদের মাঝে বেকারত্বের হার অল্পশিক্ষিত নারীদের চেয়ে অনেক বেশি। যেমন মাধ্যমিক শিক্ষাগত যোগ্যতাসম্পন্ন নারীদের মধ্যে ৩৫ দশমিক ১ শতাংশ বেকার। এর চেয়ে বেশি শিক্ষিত নারীদের ৪২ দশমিক ৫ শতাংশই বেকার। এ হার পুরুষ যুবকদের বেকারত্বের হারের চেয়ে অনেক বেশি। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর শ্রমশক্তি জরিপে এ ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য রয়েছে।
এবার তাকানো যাক কাজের ধরনের দিকে। কী ধরনের এবং কত বেতনে নারীরা কাজ করছেন? গত পাঁচ দশকে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কাঠামোগত পরিবর্তন লক্ষণীয়। মোট দেশজ উৎপাদনে কৃষি খাতের অবদান কমে এসেছে, শিল্প খাত ও সেবা খাত প্রাধান্য বিস্তার করছে। সে কারণে মানবসম্পদ নিয়োগের ক্ষেত্রেও খাত অনুযায়ী পরিবর্তন লক্ষ করা যায়। তবে কৃষি খাতের ওপর কর্মসংস্থানের জন্য নির্ভরতা এখনো অনেক বেশি। নারী শ্রমের ক্ষেত্রেও দেখা যায়, তারা এখনো কৃষির ওপর অনেক নির্ভরশীল। মোট নিয়োজিত নারীর ৫৯ দশমিক ৬৮ শতাংশ কৃষিতে নিয়োজিত, ১৫ দশমিক ৪ শতাংশ শিল্পে আর ২৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ সেবা খাতে নিয়োজিত। আরেকটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের মতো বাংলাদেশেও অনানুষ্ঠানিক খাতেই বেশি কর্মসংস্থান হচ্ছে। সেটি নারী-পুরুষ সবার জন্যই সত্য। ২০১৭ সালের তথ্য অনুযায়ী, মোট কর্মসংস্থানের ৮৫ শতাংশ হচ্ছে অনানুষ্ঠানিক খাতে। এর মধ্যে পুরুষদের ৮২ শতাংশ এবং নারীদের ৯১ দশমিক ২ শতাংশ অনানুষ্ঠানিক খাতে নিয়োজিত। ফলে তাদের আয় কম এবং কাজেরও কোনো নিশ্চয়তা থাকে না।
উচ্চপদস্থ ও অধিক আয় উপার্জনকারী কাজগুলোয় বাংলাদেশের নারীদের অবস্থান সন্তোষজনক নয়। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের রিপোর্ট অনুযায়ী, নারীদের নীতিনির্ধারক, উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ও ব্যবস্থাপকের চাকরিতে নিয়োজিত থাকার হারে বাংলাদেশের অবস্থান ১৫৩টি দেশের মধ্যে ১৩৯তম। আর নারীদের পেশাজীবী ও কারিগরি কাজের ক্ষেত্রে আমরা ১৩৪তম অবস্থানে রয়েছি।
নারীর আয়ও পুরুষ চেয়ে কম। উল্লিখিত রিপোর্টে একই ধরনের কাজে নারী-পুরুষের সমতার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান ৯৮তম। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, গড়ে একজন নারীর আয় পুরুষের ৯০ দশমিক ২২ শতাংশ। এ পার্থক্যটা বয়সের সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে। আর কিছু খাতে মজুরি পার্থক্য অনেক বেশি। যেমন কৃষি খাতে নারী শ্রমিকরা পুরুষের তুলনায় ৮২ দশমিক ১৫ শতাংশ আয় করেন। সবচেয়ে কম পার্থক্য হচ্ছে কারিগরি বা টেকনিশিয়ানের কাজে। এক্ষেত্রে নারীর আয় পুরুষের তুলনায় ৯৩ দশমিক ৩৭ শতাংশ।
নারীরা কেন এখনো শ্রমশক্তিতে কম হারে অংশগ্রহণ করছেন? কেন তারা এখনো মজুরি কম পাচ্ছেন? কেন তারা শুধু কয়েকটি পেশায়ই নিজেদের সীমাবদ্ধ রাখছেন? এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে আমাদের আর্থসামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলের দিকেই দৃষ্টিপাত করতে হবে। শ্রমবাজারে অংশ নেয়ার যোগ্যতা ও ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও অনেক নারী সন্তান দেখাশোনা করা, যাতায়াত, বাসস্থান ও নিরাপত্তার অভাবে কাজে আসতে পারছেন না। আগেই উল্লেখ করেছি শহুরে নারীদের শ্রমশক্তিতে অংশগ্রহণ স্থবির হয়ে পড়ছে। এর পেছনে একটি অন্যতম কারণ হচ্ছে শ্রমবাজারে সঠিক কাজের সুযোগের অভাব এবং স্বনিয়োজনের সুযোগের অভাব। গ্রামাঞ্চলে নারীরা কৃষি ও অকৃষিজাত কাজে অংশগ্রহণ করছেন। শহরে শিক্ষিত নারীদের উপার্জনমূলক কাজে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে বেশকিছু প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। তরুণ নারীরা সন্তানকে নিরাপদ জায়গায় রাখতে না পারার কারণে কাজে আসতে পারেন না। সচ্ছল পরিবারের অনেকে আবার তেমন উৎসাহবোধ বা প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন না।
বাল্যবিবাহ ও সংসারের ঘানি টানতে গিয়ে অনেক নারী শিক্ষারই সুযোগ পান না, চাকরি তো পরের কথা। দুঃখজনকভাবে মেয়েদের বাল্যবিবাহের ক্ষেত্রে আমরা এখনো তেমন অগ্রগতি লাভ করতে পারিনি। তবে প্রাতিষ্ঠানিক কর্মসংস্থানের বাইরে নারীদের স্বনিয়োজনের ব্যবস্থা করতে হবে। এজন্য তাদের জ্ঞান, প্রশিক্ষণ এবং সর্বোপরি পুঁজির প্রয়োজন। নারীরা যাতে স্ব-উদ্যোগী হয়ে উপার্জন করতে পারেন, সেজন্য ব্যাংকঋণের সহজলভ্যতা বাড়াতে হবে। অনেক নারী চাকরিতে যোগ দেয়ার পর সংসারজীবন শুরু হয়ে গেলে চাকরি ও গৃহের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করতে হিমশিম খান। আধুনিক নগরজীবনে একক পরিবার ব্যবস্থায় সমস্যাটি প্রকট হয়ে উঠেছে। শিশুদের জন্য নিরাপদ ও মানসম্পন্ন দিবাযত্ন কেন্দ্রের অভাব প্রচণ্ডভাবে অনুভূত হচ্ছে। এ কারণেই আমরা উচ্চপদগুলোয় এত কম নারী দেখতে পাই। সন্তানরা যখন বড় হয়ে যায় এবং যখন আবার এই নারীদের সময় হয়, তখন তাদের শিক্ষা ও অভিজ্ঞতা কর্মক্ষেত্রের জন্য অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়ে। তখন অনেকে ছোট ব্যবসা শুরু করতে চান। অনেকে পারিবারিক ব্যবসায় যোগ দেন। সবাই পারেন না, সহযোগিতা, মূলধন ও অভিজ্ঞতার অভাবে।
আরেকটি বিষয় উল্লেখ না করলেই নয়। সামনের দিনে যে ক্ষেত্রগুলোয় কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে, সেটি নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে। আমরা এরই মধ্যে দেখতে পাচ্ছি, যে কাজগুলোয় প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ছে, সেখান থেকে নারী কর্মীরা ঝরে পড়ছেন। যেমন রফতানিমুখী তৈরি পোশাক শিল্পে নারীদের অংশগ্রহণ আগের চেয়ে কমে আসছে। যেহেতু সেখানে নারীরা কম দক্ষতার কাজগুলো করে থাকেন এবং যেহেতু তারা প্রযুক্তি ব্যবহারে পিছিয়ে রয়েছেন। আগামীর কর্মজগৎ হবে বর্তমান থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের ছোঁয়া দেরিতে হলেও বাংলাদেশেও লাগতে শুরু করেছে। অনেক চাকরির প্রয়োজন ফুরিয়ে যাবে। অনেক নতুন কাজ সৃষ্টি হবে। শ্রমবাজারে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়ানোর জন্য তাদের যুগোপযোগী শিক্ষা ও প্রযুক্তিগত প্রশিক্ষণ দিয়ে তৈরি করতে হবে। সরকারি ও বেসরকারি খাতের যুগপৎ উদ্যোগ ছাড়া আধুনিক শ্রমবাজারে নারীদের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা যাবে না।
ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের জেন্ডার গ্যাপ রিপোর্টে অনেক দেশের অনেক ক্ষেত্রে অগ্রগতির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু ওখানে এটিও বলা হয়েছে, বর্তমানে যে চ্যালেঞ্জগুলো আমরা দেখছি, পরবর্তী প্রজন্মেও একই রকম চ্যালেঞ্জ বিদ্যমান থাকবে বলে মনে হয়। তাই আমাদের জীবদ্দশায় আমরা বিশ্বে নারীর সমতা দেখে যেতে পারব না। বিশ্বে নারীর সমতা প্রতিষ্ঠিত হতে আমাদের আরো ৯৯ দশমিক ৫ বছর অপেক্ষা করতে হতে পারে। অর্থাৎ পথ এখনো অনেক দীর্ঘ। তাই নারী প্রগতি, ক্ষমতায়ন ও সমতার জন্য আমাদের পথচলা অবিরাম অব্যাহত রাখতে হবে। শুধু বিশ্ব নারী দিবস উদযাপনের আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে সীমাবদ্ধ থেকে নয়, আন্তরিকতা ও সততার সঙ্গে সঠিক ও বাস্তব নীতিমালা এবং পদক্ষেপ বাস্তবায়নের মাধ্যমে সেটি অর্জন করার প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।
ড. ফাহমিদা খাতুন: অর্থনীতিবিদ
নির্বাহী পরিচালক, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)